বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: হরপ্পা সভ্যতা থেকে ২ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর দেওয়া হল।
বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: হরপ্পা সভ্যতা থেকে ২ নাম্বারের প্রশ্ন উত্তর
(১) সিন্ধু-সভ্যতা আবিষ্কার করেন কারা?
উত্তর:- প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান স্যার জন মার্শালের তত্ত্বাবধানে ১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে দয়ারাম সাহানী ও বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োতে সিন্ধুসভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন।
(২) সিন্ধু-সভ্যতার বিশেষ কেন্দ্রগুলি কোথায় ছিল?
উত্তর:- সিন্ধু-সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র ছিল সিন্ধু প্রদেশের মহেঞ্জোদাড়ো, পাঞ্জাবের হরপ্পা, ঘর্ঘর নদীর তীরে কালিবঙ্গান, ভোগাবর নদীর তীরে লোথাল, শতদ্রু নদীর তীরে রোপার প্রভৃতি স্থানে।
(৩) সিন্ধু-সভ্যতার যুগে ধর্মভাবনা কেমন ছিল?
উত্তর:- সিন্ধু উপত্যকায় কোনো মন্দির আবিষ্কৃত হয়নি। প্রাপ্ত মূর্তি থেকে জানা যায়, তারা এক যোগীপুরুষ ও মাতৃদেবীর আরাধনা করতেন।
(৪) সিন্ধু সভ্যতায় আবিষ্কৃত পোতাশ্রয়টি কোথায় অবস্থিত ছিল?
উত্তর:- সিন্ধু সভ্যতায় আবিষ্কৃত পোতাশ্রয়টি অবস্থিত ছিল ভোগাবর নদীর তীরে লোখালে। বর্তমানে এই স্থানটি গুজরাট রাজ্যের অন্তর্গত।
(৫) মহেঞ্জোদাড়ো ও হরপ্পায় প্রাপ্ত পুরা বস্তু দুটি কি কি?
উত্তর:- মহেঞ্জোদাড়োয় পাওয়া গেছে দুর্গসংলগ্ন একটি প্রকাণ্ড স্নানাগার (১৮০ ×১০৮ ফুট)।
হরপ্পার দুর্গের উত্তরে পাওয়া গেছে একটি বিরাট শস্যাগার (১৬৯ ফুট × ১৩৫ ফুট)।
(৬) সিন্ধু সভ্যতায় কোন ধাতু ও কোন জন্তুর সন্ধান পাওয়া যায় নি?
উত্তর:- ধাতুর মধ্যে লোহা এবং জন্তুর মধ্যে ঘোড়ার সন্ধান সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া যায়নি।
(৭) সিন্ধু-সভ্যতার যুগে প্রধান প্রধান শিল্প কি ছিল?
উত্তর:- আবিষ্কৃত বস্তুর মাধ্যমে বোঝা যায় যে হরপ্পার যুগে শিল্পচর্চা যথেষ্ট ছিল। শিল্পকর্মে তামা, ব্রোঞ্জ, পাথর ছাড়াও সোনা ও রূপা ব্যবহৃত হত। কাস্তে, কুঠার, বর্শি, বড়শি, চিরুনি ইত্যাদি ছাড়াও সোনা ও রূপার নানা সৌখিন অলঙ্কার তৈরি করা হত।
(৮) সিন্ধু সভ্যতার কালে কোন কোন পশুপাখির অস্তিত্ব ছিল?
উত্তর:- সিন্ধু উপত্যকার ধ্বংসাবশেষ থেকে গোরু, মোষ, ভেড়া, ষাঁড়, উট প্রভৃতি পশুর কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়েছে। এছাড়া হাঁস, ময়ুর প্রভৃতি পাখির অস্তিত্ব দেখা গেছে।
(৯) সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণ কি কি?
উত্তর:- সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণগুলি হল ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, মরুভূমির সম্প্রসারণ, বৈদেশিক আক্রমণ প্রভৃতি।
(১০) সিন্ধু-সভ্যতার সঙ্গে বৈদিক সভ্যতার কয়েকটি বৈষম্য কি ছিল?
উত্তর:- সিন্ধু-সভ্যতার সঙ্গে বৈদিক সভ্যতার বৈষম্য গুলি হল –
সিন্ধু সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক, বৈদিক সভ্যতা ছিল গ্রামীণ।
সিন্ধু সভ্যতা ছিল মাতৃতান্ত্রিক, বৈদিক সভ্যতা ছিল পিতৃতান্ত্রিক।
সিন্ধু সভ্যতায় মৃত ব্যক্তির দেহ সমাহিত করা হত, বৈদিক সভ্যতায় ভস্মীভূত করা হত।
সিন্ধুবাসীরা ঘোড়ার সঙ্গে পরিচিত ছিল না, আর্যরা ছিল।
(১১) সিন্ধু সভ্যতায় কোন কোন ধাতুর ব্যবহার দেখা যায়?
উত্তর:- সিন্ধু সভ্যতায় রূপা, তামা, ব্রোঞ্জ ও সোনার ব্যবহার দেখা যায়।
(১২) সিন্ধুর বণিকদের কি বলা হত? সিন্ধুর অধিবাসীরা কোন্ পণ্ডকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করত?
উত্তর:- সিন্ধুর বণিকদের ‘পণি’ বলা হত।
সিন্ধুর অধিবাসীরা বড়ো কুঁজবিশিষ্ট ষাঁড়কে দেবতাজ্ঞানে পুজো করত।
(১৩) হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতা কত খ্রিস্টাব্দে এবং কারা আবিষ্কার করেন?
উত্তর:- ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক দয়ারাম সাহানী পাঞ্জাবের মন্টগোমারী জেলার হরপ্পা ও বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলার মহেঞ্জোদাড়োয় খননকার্য চালিয়ে এক সুপ্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। সিন্ধুর অববাহিকায় বিকশিত হওয়া এই সভ্যতা ‘সিন্ধু সভ্যতা’ নামে খ্যাত ছিল। পরে আরো ব্যাপক অঞ্চলে এর বিস্তৃতি লক্ষ্য করে এর নামকরণ করা হয় ‘হরপ্পা সংস্কৃতি’।
(১৪) হরপ্পা সভ্যতার বিস্তৃতি আলোচনা কর।
অথবা, হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন কোথায় কোথায় পাওয়া গিয়েছে?
উত্তর:- প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে প্রমাণিত হয়েছে যে, হরপ্পা সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিলে বিশাল এক অঞ্চলে জুড়ে। উত্তরে হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চল, দক্ষিণে ক্যাম্বে উপসাগর এবং পশ্চিমে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যবর্তী অঞ্চলে এই সভ্যতার রেশ দেখা যায়। পশ্চিমে আরব সাগরের তীরে অবস্থিত সুতকাজেনদোরে ও পূর্বে উত্তরপ্রদেশের আলমগীরপুরে এই সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। দক্ষিণে গোদাবরী তীরস্থ দাইমাবাদেও হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। মধ্যবর্তী অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলি ছিল রাজস্থানের কালিবঙ্গান, গুজরাটের লোখাল, দেশলপার, হিমালয়ের পাদদেশে রোপার। হরিয়ানার বানওয়ালি প্রভৃতি।
(১৫) ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা কোথায় বিকাশ লাভ করেছিল ? এই সভ্যতার দুটি কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর:- ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা সিন্ধু নদের উপত্যকায় বিকাশ লাভ করেছিল। এই কারণে একে সিন্ধু সভ্যতা বলা হয়।
সিন্ধু সভ্যতার দুটি কেন্দ্রের নাম হল মহেঞ্জোদাড়ো ও হরপ্পা।
(১৬) হরপ্পায় কোন কোন দেবতার পূজার প্রচলন ছিল?
উত্তর:- হরপ্পা-সভ্যতায় বহু পোড়ামাটির নারীমূর্তি পাওয়া গেছে যেগুলি সম্ভবত মাতৃমূৰ্তি হিসেবে পূজিত হত। একটি সীলমোহরে উত্থানপাদ ভঙ্গীতে এক নগ্ন নারীমূর্তি অঙ্কিত রয়েছে। যার গর্ভ থেকে নির্গত হয়েছে চারাগাছ। এথেকে মনে হয় এখানে উর্বরতা দেবীকে চিত্রিত করা হয়েছে। একটি সীলমোহরে তিনটি শৃঙ্গবিশিষ্ট পশুবেষ্টিত মুদ্রিত চক্ষু ও ধ্যানমগ্ন এক যোগীপুরুষের মূর্তি পাওয়া গেছে। ইনি সম্ভবত পশুপতি শিবের আদি রূপ। জীবজন্তুর মধ্যে কুঁজবিশিষ্ট ষাঁড়ের পূজার প্রচলন ছিল। কারও কারও মতে জল ও অগ্নিদেবতার পূজার প্রচলন ছিল।
(১৭) হরপ্পা সভ্যতায় কয়টি সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে? কীভাবে মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হত?
উত্তর:- খননকার্যের দ্বারা হরপ্পা সভ্যতায় ৫৭টি সমাধিক্ষেত্রের চিহ্ন আবিষ্কৃত হয়েছে।
সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হত। প্রথম পদ্ধতি অনুযায়ী মৃতদেহের সঙ্গে তার ব্যবহার্য বিভিন্ন সামগ্রী, যথা – আসবাবপত্র, গহনা, পাত্র ইত্যাদিও কবরস্থ করা হত, একে বলা হয় সম্পূর্ণ কবর। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে কেবলমাত্র মৃতের কঙ্কালটিকে কবরস্থ করা হত। তৃতীয় পদ্ধতিতে মৃতদেহ ভস্মীভূত করে সেই ভষ্ম একটি আধারে ভরে, আধারটিকে কবরস্থ করা হত। মৃতদেহকে সাধারণত কবরস্থানের উত্তর থেকে দক্ষিণে শায়িত করার নিয়ম ছিল।
(১৮) সিন্ধু সভ্যতার সামাজিক শ্রেণী সম্পর্কে কি জান?
উত্তর:- সিন্ধু সভ্যতার সমাজকে মোটামুটিভাবে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত – এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়। ক্ষমতাসীন শাসক সম্প্রদায় ছিল প্রথম শ্রেণীভুক্ত। ধনী সম্প্রদায় বা বুর্জোয়া মধ্যবিত্তরা ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীভূক্ত। তৃতীয় শ্রেণীতে ছিল দরিদ্র শ্রমিক, কৃষককূল। প্রথম দুটি শ্রেণী কর্তৃক তৃতীয় শ্রেণী শোষিত হত। সবার নীচে ছিল অসংখ্য ক্রীতদাস।
(১৯) হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োতে প্রাপ্ত যে কোনো দুটি পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের নাম লেখ।
উত্তর:- হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োয় প্রাপ্ত দুটি পুরাতাত্বিক নিদর্শন হল বিভিন্ন সীলমোহর, স্নানাগার, শস্যাগার।
(২০) মহেঞ্জোদাড়োর স্নানাগার সম্পর্কে বর্ণনা?
উত্তর:- মহেঞ্জোদাড়োতে ৩৯ ফুট লম্বা, ২৩ ফুট চওড়া ও ৮ ফুট গভীরতাবিশিষ্ট একটি সুবৃহৎ স্নানাগার আবিষ্কৃত হয়েছে। এতে জল ঢোকাবার ও বের করার ব্যবস্থা ছিল। স্নানাগারের তিন পাশে ছিল বারান্দা এবং তার পাশে ছিল ছোট ছোট ঘর। হুইলারের মতে, স্নানাগারটি ধর্মীয় কারণে ব্যবহৃত হত এবং ঘরগুলি ছিল পুরোহিতদের আবাসস্থল। কিন্তু ডি.ডি. কোশাম্বীর মতে, অভিজাতদের জলকেলির জন্য এটি ব্যবহৃত হত এবং ঘরগুলি অনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হত।
(২১) সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল কীসের ভিত্তিতে স্থির করা হয়েছে?
উত্তর:- সিন্ধু সভ্যতায় তামা ও ব্রোঞ্জের অবস্থিতি ও লৌহের অনুপস্থিতি এবং প্রাপ্ত সীলমোহরের ওপর নির্ভর করে পণ্ডিতগণ এই সংস্কৃতির সময়কাল নির্ধারণ করেছেন।
(২২) কোন কোন বিশেষ পণ্য সিন্ধু উপত্যকা থেকে মেসোপটেমিয়ায় রপ্তানী হত?
উত্তর:- সিন্ধু উপত্যকা থেকে মেসোপটেমিয়ার প্রধানত সুতি বস্ত্র, হাতির দাঁত ও হাতির দাঁতের চিরুনী এবং নানা মনিমুক্তা, এমন কি ময়ূরও রপ্তানি হত।
(২৩) সিন্ধুবাসীরা কিসের মাধ্যমে এবং কোন কোন দেশের সাথে বানিজ্য চালাত?
উত্তর:- সিন্ধুবাসীরা ব্যবসাবাণিজ্যে যথেষ্ট দক্ষ ছিল। দেশে ও বহির্দেশে এই ব্যবসা চলত। চাকা-বিশিষ্ট গাড়ি ও নৌকার সাহায্যে ব্যবসাবাণিজ্য চলত। ভারতের বাইরে মধ্য-এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে হরপ্পার ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল।
মিশর, ক্রীট এবং বিশেষভাবে মেসোপটেমিয়া ও সুমেরীয় সভ্যতার সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্যিক লেনদেন চলত। কেবল স্থলপথে নয়, জলপথেও বাণিজ্য চলত। সম্প্রতি লোথালে খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত তথ্যাদি ব্যাপক সামুদ্রিক বাণিজ্যের ইঙ্গিত বহন করে।
(২৪) সিন্ধুসভ্যতার আমদানি ও রপ্তানিকৃত পণ্য কি ছিল?
উত্তর:- দেশ-বিদেশ থেকে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সমূহ আমদানি করা হত। যেমন – হিমালয় থেকে দেবদারু কাঠ, মহীশূর থেকে সোনা, রাজস্থানের ক্ষেত্রী থেকে তামা, সীসা, চুনাপাথর; সৌরাষ্ট্র থেকে মূল্যবান পাথর ইত্যাদি আমদানি করা হত। দেশের বাইরে পারস্য থেকে রূপা ও মূল্যবান পাথর, সুমের থেকেও রূপা, মধ্য এশিয়া থেকে জেন পাথর ইত্যাদি আমদানি করা হয়। রপ্তানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে হাতির দাঁতের তৈরী জিনিস, তুলাজাত দ্রব্য ইত্যাদি ছিল।
(২৫) হরপ্পার শস্যাগার সম্পর্কে বর্ণনা দাও?
উত্তর:- হরপ্পার বৃহৎ শস্যাগারটি নগর-দুর্গের উত্তরদিকে অবস্থিত ছিল। ১৬৯ ফুট x ১০০ ফুট আয়তনবিশিষ্ট শস্যাগারটিকে ব্যাসাম রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কের সাথে তুলনীয়। শস্যাগারের উঁচু পাথরের বেদীতে সম্ভবত শস্য মাড়াই করা হত। শস্যাগারগুলি থেকে অনুমিত হয় যে, সেই সময়ে আপৎকালীন সময়ের জন্য শস্য মজুত রাখার ব্যবস্থা ছিল।
(২৬) হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা কী কী পোষাক ও অলঙ্কার পরিধান করত?
উত্তর:- হরপ্পা সভ্যতার নারী-পুরুষ উভয়েরই পোশাক ছিল প্রায় একই প্রকার। দুটি অংশে পোশাক বিভক্ত ছিল। নিম্নাংশের জন্য ধুতি জাতীয় ও ঊর্ধ্বাংশের জন্য শাল জাতীয় বস্ত্রখণ্ড ব্যবহৃত হত। পুরুষদের মাথায় লম্বা চুল থাকত ও মহিলা-পুরুষ উভয়েই নানাভাবে কেশবিন্যাস করত। উভয়েই সোনা, রূপা, তামা ও মূল্যবান পাথরে নির্মিত নানারূপ অলঙ্কার পরিধান করত যেমন – হার, আংটি, কঙ্কন, দুল ইত্যাদি। এছাড়া তখনকার মহিলারা নানারকম প্রসাধনী ব্যবহার করত।
(২৭) সিন্ধু সভ্যতায় কী কী শিল্প নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল?
উত্তর:- সিন্ধু সভ্যতায় ক্ষুদ্রায়তন গৃহ থেকে বিরাট অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ, পোড়ামাটি দিয়ে প্রস্তুত নানা আকারের পাত্র, মূর্তি, পুতুল ও লিপি উৎকীর্ণ সীলমোহর পাওয়া গেছে। তামা ও ব্রোঞ্জ নির্মিত নানা প্রকার অলংকারও এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে। এমনকি শিশুদের জন্য নানা খেলনা পাওয়া গেছে। এই সমস্ত নিদর্শনগুলি সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের উচ্চ শিল্পবোধের পরিচয় বহন করে।
(২৮) সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা কী ছিল?
উত্তর:- সিন্ধুবাসীদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। কৃষিজাত দ্রব্যের মধ্যে যব, গম, ধান ও বার্লি ছিল প্রধান। সম্ভবত নদীর জল বাঁধ দিয়ে ধরে রেখে চাষের কাজে লাগানো হত। কৃষকদের কাছ থেকে উৎপন্ন ফসল কর হিসাবে নেওয়া হত। এদের প্রধান খাদ্য ছিল গম, যব, চাল, বাদাম, খেজুর প্রভৃতি। আমিষ খাদ্যের মধ্যে ভেড়া ও শূকরের মাংস এবং নদীর মাছ ছিল প্রধান।
(২৯) মেসোপটেমিয়ার সাথে সিন্ধু সভ্যতার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল তা কীভাবে প্রমাণিত হয়?
উত্তর:- মেসোপটেমিয়া ও সিন্ধু উপত্যকার মধ্যে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সম্ভবত বালুচিস্তানের মধ্য দিয়ে এই বাণিজ্যিক আদান-প্রদান চলত। জলপথে পারস্য উপসাগরের মধ্যে দিয়ে বাহরিন বন্দরের মাধ্যমেও বাণিজ্য চলত। হরপ্পা সভ্যতায় প্রাপ্ত সীলের অনুরূপ মেসোপটেমিয়ায় পাওয়া গেছে। ম্যাকে টেল আসরামের সারগন যুগীয় স্তরে প্রাপ্ত দুটি নলাকৃতি ও বেলনাকৃতি সীলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অন্যদিকে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার কিছু নিদর্শনও সিন্ধু-উপত্যকায় পাওয়া গেছে, যা সুমেরীয় সভ্যতার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। হরপ্পা ও চান-হু-দাড়োতে দুটি সীল পাওয়া গেছে, যাতে ডানা মেলা ঈগলের চিত্র রয়েছে। এই সীলগুলি মেসোপটেমিয়া সীলের অনুরূপ।
(৩০) হরপ্পা সভ্যতার সাথে বৈদিক সভ্যতার সম্পর্ক কি ছিল?
উত্তর:- কোনো কোনো পণ্ডিতে মতে, হরপ্পা সভ্যতা ও বৈদিক সভ্যতা অভিন্ন। তাদের মতে হরপ্পা সভ্যতা বৈদিক সভ্যতারই অঙ্গ। কারণ, তারা মনে করেন বৈদিক আর্যরা বহিরাগত কোনো জাতি নয় ভারতবর্ষই তাদের বাসভূমি। তাই বৈদিক সভ্যতার অঙ্গ হিসেবে হরপ্পা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। বস্তুত উভয় সভ্যতার মধ্যেই কিছু আপাত সাদৃস্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন সিন্ধুবাসী ও বৈদিক আর্যদের খাদ্য ও পোশাক ছিল প্রায় একরকম। উভয়ের ক্ষেত্রেই বয়নশিল্পের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। সিন্ধুবাসী ও বৈদিক আর্য উভয় সম্প্রদায়ই তুলার চাষ করত এবং তুলা থেকে সূতা তৈরী করে বস্ত্রবয়ণ করত।
(৩১) হরপ্পা সভ্যতার সাথে বৈদিক সভ্যতার কয়েকটি বৈসাদৃশ্য উল্লেখ কর?
উত্তর:- প্রথমত, সিন্ধু সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা, পক্ষান্তরে আর্যরা যাযাবর জাতি। তাদের নিজেদের রচিত স্তোত্রগুলিতেই তারা নগর ধ্বংসকারী হিসেবে চিত্রিত, নগর নির্মানকারী হিসেবে নয়।
দ্বিতীয়ত, সিন্ধু সভ্যতায় লোহার প্রচলন ছিল না, এটি মূলত তাম্র-প্রস্তর যুগীয় সভ্যতা। অপরদিকে বৈদিক সভ্যতায় লোহার ব্যাপক প্রচলন ছিল।
তৃতীয়ত, লোহার মতই ঘোড়াও সিন্ধুবাসীদের কাছে অজ্ঞাত ছিল বলেই মনে হয়, অপরদিকে আর্যদের কাছে ঘোড়া ছিল একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় জন্তু। তারা ঘোড়ায় চেপে যুদ্ধ করত ও ঘোড়ায় টানা রথে চড়ত।
চতুর্থত, উভয় সভ্যতার মধ্যে ধর্ম ভাবনাগত বহু প্রভেদ ছিল। হরপ্পা সভ্যতায় মাতৃপূজা ও লিঙ্গপূজার ব্যাপক প্রচলন ছিল। কিন্তু আর্যদের মধ্যে মাতৃপূজার প্রচলন ছিল না, তারা লিঙ্গপূজকে ঘৃণার চোখে দেখত।
(৩২) সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের সামুদ্রিক ক্রিয়াকলাপ উল্লেখ কর?
উত্তর:- সিন্ধুবাসীদের সামুদ্রিক তৎপরতার বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। ধ্বংসাবশেষ থেকে ঝিনুকের তৈরী হাতা বা চামচ, ঝিনুকের বলয় ও মুক্তাখচিত অলংকার পাওয়া গেছে। তারা গভীর সমুদ্র থেকে ঝিনুক বা মুক্তা সংগ্রহ করত – এই ধারণা করাই যায়। অধ্যাপক ম্যাকের মতে, সমুদ্রপথেই সিন্ধুদেশের সাথে মিশর, সুমের প্রভৃতি দেশের যোগাযোগ হত। গুজরাটের অন্তর্গত লোথালে আবিস্কৃত পোতাশ্রয়ের ধ্বংসাবশেষ এই তথ্যকে সমর্থন করে। এছাড়া সীলমোহরে নোঙ্গর করা নৌকার প্রতিচ্ছবিও এদের সামুদ্রিক তাৎপরতার সাক্ষ বহন করে।
(৩৩) সিন্ধুসভ্যতা নদীমাতৃক সভ্যতা – এই কথার তৎপর্য কী?
উত্তর:- পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলি কোনো না কোনো নদী উপত্যকায় বিকাশ লাভ করে। সিন্ধু সভ্যতাও এই নিয়মের কোনো ব্যতিক্রম নয়। সিন্ধু নদের উপত্যকা অঞ্চলে যীশুখ্রিস্ট জন্মবার তিন হাজার বছর পূর্বে ভারতের এই সভ্যতার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে। সিন্ধুনদের পলিমাটি অধ্যুষিত অঞ্চলে সহজেই ফসল ফলান যেত। নদীমাতৃক সভ্যতার পরিপুরক হিসেবে ব্যবসাবাণিজ্যের বিস্তার ঘটে এবং নগরকেন্দ্রিক জীবনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
(৩৪) সিন্ধুসভ্যতার পতনের জন্য ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তন কিভাবে দায়ী ছিল?
উত্তর:- কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, ভূ-প্রকৃতির ও আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তন ছিল হরপ্পা সভ্যতার বিলুপ্তির প্রধান কারণ। সিন্ধু উপত্যকার সময়ে যথেষ্ট পরিমাণেই বৃষ্টিপাত হত। কিন্তু ক্রমশ এখনকার আবহাওয়া পরিবর্তিত হতে থাকে। নিকটবর্তী অঞ্চলে মরুভূমি থাকায় এই অঞ্চলও ক্রমশ শুকনো হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
(৩৫) প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিভাবে হরপ্পার পতন ডেকে এনেছিল?
উত্তর:- অনেকের মতে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকেই হরপ্পা সংস্কৃতি ধ্বংস হয়েছিল। জলবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা করে তারা বলেছেন যে, সিন্ধু-উপত্যকার নিকটবর্তী অঞ্চলেই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল। ভূমিকম্পেই এই সভ্যতা ধ্বংস হয়েছিল। তাছাড়া ইট পোড়ানোর জন্য হরপ্পাবাসীরা যথেচ্ছ বন জঙ্গল ধ্বংস করেছিল। বনাঞ্চল নষ্ট হবার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিস্বরূপ এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছিল। বনাঞ্চল ধ্বংস হবার ফলে মরুভূমির সম্প্রসারণ দ্রুত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
(৩৬) ভারতবর্ষের প্রাচীনতম সভ্যতা কোনটি ? ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন দুর্বোদ্ধ লিপি কোনটি?
উত্তর:- ভারতবর্ষের প্রাচীনতম সভ্যতা হল হরপ্পা সভ্যতা।
ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন দুর্বোদ্ধ লিপি হল সিন্ধিলিপি।
(৩৭) মহেঞ্জোদাড়ো কথার অর্থ কি? হরপ্পা কি ধরনের সভ্যতা?
উত্তর:- মহেঞ্জোদাড়ো কথার অর্থ মৃতের স্তূপ।
হরপ্পা নগর কেন্দ্রিক সভ্যতা।