এবার ছুটির মধ্যে করতে পারো যে কাজগুলো
পড়াশোনা, কুইজ, ক্লাসটেস্ট আর অলিম্পিয়াডে ব্যস্ত পুরো বছরের মধ্যে কতকিছুই না ইচ্ছা করে করতে। কিন্তু সময় মেলে না। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বছরের এ সময়ে মেলে একটু অবসর। অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো পূর্ণ করতে পারো এই সময়ে। বছর শেষের এই ছুটিকে কীভাবে অর্থপূর্ণভাবে কাটাতে পারো তা নিয়েই আজকের এই লেখা।
তালিকা করো
বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ছুটি শুরু হলে প্রথম কী করবে জানতে চাইলে সবাই নিশ্চয় বলবে, বইপত্র সব গুছিয়ে তুলে ফেলব। তারপর? তারপর টানা কয়েকটা দিন শুধু ঘুম আর ঘুম।। তারপর কি করবে অনেকেই খুঁজে পাবে না। কিন্তু সারা বছরে এমন অনেকবারই হয়েছে যখন পড়াশোনার মধ্যে পছন্দের কাজ বা কোর্স করতে পার নি সময়ের অভাবে। কিন্তু ছুটির সময় সেগুলো মনে পড়ে না। তাই বিশ্রামের পরে প্রথম কাজটি হবে, একটু ভেবে মনে করার চেষ্টা করা যে, সারা বছরে ছুটি পেলে কোন কোন কাজ করতে চেয়েছিলে। তারপর সেই কাজগুলোর একটি তালিকা করে ফেলো। তারপর সেগুলো কীভাবে করবে তার পরিকল্পনা করো। যেগুলোর সময় ও আনুষঙ্গিক বিষয় মিলবে সেগুলো নিয়ে আরেকটি চূড়ান্ত তালিকা করো। তালিকার কয়েকটি কাজও যদি করতে পারো, তাহলে দেখাবে এবারের ছুটির সময়টি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বই পড়ো
ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই সারা বছর ক্লাসের বাইরের বই পড়তে পারো না। শিক্ষক বা বাবা-মা গল্পের বই হাতে দেখলেই নিশ্চয় রে রে করে তেড়ে আসেন। এ সময় কিন্তু সে ভয় নেই। এখন হাতে গল্পের বই দেখলে কিন্তু বাবা-মা কিংবা শিক্ষক খুশিই হবেন। এই সময়ে ছেলেমেয়ের হাতে বই দেখলে কে না খুশি হবে। বলা যায় না, তারা হয়তো সঙ্গে করে বইয়ের দোকানে নিয়ে গিয়ে পছন্দের বইও কিনে দিতে পারেন। কোন বইগুলো পড়া উচিত, সে সম্পর্কে বড়দের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারো। হাতের কাছে বই না পেলে বা এখনই কিনতে পারলে খোঁজখবর নিতে পারো তোমার এলাকার পাঠাগার গুলোতে। এই সুযোগে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ও হয়ে যাবে। পাঠাগার না থাকলে তুমি নিতে পারো পাঠাগার তৈরির উদ্যোগ। ছুটিটা তাহলে একেবারে মন্দ কাটবে না।
নতুন কিছু কোর্স করো
অনেকেই আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলে ছুটিতে কিছু নতুন কোর্স করবে। বছরের মাঝে বাবা-মা পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে হয়তো অনুমতি দেন নি কিন্তু এখন আর মানা করবেন না ঠিকই কিন্তু কোর্স ফি-টা দিয়ে দেবেন। তোমরা যারা অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করতে চাও বা পড়াশোনার পাশাপাশি আয় করতে চাও তারা এই সময়কে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় কোর্সে অংশ নাও। তাছাড়া অনেকেরই সাঁতার শেখা হয় নি হয়তো আগে। জীবন রক্ষাকারী এই অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়টিও শিখে ফেলতে পারো এই ছুটির সময়ে।
নতুন বছরের পরিকল্পনা করো
এই ছুটির পরেই শুরু হবে নতুন একটি বছর। নতুন বছরে কী করবে, কীভাবে করবে তার পরিকল্পনা করার এটির উৎকৃষ্ট সময়। এখন পরিকল্পনা করলেই বছরের প্রথম দিন থেকে কাজ করতে পারবে লক্ষ্য অর্জনের জন্য। তাই এ সময়ে নতুন বছরের পরিকল্পনা করে ফেলো। লিখে ফেলো, কী অর্জন করতে চাও, কী হতে চাও, পড়ালেখায় কোন অবস্থানে পৌছাতে চাও-সব। এরপর লেখ এগুলো অর্জন করতে কী করতে হবে, কখন করতে হবে, কীভাবে করতে হবে। বলা হয়ে থাকে, কোনো কাজের ব্যাপারে লিখে ফেললে কাজটির অর্ধেক হয়ে যায়। পরিকল্পনাটি লিখে ফেললে সেটি তোমার মানসপটে দৃশ্যমান হবে। বছরের শুরু থেকে কাজ করতে অনুপ্রেরণা পাবে।
বেড়াতে যাও
সারা বছর ইচ্ছা থাকলেও কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় না। আর স্কুল-কলেজ, বাবা-মার অফিস বা বাসায় কাজ আরও কত কি। কিন্তু বছরের এই সময়ে সবারই কিছুটা সময় মেলে একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার। তাছাড়া না শীত, না গ্রীষ্ম, না বর্ষা এই সময়টি বেড়াতে যাওয়ার জন্যও দারুণ। বেড়াতে যে বিদেশে যেতে হবে না বিলাসী রিসোর্টে যেতে হবে না-তা না। পৈতৃক বাড়িতে বা আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে পারো এই ছুটিকে কাজে লাগিয়ে।
পার্টটাইম চাকরি করো
অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এই সময়ে পার্টটাইম চাকরিও করতে পারো। কয়েকদিন পরেই বইমেলা। এ-সংক্রান্ত কাজ শুরু হয়ে এখন থেকেই। তুমি যদি ভালো লিখতে ও সম্পাদনা করতে পারো, তাহলে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে খোঁজখবর নিয়ে সেখানে চাকরি নিতে পারো। এই অভিজ্ঞতা তোমার পেশাজীবনে কাজে লাগবে। এখন ট্রাফিক কন্ট্রোলের জন্যও পার্টটাইম ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর মন্ড থেকে লোক চাওয়া হয়েছ। সেখানেও যোগ দিতে পারো। দেশসেবার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি কিছু আয় হলে ক্ষতি কী? তবে এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
স্বেচ্ছাসেবায় অংশ নাও
অল্প অল্প করে হলেও কিন্তু শীত পড়তে শুরু করেছে সারা দেশে। গৃহহীন অসহায় মানুষরা এই শীতে কষ্ট পাচ্ছে। কয়েকজন একসঙ্গে হয়ে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নিতে পারো। তোমার আশপাশের কেউ এমন উদ্যোগ নিলে যুক্ত হতে পারো সেখানেও। এমন যেকোনো স্বেচ্ছাসেবায় অংশ নিয়ে তোমার ছুটির দিনগুলোকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারো।