বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস প্রথম অধ্যায়: প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাসের উপাদান থেকে ৫ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক গ্রন্থের অপ্রতুলতা তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে তা তুলে ধরা হল।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক গ্রন্থের অপ্রতুলতা
প্রশ্ন:- প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক গ্রন্থের অপ্রতুলতা তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে।
উত্তর:- মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের ভারতবর্ষের তুলনায় প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য ঐতিহাসিক তথ্যের যথেষ্ট অভাব আমরা লক্ষ্য করে থাকি। প্রাচীন গ্রীসে হেরোডেটাস, থুকিডিডিসের আবির্ভাব যেমন প্রামাণ্য ঐতিহাসিক গ্রন্থের অভাবকে দুর করেছে। কিন্তু ভারতের ইতিহাস রচনায় সেইরকম প্রামাণ্য গ্রন্থের অভাব আছে। ভারতবর্ষে সেই অর্থে প্রথম প্রামাণ্য গ্রন্থ হল কলহনের লেখা রাজতরঙ্গিনী। এটি রচিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের মধ্যভাগে। প্রয়োজনের তুলনায় ঐতিহাসিক উপাদানের অপ্রাচুর্যতা বাস্তব ক্ষেত্রে ইতিহাস রচনার কাজকে অনেক কঠিন করে দিয়েছে।
প্রাচীনভারতে ইতিহাস রচনার তথ্যের স্বল্পতার কারণ নিয়ে ঐতিহাসিকমহলে নানা মতামত প্রচলিত আছে। বেশীরভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন যে, প্রাচীন ভারতীয়রা ইতিহাস রচনা সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন। এমন কোনো ঐতিহাসিক তথ্যাদি তারা রচনা করে যায়নি, যার ওপর নির্ভর করে কোনো ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করা যায়। এই মতবাদটি এখন সর্বাধিক প্রচলিত। আর একদল ঐতিহাসিক প্রচার করেন যে প্রাচীন ভারতীয়রা পার্থিব জীবন সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহী না থাকায় ঐতিহাসিক তথ্য সংরক্ষণে যত্নবান ছিলেন না। প্রাচীনকালের মানুষ ইতিহাস রচনার জন্য কোনো তথ্য রেখে যায় নি – এই ধরনের ধারণা অমূলক। কারণ, বিখ্যাত পণ্ডিতরা দেখিয়েছেন যে প্রাচীনকালে মানুষ যে সমস্ত বিষয়গুলি তারা রক্ষণযোগ্য মনে করেছিল সেগুলি অবশ্যই তারা সংরক্ষণ করেছিলেন।
তবে তাঁদের সংরক্ষিত নথিপত্রগুলি বেশিরভাগই বংশ তালিকা, উপাখ্যান আর ধর্ম প্রতিষ্ঠানের জয়গান দ্বারা মুখরিত। রাজনৈতিক ঘটনাবলীর বিবরণ কিংবা আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের দিকে লক্ষ্য রেখে তারা তথ্য রেখে যাননি। এই সংরক্ষিত তথ্যগুলির গুনগত মান থাকুক আর না থাকুক ঐতিহাসিকেরা আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঐ সমস্ত তথ্যগুলি থেকেই সত্যের সন্ধান করতে আগ্রহী হয়েছেন। বিংশ শতকের প্রথম দিক থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যে নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলি প্রাচীন ভারতের বহু অজানা দিকের সন্ধান দিয়েছে।