দিদেরোর প্রেমপত্র

দার্শনিক দিদেরোর প্রেমপত্র প্রসঙ্গে দিদেরোর পরিচিতি, দিদেরোর প্রেম, দিদেরোর প্রেমিকা, দিদেরোর প্রেমপত্র লেখার সময়কাল, দিদেরোর প্রেমপত্র লেখার স্থান ও দিদেরোর মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

ফরাসি দার্শনিক দিদেরোর প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্রদিদেরোর প্রেমপত্র
পরিচিতিফরাসি দার্শনিক
প্রেমিকাসোফি ভোলাদ
প্রেমপত্রের সময়কাল১লা নভেম্বর, ১৭৫৯ খ্রি
দিদেরোর প্রেমপত্র

মনন ও প্রজ্ঞায় দিদেরো ছিলেন ভলতেয়ার অথরা রুশো অপেক্ষা অধিকতর উজ্জল। কিন্তু তাঁদের লিপিকুশলতা ওঁর ছিল না। তথাপি তাঁর স্বাধীন সংশয়বাদী চিন্তা ও ভাবধারার প্রকাশে তিনিও ছিলেন ফরাসি বিপ্লব-এর অন্যতম অগ্রচারী-নায়ক। মধ্য অষ্টাদশ শতকের গণজীবনের গ্লানি সম্পর্কে তিনি তাঁর প্রণয়িনী সোফি ভোলাদকে চিঠিপত্র লিখতেন। সোফি ছিলেন চিন্তায় ও আদর্শে দিদেরোর সহমরমী। নিরন্তর অভাব ও দুঃখে তাঁর জীবন ছিল বিষাদক্লিষ্ট, অবশেষে রুশ সাম্রাজ্ঞী দ্বিতীয় ক্যাথরিনের মহানুভবতায় তাঁর শেষ জীবন সুখে অতিবাহিত হয়। ক্যাথরিণ ওঁর জন্য আজীবন পেনসনের ব্যবস্থা করেন।

সোফিকে একটি পত্রে তিনি লিখছেন –

১লা নভেম্বর, ১৭৫৯

আজ সকাল থেকে আমি আমার জালানার নীচে কর্মরত শ্রমিকদের কলরব শুনছি। সূর্য তখনও উঠেনি, কিন্তু ওদের কাজ শুরু হয়ে গেছে। কোদাল দিয়ে ওরা মাটি কাটছে, ছোট ঠেলাগাড়ি ঠেলছে। খাদ্য ওদের এক টুকরো বাসি রুটি; নদীর জলে ওদের তৃষ্ণা নিবারিত হয়; মধ্য রাত্রিতে ঘণ্টা খানেকের জন্য ওরা মাটিতে শুয়ে ঘুমায়; আবার একটু বাদেই ওদের দিনের কাজ শুরু হয়। ওরা বেশ দিলখোস মেজাজের, ওরা গান গায়, পরস্পরকে নিয়ে স্থূল রসিকতায় ওদের চিত্ত রসিয়ে ওঠে, ওরা হাসে। রাত্রিতে ধোঁয়াটে এক চুল্লির ধারে নিরাভরণ শিশুসন্তানদের সাথে মিলিত হয় ওরা; সঙ্গিনী ওদের এক একজন কদাকার নোংরা কৃষক রমণী; শুকনো খড় দিয়ে তৈরী হয় ওদের রাত্রির বাসর; কিন্তু ওরা আমার চাইতে খারাপও নয় ভালও নয়। বলো তুমি, তুমি আঘাত পেয়েছ অনেক, তোমার কাছে কি অতীতের চেয়ে বর্তমান অধিকতর কঠোর ক্লান্তিকর বোধ হয়? সারা সকাল আমি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি, একটা পলতকা চিন্তাকে কিছুতেই আমি ধরতে পারছি না। হৃদয় আমার যন্ত্রণায় আচ্ছন্ন, তাতে আবার জীবনের সর্বজনীন দুঃখে অভিভূত। আমার বন্ধু ছিল একজন, তাঁর কাছ থেকে কোনো সংবাদই পাচ্ছি না। আমার প্রিয় বান্ধবীর কাছ থেকে আমি বহুদূরে, অথচ তাঁর জন্য আমার হৃদয় প্রমত্ত। গ্রামে দুশ্চিন্তা উদ্বেগ, শহরেও তাই, সর্বত্রই দুশ্চিন্তা উদ্বেগ। একান্ত ভাবনাহীন মানুষ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সব কিছুই যেন তিরোহিত; মন্দ ভালকে করেছে বিতাড়িত, ভাল মন্দকে; আর জীবন শুধুই প্রবঞ্চনা।

সম্ভবত আগামী কাল অথবা সোমবারে আমরা এক দিনের জন্য শহরে যাব। আমার প্রিয় বান্ধবীকে আমি দেখব যাঁর জন্য আমি ব্যাকুল; আর দেখব আমার মিতভাষ বন্ধুকে যাঁর কোনো সংবাদই আমি পাই না। কিন্তু পরের দিন আবার দুজনকেই হারাব; তাঁদের সান্নিধ্যে লব্ধ আনন্দের স্বাদে যতই আমার চিত্ত ভরবে, ততই বিদায়ের লগ্নে ব্যথায় হৃদয় ভাঙ্গবে।

এমনি হয়, সব সময়। যতই তুমি না কেন বিস্মৃত হতে চাও, ততই তোমার চোখে পড়বে একটি দলিত গোলাপকুঁড়ি, যাতে তোমার হৃদয় ঝরবে। আমার সোফিকে আমি ভালবাসি, তাঁর ভালবাসায় সমাচ্ছন্ন আমার হৃদয় অন্য কোনো দিকেই তাকাতে পারে না।

এই জীবনের প্রাঙ্গণে আমি শুধু দুর্দশা আর দুর্ভাগ্য দেখতে পাচ্ছি। এই দুর্ভাগ্য বিচিত্ররূপী, এবং শত রূপ ধরে তা আমাকে অভিভূত করে। মাঝে মাঝে এক আধটা দিন পার হয়ে যায়, ওঁর কোনো চিঠি আমি পাই না; অমনি মন ব্যাকুল হয়ে শুধোয়, ‘কি হলো তাঁর? অসুখ বিসুখ নয় তো?’ এমনি করে দুশ্চিন্তার ছায়ারা আমার মাথার চারিদিকে ঘুরে আর আমি কাতর হই যন্ত্রণায়।

সে কি লিখেছে আমাকে? হয়তো একটিমাত্র শব্দকে আমি ভুল বুঝি আর সঙ্গে সঙ্গে আমার মতিভ্রম হয়। মানুষের পক্ষে তার ভবিতব্যকে ত্বরান্বিত বা বিলম্বিত করা সম্ভব নয়। অনুভব ও ভালবাসার ক্ষেত্র যত প্রসারিত হয় ততই ব্যক্তিবিশেষের জন্য তা সঙ্কুচিত হয়ে যায়। একটিমাত্র যদি ভালবাসার বস্তু, তবে হৃদয়ের সমস্ত অনুরাগ তাতে কেন্দ্রীভূত হয়। ও যে কৃপণের ধন।

যাক, আমার মনে হচ্ছে খুব বদহজম হয়েছে আমার, তাই না এই অসুস্থ জীবনদর্শন যা পৈটিক গোলযোগেরই ফসল। ভরা পেটেই হউক আর শূন্যই হউক, প্রফুল্লই হই আর বিষন্নই হই, সোফি, আমার হৃদয়ের ধন, আমি তোমাকে ভালবাসি; সব সময় একই তীব্রতায়, শুধু কখনও কখনও অনুভূতির বিভিন্নতা ওতে বিভিন্ন ধরণের রঙ লাগায়।

                                                                                                                                          - দিদেরো

(FAQ) দিদেরোর প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য

১। দিদেরো কে ছিলেন?

ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম অগ্রচারী-নায়ক।

২। দিদেরোর প্রেমিকার নাম কী?

সোফি ভোলাদ

৩। প্রেমিকাকে লেখা দিদেরোর প্রেমপত্রের সময়কাল কত?

১লা নভেম্বর, ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দ

Leave a Comment