পাইকদের পরিচিতি, তাদের অস্ত্রধারণ, ভূমিজ সেনানী, খুরদার জমিদারি দখল, পাইকদের বিতাড়ন, পাইক বিদ্রোহের কারণ, যুদ্ধ ঘোষণা, ইংরেজদের আক্রমণ, খুরদা আক্রমণ, বিদ্রোহের ভয়ঙ্কর আকার ধারণ ও বিদ্রোহের অবসান সম্পর্কে জানবো।
পাইক বিদ্রোহ প্রসঙ্গে পাইকদের পরিচিতি, পাইকান বা পাইকান জমি কি, পাইক বিদ্রোহের সময়কাল, পাইক বিদ্রোহের স্থান বা এলাকা, পাইক বিদ্রোহের নেতা, পাইক বিদ্রোহের কারণ, পাইক বিদ্রোহের সূচনা, পাইক বিদ্রোহের অবসান, পাইক বিদ্রোহের তাৎপর্য।
১৮১৭-১৮ খ্রিস্টাব্দে পাইক বিদ্রোহ
ঐতিহাসিক ঘটনা | পাইক বিদ্রোহ |
সময়কাল | ১৮১৭-১৮ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | উড়িষ্যার খুরদা রাজ্য |
নেতৃত্ব | বিদ্যাধর মহাপাত্র |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা :- পলাশির যুদ্ধ -এ জয়লাভ করে ব্রিটিশরা যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে বক্সারের যুদ্ধ -এর পর তাদের সেই প্রভাব অপ্রতিহত হয়। এই পরিস্থিতিতে যেসব শ্রেণী ও গোষ্ঠী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে অবতীর্ণ হয় তাদের মধ্যে উড়িষ্যার পাইক বিদ্রোহ অন্যতম।
পাইকদের পরিচিতি
পাইকরা ছিল স্থানীয় সৈনিক, যারা জমিদারের পক্ষে অতি সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে স্থানীয় শান্তি বজায় রাখত এবং প্রয়োজনে বিদ্রোহীদেরও মোকাবিলা করত।
পাইকদের অস্ত্রধারণ
আসলে পাইকরা কেউই সামরিক ব্যক্তি নয়, সকলেই কৃষক। জমিদারের প্রয়োজনে তারা অস্ত্রধারণ করত।
ভূমিজ সেনানী পাইক
স্টারলিং (Stirling) নামে জনৈক রাজকর্মচারী তাদের ‘ভূমিজ সেনানী’ বলে অভিহিত করেছেন। তারা ছিল তথাকথিত নিচুজাতের মানুষ।
কোম্পানির ভূমি রাজস্ব নীতি
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমিরাজস্ব নীতি সর্বশ্রেণীর মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। সীমাহীন রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে বহু জমিদার উচ্ছেদ হন এবং তাদের কর্মচারীরাও বেকার হয়ে পড়ে।
খুরদার জমিদারি দখল
ব্রিটিশ-বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে উড়িষ্যার খুরদা-র জমিদার বা রাজাকে বিতাড়িত করে তাঁর জমিদারিকে সরকারি খাসমহল বলে ঘোষণা করা হয়।
পাইকদের বিতাড়ন
খুরদার জমিদার বা রাজার অধীনস্থ পাইকরা বেতনের পরিবর্তে পাইকান জমি বা জায়গির ভোগ করত। রাজার জমিদারি বাজেয়াপ্ত হওয়ায় পাইকরাও তাদের জায়গির থেকে বিতাড়িত হয়।
পাইক বিদ্রোহের কারণ
পাইক বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি হল –
(১) ভূমিরাজস্ব নীতি
ব্রিটিশের ভূমিরাজস্ব নীতির কবলে পড়ে বহু জমিদার তাদের জমিদারি হারালে পাইকরাও তাদের জীবিকা হারাতে থাকে। ফলে তাদের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে ব্রিটিশদের ওপর।
(২) জমিদারি বাজেয়াপ্তকরণ
ব্রিটিশবিরোধী কাজে লিপ্ত এমন জমিদারদের জমিদারি ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করলে পাইকরা তাদের চাকরি হারিয়ে সম্পূর্ণরূপে বেকার হয়ে পড়ে ।
(৩) জায়গির বাজেয়াপ্তকরণ
বেশ কিছু জমিদারের অধীনস্থ পাইকরা বেতনের পরিবর্তে জায়গির ভোগ করত। ব্রিটিশ জমিদারির সঙ্গে সঙ্গে তাদের জায়গিরগুলিও বাজেয়াপ্ত করায় বিকল্প জীবিকার অভাবে পাইকরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ।
পাইকদের যুদ্ধ ঘোষণা
এই অবস্থায় খুরদা-রাজের কর্মচ্যুত সেনাপতি বিদ্যাধর মহাপাত্রের নেতৃত্বে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে পাইকরা ইংরেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহ ‘খুরদা বিদ্রোহ’ নামেও পরিচিত।
পাইক বিদ্রোহে ইংরেজদের হত্যা
বিদ্রোহীরা বাহারামপুরের পুলিশ-ঘাঁটি ও সরকারি কার্যালয়গুলির ওপর আক্রমণ চালিয়ে প্রায় একশ’ ইংরেজকে হত্যা করে।
পাইক বিদ্রোহীদের খুরদা আক্রমণ
বিদ্রোহীরা খুরদা-র দিকে অগ্রসর হয়ে সরকারি খাজাঞ্চিখানা লুঠ করে ও সরকারি গৃহগুলিতে অগ্নিসংযোগ করে। সরকারি কর্মচারীরা প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়।
পাইক বিদ্রোহের ভয়ঙ্কর আকার ধারণ
সরকারি নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, এই বিদ্রোহ (১৮১৭-১৮ খ্রিঃ) ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে এবং সমগ্র দক্ষিণ উড়িষ্যা বিদ্রোহীদের কবলে চলে যায়।
পাইক বিদ্রোহের অবসান
শেষ পর্যন্ত চরম অত্যাচারের মাধ্যমে সরকার এই বিদ্রোহ দমন করে।
উপসংহার :- অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টিকারী ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে যে ভঙ্গিমায় পাইকরা রুখে দাঁড়িয়েছিল তাতে অত্যাচারী ইংরেজরা পরবর্তী সময়ে পাইকসহ অন্যান্য ভারতীয় রক্ষকশ্রেণির ওপর, বিশেষত ভারতীয় সিপাহিদের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠেছিল।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “পাইক বিদ্রোহ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) পাইক বিদ্রোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
স্থানীয় সৈনিক।
স্টারলিং(Stirling).
১৮১৭-১৮ খ্রিস্টাব্দ।
বিদ্যাধর মহাপাত্র।
খুরদা বিদ্রোহ।
উড়িষ্যার খুরদা অঞ্চলের জমিদার বা রাজার অধীনস্থ পাইকরা বেতনের পরিবর্তে যে জমি ভোগ করত তা পাইকান জমি নামে পরিচিত।