বলীদ্বীপ প্রসঙ্গে সেখানকার সামাজিক ব্যবস্থা, বিবাহ রীতি, ধর্মশাস্ত্র, বৌদ্ধ ধর্মের সুপ্রতিষ্ঠা, শৈব ও বৌদ্ধদের মিলনের নিদর্শন, শিব ও সূর্যের একত্বজ্ঞাপক উপাসনা, রাজা, কৃষি, ভারতীয় উপনিবেশ, স্বাধীনতা অর্জন ও বলীদ্বীপের ভারতীয়-যব-বলী-সভ্যতা সম্পর্কে জানবো।
ঐতিহাসিক স্থান বলীদ্বীপ
ঐতিহাসিক স্থান | বলীদ্বীপ |
কৃষি ফসল | কার্পাস |
ধর্ম | হিন্দু ও বৌদ্ধ |
রাজা | কৌণ্ডিণ্য |
ভূমিকা :- প্রবাদমতে বলীদ্বীপ প্রথমে যবদ্বীপ-এরই অংশবিশেষ ছিল। তৃতীয় শতাব্দীতে পৃথক হয়। কিন্তু কোন সময় হিন্দু রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় তা বলা যায় না।
বলীদ্বীপের সামাজিক ব্যবস্থা
এই বলীদ্বীপের অধিকাংশ অধিবাসী আজও হিন্দু। চার বর্ণের ভিত্তি উপর সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য দ্বিজাতি আর শূদ্র একজাতি। বিভিন্ন বর্ণের মধ্যে চার বর্ণের লোকই চাষের কাজ করে।
প্রাচীন বলীদ্বীপের বিবাহ রীতি
এই স্থানে বিভিন্ন বর্ণের মধ্যে বিবাহ প্রচলিত আছে। কিন্তু পুরুষরা নিজ বর্ণের বা তার নিম্নবর্ণের মেয়ে বিয়ে করতে পারে, মেয়েরা নিজবর্ণের বা তার উচ্চবর্ণের পুরুষের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হতে পারে। অর্থাৎ অনুলোম বিবাহ চলতি পাছে। প্রতিলোম বিবাহ নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয়।
বলীদ্বীপের ধর্মশাস্ত্র
ধর্মশাস্ত্র অনেকটা মনুস্মৃতি অবলম্বনে রচিত। পুরোহিতদের পদণ্ড বলে। মৃত্যুর পর নিম্নপ্রকারের অশৌচ ব্যবস্থা প্রচলিত – পদণ্ড ৫ দিন, অন্য ব্রাহ্মণ ১০ দিন, ক্ষত্রিয় ১৫ দিন, বৈশ্য ২০ দিন এবং শূদ্র ২৫ দিন।
প্রাচীন বলীদ্বীপে বৌদ্ধধর্মের সুপ্রতিষ্ঠা
বৌদ্ধ ধর্ম ষষ্ঠ শতাব্দীতে বলাদ্বীপে প্রবেশ করে। ইৎ সিং-এর বর্ণনা থেকে পাই যে এই দ্বীপে বৌদ্ধ ধর্ম প্রায় সকলেই গ্রহণ করেছিল। অর্থাৎ সপ্তম শতাব্দীতে বলীদ্বীপে বৌদ্ধ ধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
বলীদ্বীপে শৈব ও বৌদ্ধদের মিলনের নিদর্শনা
ক্রমে পৌরাণিক হিন্দুধর্মই আপন আধিপত্য বিস্তার করে। এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীও শৈব। কিন্তু যিনি শিব তিনিই বুদ্ধ এরূপ ধারণা সেখানে শৈব ও বৌদ্ধদের মিলনের নিদর্শন। বিশেষ উৎসব-এর ভোজ উপলক্ষে চারজন শৈব ও একজন বৌদ্ধ পুরোহিত ক্রিয়া সম্পন্ন করে।
প্রাচীন বলীদ্বীপে শিব ও সূর্যের একত্বজ্ঞাপক উপাসনা
এই বলীদ্বীপের সব চেয়ে বড় পূজা সূর্যসেবন বা শিবকে সূর্যরূপে পূজা। ‘ওঁ হ্রাং হ্রীং সঃ পরম শিবাদিত্যায় নমঃ। ওঁ হ্রাং হ্রীং সঃ শিব সূর্য পরস্তেজস্বরূপায় নমঃ॥’ এই মন্ত্র শিব ও সূর্যের একত্বজ্ঞাপক উপাসনাই প্রমাণ করে।
বলীদ্বীপের ইতিহাস লেখার উপাদান স্বল্প
কিন্তু পরম দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে বলীদ্বীপের রাজকাহিনী, শিল্পকলা, সাহিত্য প্রভৃতি সভ্যতার ইতিহাস লেখবার মতো যথেষ্ট উপাদান নেই।
ঐতিহাসিক বলীদ্বীপের রাজা
চীনদেশীয় ইতিবৃত্ত থেকে জানা যায় যে ষষ্ঠ শতাব্দীতে কৌণ্ডিণ্য উপাধিধারী এক ক্ষত্রিয় ওখানকার রাজা ছিলেন।
বলীদ্বীপের কৃষি
এই বলীদ্বীপে সপ্তম শতাব্দীতে কার্পাসের চাষ এবং তুলা থেকে কাপড় প্রস্তুতের কথাও চীনা ইতিহাসে পাওয়া যায়।
ভারতীয় উপনিবেশ বলীদ্বীপ
প্রাপ্ত ‘শাসন’ থেকে প্রমাণিত হয় যে অষ্টম শতাব্দীতে বলীদ্বীপ ভারতীয় উপনিবেশ ছিল এবং ঐ দ্বীপের সঙ্গে ভারতবর্ষের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। যবদ্বীপের মাধ্যমে বলীদ্বীপ ভারতীয় সভ্যতা পায়নি, অন্যান্য দ্বীপের মতো স্বাধীনভাবে এখানেও ভারতীয় সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল।
বলীদ্বীপের রাজা
দশম শতাব্দীর দুই ‘শাসনে’ রাজা উগ্রসেনের এবং তারপরে জৈন সাধু বর্মদেব, শ্রীকেশরীবর্ম প্রমুখের নাম পাওয়া যায়।
যবদ্বীপের রাজার বলীদ্বীপ জয়
একাদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে যবদ্বীপের রাজা ধর্মবংশ বলীদ্বীপ জয় করেন। এর পর যবদ্বীপের সভ্যতা বা যবদ্বীপ-ভারতীয় সভ্যতা বলীদ্বীপের উপর প্রভাব বিস্তার করে। বলীদ্বীপও যবদ্বীপের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
বলীদ্বীপের স্বাধীনতা অর্জন
যবদ্বীপ ও বলীদ্বীপের মধ্যে বহু যুদ্ধবিগ্রহের ফলে বলীদ্বীপ স্বাধীন হয়। আবার চতুর্দশ শতাব্দীতে মজপহিট রাজা বলীকে তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
প্রাচীন বলীদ্বীপের ভারতীয়-যব-বলী-সভ্যতা
নিজেদের সভ্যতা বজায় রাখবার জন্য মুসলমান বিজয়ের পর মজপহিট রাজবংশের এবং যবদ্বীপের অনেক লোক বলীদ্বীপে যায়। এর পরের বলীদ্বীপের সভ্যতা ভারতীয়-যব-বলী-সভ্যতা নামে পরিচিত।
উপসংহার :- ঊনবিংশ শতাব্দীতে বলীদ্বীপ ডাচ (ওলন্দাজ) প্রভূত্ব স্বীকার করে। কিন্তু যুদ্ধবিগ্রহ তারপরেও চলে। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু শাসন বলীদ্বীপ থেকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে।
(FAQ) বলীদ্বীপ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ভারতীয়দের।
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে।
ডাচ বা ওলোন্দাজরা।
কৌণ্ডিণ্য।