ভূমিকা :- তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটি তো বটেই, মারামারিও বেধে যায়। অথচ মেজাজখানা ঠিক রাখা গেলে জীবনটা দারুণ উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারত। তবে জীবনের কোনো বাঁকে কেউ আপনার মেজাজ বিগড়ে দিলেও তাঁকে আপনি কতটা গুরুত্ব দেবেন, সে তো নিতান্তই আপনার সিদ্ধান্ত! খিটিমিটি এড়িয়ে নিজের ভালো লাগার কাজে যতটা বেশি সময় দিতে পারবেন, নশ্বর এই জীবনের সৌন্দর্য ততই বেশি অনুভব করতে পারবেন।
আপনার জীবনের প্রশান্তির চাবিকাঠি
অন্য কারও জন্য নিজের মেজাজ বিগড়ে যেতে না দেওয়াটাই এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। সব সময় মনে রাখবেন, আপনার জীবনের প্রশান্তির চাবিকাঠি আপনার হাতে রয়েছে। অন্যের কথা বা কাজকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। যাঁর কারণে আপনার মেজাজ বিগড়ে গেল, তিনি যদি আপনার কাছের কেউ হয়ে থাকেন, পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তাঁর সঙ্গে পরে বিষয়টি আলাপ করতে পারেন। আর তিনি যদি কাছের মানুষ না-ই হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে এত ‘পার’ দেওয়ারই-বা কী আছে! এই জীবনবোধকে যদি অন্তরে ধারণ করতে পারেন, তাহলে হুটহাট মেজাজ গরম হয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। তারপরও চোখের সামনে এমন কিছু যদি-ঘটতে দেখেন, মেজাজ গরম হতে শুরু করে, তখন নিজেকে সামলানোর উপায়গুলোও জেনে রাখুন। এমনকি কখনো কখনো মেজাজ হারালেও পরবর্তী সময়ে নিজেকে কিছু কাজ করতে পারেন। তাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অশান্তি এড়ানো আরও সহজ হবে। এ প্রসঙ্গেই আজকের এই নিবন্ধ।
সময় নিন
যত খারাপ আচরণই কেউ আপনার সঙ্গে করুন না কেন, প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে সময় নিন। লম্বা করে শ্বাস নিন, গভীরভাবে। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যাওয়ার মতো ঠিক কী ঘটেছে, তা ভাবুন। ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করুন। হুট করে একটা ‘উচিত জবাব’ দিয়ে কিংবা চিৎকার-চেঁচামেচি করে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করাটা আদতে কোনো ভালো সমাধানের দিকে আপনাকে নিয়ে যাবে না। আর ও রকম আচরণে আপনার সম্মানও বাড়বে না।
ইতিবাচক হোন
সাময়িকভাবে যেটিকে ‘উচিত জবাব’ ভাবছেন, আদতে সেটি হয়তো ইতিবাচক কিছু নয়। তাই জবাব দিতে হলে ইতিবাচকভাবেই দিন। কোন বিষয়টা আপনাকে ব্যথিত করছে, অপর পক্ষকে বুঝিয়ে বলতে পারেন। কিংবা চুপ করে থাকতে পারেন। কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠে রাগ প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে মনে হলে থেমে যান। প্রয়োজনে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তারপর কথা বলুন। কেউ আপনাকে বা আপনার পরিবারকে অসম্মান করলেই তো আর আপনি বা আপনার পরিবার অসম্মানিত হয়ে যাচ্ছে না। বরং নিজের পরিবারের সম্মানের জায়গাটা বুঝিয়ে দিতেই মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করুন। এ ছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখুন। অন্যের জন্য কিছু করতে পারার মহত্ব কিন্তু সবার থাকে না।
মন নিয়ন্ত্রণ করুন
মেজাজ হারাচ্ছেন বলে অনুভব করলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্য কোনো বিষয়ের দিকে মন সরিয়ে নিন। বাড়িতে মেজাজ খারাপ হলে ঘরের কাজে মন দিতে পারেন। অফিসে মেজাজ বিগড়ে যেতে থাকলে এই মুহূর্তে হয়তো টেবিল গোছালেন অথবা ৫ মিনিটের বিরতি নিন। ঘরে-বাইরে যেকোনো জায়গায় এই মুহূর্তে সুযোগ পেলে নিজের পছন্দের অডিও ক্লিপ চালাতে পারেন, কানে দিতে পারেন এয়ারফোন। চোখ বুজে কল্পনা করতে পারেন প্রিয় কোনো দৃশ্য। আধ্যাত্মিক কোনো ভাবনাও ভাবতে পারেন। মেজাজ হারাতে থাকলে ওই জায়গা থেকে একটু দূরে সরে যাওয়া, হাঁটাহাঁটি বা অনন্ত ধরনের শরীরচর্চা, বই পড়া, টেলিভিশন দেখা – এগুলো ভালো কৌশল। একটা পিংপং বল ছোড়া আর ধরাও কিন্তু একটি চমৎকার কৌশল।
উপসংহার :- কখনো মেজাজ হারিয়ে ফেললে নিজে নিজে সেটির পর্যালোচনাও করুন। কোন পরিস্থিতিতে মেজাজ হারিয়েছিলেন, ঠিক কী কী ঘটেছিল, সেই সময় আপনি কেমন বোধ করছিলেন এবং আপনার কী ধরনের শারীরিক পরিবর্তন হয়েছিল, আপনি কী করেছিলেন, কী করতে পারতেন, এসব নিয়ে ভাবুন। ‘রাগের জার্নাল’ বানিয়ে সেই সময়কার প্রতিক্রিয়াগুলো লিখে রাখতে পারেন। তাতে পরবর্তী সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।