সরলা দেবী চৌধুরাণী

আজ সরলা দেবী চৌধুরাণী -র জন্ম, পরিচিতি, শৈশব, শিক্ষা, রাজনৈতিক কর্ম, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা, শিবাজী উৎসব পালন, পত্রিকা সম্পাদনা, তাঁর রচিত গ্ৰন্থ সম্পর্কে জানবো।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের উল্লেখযোগ্য নারী সরলা দেবী চৌধুরানী প্রসঙ্গে ঠাকুরবাড়ির অন্যতম নারী সরলা দেবী চৌধুরানীর জন্ম, পিতামাতা, শৈশব, সরলা দেবী চৌধুরানীর শিক্ষা, সরলা দেবী চৌধুরানীর দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ, সরলা দেবী চৌধুরানীর জীবিকা, সরলা দেবী চৌধুরানীর পত্রিকা সম্পাদনা, সরলা দেবী চৌধুরানীর প্রিয় পত্রিকা, রাজনীতিতে সরলা দেবী চৌধুরানীর অংশগ্ৰহণ, সরলা দেবী চৌধুরানীর দ্বারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা, সরলা দেবী চৌধুরানীর দ্বারা ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল স্থাপন ও সরলা দেবী চৌধুরানী রচিত গ্ৰন্থ।

Table of Contents

বীরাঙ্গনা নারী সরলা দেবী চৌধুরাণী

ঐতিহাসিক চরিত্রসরলা দেবী চৌধুরাণী
জন্ম৯ সেপ্টেম্বর, ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ
অবদানলক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা, শিবাজী উৎসব, প্রতাপাদিত্য উৎসব প্রচলন
মৃত্যু১৮ আগস্ট, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ
সরলা দেবী চৌধুরাণী

ভূমিকা :- প্রাচীনযুগ থেকেই নারীরা ইতিহাসের পাতায় স্থান অধিকার করে এসেছে। প্রাচীন মিশরের নেফারতিতি এবং ক্লিওপেট্রা; ভারত -এর সুলতান রাজিয়া, রাণী দুর্গাবতী, নূরজাহান প্রমুখ নারীর কথা জানা যায়, যাঁরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।

আধুনিক যুগে নারী

ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাংলার নারীদের পথচলা মসৃণ ছিল না। পুরুষের সাহচর্য ও পরিচয়ে তৈরি হয়েছিল তাদের পরিচয়। পারিবারিক নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই একটা সীমিত জায়গা তৈরি করে তাদের জীবন চলছিল।

নারীদের পিছিয়ে পড়ার কারণ

মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাদের পেশা নিয়ে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনরত পুরুষেরাও সেই সময়ে নারীর কথা চিন্তা করেনি।

ঠাকুর বাড়ির অন্যতম নারী সরলা দেবী চৌধুরাণী

কিছু নারী নিজেরাই এগিয়ে এসে তৈরি করেছিলেন আত্মপরিচয়। নারীদের এই এগিয়ে আসায় অগ্রগণ্য উদাহরণ রেখেছিলেন কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির কিছু নারী। সেরকমই একজন ছিলেন সরলা দেবী চৌধুরাণী।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর জন্ম

সরলা দেবী চৌধুরাণী তাঁর মামাবাড়ি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ১৮৭২ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর জম্মগ্রহণ করেন।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর পিতা মাতা

পিতা জানকীনাথ ঘোষাল ছিলেন স্বাধীন ও মুক্তমনের মানুষ। আর মা স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন সে যুগের সফলতম লেখিকাদের একজন।  

সরলা দেবী চৌধুরাণীর শৈশব

সরলা দেবীর শৈশব কাটে জোড়াসাঁকোয় মামাবাড়িতে; মামাত, মাসতুতো ভাই, বোনেদের সাথে মিলে এক উৎকৃষ্ট সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক পরিবেশে। সকলের প্রিয় ‘রবি মামা’ ছিলেন সব সৃষ্টিশীলতার কেন্দ্রবিন্দু।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর শিক্ষা

  • (১) সরলা দেবী প্রথম নজরে আসেন ১৩ বছর বয়সে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে যখন বেথুন কলেজে প্রবেশ করেন।
  • (২) ঠাকুর পরিবারে মেয়েদের এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম।
  • (৩) এন্ট্রান্সে ইতিহাসে তিনি মেয়েদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন।
  • (৪) পরে তিনি বেথুন কলেজ থেকে ইংরেজিতে সাম্মানিক নিয়ে বি.এ.পাশ করেন মাত্র আঠার বছর বয়েসে। পেলেন ।
  • (৫) মেয়েদের মধ্যে তিনিই প্রথম পদ্মাবতী স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর জীবিকা

সরলা দেবীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব জীবিকা অর্জনের কথা ভাবা। এর আগে মেয়েরা যতই বিলেতে যান, গাড়ি চালান, লেখালেখি করুন আর কঠিন পরীক্ষায় বসার কথা ভাবুন, জীবিকা অর্জনের কথা সেভাবে তাদের চিন্তায় স্থান পেত না।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ

দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সময় সরলা দেবীর সঙ্গে দেখা হয় মহীশূরের দেওয়ান নরসিংহ আয়েঙ্গারের। সরলার ব্যক্তিত্ব ও কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে তিনি তাকে মহীশূরের মহারানী গার্লস কলেজে সুপারিন্টেনডেন্টের পদে আহ্বান জানান। সরলা সাগ্রহে গ্রহণ করেন সেই চাকরি।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর চাকরী গ্রহণে ঠাকুর পরিবারের অনিচ্ছা

অতদূরে চাকরি করতে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ঠাকুরবাড়ির অনেকেই। কিন্তু সরলা দেবী গ্রাহ্য করেননি কিছুই। যেটা করতে চেয়েছেন, সেটাই করেছেন।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর দ্বারা পত্রিকা সম্পাদনা

মায়ের সম্পাদিত ‘ভারতী’ পত্রিকার সঙ্গে সরলা দেবী ও তাঁর বোন হিরন্ময়ী যুক্ত ছিলেন সেই বালিকা বয়েস থেকে। ‘ভারতী’ যে শুধুই ঠাকুরবাড়ির পত্রিকা হয়ে থাকেনি এই কৃতিত্ব তাঁরই। ‘ভারতী’তেই আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, তাঁর ‘বড়দিদি’ গল্পের মাধ্যমে।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর দ্বারা পারিশ্রমিক দানের প্রচলন

লেখকদের পারিশ্রমিক দেবার প্রচলনও তিনি শুরু করেছিলেন। ‘ভারতী’র জন্যে প্রায় জোর করে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিলেন ‘চিরকুমার সভা’।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর প্রিয় পত্রিকা

‘ভারতী’ তাঁর এতটাই ভালোবাসার জায়গা ছিল যে পরে পাঞ্জাবে চলে গেলেও সম্পাদনা ও পরিচালনের জন্যে তিনি কলকাতায় ছুটে আসতেন।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর রাজনীতিতে যোগদান

শিল্প, সাহিত্যের নানা দিকে নারীরা তখন নিজেদের মেলে ধরলেও, সক্রিয় রাজনীতিতে তাদের দেখা যেত না। স্বদেশিয়ানায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন সরলা দেবী। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি যুবকদের একত্রিত করে শুরু করলেন ‘বীরাষ্টমী’ ব্রত, ‘শিবাজী উৎসব’ ও ‘প্রতাপাদিত্য’ উৎসব।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর দ্বারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার স্থাপন

সাহসিকতা ও তেজস্বিতা ছিল তার খুব পছন্দের। স্বদেশি বস্ত্র বিক্রির জন্য মানিকতলায় খুললেন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। এই হস্তশিল্পের কাজে নিয়োগ করলেন দুস্থ বিধবাদের।

সরলা দেবী চৌধুরাণীর দ্বারা ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল প্রতিষ্ঠা

পরবর্তীকালে দুস্থ বাঙালি নারীদের অর্থ রোজগারের জন্য তিনি ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল’ প্রতিষ্ঠা করেন।

 সরলা দেবী চৌধুরাণী রচিত গ্রন্থ

সরলা দেবী চৌধুরাণী রচিত গ্রন্থ গুলি হল ‘নববর্ষের স্বপ্ন’ ‘জীবনের ঝরাপাতা’ শিবরাত্রি পূজা প্রভৃতি।

উপসংহার :- নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের জোরে সমাজে নারীদের প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন সরলা দেবী চৌধুরানী।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “সরলা দেবী চৌধুরাণী” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) সরলা দেবী চৌধুরাণী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সরলা দেবীর পিতার নাম কি?

জানকীনাথ ঘোষাল।

২. ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল কে প্রতিষ্ঠা করেন?

সরলা দেবী চৌধুরাণী ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ।

৩. লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কে প্রতিষ্ঠা করেন?

সরলা দেবী চৌধুরাণী।

Leave a Comment