বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়: প্রস্তর ও তাম্র-প্রস্তর যুগ থেকে ৫ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – নব্যপ্রস্তর বিপ্লব সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
নব্যপ্রস্তর বিপ্লব সম্পর্কে আলোচনা
প্রশ্ন:- নব্যপ্রস্তর বিপ্লব বলতে কী বোঝ?
উত্তর:- প্রাচীন ও মধ্য প্রস্তরযুগে মানুষের ব্যবহৃত হাতিয়ার গুলি ছিল অসম ও অমসৃণ। কালক্রমে মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে পাথরের হাতিয়ারগুলিকে অধিকতর ব্যবহার উপযোগী ও কার্যকরি করার জন্য পরিবর্তন ঘটাতে থাকে। মধ্যপ্রস্তর যুগের শেষদিকে পাথর দিয়ে ঘষে হাতিয়ার তৈরীর কলা কৌশল মানুষের রপ্ত হয়। এই হাতিয়ারগুলির তল ছিল মসৃণ এবং গোলাকার। গর্ডন চাইল্ডের মতে, নব্যপ্রস্তর যুগের এই সকল হাতিয়ার আবিষ্কারে সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বস্তুনির্ভর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। জাঁতা ও হামানদিস্তা দুটিই নব্য প্রস্তর যুগের আবিষ্কার।
গর্ডন চাইল্ড মনে করেন, নব্যপ্রস্তর যুগে মসৃণ ও উপযোগী হাতিয়ার আবিষ্কারের ফলে জমিকর্ষণ করা সম্ভব হয়। এই সময় মানুষ উপলব্ধি করে যে, কেবল বুনো ফল সংগ্রহ করে জীবন কাটানো সম্ভব নয়। মসৃণ পাথরের কুঠার দ্বারা গাছ কেটে জমি পরিষ্কার করার কৃষিকাজ সহজ হয়। ফলে মানুষ কৃষিকাজে উৎসাহ পায়। ছুঁচালো বর্শার ফলা দিয়ে সহজেই বন্য পশু শিকার করতে পারে। কৃষি কাজের পাশাপাশি গবাদী পশুর গৃহপালন দৃঢ়তর ভিত্তি পায়। ইরফান হাবিব লিখেছেন যে, গবাদী পশুর থেকে দুধ ও মাংস পাওয়া গেলে শিকারের উপর নির্ভরতা কমে যায়। গ্রামাঞ্চলে কৃষিজীবি গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত উৎপাদন করতে সক্ষম হয় এবং এই উদবৃত্ত দখলের ভিত্তিতে আবির্ভূত হয় শ্রেণী, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্র।
আদিম মানব সংস্কৃতির বিবর্তনের এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে গর্ডন চাইল্ড নব্যপ্রস্তর বিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন। অবশ্য কেউ কেউ দীর্ঘ বিবর্তণের এই প্রক্রিয়াকে বিপ্লব শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করতে দ্বিধা প্রকাশ করেছেন। কারণ, বিপ্লবের যে আকস্মিকতা প্রস্তর যুগের হাতিয়ার নির্মাণের ক্ষেত্রে তা ছিল না। কারণ দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এই রূপান্তর ঘটেছিল। যাইহোক বিপ্লব শব্দটির মধ্য দিয়ে মধ্যযুগ থেকে নব্য প্রস্তর যুগে উত্তরণের বৈশিষ্ট্যকে যথার্থাভাবে বোঝানো সম্ভব।