দশম শ্রেণী (অষ্টম অধ্যায়): উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

দশম শ্রেণী (অষ্টম অধ্যায়): উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

দশম শ্রেণী (অষ্টম অধ্যায়): উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

১. ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ (১৯৪৭ খ্রি.)-এ দেশীয় রাজ্যগুলি কী অধিকার পায়?

উত্তর:- ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ (১৯৪৭ খ্রি.)-এ বলা হয় দেশীয় ব্রাজ্যগুলি ইচ্ছা করলে তাদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে। অথবা, ভারত ও পাকিস্তান-যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগ দিতে পারবে।

২. ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের কোন কোন স্থানে ফ্রান্স ও পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল?

উত্তর:- ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরও চন্দননগর, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে, কারিকল প্রভৃতি স্থানে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল এবং গোয়ায় পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল।

৩. কোন কোন ফরাসি উপনিবেশ কবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?

উত্তর:- ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর গণভোটের মাধ্যমে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। তা ছাড়া ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে, কারিকল প্রভৃতি ফরাসি উপনিবেশ এক চুক্তির দ্বারা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

৪. ব্রিটিশ ভারতের বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্যের নাম লেখো।

উত্তর:- ব্রিটিশ ভারতের সর্বাধিক বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্য ছিল হায়দ্রাবাদ, মহীশূর, বরোদা ও জম্মু-কাশ্মীর।

৫. দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সর্বাধিক ভূমিকা ছিল?

উত্তর:- দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই বিষয়ে তাঁর কঠোর নীতির জন্য তিনি ‘লৌহমানব’ নামে পরিচিত হন।

৬. ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ (LOC) কী?

উত্তর:- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের আত্মপ্রকাশের পর কাশ্মীরের ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। অবশেষে জাতিপুঞ্জ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে (৩১ ডিসেম্বর) কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। জ্যাতিপুঞ্জ নির্ধারিত যুদ্ধবিরতি সীমারেখা ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা’ বা ‘Line of Control’ (LOC) নামে পরিচিত।

৭. ভারতের পক্ষে হায়দ্রাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না কেন?

উত্তর:- ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, হায়দ্রাবাদের মধ্য দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের সংযোগকারী রেল ও সড়ক যোগাযোগ, হায়দ্রাবাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মনোভাব প্রভৃতি কারণে ভারতের পক্ষে হায়দ্রাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।

৮. ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’-এর দ্বারা কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়?

উত্তর:- ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ (১৯৪৭ খ্রি.)-এর দ্বারা ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। ঐক্যবদ্ধ ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সিন্ধু, বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব, পূর্ব বাংলা ও আসামের শ্রীহট্ট জেলার কিছু অংশ নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়। অবশিষ্ট ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হয় ভারত।

৯. ‘মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ’ কী?

উত্তর:- ভারতের বড়োলাট লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন ভারত বিভাগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা ‘মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ’ নামে পরিচিত।

১০. জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে চলে যান কেন?

উত্তর:- দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশই ছিল হিন্দু। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর সেখানকার মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে সেখানে প্রজাবিদ্রোহ শুরু হয়। এদিকে ভারতীয় সেনা জুনাগড়ে প্রবেশের জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান।

১১. জুনাগড় কীভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়?

উত্তর:- হিন্দু-অধ্যুষিত জুনাগড়ের মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে সেখানে তীব্র প্রজাবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান এবং ভারতীয় সেনা জুনাগড়ে প্রবেশ করে। এরপর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের গণভোটের মাধ্যমে জুনাগড় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

১২. ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ কবে, কোথায় পাস হয়?

উত্তর:- ভারতের স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হয় এবং ১৮ জুলাই তা রাজকীয় সম্মতি লাভ করে।

১৩. ‘দেশীয় রাজ্য’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর:- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনের বাইরে ছোটোবড়ো মিলিয়ে প্রায় ৫৬৫ টি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এগুলি ‘দেশীয় রাজ্য’ নামে পরিচিত ছিল।

১৪. ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’-এর দুটি ধারা উল্লেখ করো।

উত্তর:- ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’-এর দ্বারা ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে ‘ভারত’ ও ‘পাকিস্তান’ নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত দেশীয় রাজ্যগুলি নিজেদের ইচ্ছানুসারে ভারত বা পাকিস্তানে যোগদানের অথবা নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অধিকার পায়।

১৫. ভারতীয় ভূখণ্ডের ফরাসি উপনিবেশগুলির ভবিষ্যত কীভাবে নির্ধারিত হয়?

উত্তর:- ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত এক চুক্তিতে বলা হয় যে, ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশগুলি গণভোটের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে পারবে।

১৬. ভারত হায়দ্রাবাদ দখলের পরবর্তীকালে এই ভূখণ্ড কোন কোন রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়?

উত্তর:- ভারত হায়দ্রাবাদ দখলের পর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে হায়দ্রাবাদকে তিনটি অংশে বিভক্ত করে সেগুলিকে অন্ধ্রপ্রদেশ, বোম্বাই ও মহীশূরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

১৭. কে, কবে ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’ স্থাপন করেন? এর সেক্রেটারি কে ছিলেন?

উত্তর:- ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে (জুলাই) ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করেন।

দেশীয় রাজ্য দপ্তরের সেক্রেটারি ছিলেন ভি পি মেনন।

১৮. চন্দননগর কবে, কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?

উত্তর:- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুন ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগরে এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানকার অধিবাসীরা ভারতের সঙ্গে চন্দননগরের সংযুক্তির পক্ষে ভোট দেয়। এরই ফলস্বরূপ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২ মে ভারতে চন্দননগরের নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়। তবে কার্যকরী ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন।

১৯. ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশগুলির ওপর ফ্রান্সের অধিকার কবে এবং কীভাবে বিলুপ্ত হয়?

উত্তর:- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্স ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশগুলির ওপর তাদের অধিকার ত্যাগ করে। এর সঙ্গে সঙ্গে এই উপনিবেশগুলির ওপর ফ্রান্সের অধিকার বিলুপ্ত হয়।

২০. ‘ভারতভুক্তির দলিল’ বা ‘ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন’ কী?

উত্তর:- ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারতে যোগদান করে তা ‘ভারতভুক্তির দলিল’ বা ‘ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন’ নামে পরিচিত।

২১. কী পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন?

উত্তর:- কাশ্মীর রাজ্য ভারতভুক্তির দলিলে নানা কারণে স্বাক্ষর করে। কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাক-মদতপুষ্ট হানাদাররা কাশ্মীর আক্রমণ করলে হরি সিং ভারতের কাছে সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেন। ভারত সরকার সামরিক সাহায্য করলে হরি সিং ভারতের সঙ্গে যোগ দেন এবং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন।

২২. ১৯৫০ সালে কেন নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল?

উত্তর:- ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন, উভয় দেশের উদ্বাস্তুদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়া, ফিরে যাওয়া উদ্বাস্তুদের পৈতৃক সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া, অপহৃতা উদ্বাস্তু নারীদের ফিরিয়ে দেওয়া, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুনিশ্চিত করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

২৩. কবে এবং কী উদ্দেশ্যে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর:- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি ‘দিল্লি চুক্তি’ নামেও পরিচিত। নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্দেশ্য ছিল ভারত এবং পাকিস্তানের সংখ্যালঘু উদ্বাস্তুদের স্বার্থরক্ষা করা।

২৪. বাংলার উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে বিধানচন্দ্র রায়ের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদক্ষেপ তুলে ধরো।

উত্তর:- বাংলার উদ্‌দ্বাস্তু পুনর্বাসনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদক্ষেপ ছিল তিনি বিভিন্ন শিবিরে বসবাসকারী উদ্বাস্তুদের নানান জায়গায় জমি বিলি করে উদ্বাস্তুদের বসবাসের ব্যবস্থা করেন। পুনর্বাসনের পর উদ্বাস্তুরা যাতে নিজেদের জীবন-জীবিকা চালাতে পারে তার জন্য তিনি উদ্বাস্তু পরিবারগুলিকে নগদ অর্থ প্রদান করেন। নতুন শিল্প উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।

২৫. সদ্য স্বাধীন ভারতের প্রধান সমস্যাগুলি কী ছিল?

উত্তর:- সদ্য স্বাধীন ভারতের প্রধান সমস্যাগুলি ছিল দেশভাগের পরবর্তী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশীয় রাজ্যগুলির অন্তর্ভুক্তিতে সমস্যা, পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের নিয়ে সমস্যা, খাদ্যসংকট, অর্থনৈতিক সংকট, জাতীয় সংহতির সমস্যা প্রভৃতি।

২৬. উদ্বাস্তু সমস্যা কী?

উত্তর:- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ ও ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের অসংখ্য সংখ্যালঘু হিন্দু ও শিখ নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে নিঃস্ব অবস্থায় ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থান, খাদ্যসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। সরকারও আগত উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হিমসিম খায়। এর ফলে যে সমস্যা সৃষ্টি হয় তা উদ্বাস্তু সমস্যা নামে পরিচিত।

২৭. উদ্বাস্তু সমস্যা ভারতের অর্থনীতিতে কীরূপ সংকটের সৃষ্টি করে?

উত্তর:- স্বাধীনতা-পরবর্তী উদ্বাস্তু সমস্যা সদ্যস্বাধীন ভারতের ওপর যথেষ্ট অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। যেমন – পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুর ত্রাণের জন্য সরকারের প্রচুর অর্থব্যয় হয়। উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্যও সরকারকে প্রচুর অর্থব্যয় করতে হয়। উদ্‌দ্বাস্তু আগমনের ফলে দেশে জনসংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেলে বেকারত্বও বৃদ্ধি পায়।

২৮. দেশভাগের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে এমন দুটি বাংলা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার নাম উল্লেখ করো।

উত্তর:- দেশভাগের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে এমন দুটি উল্লেখযোগ্য বাংলা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা হল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধেক জীবন’ এবং প্রফুল্ল রায়ের ‘কেয়াপাতার নৌকো’।

২৯. স্মৃতিকথা কীভাবে উদ্‌দ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়?

উত্তর:- দেশভাগের পর বিভিন্ন উদ্বাস্তুর লেখা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থগুলি থেকে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়। দেশভাগের প্রেক্ষাপট, দেশভাগের মুহূর্তে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক টানাপোড়েন, মাতৃভূমি ছেড়ে দেশত্যাগের পরিস্থিতি, উদ্বাস্তু জীবনে জীবন-জীবিকার সমস্যা, উদ্বাস্তু আন্দোলন প্রভৃতি নানা বিষয় এসব স্মৃতিকথায় উঠে আসে, যা উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

৩০. দেশভাগের প্রেক্ষাপটে লেখা আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক বাংলা গ্রন্থগুলিতে দেশভাগের সঙ্গে যুক্ত কোন কোন বিষয় আলোচিত হয়েছে?

উত্তর:- দেশভাগের প্রেক্ষাপটে লেখা আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক বাংলা গ্রন্থগুলিতে দেশভাগের সঙ্গে যুক্ত দাঙ্গা, পারিবারিক জীবনে ভাঙন, দেশত্যাগ করে উদ্‌দ্বাস্তু হওয়া, মাতৃভূমির জন্য স্মৃতি রোমন্থন প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়েছে

৩১. আত্মজীবনীতে দেশভাগের সমস্যা কীভাবে উঠে এসেছে তার একটি উদাহরণ দাও।

উত্তর:- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধেক জীবন’ নামে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসে দেশভাগের সমস্যা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। এই গ্রন্থে লেখক দেশভাগ সম্পর্কে লিখেছেন, “দেশ স্বাধীন হল, আমরা দেশ হারালাম…। সেই প্রসঙ্গ উঠলে এখনও ক্রোধবহ্নি জ্বলে ওঠে। সেই দুষ্কর্মের হোতাদের ক্ষমা করতে পারি না।”

৩২. দেশভাগের ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে এমন দুটি বাংলা চলচ্চিত্রের নাম লেখো।

উত্তর:- দেশভাগের ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে এমন দুটি বাংলা চলচ্চিত্র হল ঋত্বিককুমার ঘটক পরিচালিত ‘মেঘে ঢাকা তারা’ এবং সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’।

৩৩. উদ্বাস্তু শিবিরের উদ্বাস্তুরা মূলত কী কী সরকারি সহায়তা পেত?

উত্তর:- উদ্বাস্তু শিবিরের উদ্বাস্তুরা বাসস্থান, খাদ্য, পোশাক, ঔষধপত্র, পানীয় জল, আলো প্রভৃতি ত্রাণ হিসেবে পেত। এ ছাড়া শিবিরের বহু উদ্বাস্তুকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন দেওয়া হত।

৩৪. কোন সময়কে ‘পুনর্বাসনের যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়? অথবা, ‘পুনর্বাসনের যুগ’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর:- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের প্রচুর সংখ্যালঘু মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত সরকার প্রথম পাঁচ বছর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে এই উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। এজন্য ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ‘পুনর্বাসনের যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

৩৫. ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের প্রসঙ্গে আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ লিখেছেন এমন দুজন বাঙালি লেখকের নাম লেখো।

উত্তর:- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের প্রসঙ্গে আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ লিখেছেন এমন উল্লেখযোগ্য বাঙালি লেখক হলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রফুল্ল রায়।

৩৬. দেশভাগের পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্বাস্তু আগমনের আলোচনা পাওয়া যায় এমন দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর:- দেশভাগের পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্বাস্তু আগমনের আলোচনা পাওয়া যায় এমন উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তীর ‘প্রান্তিক মানব’ এবং তথাগত রায়ের ‘মাই পিপল আপরুটেড’।

৩৭. দেশভাগের প্রসঙ্গ রয়েছে হিন্দি ও উর্দু ভাষায় লেখা এমন দুটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর:- দেশভাগের প্রসঙ্গ রয়েছে এমন দুটি উল্লেখযোগ্য আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ হল হিন্দি ভাষায় যশপাল রাঘো-র ‘ঝুটা সাচ’ এবং উর্দু ভাষায় কৃষণ চন্দর-এর ‘এক গাধে কি সাগুদাস্ত’।

৩৮. দেশভাগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে ইংরেজি ভাষায় লেখা এমন দুটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর:- দেশভাগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে ইংরেজি ভাষায় লেখা এমন উল্লেখযোগ্য আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ হল খুশবন্ত সিং-এর ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’ এবং সলমন রুশদির ‘মিডনাইট্’স চিলড্রেন’।

৩৯. দার কমিশন (১৯৪৮) কেন গঠিত হয়েছিল?

উত্তর:- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর বিভিন্ন ভারতীয় অঙ্গরাজ্য এবং ভারতে যোগ দেওয়া বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যগুলির সীমানা জাতি না ভাষার ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। এই প্রশ্নের মীমাংসার উদ্দেশ্যে দার কমিশন (১৯৪৮) গঠিত হয়।

৪০. কবে, কোন প্রেক্ষাপটে ‘জে ভি পি কমিটি’ গঠিত হয়?

উত্তর:- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবিতে দক্ষিণ ভারতে আন্দোলন সক্রিয় হয়ে উঠলে তা প্রশমনের উদ্দেশ্যে ওই বছর ‘জে ভি পি কমিটি’ গঠিত হয়। জে ভি পি কমিটির সদস্যগণ ছিলেন জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়া।

৪১. পত্তি শ্রীরামুলু কে ছিলেন?

উত্তর:- পত্তি শ্রীরামুলু ছিলেন দক্ষিণ ভারতের একজন গান্ধিবাদী নেতা। মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী-অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে তিনি ৫৮দিন অনশন করে মৃত্যুবরণ (১৯৫২ খ্রি.) করেন।

৪২. কবে, কোন প্রেক্ষাপটে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠিত হয়?

উত্তর:- ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠিত হয়।

মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী-অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে অনশন করে পত্তি শ্রীরামুলু মৃত্যুবরণ করার পর কেন্দ্রীয় সরকার ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠন করে।

৪৩. স্বাধীনতা লাভের আগে ভাষার ভিত্তিতে ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারিত না হওয়ায় কী সমস্যা দেখা দিয়েছিল?

উত্তর:- স্বাধীনতা লাভের আগে ভাষার ভিত্তিতে ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারিত না হওয়ায় একই ভাষাভুক্ত মানবগোষ্ঠী বিভিন্ন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে তারা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনৈক্যের শিকার হয়েছিল।

৪৪. রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) কেন গঠিত হয়েছিল?

উত্তর:- ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ফজল আলির নেতৃত্বে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়। এর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল রাজ্য পুনর্গঠন করা হবে কি না বা হলেও এর ভিত্তি কী হবে তা ঠিক করা। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন এবং ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সুপারিশ করা।

৪৫. ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’-এর দ্বারা কোন কোন প্রদেশ গঠিত হয়?

উত্তর:- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’-এর দ্বারা ভাষাভিত্তিক ১৪টি রাজ্য ও ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়। ১৪টি রাজ্য হল অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, জম্মু ও কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, বিহার, বোম্বাই, মধ্যপ্রদেশ, মহীশূর, মাদ্রাজ ও রাজস্থান। ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দিল্লি, লাক্ষাদ্বীপ, মণিপুর ও হিমাচল প্রদেশ।

৪৬. স্বাধীন ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের সূচনায় কী ধরনের বিতর্ক দেখা দেয়?

উত্তর:- স্বাধীন ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের সূচনায় ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন করা হবে কি না, ভারতে যোগদানকারী দেশীয় রাজ্যগুলি নিয়ে পৃথক অঙ্গরাজ্য গঠন করা হবে, না কি তাদের অন্য কোনো অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হবে প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়।

৪৭. ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন কার নেতৃত্বে কবে গঠিত হয়? এই কমিশনের মূল বক্তব্য কী ছিল?

উত্তর:- বিচারপতি এস কে দর-এর নেতৃত্বে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ‘ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন’ গঠিত হয়।

ভাষাভিত্তিক কমিশন ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনে আপত্তি জানিয়ে বলে যে, ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠিত হলে ভারতের জাতীয় ঐক্য ও প্রশাসনিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হবে।

৪৮. কবে, কীভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু রাজ্য গঠিত হয়?

উত্তর:- ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয়। আর তামিল ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে অবশিষ্ট মাদ্রাজ প্রদেশ থাকে যা ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তামিলনাড়ু নাম গ্রহণ করে।

৪৯. মারাঠি ভাষা নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সংগঠিত আন্দোলন কী রূপ নেয়?

উত্তর:- মারাঠি ভাষা-অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে বোম্বাই প্রদেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে ৮০ জনের মৃত্যু হয়। এই অবস্থায় বোম্বাই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাই ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সি ডি দেশমুখ পদত্যাগ করেন।

৫০. স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে সরকারি ভাষা নির্ধারণে কেন বিতর্ক দেখা দেয়?

উত্তর:- স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্ম পরিচালনা এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও অঙ্গরাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগ কোন ভাষায় রক্ষা করা হবে সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে বিতর্ক দেখা দেয়।

৫১. ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’-এর সদস্য কারা ছিলেন?

উত্তর:- ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’-এর তিনজন সদস্য ছিলেন ফজল আলি, কে এম পানিক্কর ও হৃদয়নাথ কুঞ্জরু। ফজল আলি ছিলেন কমিশনের সভাপতি।

৫২. দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি দলিল বলতে কী বোঝায়?

উত্তর:- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাজনের পর বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য ভারত সরকারের একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তিপত্র দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির দলিল নামে পরিচিত। কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ অক্টোবর এই দলিলে স্বাক্ষর করলে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

৫৩. ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ কবে তার প্রতিবেদন পেশ করে? প্রতিবেদনে কী সুপারিশ করা হয়?

উত্তর:- ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তার প্রতিবেদন পেশ করে।

‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’-এর প্রতিবেদনে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সুপারিশ করা হয়।

৫৪. বাংলা কোন কোন রাজ্যের সরকারি ভাষা?

উত্তর:- বাংলা ভাষা পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা রাজ্যের প্রধান সরকারি ভাষা এবং আসাম, ঝাড়খণ্ড ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য সরকারি ভাষা।

৫৫. প্রধান সরকারি ভাষা হিসেবে হিন্দি ভাষা চালু রয়েছে এমন দুটি রাজ্যের নাম লেখো।

উত্তর:- প্রধান সরকারি ভাষা হিসেবে হিন্দি ভাষা চালু রয়েছে এমন রাজ্য হল বিহার এবং ছত্তিশগড়।

৫৬. ‘সরকারি ভাষা কমিশন’-এর প্রতিবেদনে (১৯৫৬ খ্রি.) কী বলা হয়?

উত্তর:- ‘সরকারি ভাষা কমিশন’-এর প্রতিবেদনে বলা হয় যে, দেবনাগরী অক্ষরে লিখিত হিন্দি হবে ভারতের সরকারি ভাষা। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি কাজে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার চলবে। হিন্দি হবে ভারতের একমাত্র সরকারি ভাষা। রাজ্য বিধানসভাগুলি নিজ নিজ রাজ্যের সরকারি ভাষা ঠিক করবে।

৫৭. কোন পরিস্থিতিতে কবে ‘সরকারি ভাষা আইন’ পাস হয়?

উত্তর:- ‘সরকারি ভাষা কমিশন’ হিন্দিকে ভারতের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে দক্ষিণ ভারতে হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় আইনসভায় ‘সরকারি ভাষা আইন’ (১৯৬৩ খ্রি.) পাস হয়।

৫৮. কে, কবে ‘দ্বি-ভাষা নীতি’ গ্রহণ করেন?

উত্তর:- ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের সরকারি ভাষা আইনের সংশোধন করে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের জন্য ‘দ্বি-ভাষা নীতি’ গ্রহণ করেন। এই দুটি ভাষা হল হিন্দি ও ইংরেজি।

৫৯. সরকারি ভাষা আইন’-এর দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা উল্লেখ করো।

উত্তর:- ‘সরকারি ভাষা আইন’-এর দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা ছিল ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের পরও সরকারি কাজকর্মে হিন্দির সঙ্গে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার চালু থাকবে। রাজ্য বিধানসভাগুলি নিজ নিজ রাজ্যের জন্য সরকারি ভাষা নির্দিষ্ট করার অধিকার পাবে।

৬০. ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে কোন কোন ভাষা সরকারি ভাষা হিসেবে স্থান লাভ করে?

উত্তর:- ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে মোট ১৪টি ভাষা সরকারি ভাষা হিসেবে স্থান লাভ করে। এই ভাষাগুলি হল অসমিয়া, বাংলা, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মীরি, মালয়ালম, মারাঠি, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, তামিল, তেলুগু এবং উর্দু। এর বাইরেও ইংরেজি ভারতের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।

৬১. কোন কোন রাজ্য বিধানসভা ইংরেজিকে তাদের রাজ্যের প্রধান সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে?

উত্তর:- অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড প্রভৃতি রাজ্য বিধানসভা ইংরেজিকে তাদের রাজ্যের প্রধান সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment