বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস প্রথম অধ্যায়: প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাসের উপাদান থেকে ১০ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – মৌর্যযুগে কোন বিদেশী দূত ভারতে আসেন? তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম? প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বৈদেশিক বিবরণের গুরুত্ব কতখানি তা আলোচনা করা হল।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বৈদেশিক বিবরণের গুরুত্ব
প্রশ্ন:- মৌর্যযুগে কোন বিদেশী দূত ভারতে আসেন? তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম? প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বৈদেশিক বিবরণের গুরুত্ব কতখানি?
উত্তর:- গ্ৰিক দূত মেগাস্থিনিস মৌর্যযুগে ভারতে আসেন।
মেগাস্থিনিস রচিত গ্রন্থের নাম হল ইন্ডিকা।
বিদেশী লেখক ও পর্যটকদের বিবরণ থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বহু মূল্যবান উপাদান পাওয়া যায়। প্রাচীনকালে আগত বিদেশী পর্যটকদের মধ্যে গ্রীক, চৈনিক ও মুসলমানদের অবদান ছিল সর্বাধিক। তবে বিদেশীদের রচনা থেকে ঐতিহাসিক তথ্যসংগ্রহের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের দরকার আছে। কারণ, এঁদের অধিকাংশই ভারতের ভাষা জানতেন না বা তারা ভারতের রীতি-নীতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। আবার অনেকে ভারতে না এসেই অপরের লেখা ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুস্তক রচনা করেছেন। স্বভাবতই, এই ধরনের রচনায় ঘটনার আতিশয্য বা ভ্রান্ত ব্যাখ্যার সম্ভাবনা থাকে। যাই হোক, প্রাচীন ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বহু তথ্য এইসব বিবরণ থেকে পাওয়া যায়।
গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস ও টেসিয়াস-এর গ্রন্থ থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে পারসিক আক্রমণের বিবরণ পাওয়া যায়। অবশ্য এঁরা ভারতে আসেন নি। জনশ্রুতির ভিত্তিতেই ইতিহাস রচনা করেছেন। আলেকজাণ্ডারের ভারত আক্রমণ-সংক্রান্ত বিবরণ কোনও ভারতীয় রচনায় পাওয়া যায় না। আলেকজাণ্ডারের সঙ্গে আগত অ্যারিস্টোবুলাস, ওনোসক্রেটিস প্রমুখ অনুচরদের রচনা থেকেই এই বিষয়ে জানা যায়। তাছাড়া ডায়োডোরাস, আরিয়ান, প্লুটার্ক, কার্টিয়াস প্রমুখ লেখকদের গ্রন্থ থেকে আলেকজাণ্ডারের ভারত আক্রমণের কাহিনী ও সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক চিত্র পাওয়া যায়।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজসভায় আগত গ্রীকদূত মেগাস্থিনিস রচিত ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থ থেকে মৌর্যযুগের বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায়। অবশ্য মূল ‘ইণ্ডিকা’ গ্রন্থটি পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ডাইমেকস ও ডাইওনিসাস-এর দেওয়া তথ্য থেকেও ভারত সম্পর্কে বহু বিষয় জানা যায়। এক অজ্ঞাতনামা গ্রীক লেখক ‘পেরিপ্লাস অফ দি ইরিথ্রিয়ান সী’ নামক গ্রন্থে ভারতের সামুদ্রিক কার্যকলাপ ও ব্যবসাবাণিজ্য সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য লিপিবদ্ধ করেছেন। টলেমীর ভুগোল এবং প্লিনির বিবরণ থেকেও ভারতের বহু অজ্ঞাত বিষয় জানা যায়।
মৌর্য পরবর্তী ভারতের বহু মূল্যবান তথ্য চৈনিক লেখক ও পরিব্রাজকদের বিবরণ থেকেও জানা যায়। সু-মা-কিয়েন খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে রচিত তাঁর “ইতিহাস’ গ্রন্থে ভারত সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্য উল্লেখ করেছেন। তাকে ‘চীনের হেরোডোটাস’ বলা হয়। চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন গুপ্তসম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে ভারতে আসেন। তিনি তাঁর ‘ফো কুয়ো কি’ গ্রন্থে ভারত সংক্রান্ত বহু তথ্য পরিবেশন করেছেন। হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে ভারত পরিভ্রমণে আসেন হিউয়েন সাঙ। তাঁর রচিত ‘সি-ইউ-কি’ গ্রন্থ থেকে সমসাময়িক ভারত ও ভারতবাসী সম্পর্কে বহু সংবাদ জানা যায়। এছাড়া ইং-সিং-এর বিবরণ থেকেও ভারত-ইতিহাসের অনেক কথা জানা যায়। তিব্বতীয় ঐতিহাসিক ও বৌদ্ধ পণ্ডিত তারানাথ-এর বিবরণ থেকে বাংলার পালরাজাদের বহু তথ্য পাওয়া যায়।
মুসলমান আক্রমণকালে আরবীয় পণ্ডিত অলবেরুনী ভারতে আসেন। তাঁর ‘তহকিক-ই-হিন্দ’ গ্রন্থ থেকে সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস জানা যায়। অন্যান্য আরবীয় লেখক, যথা- সুলেমান, হাসান নিজামী, আল-মাসুদি প্রভৃতির রচনা থেকেও ভারত-ইতিহাস রচনার বহু উপাদান পাওয়া যায়।