নতুন বছরে সফল হওয়ার নতুন অনুশীলন
মানসিক গঠন রাতারাতি পরিবর্তিত হয় না। দিনের পর দিন দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। আর এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও অভ্যাসই জীবনে নিয়ে আসে সাফল্য। দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য নতুন বছরের শুরুর সময়টির থেকে ভালো সময় আর কিছুই হতে পারে না। সফলতার জন্য যে অভ্যাসগুলো আয়ত্ত করতে পারো তা নিয়েই আজকের এই লেখা।
ভোরে ওঠা
বছরের শুরু থেকে ভোরে ওঠার অভ্যাস করতে পারো। ভোরে ওঠার সুফল অনেক। ভোরে উঠলে দিনের ব্যাপ্তি বেড়ে যাবে তোমার কাছে। দেরি করে ওঠার ফলে প্রতিদিন যে কয় ঘণ্টা জীবন থেকে হারিয়ে যেত, সে সময়টি তুমি কাজে লাগাতে পারবে। তবে ভোরে উঠতে হলে সেজন্য প্রস্তুতি নিতে হবে আগের দিন রাত থেকেই। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্রাউজ করতে করতে বা মুভি দেখতে দেখতে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকো। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে ভোরে উঠতে পারবে না, এটিই স্বাভাবিক। তাই ভোরে উঠতে হলে তোমাকে অবশ্যই তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে হবে। চেষ্টা করো বিছানায় যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে থেকে স্মার্টফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার।
ঘুম থেকে উঠে এক ঘণ্টা ফোন ব্যবহার না করা
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরের কয়েক ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় আমাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে কর্মক্ষম ও সজীব থাকে। এ সময় হলো দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময়। কিন্তু আমরা অনেকেই ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্রাউজ করতে থাকি। এর ফলে একদিকে যেমন সময় অপচয় হয়, তেমনি আমরা প্রভাবিত হই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দ্বারা। আমরা নিজেদের উন্নতির জন্য কাজ না করে বরং ট্রেন্ড অনুসরণ করার প্রতি বেশি মনোযোগী হই, যা আমাদের লক্ষ্য থেকে দূরে রাখে। তাই ঘুম থেকে উঠে চেষ্টা করতে হবে কমপক্ষে এক ঘণ্টা ফোন ব্যবহার না করার। অনেকেই ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নেয় মূলত সময় দেখতে। কিন্তু এটি সময় দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢোকা হয়েই যায়। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে বিছানার পাশে একটি ঘড়ি রাখতে পারো। তাহলে সময় দেখতে আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হবে না।
প্রতিদিন তিন লিটার জল পান
আমাদের দেহের অধিকাংশই জল। জল আমাদের দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, তাপমাত্রা ঠিক রাখে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। রক্ত পরিবহনের মাধ্যমে দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পরিবাহিত হয়। মস্তিষ্কে সুষম অক্সিজেন পরিবহন মস্তিষ্ককে সজীব ও কর্মক্ষম রাখে। দেহ সুস্থ রাখে। তাই প্রতিদিন পরিমাণ মতো জল পান করা উচিত। একজন সুস্থ স্বাভাবিক পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন কমপক্ষে তিন লিটার জল পান করা উচিত। এর মধ্যে দুই লিটার জল দুপুর বারটার আগেই পান করা ভালো।
গুরুত্বপূর্ণ কাজ সকালে করা
সকালবেলায় মন ও মস্তিষ্ক থাকে শান্ত। এ সময় যে কোনো কাজে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়। মনোযোগ বেশি থাকে বলে কাজ সম্পন্ন হতে সময় কম লাগে। এ সময় পারিপার্শ্বিক হই-হট্টগোল কম থাকে বলে ও পরিবেশ শান্ত নিরুদ্রব থাকে বলে মনোযোগের বিঘ্নও ঘটে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। চারিদিকে শব্দ, ব্যস্ততা বাড়ে। আমরাও তার প্রভাবে অল্পতেই মেজাজ হারায়। কাজে মনোযোগ কমতে থাকে। তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজের করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো সকালবেলা। এ সময়, বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে ১০টার সময় আমাদের মনোযোগ সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় যে কোনো মস্তিষ্ক ব্যবহারের কাজ স্বাভাবিকের থেকে তিনগুণ বেশি করা সম্ভব হয়।
প্রতিদিন এক ঘণ্টা শরীরচর্চা
সুস্থ দেহে বাস করে প্রশান্ত মন। যে কোনো কাজ করার জন্য তাই প্রশান্ত মন যেমন প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন সুস্বাস্থ্য। শরীর সুস্থ রাখার জন্য করতে হবে শরীরচর্চা। প্রতিদিন শরীরচর্চার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করো। চেষ্টা করো প্রতিদিন সে সময় শরীরচর্চা করতে। কোনো কারণে যদি তা সম্ভব না হয় তবে চেষ্টা করো অন্য সময়ে শরীরচর্চা করে দিনের রুটিন ঠিক রাখতে। কিন্তু শরীর চর্চায় বিরতি যেন না পড়ে।
সোশ্যাল মিডিয়াকে বই দ্বারা প্রতিস্থাপন
আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ডুবে গেছি যে, এর ফলে আমাদের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাচ্ছে, কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তে স্থির থাকার মনোবল হ্রাস পাচ্ছে, ধৈর্য কমে যাচ্ছে। এসব নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ওপরে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, এই ব্যবহার যদি ন্যূনতম সময়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়। তা যদি সম্ভব না হয়, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের একটি রুটিন বা সময় নির্দিষ্ট করা উচিত। নির্ধারিত সময়ের বাইরে এগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এর ফলে অনেক সময় বেঁচে যাবে। এই সময়ে বিভিন্ন আত্মোন্নয়নমূলক বই পড়তে পারো। এর ফলে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জিত হবে, যা তোমার লক্ষ্য অর্জন করতে, সাফল্য লাভে সহায়তা করবে।
আত্মপর্যালোচনা
সারাদিনে কোন কাজটি ভালো করলে, কোন কাজটিতে আরও ভালো করা সম্ভব হতো, কোন কাজটি করা উচিত হয় নি, তা পর্যালোচনা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রাখতে হবে। ভালো হয় যদি রাতে ঘুমানোর আগে এই কাজটি করতে পারো। এই পর্যালোচনা তোমাকে ফের একই ভুল করা থেকে রক্ষা করবে।
আগামীদিনের পরিকল্পনা করা
আত্মপর্যালোচনার পরেই করতে হবে আগামীদিনের পরিকল্পনা। প্রতিদিন আমাদের কিছু কাজ থাকে যা নির্দিষ্ট। কিছু কাজের কথা আমরা লিখে রাখি ক্যালেন্ডারে বা ডায়েরিতে। সে অনুযায়ী আগামীদিনের পরিকল্পনা করতে হবে। একটি পরিকল্পিত দিন অনেক বিপত্তি থেকে রক্ষা করে।