ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সমাজসংস্কার আন্দোলনের এক বিশিষ্ট নারী নেতা অনিতা বসু রাজনীতি, শিক্ষা ও সমাজসেবার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি একজন দক্ষ শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মীও ছিলেন। তিনি নারী শিক্ষার উন্নয়ন, সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং নারী অধিকার রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তাঁর জীবন সংগ্রামী, প্রগতিশীল ও আদর্শনিষ্ঠ নারীর প্রতীক হিসেবে আজও স্মরণীয়।
বিপ্লবী অনিতা বসু
| ঐতিহাসিক চরিত্র | অনিতা বসু |
| জন্ম | ১১ নভেম্বর, ১৯৩২ খ্রি |
| জন্মস্থান | বর্তমান বাংলাদেশ |
| পেশা | স্বাধীনতা সংগ্রামী, রাজনীতিক, সমাজকর্মী |
| রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
| প্রধান অবদান | সমাজকল্যাণে কাজ, নারী অধিকার রক্ষা, রাজনৈতিক নেতৃত্বে সক্রিয় ভূমিকা |
অনিতা বসু
ভূমিকা :- ভারত-এর স্বাধীনতা আন্দোলন ও সমাজসংস্কারের ইতিহাসে নারীর অবদান বিশেষ মর্যাদার দাবিদার, আর সেই কৃতী নারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অনিতা বসু। তিনি ছিলেন একাধারে স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক নেত্রী— যিনি নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা প্রসারে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর জীবন ছিল এক অনন্য সাধনা— যেখানে দেশপ্রেম, মানবতা ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতি অটল বিশ্বাস একত্রে বিকশিত হয়েছিল।
অনিতা বসুর জন্ম
১৯৩২ সালের ১১ই নভেম্বর ময়মনসিংহ শহরে অনিতা বসু জন্মগ্রহণ করেন।
বিপ্লবী অনিতা বসুর পরিবার
তাঁর পিতা অম্বিকাচরণ বসুর বাড়ী ছিল ঢাকায় বিক্রমপুর পরগনার রাউতভোগ গ্রামে। এই পরিবারের গর্ব ছিল শহীদ বিনয় বসুকে ঘিরে। সম্পর্কে বিনয় বসু তাঁদের নিকট আত্মীয়।
সঙ্গীতের অনুরাগী অনিতা বসু
শিশুকাল থেকেই অনিতা বসুর মনোরাজ্যে সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পের দিকে একটা প্রবল অনুরাগ ছিল।
রাজনৈতিক হওয়ার স্পর্শে অনিতা দেবী
১৯৪৬ সালে ম্যাট্রিক পাস করবার পর থেকেই তিনি চারিদিকের রাজনৈতিক উত্তপ্ত হাওয়ার স্পর্শ স্পষ্ট অনুভব করেন।
স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী গঠনে অনিতা বসু
তিনি পাড়ার মেয়েদের নিয়ে গঠন করেন স্বাতি স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী। তাঁরা প্যারেডও করতেন আবার নাচগানও করতেন। অনিতা দেবী ধীরে ধীরে একটি ছোট গ্রন্থাগারও সংগঠন করেন। তিনি বুঝেছিলেন ভারতবর্ষ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলে তবে সে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও যোগ্যস্থান অধিকার করতে পারবে।
ফরওয়ার্ড ব্লক দলে অনিতা বসু
বিপ্লবী যতীশ জোয়ারদার যখন ময়মনসিংহ শহরে আজাদ হিন্দ ভলান্টিয়ার কোর প্রতিষ্ঠা করেন, অনিতা দেবী তার ঝাঁসী বাহিনী শাখার ভারপ্রাপ্ত হন। তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক দলে যোগদান করেন।
ময়মনসিংহ শহরে শোভাযাত্রা
কলকাতায় ভিয়েতনাম দিবস উপলক্ষ্যে এক শোভাযাত্রা হয়। পুলিস নির্মমভাবে তার উপর গুলীবর্ষণ করে। প্রতিবাদে ১৯৪৭ সালের ২২শে জানুয়ারি ময়মনসিংহ শহরে ছাত্রদের একটি শোভাযাত্রা বের হয়; পুলিস ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করে। ফলে বহু ছাত্র ও তরুনদল শোভাযাত্রায় যোগদান করেন।
ছাত্রছাত্রীদের পণ
ট্রেজারি গ্রাউন্ডে পুলিসের অবরোধ ভেঙে জনতা ভিতরে ঢুকে পড়ে। ছাত্রছাত্রীরা মাটিতে বসে পড়েন। বন্ধুদের মুক্তি না দিলে তাঁরা উঠবেন না, এই তাঁদের পণ। উত্তেজিত জনতার ইট-পাটকেল ও পুলিসের গুলীবর্ষণ চলতে থাকে। জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রছাত্রীর দল খাঁটী সত্যাগ্রহীর মতো যথাস্থানে বসে রইলেন।
গুলীবিদ্ধ অনিতা বসু
পুলিসের গুলীতে আনন্দমোহন কলেজের ছাত্র অমলেন্দু ঘোষ অকুস্থলেই প্রাণত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন আজাদ হিন্দু ভলান্টিয়ার্স-এর প্লেটুন সার্জেন্ট। তারপর পুলিসের গুলীতে অনিতা দেবী ধরাশায়ী হন। তাঁর দুটি পা-ই গুলীবিদ্ধ হয়।
হাসপাতালে অনিতা দেবী
হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে তাঁর পায়ের গুলী বের করতে হয় এবং দুইমাস হাসপাতালে থাকতে হয়। তারও প্রায় সাতমাস পরে তিনি সুস্থ হন। এঁরা দুজন ছাড়া, লক্ষ্মী দাস, মন্টু সেন, ভোলা মিঞা ও দোলন গুলীবিদ্ধ হয়েছিলেন।
এস.আর.পি. দলে অনিতা বসু
অনিতা দেবী পরে শরৎচন্দ্র বসুর এস.আর.পি. দলে যোগদান করেন।
সুভাষ সংস্কৃতি পরিষদ-এর সম্পাদিকা অনিতা বসু
১৯৫১ সালে তিনি বি.এ. পাস করেন। এরপর তিনি সুভাষ সংস্কৃতি পরিষদ-এর সম্পাদিকা এবং ‘আজাদ হিন্দ, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস-এর সভ্য।
স্মরণে অনিতা বসু
সমাজে নারী স্বাধীনতা ও শিক্ষার প্রসারে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে গেছেন তিনি। আমাদের কাছে তিনি আজও স্মরণীয়।
উপসংহার :- অনিতা দেবী ছিলেন এমন এক প্রেরণাদায়ী নারী, যিনি শিক্ষা, সমাজসেবা ও রাজনীতিকে একত্রে মিলিয়ে মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, নারী কেবল পরিবারের পরিসরেই সীমাবদ্ধ নয়— বরং সমাজ ও রাষ্ট্রগঠনের প্রতিটি স্তরে সমানভাবে অবদান রাখতে পারে। তাঁর কর্ম, ত্যাগ ও আদর্শ আজও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকার নেতৃত্ব আসে নিষ্ঠা ও মানবকল্যাণের গভীর অনুভূতি থেকে।
(FAQ) অনিতা বসু সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
অনিতা দেবী ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট নারী নেত্রী, শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী। তিনি নারী শিক্ষা ও সমাজকল্যাণে অসামান্য অবদান রাখেন।
অনিতা দেবী ময়মনসিংহ শহরে ১৯৩২ সালের ১১ই নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
নারী শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নারী অধিকারের বিষয়ে তিনি ছিলেন পথিকৃৎদের একজন।
তিনি সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেন, সমাজে দেশপ্রেম ও নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করেন।