পারস্যের একজন প্রভাবশালী চিকিৎসাবিদ, দার্শনিক ও বিজ্ঞানী ছিলেন ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭), যিনি আবিসেনা নামেও পরিচিত। তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ “কিতাব আল-কানুন ফি ত্বিব্ব” (The Canon of Medicine), যা মধ্যযুগের চিকিৎসাশাস্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে। ইবনে সিনা যুক্তিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা ও দর্শনের ওপরেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, এবং তাকে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সেতুবন্ধনকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
দার্শনিক ইবনে সিনা
ঐতিহাসিক চরিত্র | ইবনে সিনা |
পুরো নাম | আবু আলি আল-হুসাইন ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সিনা (আবিসেনা) |
জন্ম | ৯৮০ খ্রিস্টাব্দ, আফশানা, বর্তমান উজবেকিস্তান |
প্রধান কাজ | “কিতাব আল-কানুন ফি ত্বিব্ব” (The Canon of Medicine), “কিতাব আল-শিফা” (The Book of Healing) |
পেশা | চিকিৎসক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী |
ভাষা | আরবি ও ফার্সি |
ক্ষেত্র | চিকিৎসাবিদ্যা, দর্শন, পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান |
প্রভাবিত করেছে | ইউরোপ-এর মধ্যযুগীয় চিকিৎসাবিদ্যা ও দর্শন |
বিখ্যাত উপাধি | চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক |
মৃত্যু | ১০৩৭ খ্রিস্টাব্দ, হামাদান, ইরান |
ভূমিকা :- আরব চিকিৎসা বিজ্ঞানের পথিকৃৎ হলেন ইবনে সিনা। পারস্যের চিকিৎসক, দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার বিখ্যাত চিকিৎসা বিষয়ক বই “কিতাব আল-কানুন” এবং দর্শনের ওপর করা কাজের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
চিকিৎসক ইবনে সিনার জন্ম
তিনি জন্মেছিলেন পারস্যের বিখ্যাত বুখারা শহরের অনতিদূরে আফশানা নামক স্থানে। সময়টা হল ৯৮০ খ্রিস্টাব্দ। ইবনে সিনার সম্পূর্ণ নাম আবু আলী আল হুসেন আবদুল্লা ইবনে সিনা।
দার্শনিক ইবনে সিনার শিক্ষা
বহুমুখী অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন ইবনে সিনা। মাত্র দশ বছর বয়সেই আরবী ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। সমগ্র কোরান তিনি অধিগত করেছিলেন। তাঁর জ্ঞানস্পৃহা ছিল অত্যন্ত প্রবল। সাহিত্য পাঠের পাশাপাশি জ্যেতির্বিজ্ঞানের প্রতিও তিনি আকৃষ্ট হন।
ইবনে সিনার সময় আরব
সেই সময়ে আরব ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম কেন্দ্র। বিশেষ করে আলেকজেন্দ্রিয়া নগর প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিল বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান চর্চার জন্য। দিগ্বিজয়ের কালে গ্রীক সম্রাট আলেকজান্ডার-এর উপস্থিতির ফলে গ্রীক সভ্যতার আলোক লাভ করেছিল আরব। তার ফল স্বরূপ জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে এথেন্সের পরেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল আলেকজান্দ্রিয়া।
টলেমির তথ্যাদির সঙ্গে ইবনে সিনার পরিচিতি
গ্রীক ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মনীষীদের সমাবেশ হয়েছিল আলেকজান্দ্রিয়ায়। গ্রিস-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস, সক্লেপিয়াস, টলেমি প্রমুখ আলেকজান্দ্রিয়া নগরীতেই লেখাপড়া শিখেছিলেন। তাঁদের প্রথম জীবনের গবেষণাও শুরু হয়েছিল সেখানে। জোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে টলেমির মতামত অনুসরণ করেই আরবের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেই সময় প্রভূত উন্নতি সাধন করেছিলেন। ইবনে সিনাও অতি অল্প সময়ের মধ্যেই টলেমির তথ্যাদির সঙ্গে পরিচিত হলেন।
জ্ঞানসন্ধানী ইবনে সিনা
ইবনে সিনা কেবল গ্রীক জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকলেন না। এর পাশাপাশি গণিত, ইসলামী দর্শন, তর্কশাস্ত্র, ব্যবহার তত্ত্ব ও গ্রিক চিকিৎসা-বিদ্যারও চর্চা করলেন। গ্রীক সভ্যতার উৎকৃষ্ট সব বিষয়ই আরবী ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল। সেই অনুবাদের মাধ্যমেই বিশাল পশ্চিমী জ্ঞান-সমুদ্রে অবগাহন করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
মানব সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ ইবনে সিনা
আরবী ভাষায় গ্রীকচিকিৎসা শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলি চর্চার সময়েই ইবনসিনা এক নতুন অনুভূতির প্রেরণা লাভ করলেন। মানব সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হলেন তিনি। স্থির করলেন জীবনে এমন পথই বেছে নেবেন যাতে বিজ্ঞান সাধনা এবং মানব সেবা দুটি কাজই সমান ভাবে করা হবে। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানকেই বেছে নিলেন তিনি। সন্ধানী পথিকের পথের সন্ধান পেতেও বিলম্ব হয় না। গ্রীক চিকিৎসা শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলি অধিগত করেছিলেন ইবনে সিনা। তারপর তিনি শুরু করলেন চিকিৎসক জীবন।
চিকিৎসকের চাকরিতে ইবনে সিনা
সেই সময়ে সামানিদ শহরের শাসনকর্তা ছিলেন নও-বিন-মনসুর। তাঁর অধীনেই চিকিৎসকের চাকরি নিলেন ইবনে সিনা। অল্পদিনের মধ্যেই দক্ষ চিকিৎসক হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। রোগীর ভিড়ও বাড়তে লাগল। ক্রমে দেশের বাইরেও পরিব্যাপ্ত হল তাঁর সুখ্যাতি। যশ খ্যাতির সমান্তরালে মর্যাদাও বৃদ্ধি পেতে লাগল। এই সময়ে জনসেবার বৃহত্তর ক্ষেত্র অনুসন্ধান করে একটার পর একটা চাকরি তাঁকে ছাড়তে হয়েছে।
প্রধান মন্ত্রীর পদে ইবনে সিনা
একসময়ে আহ্বান এলো হামাদানের আমীরের প্রাসাদ থেকে। আমীর সামসুদ জাওলা অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব পেলেন তিনি। ইবনে সিনার সুচিকিৎসায় দুরারোগ্য অম্লশূলের যন্ত্রণা থেকে চিরতরে নিরাময় লাভ করলেন আমীর। দরবারে চিকিৎসা করতে করতেই তিনি হয়ে উঠলেন আমীরের বিশ্বাসভাজন বন্ধু। এই সূত্র ধরেই গুরুতর এক দায়িত্বও চাপল তাঁর কাঁধে। কৃতজ্ঞতার পুরস্কার হিসাবে আমীর তাঁকে তাঁর প্রধান মন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করলেন।
দেশ সেবার কর্তব্য পালনে ইবনে সিনা
প্রধান মন্ত্রীর কাজ রাজনীতি ও রাজ্যের প্রজার মঙ্গলামঙ্গল নিয়ে। এ এমনই এক দায়িত্ব যে সময় মতো নাওয়া খাওয়ার সময় পর্যন্ত পাওয়া যায় না। চিকিৎসাশাস্ত্রের মাধ্যমে মানব সেবার দায়িত্বের সঙ্গে এভাবে ইবনে সিনাকে দেশ সেবার কর্তব্যও সম্পাদন করে চলতে হচ্ছিল। সহজাত বিচক্ষণতার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতাও ছিল তাঁর অসামান্য। ফলে সাফল্যের সঙ্গেই উভয় দায়িত্ব পালন করতে বিশেষ বেগ পেতে হয় নি তাঁকে। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই দুই কাজের পাশাপাশি তিনি নিজের গবেষণার কাজও সমানভাবে চালিয়ে গেছেন। দিনভর কাজকর্ম ও চিকিৎসার কাজের পরে রাতে যেটুকু অবসর মিলত, সেই সময়টা তিনি ব্যয় করতেন নিজের পড়াশুনা ও গবেষণার কাজে। ফলে প্রতিদিন রাতে ঠিকভাবে বিশ্রাম নেওয়াও তাঁর হয়ে উঠত না।
ইবনে সিনার সংকল্প গ্রহণ
তিনি সংকল্প গ্রহণ করেছিলেন, নতুন নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নানা রোগের নিদান আবিষ্কার করে ভবিষ্যৎকালের মানব সেবার কাজটিও সম্পূর্ণ করে যাবেন। এই সঙ্কল্প সিদ্ধির অভিপ্রায়ে ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, বিশ্রাম বিসর্জন দিয়েছিলেন মানবসেবারতা ইবনে সিনা।
পরম পন্ডিত ইবনে সিনা
কেবল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই নয়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ইবনে সিনা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। বলা চলে তিনি ছিলেন দুর্লভ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সমকালীন আরব বিজ্ঞানীরা তাঁর নাম দিয়েছিলেন আশ-শেখুর-রাইস, যার অর্থ, পরম পন্ডিত। বস্তুতঃ; এই অভিধা ছিল তাঁর বহুমুখী প্রতিভারই স্বীকৃতি।
গ্রন্থ রচনায় ইবনে সিনা
চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হবার পর মাত্র একুশ বছর বয়স থেকেই তিনি এ বিষয়ে বই লেখা শুরু করেন। কর্মময় সংক্ষিপ্ত জীবনের অবশিষ্টকালে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বহু বিচিত্র বিষয় নিয়েই তিনি বই লিখে গেছেন।
সংস্কারমুক্ত ইবনে সিনা
বিভিন্ন বিষয়েই পান্ডিত্য অর্জন করার ফলে ইবনে সিনা লাভ করেছিলেন সংস্কারমুক্ত সাংস্কৃতিক চেতনা। বৈজ্ঞানিক মনের যুক্তিসচেতন এই পন্ডিত লোকশিক্ষার প্রয়োজনে ধর্ম সম্পর্কে নিজস্ব মতামত লিখে রেখে গেছেন। ধর্ম সম্পর্কে মনীষী অ্যারিস্টটল-এর তত্ত্বকে নতুন ভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি। কেবল তাই নয় যুক্তি বিচারের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মেরও আধুনিক ব্যাখ্যা করেছেন ইবনে সিনা। বিজ্ঞানের ভাষাতেই তিনি মানব ও ঈশ্বরের সম্বন্ধ, বিশ্বসৃষ্টির রহস্য ইত্যাদির ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। যুক্তিনিষ্ঠ বিজ্ঞাননির্ভর যুক্তি-বিচারের জন্য ইবনে সিনাকে অ্যারিস্টটলের সঙ্গে তুলনা করেছেন সমকালীন পন্ডিতবর্গ। তাঁকে বলা হত অল-মুআল্লিমুথ-থানি। অর্থাৎ দ্বিতীয় অ্যারিস্টটল বা অ্যারিস্টটলের পরের শিক্ষক।
চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা
প্রকৃতপক্ষে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি ও তথ্যাদির অবদানের জন্য বিশ্ব-ইতিহাসে অবিস্মরণীয় গৌরবের অধিকারী হয়েছেন গ্যালেন, হিপোক্রেটিস ও সুশ্রুত। চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনার অবদান ছিল তাঁদেরই সমতুল্য। সমগ্র মানবজাতির কল্যাণসাধনই ছিল তাঁর সাধনা এবং সেই সাধনার ফসল তিনি নিষ্ঠাবান শিক্ষকের মতোই বিতরণ করে গেছেন।
প্রতিভাবান শিক্ষক ইবনে সিনা
তিনি ছিলেন প্রতিভাবান শিক্ষকও। তৎকালীন বিজ্ঞানী ও ছাত্রমহল তাঁর বিষয় উপস্থাপনের সুনিপুণ ভঙ্গিটি অনুসরণ করার চেষ্টা করতেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধনে ইবনে সিনা
জ্ঞানতাপস ইবনে সিনার অন্যতম স্মরণীয় অবদান হল বিভিন্ন সভ্যতা সংস্কৃতির চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা। তিনি গ্রীক চিকিৎসা, হিন্দু চিকিৎসা ও মুসলমান চিকিৎসা অধিগত করেছিলেন এবং এই সবের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছেন। এই ত্রিমুখীন স্রোতের সমন্বয়েই সমৃদ্ধ হয়েছিল তাঁর চিকিৎসা বিজ্ঞান। তাঁর রচিত চিকিৎসা শাস্ত্রের গ্রন্থ এই কারণেই ইউরোপে সমাদৃত হয়েছে এবং নতুন দিক নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছে।
ইউরোপে ইবনে সিনার গ্রন্থের প্রভাব
তাঁর কোয়ানাম ফিল-তিব নামের গ্রন্থটি ইউরোপের চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ইবনে সিনার মৃত্যুর পরে দ্বাদশ শতকে এই বইটি প্রথম ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেন বিজ্ঞানী গেরার্ড। তিনি এই অনুবাদ গ্রন্থের নাম দেন Canon Avicennae Libri Quincue। পরে গ্রন্থটি হিব্রু ভাষাতেও অনূদিত হয়। ইবনে সিনার কোয়ানাম-ফিল-তিব গ্রন্থটি গেরার্ডকৃত ল্যাটিন অনুবাদ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দে ইতালির মিলান শহর থেকে। এই ভাবে গ্রন্থটি ক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কোয়ানাম-ফিল-তিব তথা ক্যানোন অভিসিন্নাই লিরি কুইনকু চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশ্বকোষপ্রতিম গ্রন্থ। চিকিৎসাবিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে বহু বিচিত্র বিষয়ের তিনি এই গ্রন্থে অবতারণা করেছেন। এতে তিনি বিভিন্ন রোগের নানা ওষুধ ও ওষুধের উপাদান সম্পর্কেও বিস্তৃত ভাবে লিখেছেন। লিখেছেন স্নায়ুবৈকল্য রোগ ও তার চিকিৎসার কথা।
Ophthalmology বিষয়ে ইবনে সিনার গবেষণা
ইবনে সিনা তাঁর গ্রন্থে বিশদ ভাবে আলোচনা করেছেন চোখের বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে। সম্ভবতঃ প্রাচ্যে চক্ষুরোগের প্রকোপ প্রতীচ্যের তুলনায় অধিক বলেই তিনি শরীরের বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের মধ্যে চোখের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। চক্ষুরোগ ও তার চিকিৎসা অর্থাৎ আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম Ophthalmology বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করেছেন ইবনে সিনা। চোখের নানা সূক্ষ্ম অংশের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাজের সম্পর্কেই বিস্তৃত ভাবে গবেষণা করেছিলেন তিনি।
ইবনে সিনার মৃত্যু
মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে অতি অল্প বয়সেই শরীর ভেঙ্গে পড়ল তাঁর। মাত্র সাতান্ন বছর বয়সে ১০৩৭ খ্রিস্টাব্দে অকালে তাঁর জীবনদীপ নির্বাপিত হল
উপসংহার :- বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জ্ঞানতাপস ইবনে সিনা নানা বিষয় নিয়ে বই লিখে গেছেন একশোরও বেশি। কেবল কোরানের ব্যাখ্যা করতে গিয়েই তিনি লিখেছেন ছটি বই। এই বইগুলির নাম হিকমৎ-আল-আলাই, কিতাব-আল-নজত, কিতাব-আল-শিফা, ফি-আ-লাক-রসাদিয়াত, উ-আল-তৌবিহাত এবং কিতাব-আল- ইসতারাৎ। ভূতত্ত্ব বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি প্রথম পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন। পর্বতের জন্ম রহস্য সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ধারণা তাঁর কাছ থেকেই বিশ্বের বিজ্ঞানীরা প্রথম লাভ করেন। বিশ্বমানব-ইতিহাসের জ্ঞানসাধকদের মধ্যে নিঃসন্দেহে ইবনে সিনা এক উজ্জ্বল পথপ্রদর্শক।
(FAQ) ইবনে সিনা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ইবনে সিনা একজন পারস্যের চিকিৎসক, দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী ছিলেন, যিনি তার বিখ্যাত চিকিৎসা বই “কিতাব আল-কানুন” এবং দর্শনের ওপর করা কাজের জন্য বিখ্যাত।
তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হলো “কিতাব আল-কানুন ফি ত্বিব্ব” (The Canon of Medicine), যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রের মূল পাঠ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ইবনে সিনা চিকিৎসা, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের মতো বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করেছেন।
তার “কানুন” বইটি আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়, যা চিকিৎসা গবেষণা, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
ইবনে সিনা তার চিকিৎসা, দর্শন এবং বিজ্ঞানের প্রতি অসাধারণ অবদানের জন্য বিখ্যাত। তাকে প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সেতুবন্ধনকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।