বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: হরপ্পা সভ্যতা থেকে ৫ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – হরপ্পা সভ্যতার বৃহৎ শস্যাগার সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
হরপ্পা সভ্যতার বৃহৎ শস্যাগার সম্পর্কে লিখ
প্রশ্ন:- হরপ্পা সভ্যতার বৃহৎ শস্যাগার সম্পর্কে লিখ।
হরপ্পা সভ্যতার আমলে অর্থনীতির ভিত্তি ছিল কৃষি। সেকালে যথেষ্ট পরিমাণে চাল, গম, তিল উৎপাদিত হত। গ্রামের প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত উৎপাদন নগরের মানুষ এবং ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রয়োজনে শহরে পাঠানো হত। সেই শস্য হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োর দুটি বিশাল শস্যাগারে মজুত রাখা হত। ড. শর্মার মতে, শ্রমিকের মজুরি হিসেবে শস্য বণ্টনের রীতি প্রচলিত ছিল।
হরপ্পার শস্যাগারটি রাভী নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। এর আয়তন ৯ হাজার বর্গফুট। এই শস্যাগারের মধ্যে রয়েছে দুই সারি মঞ্চ। প্রতি সারিতে ছিল ছয়টি মঞ্চ। দুটি সারির মধ্যে প্রায় ২৩ ফুট চওড়া চলাচলের রাস্তা ছিল। প্রতিটি গোলার আয়তন ছিল ১৫.২৩ x ৬.০৯ মিটার। মার্টিমার হুইলার উৎখননের মাধ্যমে পেটিকার অভ্যন্তর থেকে গম, যব, ইত্যাদি শস্যের দানা আবিষ্কার করেছেন। তাঁর অনুমান, এই শস্যাগারে গুরুত্বপূর্ণ শস্য ঝাড়াইবাছাই হত।
শস্য গোলার দক্ষিণে দুটি সারিতে ছোটো ছোটো বাসগৃহের ভগ্নাবশেষ পাওয়া গেছে। সম্ভবত সেগুলি শস্য বাছাইয়ের কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের জন্য নির্মিত হয়েছিল। মার্টিমার হুইলার, রেমন্ড ও ব্রিজেৎ অলচিন, স্টুয়ার্ট পিগট প্রমুখ শস্যাগারগুলির বহুমুখী তাৎপর্যের উল্লেখ করেছেন। অলচিন দম্পতির মতে, এই শস্যাগারগুলি ছিল উদ্বৃত্ত উৎপাদন সংরক্ষণের ক্ষেত্র। সম্ভবত রাজকীয় কর হিসেবে এই উদ্বৃত্ত ফসল নদীপথে শস্যাগারে আনা হত।
মার্টিমার হুইলারের মতে, হরপ্পার শস্যাগারগুলি শুধুমাত্র সংরক্ষণশালা হিসেবে ব্যবহৃত হত না। এই কারণে তিনি শস্যাগারগুলিকে সামগ্রিকভাবে Gerenary Complex হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কালিবঙ্গানের দক্ষিণে অনুরূপ শস্যাগার পাওয়া গেছে। গবেষক কিনওয়ার শস্যাগারগুলির ব্যাবহারিক চরিত্র সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যাই হোক, অধিকাংশ পণ্ডিতের অনুমান, হরপ্পার যুগে কৃষি উৎপাদনের প্রাচুর্য ছিল এবং শস্যাগারগুলি সমকালীন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।