২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

ইরাক-ইরান যুদ্ধ

ইরাক-ইরান যুদ্ধ প্রসঙ্গে যুদ্ধের সময়কাল, যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, যুদ্ধের অগ্রগতি, যুদ্ধের অবসান, যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।

১৯৮০-৮৮ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ইরাক-ইরান যুদ্ধ প্রসঙ্গে ইরাক-ইরান যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বা পটভূমি বা কারণ, ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময়কাল, ইরাক-ইরান যুদ্ধের অগ্রগতি, ইরাক-ইরান যুদ্ধের অবসান ও ইরাক-ইরান যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে জানব।

ইরাক-ইরান যুদ্ধ

ঐতিহাসিক যুদ্ধইরাক-ইরান যুদ্ধ
সময়কাল১৯৮০-৮৮ খ্রি
বিবাদমান পক্ষইরাক ও ইরান
হতাহত১০ লক্ষ মানুষ
কুর্দ বিদ্রোহইরাক
ইরাকের রাষ্ট্রপতিসাদ্দাম হুসেন
যুদ্ধের অবসান১৯৮৮ খ্রি
ইরাক-ইরান যুদ্ধ

ভূমিকা :- ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে ইরানে মহম্মদ রেজা পাহলভি-র শাসনাধীন শাহিতন্ত্রের পতন এবং শিয়াপন্থী আয়াতুল্লা খোমেইনির নেতৃত্বে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা (১ এপ্রিল) আমেরিকা ও ইরাকের সঙ্গে ইরানের বিরোধের সূচনা করে।

উপসাগরীয় সংকটের বহিঃপ্রকাশ

মূলত যে তিনটি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে উপসাগরীয় সংকটের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল সেগুলি হল –

ইরাক-ইরান যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ইরাক ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার প্রেক্ষাপট হিসেবে বিভিন্ন ঘটনা কাজ করেছিল। যেমন –

(১) সাদ্দামের ক্ষমতালিপ্সা

ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেন ছিলেন সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং ক্ষমতালিপ্সু। তিনি নিজেকে আরব দুনিয়ার একচ্ছত্র নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন।

(২) সম্ভাব্য বিপ্লব প্রতিরোধের চেষ্টা

আয়াতুল্লা খোমেইনির নেতৃত্বে ইরানে মৌলবাদী শিয়াপন্থীদের উত্থান এবং ইসলামি বিপ্লবের ঘটনায় ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেন আশঙ্কিত হয়েছিলেন। ইসলামি বিপ্লবের ঢেউ যাতে ইরাকে প্রবেশ করতে না পারে এবং খোমেইনিকে যাতে ক্ষমতাচ্যুত করা যায় সেই উদ্দেশ্যে সাদ্দাম হুসেন আগে থেকেই ইরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে নিজের ক্ষমতা সুনিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।

(৩) তেলের ওপর আধিপত্যের চেষ্টা

সাদ্দাম হুসেন উপসাগরীয় অঞ্চল তথা মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদের ওপর নিজের একক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। এখানকার তেলের উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রে সাদ্দামের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইরান।

(৪) সাত-এল-আরব প্রণালীর দখল

ইরাক ও ইরানের মাঝখানে অবস্থিত সাত-এল-আরব প্রণালী দিয়ে উভয় দেশের তেল রপ্তানি চলত। এই প্রণালীতে ইরানের অধিকার ধ্বংস করে নিজের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সাদ্দাম হুসেন ইরান আক্রমণের পরিকল্পনা করেন।

ইরাক-ইরান যুদ্ধের গতি

এই যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ছিল নিম্নরূপ –

(১) যুদ্ধের সূত্রপাত

ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেন ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর ইরানের বিমানঘাঁটিগুলিতে এবং স্থলপথে আক্রমণের মাধ্যমে যুদ্ধের সূত্রপাত করেন। ইরান তার প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসে।

(২) যুদ্ধের তীব্রতর পরিস্থিতি

আমেরিকা, রাশিয়া ও অন্যান্য পশ্চিমি শক্তিগুলি গোপনে ইরাক ও ইরানকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করলে যুদ্ধ আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে।

(৩) ইরানের অগ্রগতি

১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধের মোড় ঘুরতে শুরু করে। ইরান তার ভূখণ্ড থেকে ইরাকি বাহিনীকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়। এই সময় ইরাক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও ইরান তা নাকচ করে। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ যুদ্ধ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।

(৪) ইরাকে কর্দ বিদ্রোহ

এদিকে ইরানের মদতে ইরাকের কুর্দিস্তান পার্বত্য অঞ্চলে সাদ্দামবিরোধী শিয়ারা ব্যাপক বিদ্রোহ শুরু করে। তারা বিস্তৃত অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে এবং ইরাক-তুরস্ক তেলের পাইপ লাইন ধ্বংস করার উদ্যোগ নেয়। এর ফলে ইরাকের সংকট বৃদ্ধি পায় এবং ইরান থেকে তারা পিছু হটতে থাকে। সাদ্দাম বিদ্রোহী কুর্দদের ওপর জনবিধ্বংসী রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে (মার্চ) হাজার হাজার কুর্দকে হত্যা করেন।

ইরাক-ইরান যুদ্ধের অবসান

এরপর ইরান ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুলাই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেয়। এর ফলে ইরাক-ইরান যুদ্ধের অবসান হয়।

ইরাক-ইরান যুদ্ধের ফলাফল

দীর্ঘ ৮ বছর ধরে চলা ইরাক-ইরান যুদ্ধের ফলাফলগুলি উপসাগরীয় অঞ্চল তথা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেমন –

(১) ক্ষয়ক্ষতি

এই যুদ্ধে ইরাক বা ইরান কোনো পক্ষই জয়লাভ করে নি বা বিশেষ সুবিধা করতে পারে নি। দীর্ঘ যুদ্ধে উভয় দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ ও জনসম্পদ ধ্বংস হয়। উভয় দেশের শিল্পকারখানা ও বিমানঘাঁটি ধ্বংস হয় এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ হতাহত হয়।

(২) দ্বিধাবিভক্ত আরব দুনিয়া

এই যুদ্ধের ঘটনায় আরবের দেশগুলি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। সৌদি আরব, জর্ডন ও কুয়েত ইরাকের পক্ষ নিয়েছিল। অপরদিকে সিরিয়া, লিবিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, আলজিরিয়া প্রভৃতি দেশ ইরানের পক্ষ নিয়েছিল।

(৩) ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রসার

ইরাক-ইরান যুদ্ধের সুযোগে বৃহৎ শক্তি আমেরিকা ও রাশিয়া উপসাগরীয় অঞ্চলের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সুযোগ পায় এবং এই অঞ্চলে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রসার ঘটায়।

উপসংহার :- দীর্ঘকাল ধরে ইরাক-ইরান যুদ্ধ চলার ফলে আন্তর্জাতিক বাজার -এ তেল সরবরাহ যথেষ্ট ব্যাহত হয়।

(FAQ) ইরাক-ইরান যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময়কাল কত?

১৯৮০-৮৮ খ্রিস্টাব্দ।

২. ইরাক ইরান যুদ্ধের সময় ইরাকের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?

সাদ্দাম হুসেন।

৩. ইরাক ইরান যুদ্ধের সময় কুর্দ বিদ্রোহ কোথায় সংঘটিত হয়?

ইরাকের কুর্দিস্তান পার্বত্য অঞ্চলে।

৪. ইরাক ইরান যুদ্ধের অবসান হয় কখন?

১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment