বাক্য

বাক্য কাকে বলে? শুদ্ধ বাক্যের ত্রিসূত্র, বাক্যের প্রধান অংশ, বাক্য জোট

বাক্য

বাক্য কাকে বলে?

যে পদসমূহের দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনের ভাব পুরোপুরিভাবে এবং সুষ্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়, সেই পদসমূহকে বাক্য বলে। একাধিক পদ একত্রে মিলিত হয়ে গঠিত হয় বাক্য।

যেমন – রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলী লিখেছেন। বিকেলে সূর্য অস্ত যায়।

শুদ্ধ বাক্যের ত্রিসূত্র

বাক্য নির্মাণের তিনটি শর্ত আছে। সেগুলি হল –

  • (ক) যোগ্যতা,
  • (খ) আকাঙ্খা,
  • (গ) আসত্তি।

(ক) যোগ্যতা

কখনো কোনো পদসমষ্টি বা পদ উচ্চারিত হওয়ার সময় ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে যদি কোনো অসংগতি না থাকে, তাহলে ওই পদসমষ্টির বাক্য গঠনের যোগ্যতা আছে এটা বুঝতে হবে।

যেমন :- তারা গাছ থেকে পেয়ারা পাড়ছে।

(খ) আকাঙ্খা

বাক্যের সামান্য অংশ বলবার পর বাকিটুকু বলার জন্য বক্তার যেমন আগ্রহ থাকে, ঠিক তেমনিই না বলা অংশটি শোনার জন্য শ্রোতার মনে একটি আগ্রহ জন্মায়। বাক্যে ব্যবহৃত পদসমূহ বা পদসমষ্টি এই ইচ্ছা বা আগ্রহ যদি সম্পূর্ণ করে তাহলে তখনই বুঝতে হবে বাক্যটির আকাঙ্খা আছে।

যেমন – “আমি সপ্তম শ্রেণিতে…..”, “সে একটি চিঠি…..”

(গ) আসত্তি

কোনো বাক্যের অর্থ উপলব্ধির জন্য পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত পদসমূহকে যখন যথাযথ স্থানে বিন্যস্ত করানো হয়, তখন তাকে আসত্তি বলে।

যেমন – থেকে গতকাল বৃষ্টি করে পড়ছে ঝমঝম (আসত্তি হীন)। আবার গতকাল থেকে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে (আসত্তি যুক্ত)

একসঙ্গে দীঘা বেড়াতে আমরা যাচ্ছি (আসত্তি হীন)।

আবার আমরা একসঙ্গে দীঘা বেড়াতে যাচ্ছি। (আসত্তি যুক্ত)

বাক্যের প্রধান অংশ

ঐতিহ্যগত ব্যাকরণে বাক্যকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়। যথা – উদ্দেশ্য ও বিধেয়।

উদ্দেশ্য

যখন কোনো বাক্যে যার সম্পর্কে বা যাকে কেন্দ্র করে কোনো কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য বলে। এককথায় বাক্যে যার সম্পর্কে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য বলে।

যেমন – আলেকজাণ্ডার ভারত জয় করেছিলেন।

উপরিউক্ত বাক্যটিতে ‘আলেকজাণ্ডার’ সম্পর্কে বলা হচ্ছে তাই ‘আলেকজাণ্ডার’ হল বাক্যের উদ্দেশ্য।

রাম বই পড়ে। এখানে রাম হল উদ্দেশ্য।

উদ্দেশ্য সম্প্রসারক

যে সকল পদ যোগ করে উদ্দেশ্য অংশটিকে সম্প্রসারণ করা হয় সেই সকল পদই হল উদ্দেশ্য সম্প্রসারক।

যেমন – রামচন্দ্র চোদ্দ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিলেন না লেখে রাজা দশরথের জ্যৈষ্ঠ পুত্র রামচন্দ্র চোদ্দ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিলেন লেখা হল। এখানে রাজা দশরথের জ্যৈষ্ঠ পুত্র পদসমষ্টি উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক হিসেবে কাজ করেছে তাই এই পদসমষ্টিকে আমরা বাক্যের উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক বলতেই পারি।

বিধেয়

আর ঠিক একই ভাবে বাক্যের অন্তর্গত সেই ব্যক্তি বা বস্তু অথবা প্রাণী সম্বন্ধে যা কিছু বলা হয়, তাই বিধেয়। এককথায় যখন কোনো বাক্যে উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় তাকে বিধেয় বলে।

যেমন – আলেকজাণ্ডার ভারত জয় করেছিলেন।

উপরিউক্ত বাক্যটিতে ‘ভারত জয় করেছিলেন’ হল বিধেয়।

রহিম বাড়ি ফিরে এলো। এখানে ‘ফিরে এলো’ হল বিধেয়।

বিধেয় সম্প্রসারক

যে সকল পদ সমষ্টির দ্বারা বিধেয় অংশটির সম্প্রসারণ ঘটানো হয়ে থাকে আমরা সেই পদসমূহকে বিধেয় সম্প্রসারক বলে থাকি।

যেমন – বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।

এখানে ‘১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলির জন্য নোবেল পুরস্কার’ হল বিধেয় সম্প্রসারক।

বাক্য জোট

বাক্যের প্রধান চারটি জোট বা গুচ্ছ হল-

  • (১) বিশেষ্য জোট,
  • (২) অনুসর্গ জোট,
  • (৩) ক্রিয়া জোট,
  • (৪) ক্রিয়াবিশেষণ জোট।

(১) বিশেষ্য জোট

বিশেষ্য জোট বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ঘিরে জোট বেঁধে কর্তা, কর্ম ইত্যাদির ভূমিকা পালন করে। এই জোটে বিশেষণ, অসমাপিকা ক্রিয়া, ক্রিয়া-বিশেষ্য ইত্যাদি পদবর্ধক হিসেবে থাকে।

যেমন – একদল ছাত্র বেরিয়ে গেল। (একদল ছাত্র)

ভাগীরথীতে নৌকাডুবি হওয়ার ঘটনাটা আমাকে ভাবাচ্ছে। (ভাগীরথীতে নৌকাডুবি হওয়ার ঘটনাটা)

আমাকে এখন চলে যেতে বলছ? (এখন চলে যেতে)

(২) অনুসর্গজোট

একপদী বা বহুপদী বিশেষ্য-সহ অনুসর্গ দিয়ে তৈরি হয় অনুসর্গ জোট।

যেমন – বড়ো পুকুরের পাশে ক্লাবঘর তৈরি হয়েছে। (বড়ো পুকুরের পাশে)

শচীন আর সৌরভকে দিয়ে ওপেন করাতে হবে। (শচীন আর সৌরভকে দিয়ে)

(৩) ক্রিয়াজোট

ক্রিয়াজোট একপদী এবং বহুপদী দুরকমই হতে পারে। একপদী ক্রিয়াজোটের উদাহরণ হল তুমি তখন খাচ্ছিলে। এক্ষেত্রে ‘খা’ ধাতুর সঙ্গে ‘চ্ছ’ প্রকার বিভক্তি, ‘ইল্’ কাল বিভক্তি এবং ‘এ’ পুরুষ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। এই বিভক্তিগুলিকে সহচর বা দিশারী বলা হয়।

বহুপদী ক্রিয়াজোট

বহুপদী ক্রিয়াজোট তিনপ্রকার –

(ক) যুক্ত ক্রিয়াজোট (যেমন – মাথাটা ব্যবহার করো।)

(খ) যুক্ত-যৌগিক ক্রিয়াজোট (যেমন – ও হঠাৎ চিৎকার করে উঠল।)

(গ) যুগ্ম ক্রিয়াজোট বা যৌগিক ক্রিয়াজোট (যেমন – আমি উঠে পড়লাম।) এক্ষেত্রে দ্বিতীয় ক্রিয়া আপতভাবে অর্থহীন এবং প্রথম ক্রিয়ার অর্থ দ্বিতীয় ক্রিয়াকে উসকে দেয়।

(৪) ক্রিয়াবিশেষণজোট

এই জোট ক্রিয়াপদ ও বিশেষণ পদকে বিশেষিত করে। সাধারণত সময়, স্থান, প্রকার, কারণ, প্রকৃতি বোঝাতে এই জোট ব্যবহৃত হয়।

যেমন – ছেলেটা ভালো খেলছে। ছেলেটি প্রাণ বাজি রেখে দৌড়চ্ছে। এমন করে বোলো না। বানানটা বার বার লেখো।

বাক্যের শ্রেণীবিভাগ

সাধারণত দুই ভাবে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ করা হয়। যথা – (ক) গঠনগত দিক দিয়ে এবং (খ) ভঙ্গিগত বা অর্থগত দিক দিয়ে।

(ক) গঠনগত দিক দিয়ে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ

গঠনগত দিক থেকে বাক্যকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – (১) সরল বাক্য, (২) জটিল বাক্য, (৩) যৌগিক বাক্য, (৪) মিশ্র বাক্য।

(১) সরল বাক্য :- এই বাক্যের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(i) সংজ্ঞা :- যে বাক্যে একটিমাত্র উদ্দেশ্য ও একটি মাত্র বিধেয় থাকে, তাকে সরল বাক্য (Simple Sentence) বলে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সরল বাক্যে একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকবেই।

(ii) উদাহরণ – রাম বই পড়ছে। রমেশ ছবি আঁকছে। ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষা দিচ্ছে।  রাম কবিতা লিখছে। শ্যামা গান গাইছে। সুস্মিতা পড়তে বসেছে।

(iii) সরল বাক্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ :- (a) সরল বাক্যে একটি উদ্দেশ্য ও একটি বিধেয় থাকে। যেমন – আমি পড়া করব। এই বাক্যে উদ্দেশ্য ‘আমি’ এবং বিধেয় ‘পড়া করব’।

(b) সরল বাক্যে একাধিক উদ্দেশ্য থাকলেও একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে।

(c) সরল বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়া উহ্য থাকতে পারে। যেমন – তোমার বোন শেফালী।

(d) সরল বাক্যে এক বা একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন – আমি ট্রেনে যেতে যেতে তোমায় দেখলাম।

(e) সরল বাক্যে উদ্দেশ্য পদটিও উহ্য থাকতে পারে।

(f) সরল বাক্যে এক বা একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকলেও একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকবেই। যেমন – পড়া করে, বাড়ি গিয়ে।

(g) কর্তার পূর্বে বিশেষণ বসতে পারে। যেমন – বিশ্ববিখ্যাত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘গীতাঞ্জলি’ লিখেছেন।

(২) জটিল বাক্য :- এই বাক্যের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(i) সংজ্ঞা :- যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য এবং এক বা একাধিক অপ্রধান খণ্ডবাক্য থাকে, তাকে জটিল বাক্য বলে। জটিল বাক্যে দুটি অসমাপিকা ক্রিয়া থাকবেই।

(ii) উদাহরণ :- যদি তুমি আসো তবে আমি যাব। যখন তুমি যাবে তখন আমায় ডাকবে। যত পড়বে তুমি তত শিখবে। অপরাধে যখন করেছো শাস্তি তখন পাবেই। যদি তুমি না আসো তবে আমি যাব না।

(iii) জটিল বাক্যের বৈশিষ্ট্য :- (a) জটিল বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য থাকবে।

(b) জটিল বাক্যে এক বা একাধিক খণ্ডবাক্য বর্তমান।

(c) জটিল বাক্যে কম করে দুটি অসমাপিকা ক্রিয়া থাকবেই।

(d) সাধারণতঃ সাপেক্ষ সর্বনাম পদ বাক্যের মধ্যে বৃহত্তর জটিলতা সৃষ্টি করে। যেমন – যখন তোমার কেউ ছিল না তখন ছিলাম আমি। (জটিল বাক্য)

(e) অপ্রধান খণ্ডবাক্যগুলি প্রধান খণ্ডবাক্যের সাথে সর্বনাম পদ দ্বারা যুক্ত হয়। এই সমন্বয় সাধারনত তিন ভাবে নিষ্পন্ন হয় – বিশেষ্য হয়ে, বিশেষণ হয়ে, ক্রিয়া বিশেষণ হয়ে।

(৩) যৌগিক বাক্য :- এই বাক্যের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(i) সংজ্ঞা :- যে বাক্য এক বা একাধিক সরল বা জটিল বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত, তখন সেই বাক্যকে যৌগিক বাক্য বলে। যৌগিক বাক্যে কম করে দুটি প্রধান খণ্ডবাক্য থাকবেই।

(ii) উদাহরণ :- তুমি আর আমি যাব। তাহারা শুনিল এবং সেইমাত্র চিৎকার করিয়া উঠিল। তুমি থাকতেও পারো আবার যেতেও পারো। ওষুধ খাও নতুবা অসুখ সারবে না। তিনি সরল ও সৎ।

(iii) যৌগিক বাক্যের বৈশিষ্ট্য :- (a) যৌগিক বাক্য একাধিক সরল বা জটিল বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়।

(b) যৌগিক বাক্যে প্রধান খণ্ডবাক্যগুলি পরস্পর স্বাধীন ও স্বতন্ত্র।

(c) যৌগিক বাক্যে অন্তত দুটি পরস্পর স্বাধীন খণ্ডবাক্য থাকবেই।

(d) প্রতিটি বাক্যে একটি করে সংযোজক অব্যয় আছে। যেমন – ও, এবং, আর।

(e) প্রধান খণ্ডবাক্যে একটি করে সমাপিকা ক্রিয়া থাকবেই। যেমন – আমাকে কলমটা এবং খাতাটা দাও।

(f) প্রতিটি বাক্যে একটি করে বিয়োজক অব্যয় ও বর্তমান থাকে। যেমন – কিন্তু, তবু, অথবা, কিংবা, নতুবা ইত্যাদি।

(৪) মিশ্র বাক্য :- এই বাক্যের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(i) সংজ্ঞা :- যে বাক্যের মধ্যে জটিল বাক্যের সঙ্গে সরল বাক্য অথবা জটিল বাক্যের সঙ্গে যৌগিক বাক্য কিংবা জটিল বাক্যের সঙ্গে অন্য একটি জটিল বাক্য সর্বনাম বা অব্যয় কর্তৃক যুক্ত হয়, তাকে মিশ্র বাক্য বলে।

(ii) উদাহরণ :- যদি তার সঙ্গে দেখা হয় তাহলে তাকে আসতে বলবে।

(iii) মিশ্র বাক্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য :- (a) মিশ্র বাক্য প্রধানত সরল ও যৌগিক, যৌগিক ও যৌগিক, যৌগিক ও জটিল এবং সরল ও জটিল বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত।

(b) এই উপবাক্যে একটি কর্তা আর একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে।

(c) এই পদের উপবাক্যগুলি অর্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বাধীন সত্তা ও স্বনির্ভরযুক্ত।

(d) উদাহরণের সাহায্যে বলা যেতে পারে “লেখাপড়া শিখতে পারলে তবেই মনের মতো ঘুরতে পারবে।”

উপরের বাক্যটিতে দেখা যাচ্ছে যে, এর দুটি উপবাক্য রয়েছে – ‘লেখাপড়া শিখতে পারলে’ এবং তবেই মনের মতো ঘুরতে পারবে।

‘লেখাপড়া শিখতে পারলে’ এই উপবাক্যটি স্বনির্ভর এবং অর্থ প্রকাশে অসমর্থ। তাই এটি অপ্রধান উপবাক্য। অপরদিকে ‘তবেই মনের মতো ঘুরতে পারবে’ এই উপবাক্যটি স্বনির্ভর এবং অর্থ প্রকাশে সক্ষম তাই এটি প্রধান উপবাক্য। আর সমগ্র বাক্যটি হল মিশ্র বাক্য।

(e) মিশ্র বাক্যের বেশ কিছু উদাহরণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন – যৌগিক ও সরল বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত বাক্যটি হল “সকল ছাত্র কবিতা আবৃত্তি করবে এবং নাটকে অংশ নেবে কিন্তু ছাত্রীরা শুধু গানই গাইবে।”

(খ) ভঙ্গিগত বা অর্থগত দিক দিয়ে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ :- অর্থগত বা ভঙ্গিগত দিক দিয়ে বাক্য মূলত সাত প্রকারের। যথা – (১) নির্দেশক বাক্য, (২) প্রশ্নবাচক বাক্য, (৩) অনুজ্ঞাবাচক বাক্য, (৪) প্রার্থনা বা ইচ্ছাসূচক বাক্য, (৫) সন্দেহবাচক বাক্য, (৬) আবেগসূচক বাক্য, (৭) শর্তসাপেক্ষ বাক্য।

(১) নির্দেশক বা উক্তিবাচক বাক্য :- যে বাক্যের দ্বারা কোনো বিষয়কে বা কোনো ঘটনাকে সাধারণভাবে নির্দেশ করা হয়, তাকে নির্দেশক বাক্য বলে।

যেমন – সে পড়াশোনা করে না। অসৎ ব্যক্তিকে কেউ শ্রদ্ধা করে না।

নির্দেশক বাক্যকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

(i) ইতিবাচক বা সদর্থক বা হ্যাঁ বাচক বা অস্তর্থক বাক্য :- যে নির্দেশক বাক্যের দ্বারা কোনো বক্তব্য স্বীকার করা হয় বা মেনে নেওয়া হয়, তাকে ইতিবাচক বাক্য বলে।

যেমন – রহিম প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যায়।

(ii) নেতিবাচক বা নঞর্থক বা না বাচক বা নাস্তার্থক বাক্য :- যে নির্দেশক বাক্যের দ্বারা কোনো বক্তব্য অস্বীকার করা হয় বা অসম্মতি জানানো হয়, তখন সেই বাক্যকে নেতিবাচক বাক্য বলা হয়।

যেমন – ভালো না লাগলে এসো না।

(২) প্রশ্নবাচক বাক্য :- যে বাক্যের দ্বারা কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বোঝায় তাকেই প্রশ্নবাচক বাক্য বলে।

যেমন – তোমার বাড়ি কোথায়?

(৩) অনুজ্ঞাবাচক বাক্য :- যে বাক্যের দ্বারা আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, প্রার্থনা, নিষেধ ইত্যাদি বোঝায়, তাকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে।

যেমন – কাজটি করে দিলে বাধিত থাকব।

অনুজ্ঞাবাচক বাক্যকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা –

(i) ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা :- ভবিষ্যৎকালে আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ প্রভৃতি বোঝালে তাকে ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা বলে।

যেমন – মন দিয়ে পড়াশোনা করবে।

(ii) বর্তমান অনুজ্ঞা :- বর্তমানকালে আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ ইত্যাদি বোঝালে, তাকে বর্তমান অনুজ্ঞা বলে।

যেমন – তোমরা পড়তে বসো।

(৪) প্রার্থনা বা ইচ্ছাসূচক বাক্য :- যে বাক্যে বক্তার মনের ইচ্ছা, ভাব বা প্রার্থনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাকে প্রার্থনা বা ইচ্ছাসূচক বাক্য বলে।

যেমন – ঈশ্বর তোমার প্রতি সহায় হোক।

(৫) সন্দেহবাচক বাক্য :- যে বাক্যের দ্বারা বক্তার মনে সংশয়, দ্বিধা, সন্দেহ প্রভৃতি ভাব আরোপিত হয়, তাকে সন্দেহবাচক বাক্য বলে।

যেমন – লোকটাকে হয়তো কোথাও আমি দেখেছি।

(৬) বিস্ময়বোধক বা উচ্ছ্বাসবাচক বা আবেগসূচক বাক্য :- যে বাক্যে বক্তার মনের আনন্দ, উৎসাহ, ভয়, ঘৃণা, শোক প্রভৃতি প্রকাশ পায়, তাকে আবেগসূচক বাক্য বলে।

যেমন – ছিঃ! এমন কথা বলতে আছে।

(৭) শর্তসাপেক্ষ বাক্য :- যে বাক্যের দ্বারা কোনো কারণ বা শর্ত প্রকাশ করা হয়, তাকে শর্তসাপেক্ষ বাক্য বলে।

যেমন – শ্যামল এলে তবে আমি যাব। না পড়া করলে ভালো ফল হবে না।

বাক্য রূপান্তর :- বাক্যের অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতিতে পরিবর্তন করাকেই বাক্য রূপান্তর বলা হয়। অর্থাৎ, বাক্য রূপান্তর করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, বাক্যের অর্থ যেন পাল্টে না যায়। বাক্যের অর্থ পাল্টে গেলে বাক্যটি অন্য বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। কিন্তু বাক্য রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতি তথা রূপ পরিবর্তন করতে হবে, বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করা যাবে না।

(১) সরল বাক্য থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর :- সরল বাক্যের কোন একটি অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি খন্ডবাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং তার খণ্ডবাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যটি সংযোগ করতে উপযুক্ত সাপেক্ষ সর্বনাম বা সাপেক্ষ অব্যয়গুলোর কোনোটি ব্যবহার করতে হয়।

উদাহরণ :-

সরল বাক্য : ভাল ছেলেরা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।

জটিল বাক্য : যারা ভাল ছেলে, তারা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।

সরল বাক্য :- ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।

জটিল বাক্য :- যে ভিক্ষা চায়, তাকে ভিক্ষা দাও।

(২) জটিল বাক্য থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর :- জটিল বাক্যটির অপ্রধান/ আশ্রিত খণ্ডবাক্যটিকে একটি শব্দ বা শব্দাংশে পরিণত করে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হয় এবং সাপেক্ষ সর্বনাম বা সাপেক্ষ অব্যয় বাদ দিতে হয়।

উদাহরণ :-

জটিল বাক্য :- যত দিন বেঁচে থাকব, এ কথা মনে রাখব।

সরল বাক্য :- আজীবন এ কথা মনে রাখব।

জটিল বাক্য :- যদি দোষ স্বীকার কর তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

সরল বাক্য :- দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।

(৩) সরল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর :- সরল বাক্যের কোনো অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি পূর্ণ বাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং পূর্ণ বাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সাথে সংযোগ করতে উপযুক্ত অব্যয় ব্যবহার করতে হবে।

উদাহরণ :-

সরল বাক্য : দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।

যৌগিক বাক্য :- দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না। (এক্ষেত্রে ‘তাহলে’ অব্যয়টি ব্যবহার না করলেও চলতো)

সরল বাক্য :- আমি বহু কষ্টে শিক্ষা লাভ করেছি।

যৌগিক বাক্য :- আমি বহু কষ্ট করেছি এবং (বা ফলে) শিক্ষা লাভ করেছি।

(৪) যৌগক বাক্য থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর :- যৌগিক বাক্যে একাধিক সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। অন্যদিকে সরল বাক্যে একটিই সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। তাই যৌগিক বাক্যের একটি সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রেখে বাকিগুলোকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হবে। যৌগিক বাক্যে একাধিক পূর্ণ বাক্য থাকে এবং তাদের সংযোগ করার জন্য একটি অব্যয় পদ থাকে। সেই অব্যয়টি বাদ দিতে হবে।

উদাহরণ :-

যৌগিক বাক্য :- তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয় নি। (সমাপিকা ক্রিয়া – হয়েছে, হয়নি)

সরল বাক্য :- তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয় নি। (‘হয়েছে’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘হলেও’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)

যৌগিক বাক্য :- মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে। (সমাপিকা ক্রিয়া – করে ও করে)

সরল বাক্য :- মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে। (‘করে’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘করলে’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)

(৫) জটিল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর :- জটিল বাক্যে কয়েকটি খণ্ডবাক্য থাকে এবং সেগুলো পরস্পর নির্ভরশীল থাকে। জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে এই খণ্ডবাক্যগুলোর পরস্পর নির্ভরতা মুছে দিয়ে স্বাধীন করে দিতে হবে। এজন্য সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলো তুলে দিয়ে যৌগিক বাক্যে ব্যবহৃত অব্যয়গুলোর মধ্যে উপযুক্ত অব্যয়টি বসাতে হবে। পাশাপাশি ক্রিয়াপদের গঠনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

উদাহরণ :-

জটিল বাক্য :- যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব।

যৌগিক বাক্য :- সে কাল আসবে এবং আমি যাব।

জটিল বাক্য :- যদিও তাঁর টাকা আছে, তবুও তিনি দান করেন না।

যৌগিক বাক্য :- তাঁর টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।

(৬) যৌগিক বাক্য থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর :- যৌগিক বাক্যে দুটি পূর্ণ বাক্য কোনো অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত থাকে। এই অব্যয়টি তুলে দিয়ে সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়ের প্রথমটি প্রথম বাক্যের পূর্বে ও দ্বিতীয়টি দ্বিতীয় বাক্যের পূর্বে বসালেই জটিল বাক্যে রূপান্তরিত হবে। তবে, সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলো পূর্ণ বাক্য দুটির প্রথমেই বসাতে হবে, এমন কথা নেই, উপযুক্ত যে কোনো জায়গাতেই বসানো যেতে পারে।

উদাহরণ :-

যৌগিক বাক্য :- দোষ স্বীকার কর, তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।

জটিল বাক্য :- যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।

যৌগিক বাক্য :- তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, কিন্তু তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।

জটিল বাক্য:- যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তবুও তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।

যৌগিক বাক্য :- এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।

জটিল বাক্য :- এ গ্রামে যে দরগাহটি আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।

(৭) ইতিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর :- (ক) বিশেষণ পদের বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে অনেক ইতিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়।

যেমন –

ইতিবাচক বাক্য :- তুমি খুব ভাল।

নেতিবাচক বাক্য : তুমি মোটেও খারাপ নও। (ভাল-খারাপ)

(খ) ‘না করলেই নয়’, ‘না করে পারবো না’ ইত্যাদি বাক্যাংশ যোগ করে অনেক ইতিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করতে হয়।

যেমন –

ইতিবাচক বাক্য :- তুমি কালকে আসবে।

নেতিবাচক বাক্য :- তুমি কালকে না আসলেই নয়।

ইতিবাচক বাক্য :- গুগল ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার ঢুকবেই।

নেতিবাচক বাক্য :- গুগল ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার না ঢুকে পারবেই না।

(গ) নতুন কোনো বিপরীতার্থক বা নঞর্থক (না বোধক) শব্দ যোগ করে।

যেমন –

ইতিবাচক বাক্য :- সে বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকল।

নেতিবাচক বাক্য :- সে বইয়ের পাতা উল্টানো বন্ধ রাখলো না।

(৮) নেতিবাচক বাক্যকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তর :- (ক) বিশেষণ পদের বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে অনেক নেতিবাচক বাক্যকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়।

যেমন –

নেতিবাচক বাক্য :- সে ক্লাসে উপস্থিত ছিল না।

ইতিবাচক বাক্য :- সে ক্লাশে অনুপস্থিত ছিল।

(খ) নেতিবাচক বাক্যের না বোধক বাক্যাংশকে কোনো বিপরীতার্থক বিশেষণে রূপান্তর করেও ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়।

যেমন –

নেতিবাচক বাক্য :- দেবার্চনার কথা তিনি কোনোদিন চিন্তাও করেন নি।

ইতিবাচক বাক্য :- দেবার্চনার কথা তার কাছে অচিন্ত্যনীয় ছিল।

নেতিবাচক বাক্য :- এসব কথা সে মুখেও আনতে পারত না।

ইতিবাচক বাক্য :- এসব কথা তার কাছে অকথ্য ছিল।

(গ) নতুন কোনো ইতিবাচক বিপরীতার্থক শব্দ যোগ করে।

যেমন –

নেতিবাচক বাক্য :- মা জেগে দেখে খোকা তার পাশে নেই।

ইতিবাচক বাক্য :- মা জেগে দেখে খোকা তার পাশে অনুপস্থিত।

(৯) প্রশ্নবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর :- মূলত প্রশ্নবাচক বাক্যকে ইতিবাচক থেকে সরাসরি নেতিবাচক বাক্যে পরিণত করলেই নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কেবল প্রশ্নবাচক বাক্যকে ইতিবাচক হিসেবে কল্পনা করতে হয়। আর যেগুলো সরাসরি ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তরিত হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক থেকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের নিয়মে নেতিবাচক করতে হয়।

যেমন –

প্রশ্নবাচক :- তুমি কি কাল স্কুলে এসেছিলে?

নেতিবাচক :- তুমি কাল স্কুলে আসো নি।

প্রশ্নবাচক :- গুগল ওয়েবসাইটটি কি পড়াশোনা করার জন্য খারাপ?

নেতিবাচক :- গুগল ওয়েবসাইটটি পড়াশোনা করার জন্য খারাপ না।

প্রশ্নবাচক :- তুমি কি ছবিটা দেখো নি?

নেতিবাচক : তুমি ছবিটা না দেখে পারো নি।

(১০) প্রশ্নবাচক বাক্যকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তর :- কিছু প্রশ্নবাচক বাক্যকে স্বাভাবিকভাবে সরাসরি প্রশ্নবাচক থেকে ইতিবাচকে রূপান্তরিত করা যায়। আর যেগুলো সরাসরি রূপান্তর করলে নেতিবাচক হয়, সেগুলোকে নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের নিয়মে ইতিবাচক করতে হয়।

যেমন –

প্রশ্নবাচক :- তুমি কি ছবিটা দেখো নি?

ইতিবাচক :- তুমি ছবিটা দেখেছো।

প্রশ্নবাচক :-তুমি কি কাল স্কুলে এসেছিলে?

ইতিবাচক :- তুমি কাল স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে।

(১১) ইতিবাচক ও নেতিবাচক বা বিবৃতিমূলক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তর

বিবৃতিমূলক বাক্যে প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে সেগুলোকে বিপরীত বাক্যে (ইতি হলে নেতি এবং নেতি হলে ইতিবাচকে) সরাসরি রূপান্তর করলেই বাক্য রূপান্তর সম্পন্ন হয়।

যেমন-

বিবৃতি :- তুমি কাল স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে।

প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে : তুমি কি কাল স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে?

প্রশ্নবাচক :- তুমি কি কাল স্কুলে উপস্থিত ছিলে?/ তুমি কি কাল স্কুলে এসেছিলে?

বিবৃতি :- তুমি ছবিটা দেখো নি।

প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে :- তুমি কি ছবিটা দেখো নি?

প্রশ্নবাচক :- তুমি কি ছবিটা দেখেছো?

(১২) আবেগসূচক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

বিস্ময়সূচক বা আবেগসূচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তরিত করার জন্য আবেগের ভাবটি প্রশমিত করে বাক্যটিকে সরল বিবৃতিতে পরিণত করতে হবে। আবেগসূচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে পরিণত করার সময় আবেগসূচক অব্যয় থাকলে সেটি বাদ দিতে হবে। নির্দেশক বাক্যের মধ্যে আবেগসূচক অব্যয়ের জন্য উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যায় না।

যেমন – “কী বড় সাপ!” বললে বক্তার বিস্ময়ের স্ফুরণ ঘটলো, কিন্তু যদি বলা হয়, “সাপটি খুব বড়ো।” তাহলে বিস্ময় অপগত হলো, বাক্যটি একটি সাধারণ বিবৃতিতে পরিণত হলো, হয়ে পড়লো নির্দেশক বাক্য।

(১৩) প্রার্থনাসূচক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

প্রার্থনাসূচক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্য করার জন্য ‘কামনা করছি’, ‘আশা করছি’, ‘প্রার্থনা করছি’ প্রভৃতি শব্দবন্ধ ব্যবহার করতে হবে। এর সাথে ক্রিয়াটিকেও বদলে নিতে হতে পারে।

যেমন –

প্রার্থনা :- “তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো।”

নির্দেশক :- “তোমার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।”

প্রার্থনা :- “ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন”

নির্দেশক :- “ঈশ্বরের কাছে তোমার মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করি।”

(১৪) শর্তসাপেক্ষ বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

শর্তসাপেক্ষ বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তরিত করার জন্য শর্তের ভাবটিকে গৌণ করে দিতে হবে, বিবরণের ভাবটিকে প্রাধান্য দিতে হবে। শর্তটিকে ক্রিয়াবিশেষণের রূপ দিলে বাক্যটি অনেকটাই বিবৃতিমূলক হয়ে ওঠে। সে জন্য ইলে-প্রত্যয়ান্ত অসমাপিকা ক্রিয়াটির বিলোপ ঘটাতে হবে। তবে শর্তের ভাবটি সবসময় পুরোপুরি চাপা পড়ে না।

শর্তসাপেক্ষ :- তুমি এলে আমি যাবো।

নির্দেশক :- তোমার আসার পর আমি যাবো।

শর্তসাপেক্ষ :- সকাল হলেই পাখিরা ডাকবে।

নির্দেশক :- সকাল হওয়ার পর পাখিরা ডাকবে।

শর্তসাপেক্ষ :- মন দিয়ে পড়াশোনা করলে সফল হবে।

নির্দেশক :- মন দিয়ে পড়াশোনা করার মাধ্যমেই সফল হবে।

(১৫) সন্দেহবাচক থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

সন্দেহবাচক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর করার প্রয়োজন আদৌ কতটা রয়েছে সে নিয়ে সন্দেহ আছে। তবু ব্যাকরণগত ভাবে রূপান্তর করা সম্ভব। অবশ্যই সন্দেহবাচক অব্যয় লোপ পায়। সে রকম দু একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

সন্দেহবাচক :- পাছে কেউ দেখে ফেলে।

নির্দেশক :- কেউ দেখে ফেলার সম্ভাবনা আছে।

Leave a Comment