ইট-পাথরের প্রাণহীন শহরে চার দেওয়ালে বন্দী জীবন, তা সে বাসাতেই হোক বা অফিসেই। সেই কাক ডাকা ভোরে বিছানার আলিঙ্গন ছেড়ে উঠতেই শুরু হয় অফিসের তাড়া! তারপর বাসে ঝুলে ঝুলে বা অফিসের বড় পদের প্রার্থী হলে প্রাইভেট কারে চেপে অফিস যাত্রা। আবার দিন শেষে ক্লান্তির ছাপ নিয়ে সেই বাড়ি ফেরা। নানা কর্মব্যস্ততায় নিজেকে সময় দেওয়ার কথা মনেই থাকে না যেন।
এরকম গোলক ধাঁধাঁময় জীবনপাঁকে, কোনো এক কুহু কুহু কোকিল ডাকা সকালবেলার কথাই বলছি। আপনি অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতে যাচ্ছেন ঠিক সেই মুহূর্তে আপনার প্রিয় মানুষটি যদি পকেটে একখানা কাগজ গুঁজে দিয়ে আড়চোখে আপনার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হেসে বলে যে, “একা একা পড়ো কিন্তু!” তখন দু’এক সেকেন্ডের জন্য হলেও আপনার বুকের গহীন কোণে আনন্দের এক সমীরণ ঢেউ খেলে কি যাবে না? গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে কর্মব্যস্ত জীবনছবি দেখতে দেখতে অফিসে ছোটার মুহূর্তে হাতখানা কি একেবারেই নিশপিশ করবে না? কবে আর চিরকুটটি খুলে শব্দগুলোর মাঝে ঝড় তুলবেন? অথবা অফিসের কাজের মাঝে কোনো এক ছুতোয় চিরকুটখানা কি পড়তে আপনার একেবারেই মনে চাইবে না? না! বিশ্বাসযোগ্য নয়। বরং এর বিপরীতটা খুব কমই ঘটতে পারে বৈকি!
‘প্রেমপত্র’ শব্দটির সাথে আমরা সকলেই খুব পরিচিত। প্রেমে পড়েন নি এমন মানুষের সংখ্যা গোপনে বা প্রকাশ্যে হাতেগোনা বা নেই বললেও ভুল হবে না। এই প্রেম বিষয়টি ভাবগত। প্রেমের ধরণ, রকম-সকমেও রয়েছে গাঢ় রকমের ভিন্নতা। এখন তো ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদি নানা আধুনিকতার ভিড়ে প্রেমপত্র হারিয়ে গেলেও প্রেমপত্রের আবেদন কিন্তু একেবারেই হারিয়ে যায় নি। দুরু দুরু বুকে কাঁপা কাঁপা হাতে লেখাগুলোই ধরে রাখত অনুভবের প্রথম অনুভূতিগুলোকে৷
স্কুলফেরত রাস্তায়, বিকেলের সোনালি পড়ন্ত আলো কে সাক্ষী রেখে হাতে হাতে পৌঁছে যাওয়া সেই সব প্রেমপত্র আজকের প্রজন্মের কাছে হয়তো বা অচেনা। সময়ের দৌঁড়ে হয়তো চিঠিপত্র লেখার সময় হয়ে ওঠে না, তবুও যদি প্রিয় মানুষের জন্য সময় বের করে মনের না বলা কথাগুলো লিখেই ফেলেন, তবে পত্রটি প্রিয় মানুষটির হাতে পড়তেই দেখবেন কেমন এক ম্যাজিক ঘটে যায়! সময়স্রোতে ধীর বহমান একঘেয়ে জীবন মুহূর্তেই হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক চাঙ্গা! প্রেমময় জীবন আবারো বয়ে যেতে পারে দ্বিগুণ, তিনগুণ, চতুর্গুণ বেগে, ঠিক যেমনটি ছিল শুরুর দিকে।
হাতে লেখা প্রেম পত্র আজ ই-মেইল আর মোবাইল মেসেজের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির আধুনিকতায় চিঠিপত্র এখন জাদুঘরের উপাদান হলেও এক সময় পৃথিবী কাঁপানো মহানায়করাও প্রেমপত্র লিখেছেন। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট খেকে শুরু করে কবি কীটস, চার্চিল থেকে হেন্ড্রিক্সের সে প্রণয় প্রস্তাব চিরকালই রোমান্সের শ্রেষ্ঠ শিহরণ দিয়ে যায়৷ ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে তারা যেমনই হোন না কেন, তাঁদের রোমান্টিক মন কিন্তু প্রেমিক কবিপুরুষের তুলনায় কোনো অংশে কম ছিল না। সেই ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের প্রেমপত্র নিয়েই আমাদের এই নিবন্ধ ঐতিহাসিক প্রেমপত্র।