উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম অধ্যায়: ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগ হতে ১৯৫০ দশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কমিউনিস্ট চীনের প্রভাব আলোচনা কর।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জন্ম আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কতটা প্রভাবিত করেছিল, বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের উত্থান গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান, 1950 এর দশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কমিউনিস্ট চীনের প্রভাব, 1950 এর দশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কমিউনিস্ট চীনের প্রভাব নিরূপণ করো
১৯৫০ দশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কমিউনিস্ট চীনের প্রভাব আলোচনা
শ্রেণী | দ্বাদশ |
অধ্যায় | সপ্তম অধ্যায় |
Question Type | ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন |
Marks | 8 |
প্রশ্ন:- ১৯৫০ দশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কমিউনিস্ট চীনের প্রভাব আলোচনা কর। (HS History Question Paper 2019)
সূচনা:- পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে কমিউনিস্ট রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে (১৯৪৯ খ্রি., ১ অক্টোবর) চীন এশিয়া তথা বিশ্বরাজনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কমিউনিস্ট চিনের প্রভাব
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীন কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল তা নিম্নলিখিত ভাবে আলোচনা করা যেতে পারে। –
(১) সাম্যবাদী জোটের শক্তি বৃদ্ধি
বিশ্বের দ্বিমেরুকরণ রাজনীতিতে চিনের উত্থান সাম্যবাদী শিবিরে প্রথম শক্তিবৃদ্ধি ঘটায়। চিন ও বিশ্বের অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র রাশিয়ার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক শিবির গঠন করে।
(২) সাম্যবাদী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ
রাশিয়ার সঙ্গে চিনের মৈত্রী বিশ্বে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তােলে। রাশিয়া ওই আন্দোলনকে জোরদার করতে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ চিনকে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে সহযােগী নেতৃত্বের আসনে বসায়।
(৩) রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এই সম্পর্কের বিভিন্ন দিকগুলি হল –
(i) সম্পর্কের সূচনা
চিনে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাশিয়ার যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। চিনের লাল বিপ্লব সাম্যবাদী বিশ্ব গড়ে তােলার পথে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ সােপান। কমিউনিস্ট রাষ্ট্ররূপে চিনের আত্মপ্রকাশের পর রাশিয়াই প্রথম তাকে স্বীকৃতি জানিয়েছিল।
(ii) মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর
বন্ধুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ উভয় দেশের মধ্যে প্রায় ৩০ বছরের জন্য মৈত্রী চুক্তি (১৯৫০-১৯৭৯ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলস্বরূপ রাশিয়ার কাছ থেকে চিন সহজ শর্তে ৩০ কোটি ডলার ঋণ পায়। এ ছাড়াও রাশিয়া পাের্ট আর্থার বন্দর ও মাঞ্চুরিয়া রেলপথের অধিকার চিনের হাতে তুলে দেয়।
(iii) বন্ধুত্বে ফাটল
কিন্তু ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে চিন ও সােভিয়েত বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে চিন-সােভিয়েত মৈত্রী ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে কমিউনিস্ট চিন ন্যাটোকে সমর্থন করলে বেজিং ও মস্কোর দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়।
(৪) আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক
আমেরিকা ও চীনের সম্পর্ক বিশ্ব রাজনীতিতে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই সম্পর্কের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(i) সম্পর্কের অবনতি
চিনের সঙ্গে প্রথমদিকে আমেরিকার সম্পর্ক ছিল বৈরিতার। চিনে সাম্যবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার পর মার্কিন-চিন সংঘাত শুরু হয়। কমিউনিস্ট চিনও মার্কিন বিদেশনীতির বিরােধিতা করা শুরু করে। কাগজে বাঘ বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সমালােচনাও করে।
(ii) সম্পর্কের উন্নতি
সাতের দশক থেকে চিন মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে শুরু করে। চিনের সামরিক ও বৈজ্ঞানিক উন্নতি, রুশ-চিন দ্বন্দ্ব ইত্যাদি ঘটনা মার্কিন-চিন সম্পর্কের উন্নতিতে সাহায্য করে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রসংঘে চিনের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবকে আমেরিকা স্বাগত জানায়। মার্কিন বিদেশ-সচিব স্যার হেনরি কিসিঞ্জার এবং দুজন মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিকসন, রেগন পরপর চিন সফরে আসেন। আবার চিনা মন্ত্রী বেন-শিয়াং-পিং মার্কিন সফরে গেলে চিন মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটে।
(৫) গুরুত্বপূর্ণ এশীয় শক্তি
এতদিন কমিউনিস্ট ভাবধারা ও তার আধিপত্য রাশিয়া ও পূর্ব ইউরােপ -এই সীমাবদ্ধ ছিল। এবার কমিউনিস্ট চিনের উত্থানের পর তা এশীয় ভূখণ্ডেও ছড়িয়ে পড়ল। অচিরেই চিন এশিয়ার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
(৬) তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে প্রভাব
তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতেও কমিউনিস্ট চীনের প্রভাব ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন –
(i) তৃতীয় বিশ্বের নেতৃত্ব
শুধু এশিয়া মহাদেশই নয়, উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের নেতা হিসেবেও চিন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান pdf, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীনের গুরুত্ব, একবিংশ শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাশিয়ার ভূমিকা আলোচনা করো, বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের উত্থান pdf, কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে রুশ চীন মৈত্রী বৃদ্ধি পায়, চীনের ইতিহাস, দ্বিমেরুকরণ রাজনীতি কি, বিশ্বের একটি সাম্যবাদী রাষ্ট্র হল, চৌ এন লাই, চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, চীনের উত্থান
(ii) সৌহার্দ্যতা
এশিয়ার পাকিস্তান, ভারত, মঙ্গোলিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের পাশাপাশি আফ্রিকা মহাদেশের কঙ্গো, মালি, গিনি, তানজানিয়া, জাম্বিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রও চিনের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তােলে।
(iii) জোটনিরপেক্ষতা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি গ্রহণ করে চিনও জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তুলেছে।
(iv) আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায়
আন্তর্জাতিক শান্তি-প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে চিনা প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই এর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ফলশ্রুতি হিসেবে জেনেভা (১৯৫৪ খ্রি.) ও বান্দুং (১৯৫৫ খ্রি.) সম্মেলনে চিন বৃহৎ শক্তির মর্যাদা লাভ করে।
উপসংহার :- আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট চীনের ভূমিকা বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। প্রসঙ্গত জাতিপুঞ্জ -এর নিরাপত্তা পরিষদের পঞ্চম স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
rise of china in global politics, role of china in international relations, rise of china in global politics introductionthe, rise of china in international relationseffects of communism in china