বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: হরপ্পা সভ্যতা থেকে ৫ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – হরপ্পা সভ্যতার পতনের জন্য প্রাকৃতিক কারণসমূহ কতটা দায়ী ছিল তা আলোচনা করা হল।
হরপ্পা সভ্যতার পতনের জন্য প্রাকৃতিক কারণসমূহ কতটা দায়ী ছিল
প্রশ্ন:- হরপ্পা সভ্যতার পতনের জন্য প্রাকৃতিক কারণসমূহ কতটা দায়ী ছিল।
উত্তর:- হরপ্পা সভ্যতার অবসান কিভাবে ঘটল তা একটি বিতর্কিত বিষয়। এই সভ্যতার চূড়ান্ত অবসানে কিছুটা আকস্মিকতা ছিল, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। ধ্বংসস্তূপে আবিস্কৃত বিভিন্ন নিদর্শন বিশ্লেষণের মাধ্যমে পণ্ডিতগণ এই সভ্যতার অবলুপ্তির কারণ অনুসন্ধানে রত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রাকৃতিক কারণসমূহ বিশেষ ভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে- ভূ-প্রকৃতির ও আবহাওয়ার স্বাভাবিক পরিবর্তন ছিল হরপ্পা সভ্যতার বিলুপ্তির প্রধান কারণ। সিন্ধু উপত্যকায় যথেষ্ট পরিমাণ বৃষ্টিপাত হত। কিন্তু ক্রমশ এখানকার আবহাওয়া পরিবর্তিত হতে থাকে। তাছাড়া মরুর প্রভাবে সিন্ধু অঞ্চলের ভূ-স্তরের নীচের জল ক্রমশ লোনা হতে থাকে। ফলে ভূমির উর্বরতা হ্রাস পায়। এইভাবে জলাভাব মরুভূমি তৈরী করে ও মরুভূমি বৃষ্টিপাত কমিয়ে দেয়। বৃষ্টিপাতের হ্রাসজনিত কারণে সভ্যতা ধ্বংস হয়।
অনেক ঐতিহাসিকের মতে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকেই হরপ্পা-সংস্কৃতি ধ্বংস হয়েছিল। তারা বলেছেন যে, সিন্ধু উপত্যকার নিকটবর্তী অঞ্চলেই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল। ভূমিকম্পেই এই সভ্যতা ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু এই বিষয়ে বলা যায় যে, এই ভূমিকম্প তত্ত্ব মহেঞ্জোদাড়োর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও হরপ্পা সভ্যতার অনান্য নগরগুলির ধ্বংসের ব্যাখ্য এর থেকে মেলে না।
ভূমিকম্পের মতই সিন্ধুনদের বন্যাকেও কেউ কেউ হরপ্পা সভ্যতার পতনের জন্য দায়ী করেছেন। পলি জমে ক্রমশ নদীগর্ভ ভরাট হয়ে গিয়েছিল। ফলে বর্ষায় বন্যা ছিল অবশ্যম্ভাবী যা শহরকে প্লাবিত করত। ঐতিহাসিক রাইকস-এর মতে, সিন্ধুনদের জল অবরুদ্ধ হবার ফলে ক্রমাগত বন্যা ও প্লাবন হচ্ছিল এবং এর ফলেই সিন্ধু সভ্যতার বিলোপ ঘটেছিল। এস. আর. শাহানীর মতে, প্লাবন বা বন্যাই সিন্ধু সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রেও বন্যার কারণে মহেঞ্জোদাড়ো বা লোথাল শহর দুটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও অন্যান্য শহরগুলি যথা – হরপ্পা, কালিবঙ্গান প্রভৃতি শহর ধ্বংসের জন্য বন্যাকে দায়ী করা যায় না।
বন্যার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে গিয়ে সিন্ধুবাসীরা আরও অনেক বিপদ ডেকে এনেছিল। ইট পোড়ানোর জন্য হরপ্পাবাসীরা যথেচ্ছভাবে বনজঙ্গল ধ্বংস করেছিল। বনাঞ্চল নষ্ট হবার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি স্বরূপ এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদ প্রজেল-এর মতে বনাঞ্চল ধ্বংস হবার সাথে সাথে এই অঞ্চলের প্রাণিকুলও ধ্বংস হয়েছিল। একটি সভ্যতার টিকে থাকার পক্ষে যা ছিল অপরিহার্য। বনাঞ্চল ধ্বংস হবার ফলে মরুভূমি সম্প্রসারণ দ্রুত সভ্যতার পতন ডেকে এনেছিল বলে মনে করা হয়।