ক্যারিয়ার উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়
কখনো কি মনে হয়েছে, আপনার ক্যারিয়ার যেন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় থমকে গেছে? চাইলেও আর কোনো উন্নতি হচ্ছে না বা ক্যারিয়ারের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা যাচ্ছে না? প্রতিদিনের কাজ একঘেয়ে মনে হয়। কারণ, বার বার একই ধরনের কাজ করা কত দিন ভালো লাগে? কর্মক্ষেত্রে এমন অনুভূতি হওয়া মোটেও অস্বাভাবিক নয়।
পিজিওনহোলিং
ধরুন, আপনি কোনো একটি কাজে বেশ দক্ষ। আপনার বর্তমান প্রতিষ্ঠান সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে শুধু সেই নির্দিষ্ট কাজটাই আপনাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে। একদিকে এটি ভালো, কারণ আপনার দক্ষতার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় একই কাজ করলে একঘেয়েমি আসে। তখন মনে হয়, আপনি যেন একটি গণ্ডির মধ্যে আটকে আছেন, যেখান থেকে বের হয়ে এগিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘পিজিওনহোলিং’। এর অর্থ হলো, একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে পড়া। এই ফাঁদ আপনার ক্যারিয়ারের সম্ভাবনাকে সীমিত করে দেয়।
পিজিওনহোলিং কেন হয়?
- (১) বিখ্যাত ক্যারিয়ার কোচ লুসি অ্যালেন বলেন, ‘আপনি যখন একটি নির্দিষ্ট দক্ষতা খুব ভালোভাবে আয়ত্তে আনেন, তখন আপনার কাজের পুরো সময়টাই কেবল ওই কাজের দায়িত্ব নিতে নিতেই কেটে যায়। ফলে অন্য কিছু শেখা বা করার সুযোগটা কমে আসে।’
- (২) পিজিওনহোলিং যে কেবল কোনো একটি বিষয়ে দক্ষ হওয়ার জন্যই হয়, এমন কিন্তু না। আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে যদি আপনার কোনো মাথাব্যথা বা পরিষ্কার লক্ষ্য না থাকে, তাহলেও আপনি পিজিওনহোলিংয়ের সম্মুখীন হতে পারেন।
- (৩) অ্যালেন আরও বলেন, ‘যাঁরা তাঁদের দক্ষতা, আগ্রহ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে অন্যদের জানান, কেবল তাঁদেরই নতুন সুযোগ দেওয়া হয়। আর যাঁরা জানান না, তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়।’
- (৪) মনে করুন, আপনি কোনো এক জায়গার মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু আপনি টুকটাক ভিডিও এডিটিংও করতে পারেন। এখন আপনি যদি আপনার এই দক্ষতার কথা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানান, তাহলে আপনাকে দিয়ে তাঁরা সব সময় মার্কেটিং-সম্পর্কিত কাজই করিয়ে যাবে।
- (৫) কিন্তু আপনি যদি তাঁদের আপনার আগ্রহের কথা বলেন, তাহলে তাঁরা আপনাকে ভিডিও এডিটিংয়ের ওপর আরও ভালো ট্রেইনিং দিয়ে নতুন কাজ দিতে পারেন। নতুন প্রজেক্ট পাওয়ার ফলে কাজ নিয়ে আপনার মাঝে একঘেয়েমিও লাগবে না।
পিজিওনহোলিং থেকে বেরিয়ে আসার উপায়
আপনি যদি লক্ষ করেন, আপনার চারপাশের মানুষ নতুন প্রকল্প বা উন্নয়নের সুযোগ পাচ্ছে, কিন্তু আপনি সেই সুযোগ পাচ্ছেন না, তবে হয়তো আপনি পিজিওনহোলিংয়ের শিকার হয়েছেন। আপনি যদি একই কাজে আটকে যান, তাহলে আপনার কাজের প্রতি অনীহা চলে আসবে, নিজেকে তুচ্ছ মনে হবে এবং নতুন দক্ষতা শেখার সুযোগ হারিয়ে ফেলবেন। হ্যাঁ, হয়তো একই ধরনের কাজ অনেক দিন ধরে করলে সেই কাজে দ্রুততা চলে আসে, কিন্তু এটি আপনার ক্যারিয়ারে বড় কোনো ভূমিকা রাখবে না। তা ছাড়া এর কারণে আপনার নেটওয়ার্কিংয়ের গণ্ডিটাও ছোট হয়ে আসবে, নতুন মানুষজনের সঙ্গে জানাশোনা কমে যাবে।
একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন
আপনার ম্যানেজারের সঙ্গে আপনার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, দক্ষতা ও ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করুন। তাঁকে বোঝান যে আপনি এখন নতুন কিছু করতে চাইছেন। প্রয়োজন হলে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে নতুন সুযোগ খোঁজার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন।
নিজের কাজের বাইরে হাত বাড়ান
নিজের কাজ তো করবেনই, একই সঙ্গে অন্য বিভাগগুলোতে গিয়েও দেখে আসুন, তারা কীভাবে কাজ করে। আপনার যদি মনে হয়, আপনি ফাইন্যান্স বিভাগে কাজ করার পরেও সেলস টিমকে কোনোভাবে নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সাহায্য করতে পারবেন, তাহলে দেরি না করে সাহায্য করুন। এভাবে অন্যরাও আপনার স্কিল সম্পর্কে জানবেন এবং আপনি নিজেও নিজেকে ঝালাই করে নিতে পারবেন।
সুযোগ খুঁজতে থাকুন
প্রথমেই নতুন কোথাও চাকরি না খুঁজে নিজের প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই নতুন সুযোগ খুঁজে বের করুন। হয়তো কোনো একটি ডিপার্টমেন্টে লোকবল কম আছে কিংবা নির্দিষ্ট কোনো দক্ষতার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে যান।
নতুন বিষয়ে দক্ষ হোন
অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ, পড়াশোনা বা কাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রের বাইরে থেকে নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ নিন।
নিজের প্রজেক্ট শুরু করুন
অপেক্ষা না করে নিজেই আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্ষেত্র, শিল্প বা আগ্রহের সঙ্গে মিল রেখে একটি সাইড প্রজেক্ট শুরু করুন যাতে আপনার দক্ষতা সঠিক দিকে যায়।
মানুষের সঙ্গে পরিচিত হোন
আপনার প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এবং ইন্ডাস্ট্রিতে নেটওয়ার্কিং তৈরি করুন। এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্ত হন, যাঁদের ভূমিকায় আপনি নিজেকে দেখতে চান। তাঁদের কাজ ও দক্ষতা সম্পর্কে জানুন এবং কীভাবে তাঁরা সেই দক্ষতাগুলো অর্জন করেছেন, তা বোঝার চেষ্টা করুন।