এবার কৃষক বন্ধু, লক্ষ্মীর ভান্ডার, আবাস যোজনা উপভোক্তা যাচাই হবে, বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, কৃষক বন্ধু কবে টাকা ঢুকবে, লক্ষীর ভান্ডার টাকা ঢুকবে
কৃষক বন্ধু, লক্ষ্মীর ভান্ডার, আবাস যোজনা উপভোক্তা যাচাই হবে, বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী
ট্যাব কেনার টাকা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষক বন্ধু ও বার্ধক্য ভাতা থেকে অর্থ উধাও
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে শুরু হয়েছে বহু আলোচিত শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প ‘তরুণের স্বপ্ন’। এই প্রকল্পের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, যাতে তারা ভবিষ্যতের প্রতি নতুন আশার দৃষ্টি রাখতে পারে। নির্দিষ্ট মাপকাঠির মধ্যে থাকা উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়াদের প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় ১০ হাজার টাকা।
ঘটনার তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য
ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগের পর ঘটনাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে তদন্ত শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তদন্তের সূত্র ধরে সাইবার পুলিশ বিভাগের হাতে আসে বিস্ফোরক কিছু তথ্য। জানা যায়, একটি সংগঠিত জালিয়াতি গ্যাং শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট নম্বর সংগ্রহ করে নিজেদের অ্যাকাউন্ট নম্বরের সাথে পরিবর্তন করেছে। অর্থাৎ, প্রকৃত উপভোক্তা শিক্ষার্থীদের বদলে জালিয়াতদের অ্যাকাউন্টে সরকারি টাকা জমা পড়েছে। এই জালিয়াতি চক্র এতটাই সুচারুভাবে এই কাজ করেছে যে প্রথমদিকে বিষয়টি সবার নজর এড়িয়ে যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ
এই জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ ও ‘বার্ধক্য ভাতা’ প্রকল্পের টাকাও চুরি
পুনরায় তদন্ত শুরু হতেই দেখা যায়, শুধু ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের টাকাই নয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আরও দুটি জনপ্রিয় প্রকল্প—‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ ও ‘বার্ধক্য ভাতা’ প্রকল্পের টাকাও একই কৌশলে আত্মসাৎ করা হয়েছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে মহিলাদের অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে, যা অনেক মহিলার জীবনে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে। অন্যদিকে, বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পটি বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য সরকারী অনুদানের ব্যবস্থা। কিন্তু এই প্রকল্পগুলির প্রাপকদের জন্য বরাদ্দ অর্থও ওই প্রতারক চক্রের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।
সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টগুলি চিহ্নিত করে ফ্রিজ করা
লালবাজার সাইবার পুলিশের তৎপরতায় এই প্রতারণা রোধে বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা হয় এবং সেগুলিকে ফ্রিজ করা হয়। সাইবার পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, শুধু ‘তরুণের স্বপ্ন’-এর টাকাই নয়, বরং লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এবং বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পের টাকাও প্রতারকদের ওই চক্রের অ্যাকাউন্টগুলিতে প্রবাহিত হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টের লেনদেন পরীক্ষা করে দেখা যায়, পূর্বেও এই অ্যাকাউন্টগুলি প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।
ঝাড়খণ্ডের সাথে জালিয়াতি গ্যাংয়ের যোগসূত্র
তদন্তে উঠে আসে যে, এই প্রতারণা শুধু পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর যোগসূত্র রয়েছে ঝাড়খণ্ডে। পূর্ব বর্ধমান এবং পূর্ব মেদিনীপুরসহ একাধিক জেলায় এই ধরনের জালিয়াতির হদিশ পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের এই জালিয়াত চক্রটি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করে চলেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের নজরদারি ও দ্রুত প্রতিকার ব্যবস্থা
এ ঘটনার সত্যতা নবান্নের শীর্ষ পর্যায়ের আধিকারিকদের নজরে আসতেই তাঁরা কড়া নির্দেশ জারি করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগতভাবে এই ঘটনার তদারকি করছেন। তিনি বঞ্চিত স্কুলপড়ুয়াদের অর্থ দ্রুত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে প্রকৃত উপভোক্তারা তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত না হয়। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দোষীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ভবিষ্যতে এমন ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে সরকারের কাছে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
টাকা দেওয়ার বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ
প্রশাসন এবার থেকে যে কোনো প্রকল্পের টাকা দেওয়ার সময় উপভোক্তা যাচাই করবে অর্থাৎ ভোটার কার্ড, আধার কার্ডে যে নাম রয়েছে ব্যাংক একাউন্টেও একই নাম থাকতে হবে। যাতে উপযুক্ত উপভোক্তারা সেই প্রকল্পের টাকা পায়। সেই কারণে এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে টাকা অন্যের একাউন্টে যাওয়া অনেকটাই ঠেকানো যাবে বলে সকলেই নিশ্চিত।