মহিয়ষী নরেশনন্দিনী দত্ত ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী নারী বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি নারী সমাজকে দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর জীবন সংগ্রাম, সামাজিক সচেতনতা এবং জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ তাঁকে বাংলার বিপ্লবী ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দিয়েছে। নরেশনন্দিনী দত্ত কেবলমাত্র এক দেশপ্রেমিক নন, তিনি ছিলেন এক সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী নারী, যিনি নারীশিক্ষা ও সামাজিক পরিবর্তনের জন্যও কাজ করেছেন।
বিপ্লবী নরেশনন্দিনী দত্ত
| ঐতিহাসিক চরিত্র | নরেশনন্দিনী দত্ত |
| পরিচয় | ভারতীয় নারী বিপ্লবী ও সমাজসেবী |
| জন্ম | ১৯০১ সালের ডিসেম্বর, শ্রীহট্ট |
| সংগঠন | বঙ্গীয় বিপ্লবী সংগঠনসমূহে যুক্ত ছিলেন |
| উদ্দেশ্য | নারী জাগরণ, দেশপ্রেম, ও সমাজ সংস্কার প্রচার |
| মূল অবদান | ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ |
| ঐতিহাসিক গুরুত্ব | বাংলার নারী বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব |
| বিশেষ ভূমিকা | নারী সমাজকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করা |
নরেশনন্দিনী দত্ত
ভূমিকা :- নরেশনন্দিনী দত্ত ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক সাহসী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারী বিপ্লবী। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যখন সমগ্র ভারত জেগে উঠেছিল, তখন তিনি নারীদের সংগঠিত করে দেশমাতৃকার সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতার আদর্শ প্রচার এবং নারী সমাজকে রাজনৈতিক সচেতনতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তিনি বিশ্বাস করতেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ জাতীয় মুক্তির সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। সমাজসেবা, নারীশিক্ষা ও দেশপ্রেমিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নরেশনন্দিনী দেবী বাংলা ও ভারতের নারী জাগরণের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
নরেশনন্দিনী দত্তর জন্ম
শ্রীহট্ট জেলার অন্তর্গত হরিনগর পরগনার এক বিখ্যাত পরিবারে ১৯০১ সালের ডিসেম্বর মাসে নরেশনন্দিনী দেবী জন্মগ্রহণ করেন।
বিপ্লবী নরেশনন্দিনী দত্তর পিতামাতা
তার পিতার নাম ঈশানচন্দ্র গুপ্ত ও মাতার নাম নিত্যময়ী গুপ্ত।
মহিলা সংঘে নরেশনন্দিনী দেবী
অল্পবয়সেই তিনি বিধবা হন। তারপর ১৯৩১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাঁর অষ্টমবর্ষীয় একমাত্র পুত্রকে মাতুলালয়ে রেখে তিনি শ্রীহট্ট মহিলা সংঘে যোগদান করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঐ মহিলা সংঘের কর্মীরূপে নিযুক্ত ছিলেন।
গান্ধীজী প্রবর্তিত আন্দোলনে নরেশনন্দিনী দত্ত
তিনি গান্ধীজী-প্রবর্তিত প্রতিটি আন্দোলনে যোগদান করে পাঁচবার কারাবরণ করেন। শুধু তাই নয়, গঠনমূলক ও সমাজহিতকর কাজে তার নিরলস ও নীরব কর্মসাধনা শ্রীহট্টের মহিলাদের কর্মে ও ত্যাগে অনুপ্রাণিত করত।
ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহে নরেশনন্দিনী দেবী
তিনি ১৯৩২ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে দুইবার কারাগারে প্রেরিত হন। কারাগার তাকে ভয় দেখাতে পারে নি। ১৯৭১ সালে ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহ-এ যোগদান করে আবার তিনি কারাগৃহে প্রবেশ করেন।
ভারত ছাড় আন্দোলনে নরেশনন্দিনী দত্ত
১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলন পরিচালনা করতে করতে পুনরায় কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে সেই কারাপ্রাচীরের অন্তরালেই তিনি হাসতে হাসতে চলে গেলেন।
শ্রীহট্ট জেলে নরেশনন্দিনী দেবী
নিরাপত্তা বন্দীরূপে রাজ-অতিথি হয়ে রইলেন তিনি শ্রীহট্ট জেলে পঞ্চমবারে। জেলখানা তাঁর হাসিমুখকে আরো উজ্জ্বল করে তুলেছিল।
দুঃস্থের সেবায় নরেশনন্দিনী দত্ত
নোয়াখালির দাঙ্গার পর উক্ত অঞ্চলে প্রায় চারবছর পর্যন্ত দুঃস্থের সেবায় তিনি নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছিলেন।
গঠনমূলক কাজে নরেশনন্দিনী দত্ত
এরপর তিনি আংশিকভাবে ভুদান-যজ্ঞের কাজে ও অভয় আশ্রমের গঠনমূলক কাজে ব্যাপৃত হন।
উপসংহার :- নরেশনন্দিনী দেবী কেবল একজন বিপ্লবী নন, বরং তিনি নারীর ক্ষমতায়ন ও সমাজসেবার প্রতীকও। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সাহসী অবদান এবং নারী সমাজকে স্বাধীনতা আন্দোলনে উৎসাহিত করার কাজ তাঁকে ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দিয়েছে। তাঁর জীবন ও আদর্শ আমাদের শেখায় যে দেশপ্রেম ও সমাজসেবার মাধ্যমে নারীর ভূমিকা যেকোনো আন্দোলনে অপরিহার্য এবং প্রেরণাদায়ী হতে পারে। নরেশনন্দিনী দত্তের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ বাংলা ও ভারতের নারী ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
(FAQ) নরেশনন্দিনী দত্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
নরেশনন্দিনী দত্ত ছিলেন একজন ভারতীয় নারী বিপ্লবী ও সমাজসেবী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি বাংলার ছিলেন।
তিনি নারী সমাজকে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছিলেন এবং সমাজসেবা ও নারী শিক্ষার প্রসারে কাজ করেছিলেন।
তিনি বিভিন্ন বঙ্গীয় বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
নারী বিপ্লবীদের মধ্যে তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তাঁর সাহস, দেশপ্রেম এবং নারী শিক্ষার প্রতি অনুরাগ তাকে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে।
দেশপ্রেম, সমাজসেবা এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে যে কোনো সমাজ পরিবর্তন সম্ভব, তা তাঁর জীবন থেকে শিখা যায়।