জাঁ জ্যাক রুশো

সুইজারল্যান্ডের জ্যাঁ জ্যাক রুশো (Jean-Jacques Rousseau) ছিলেন একজন ফরাসি দার্শনিক, লেখক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ, যিনি অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপীয় প্রজ্ঞা আন্দোলনের (Enlightenment) অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাঁর লেখা “The Social Contract” ও “Emile” আধুনিক রাজনৈতিক ও শিক্ষাতত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে। রুশো মানব স্বাধীনতা, সামাজিক সমতা ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। তাঁর মতাদর্শ ফরাসি বিপ্লবে বড় প্রভাব ফেলেছিল।

Table of Contents

জাঁ জ্যাক রুশো

ঐতিহাসিক চরিত্রজাঁ জ্যাক রুশো
জন্ম২৮ জুন ১৭১২ খ্রি
জন্মস্থানজেনেভা, সুইজারল্যান্ড
পেশাদার্শনিক, লেখক, সুরকার
প্রধান রচনাThe Social Contract, Emile, Confessions
দার্শনিক ক্ষেত্ররাজনীতি, শিক্ষা, নৈতিকতা
গুরুত্বপূর্ণ ধারণাপ্রাকৃতিক ধারণা, সামাজিক চুক্তি, সরল জীবন
প্রভাবফরাসি বিপ্লব, আধুনিক গণতন্ত্র, শিক্ষার নতুন ধারণা
মৃত্যু২ জুলাই, ১৭৭৮ খ্রি, ফ্রান্স

জাঁ জ্যাক রুশো

ভূমিকা :- আজন্ম মানবতার অনুরাগী ফরাসী বিপ্লবের মন্ত্রগুরু, মানুষের দুঃখে সংবেদনশীল হৃদয় জাঁ জ্যাক রুশো মানব ইতিহাসের সব চেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব।

রুশোর জন্ম

১৭১২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে জুন জেনেভা শহরের এক সাধারণ পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা আই জ্যাক ঘড়ির ব্যবসা করতেন। মা সুজান ছিলেন সুন্দরী বিদুষী।

দার্শনিক রুশোর শৈশব

তাঁর চরিত্রে নানা গুণের সমাবেশ হয়েছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে রুশো মায়ের অনেক গুণ লাভ করেছিলেন। জন্মের অল্প কয়েকদিন পরেই মাতৃহারা হন রুশো। ধাত্রীর সেবা যত্নেই তিনি বড় হয়ে ওঠেন।

রুশোর বাবার গৃহত্যাগ

দশ বছর বয়স পর্যন্ত বাবার সাহচর্য পেয়েছিলেন রুশো। এক ফরাসী অফিসারের সঙ্গে বিবাদকে কেন্দ্র করে অভিযুক্ত হয়েছিলেন আই জাক। তাঁর নামে গেপ্তারি পরোয়ানা বেবিয়েছিল। ফলে বালক রুশোকে বাড়িতে রেখেই তাঁকে জেনেভা থেকে পালিয়ে যেতে হয়। এই সময় কাকা বার্নাড তাঁর দেখাশোনার ভার নেন।

দার্শনিক রুশোর শিক্ষা

  • (১) বাবার উৎসাহে পড়ালেখার প্রতি তাঁরা আগ্রহ ভালবাসা সৃষ্টি হয় বাল্য বয়সেই। মায়ের সংগ্রহে রাখা বই বাবা তাঁকে তাঁর আট ন বছর বয়সেই পড়ে শোনাতেন। কাকার ছেলেও ছিলেন রুশোর সমবয়সী। দুই জনকেই লেখাপড়া শেখাবার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় এম্ লাঁবেসিয়ের নামে এক গ্রাম্য যাজকের বাড়িতে।
  • (২) খোলামেলা গ্রাম্য পরিবেশে দুই ভাইয়ের দিন ভালই কাটতে লাগল। মায়ের অভাববোধ সংগুপ্ত ছিল বালক রুশোর অন্তর্লোকে। তাই এখানে আসার পর যাজকের সুন্দরী কুমারী বোনের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
  • (৩) ত্রিশ বছরের এই শিক্ষয়িত্রী পড়াতেন দুই ভাইকেই। নারীসত্তার সহজাত বোধ থেকেই তিনি সম্ভবত রুশোর মনোভাব বুঝতে পেরেছিলেন। তাই স্নেহের শাসনের সঙ্গে তাঁর ব্যবহারে মিশে থাকত কঠোরতা। তাতে মানসিকভাবে আহত হতেন বালক রুশো, কিন্তু সেই মনোবেদনা প্রকাশ করতে পারতেন না।
  • (৪) এই সময়ের অনুরাগ ভালবাসার প্রভাব রুশোর জীবনে গভীর ছায়াপাত করেছিল। সম্ভবতঃ রুশোর অনুরক্তি ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে উঠছিল। তাই একদিন তুচ্ছ অপরাধে দুই ভাইকে লাঁবেসিয়ের স্কুল ছাড়তে হল। দুই বছর পরে তাঁরা আবার ফিরে এলেন জেনেভায়।

রুশোর অসম অনুরাগ

সেই সময় রুশোর বাবা আত্মগোপন করেছিলেন কাছেই এক গ্রামে। রুশো মাঝে মাঝেই যেতেন বাবার সঙ্গে দেখা করতে। সদ্য কৈশোরে উত্তীর্ণ রুশো এখানে পরিচিত হন ডুলজঁ ও গোঁতা নামে দুই তরুণীর সঙ্গে। তেরো বছরের রুশো তাঁর চাইতে সাত আট বছরের বড় দুই তরুণীর প্রতি ক্রমেই এক অসম অনুরাগে জড়িয়ে পড়লেন।

কারখানায় কাজে রুশো

কিন্তু এই প্রেম বেশিদূর গড়াবার আগেই কাকা রুশোকে এক কারখানায় কাজে ঢুকিয়ে দিলেন। উদ্দাম স্বাধীন জীবন থেকে এবার এক দমবন্ধ হওয়া বদ্ধ জীবনে বন্দি হলেন তিনি। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও কাজে সামান্য ভুলত্রুটির জন্য বকাঝকা মারধোর জুটতে লাগল কপালে।

রুশোর পীড়িত মন

কারখানার এই পরিবেশ রুশোর মনকে পীড়িত করতে লাগল। রুদ্ধ আক্রোশে ফেটে পড়তে চাইতেন। কিন্তু মনের জ্বালা মেটাতে বেশি কিছু করার সুযোগ পেতেন না। আক্রোশ মেটাতে প্রায়ই হাতের কাছের দরকারী এটা সেটা চুরি করে সরিয়ে ফেলতেন। কারখানার শ্রমিক জীবন, মাঝেমাঝে ধরা পড়ে শেয়াল-কুকুরের মতো মারধোর খেতে হত।

দার্শনিক রুশোর বিদ্রোহী সত্তা

এই বন্দি নির্যাতিত জীবনেও রুশোর শান্তির আশ্রয় ছিল একটি জায়াগা। নিয়মিত কিছু না কিছু পড়ার অভ্যাসটা বরাবরই ছিল। মন যখন অশান্ত বিদ্রোহী হয়ে উঠত তিনি স্বস্তি লাভ করতেন বই হাতে নিয়ে। কারখানার চার দেওয়ালের দমবন্ধ পরিবেশ থেকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবার জন্য সময় সুযোগ মতো গিয়ে বসতেন কোনও লাইব্রেরীতে। পছন্দমতো বই নিয়ে তাতে ডুবে যেতেন। এই সময় থেকেই মনের অবচেতনে জন্ম নিয়েছিল এক বিদ্রোহী সত্তা। সমাজের প্রচলিত নিয়মের বিরুদ্ধে বাঁধভাঙ্গা বিদ্রোহের অঙ্কুরোদগম তাঁর চরিত্রে এভাবেই হয়েছিল।

এক যাজকের বাড়িতে রুশো

শেষ পর্যন্ত কারখানার নিশ্চিত জীবনের বন্ধন একদিন ছিন্ন করতে হল তাঁকে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত জেনেও ষোল বছর বয়সে পথে এসে নামলেন। কোথায় যাবেন কি করবেন কিছুই স্থির নেই। অনির্দিষ্ট পথই হল তাঁর আশ্রয়। ঘুরতে ঘুরতে এসে উপস্থিত হলেন ক্যাথলিক চার্চের এক পরিচিত যাজকের বাড়িতে। যাজককে জানালেন, তিনি পড়াশুনা করতে চান। তাঁর আগ্রহভরা চোখের দৃষ্টিতেও ছিল সেই আকুতি। সহৃদয় যাজক রুশোকে পাঠিয়ে দিলেন অ্যানসিতে, ধর্মপরায়ণা এক নারী মাদাম ওয়ারেনের কাছে।

মাদাম ওয়ারেনের কাছে রুশো

ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাসী মাদাম ছিলেন দয়ালু ও উদার। বিধবা এই মহিলার বয়স ছিল আঠাশের কোঠায়। অপরূপ সুন্দরী। তাঁকে দেখে মুগ্ধ হলেন রুশো। সঙ্গের চিঠিতে যাজক মশাই তাঁর সম্বন্ধে বিস্তারিত লিখে জানিয়েছিলেন। চিঠি পড়ে দয়াবতী মাদাম বললেন, এই বয়সে ঘর ছেড়ে আসা বড় দুর্ভাগ্যের। তুমি এখানে থেকেই পড়াশুনা কর, আমি সাধ্যমত সাহায্য করব। তাঁর আশ্রয়েই রয়ে গেলেন রুশো।

ঝঞ্ঝা তাড়িত মাদাম ওয়ারেনের জীবন

মাদার ওয়ারেনের জীবন ছিল ঝঞ্ঝা তাড়িত বড় বিচিত্র। ছিলেন এক সম্ভান্ত পরিবারের বিদুষী কন্যা। বিবাহও হয়েছিল সমপর্যায়ের এক পরিবারে। সেই সূত্রে রাজার সঙ্গেও পরিচিত হয়েছিলেন। বিবাহিত জীবন তাঁর সুখের হয় নি। সেই গ্লানির মধ্যেই অকালে স্বামী বিয়োগ হয়েছিল। স্বামীর মৃত্যুর পরে পূর্বপরিচয়ের সুযোগে রাজার সঙ্গে বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠতর হল। রাজা তাঁর জন্য মাসোহারা বন্দোবস্ত করে দিলেন। তাঁদের সম্পর্ক সমাজের মানুষ ভালচোখে দেখল না। ফলে বাধ্য হয়ে অ্যানসিতে বাস পরিবর্তন করতে হয়েছিল মাদামকে। প্রাচুর্যের মধ্যেই বসবাস। তাই সুযোগ সন্ধানী স্বার্থপর মানুষজনের আনাগোনা এখানেও হতে লাগল। দয়ার্দ হৃদয় মাদাম সব বুঝতে পেরেও কাউকে কখনো বিমুখ করতেন না।

তুর‍্যার ধর্মীয় শিক্ষালয়ে রুশো

বুদ্ধিদীপ্ত ভাবোচ্ছল চেহারা ছিল রুশোর। সহজেই মাদামের স্নেহ ভালবাসা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হল। তাঁর ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি পড়াশুনার জন্য রুশোকে পাঠিয়ে দিলেন তুর‍্যার ধর্মীয় শিক্ষালয়ে। এখানে এসে চরম অস্বস্তিতে পড়লেন তিনি। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুকঠোর বাধানিষেধ নিয়ম-নীতি তাঁর স্বাধীনতা পিয়াসী মনে বিরাগ সৃষ্টি করল। তথাপি নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তাতেই বন্দিশালার বন্ধন তাঁকে মেনে নিতে হল। ভাবলেন শিক্ষা শেষ হলে নিশ্চয় ভাল কোন চাকরি জুটবে। প্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় উপদেশ আর তাত্ত্বিক জ্ঞানে মনোনিবেশ করলেন। যথাসময়ে পাঠ্যক্রম শেষ হল।

পথে নামলেন রুশো

কিন্তু যার আশায় দিন গুণছিলেন, সেই চাকরি কোথায়? আশা পূর্ণ হল না। মাত্র বিশ ফ্রাঁ সম্বল করে পথে নামলেন রুশো। এতদিন তাঁর সমস্ত দায়িত্বই বহন করেছেন মাদাম। তাই প্রথমে তাঁর কাছে ফিরে যাবার কথা মনে হলেও সঙ্কোচে যেতে পারলেন না। ভাবলেন, আর কেন তাঁর বোঝা হয়ে থাকা।

পরিচারকের কাজে রুশো

ঘুরতে ঘুরতে একজায়গায় এসে একটা চাকরির সন্ধান পেলেন রুশো। শুনলেন এক কাউন্টেস বাড়ির পরিচারকের সন্ধান করছেন। রুশো কাজের প্রার্থী হয়ে দেখা করলেন কাউন্টেসের সঙ্গে। বহাল হলেন কাজে। বাড়ির আরও অনেক পরিচারক পরিচারিকার মধ্যে ঠাঁই হল তাঁর।

রুশোর নারীর প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ

  • (১) নারীর প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ রুশোর আবাল্যের সহচর। যেখানেই গেছেন, নারীর সঙ্গ তাঁকে তীব্র আকর্ষণে জড়িয়েছে। এ যেন তাঁর অপ্রতিরোধ্য নিয়তিরই বিধান। নতুন কর্মস্থলেও এক অল্প বয়সী সুশ্রী স্বাস্থ্যবতী পরিচারিকার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন। অল্পদিনেই জন্ম নিল গভীর প্রেম।
  • (২) শান্ত ভীরু স্বভাবের গ্রাম্য মেয়েটিকে সর্বদা খুশি রাখার জন্য ব্যস্ত থাকতেন রুশো। একদিন সম্ভবতঃ তাকে দেবার জন্যই তিনি গৃহকর্ত্রীর একটি ফিতে চুরি করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ধরা পড়ে গেলেন এবং জেরার মুখে নিজেকে বাঁচাবার জন্য তিনি বলে দিলেন, তরুণী পরিচারিকাটি তাঁকে দিয়েছে ফিতাটি।
  • (৩) সরল প্রকৃতির মেয়েটি রুশোর কথার প্যাঁচ ধরতে পারে নি। সে অকপটে জানাল, সে রুশোকে ফিতে দেয় নি। কিন্তু নিজের কথার সত্যতা প্রমাণের জন্য মেয়েটির কথার জোর প্রতিবাদ করলেন রুশো। ভীরু মেয়েটি নিরুপায় হয়ে কাঁদতে আরম্ভ করল।
  • (৪) শেষ পর্যন্ত দুজনেই অপরাধী সাব্যস্ত হলেন এবং চাকরি হারালেন। নিরপরাধী মেয়েটি চুরির অপবাদ মাথায় নিয়ে এরপর কোথায় হারিয়ে গেল। রুশো পরে অনেক খোঁজ করেও জানতে পারেন নি। এই ঘটনা তাঁকে তীব্র অপরাধবোধে সারাজীবন পীড়া দিয়েছে।

শিক্ষক রুশো

রুশোর পরের চাকরিস্থল এক ধনী পরিবার। সেখানে তিনি গৃহকর্তার ছেলের শিক্ষকতার দায়িত্ব পেলেন। আজন্ম শিক্ষানুরাগী রুশো। এতদিন পরে এখানে আবার পড়াশুনার সুযোগ পেলেন। নিজে পড়েন, ছাত্রকে পড়ান। সুখ- স্বাচ্ছন্দ্যের নিশ্চিন্ত জীবন। কিন্তু এই একঘেয়ে জীবনে অভ্যস্ত থাকা রুশোর স্বভাববিরুদ্ধ। কিছুদিন পরেই তাঁর অস্থির মন পালাই পালাই করতে লাগল।

জেনেভার দীর্ঘ পথে রুশো

একদিন বাঁধন ছেঁড়ার ডাকও এসে পৌঁছল। আলাপ হল বাকল নামে এক ভবঘুরে তরুণের সঙ্গে। সে পায়ে হেঁটে চলেছে জেনেভায়। শুনে রুশোর মন আনন্দে নেচে উঠল। মনের স্বচ্ছ চেতনায় বুঝি মাদাম ওয়ারেনের সুন্দর মুখের টানও প্রচ্ছন্ন ছিল। তাঁকে দেখার জন্য উৎসুক হয়ে ছিল তাঁর মন। জেনেভা যেতেই পড়বে অ্যানসি-মাদাম ওয়ারেনের কটেজ। কথা নেই বার্তা নেই, বাকল-এর সঙ্গেই একদিন জেনেভার দীর্ঘ পথে রওনা হলেন রুশো।

অ্যানসিতে রুশো

  • (১) দীর্ঘদিন মাদামের সঙ্গে দেখা হয় নি। এখন তিনি তাঁকে আগের মতোই সহজভাবে নেবেন কিনা এমন আশঙ্কা যতই তিনি অ্যানসির কাছাকাছি হচ্ছিলেন, তাঁর মনকে আচ্ছন্ন করতে লাগল। কিন্তু কয়েকদিনের পথ চলার শেষে অ্যানসিতে পৌঁছে সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে তিনি মাদামের কাছে উপস্থিত হলেন।
  • (২) মাদামের হাত দুটি ধরে নতজানু হয়ে রুদ্ধ আবেগে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। মাদামের স্নেহ-কাতর মাতৃহৃদয়ও রুশোকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছিল। তিনি পুত্রস্নেহে রুশোকে বুকে টেনে নিলেন। সবে কুড়িতে পা দিয়েছেন রুশো। জীবনের দীর্ঘ পথ সামনে।
  • (৩) মাদাম বুঝতে পারছিলেন না কোন পথে পরিচালিত করলে রুশোর জীবন প্রস্ফুটিত হবার সুযোগ পাবে। এই প্রাণবন্ত তরুণের মধ্যে যে বিরাট সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে তা তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই অনেক ভাবনা-চিন্তার পর ধর্মশিক্ষা সম্পূর্ণ করার জন্য এবার তাঁকে পাঠালেন এক সেমিনারিতে।
  • (৪) সেখানে যাবার আগে যে কটাদিন মাদামের বাড়িতে ছিলেন রুশো, অনাবিল আনন্দের মধ্যে কাটিয়েছেন। ছেলেবেলা থেকেই ভালবাসতেন গান বাজনা। মাদামের বাড়িতে কয়েকটা গানের বই হাতে পড়েছিল তাঁর। সেমিনারিতে যাওয়ার সময় সেই বইগুলোও তিনি সঙ্গে নিয়ে গেলেন।

রুশোর সঙ্গীত শিক্ষা

  • (১) সেমিনারির ধর্মাশিক্ষা রুশোর মনকে তৃপ্ত করতে পারল না। এখানে কেবল ধর্মসঙ্গীত তাঁর মনকে টানত। অবসর সময়ে তিনি সঙ্গীতচর্চা করতেন। রুশোর অমনোযোগিতা সেমিনারি কর্তৃপক্ষের নজর এড়াল না। তাঁরা তাঁকে নিষ্কৃতি দিলেন। রুশো ফিরে এলেন মাদামের কাছে।
  • (২) রুশো ফিরে আসায় মাদাম নিজেও যেন স্বস্তি পেলেন। রুশো কাছে থাকলে এক অপার পরিপূর্ণতায় তাঁর হহৃদয় ভরে থাকে। রুশোর সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে বুঝতে পেরে মাদাম বাড়িতেই তাঁর সঙ্গীত শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিলেন।
  • (৩) মাদামের এক অনুরাগী ভক্ত ল মেতর ছিলেন গীতিকার, সুরকার গায়ক। এই প্রাণোচ্ছল মানুষটিকে পছন্দ করতেন তিনি। তাঁকেই রুশোর সঙ্গীত শিক্ষার দায়িত্ব দিলেন। সঙ্গীত শিক্ষায় রুশোর অসাধারণ একাগ্রতা ও নিষ্ঠার পরিচয় পেয়ে ল মেতার উৎসাহিত উল্লসিত হলেন।
  • (৪) তাঁর শিক্ষা ও সাহচার্যে মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই আশাতীত উন্নতি দেখালেন রুশো। এই সময় অ্যানসিতে এক সুদর্শন তরুণ গায়কের সঙ্গে পরিচিত হন রুশো। অপরিচিত গায়কের সঙ্গে অল্পদিনের মধ্যেই মেলামেশায় অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেন।

ল মেতর-এর সঙ্গ রুশোর

মাদাম কিন্তু শঙ্কিত হয়ে উঠলেন। অপরিচিতের সঙ্গে আকস্মিক ঘনিষ্ঠতা তিনি ভালভাবে নিতে পারলেন না। কি করে তাঁকে সেই তরুণ গায়কের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করবেন ভাবতে লাগলেন। সেই সুযোগও পেয়ে গেলেন তিনি যথাসময়ে। অ্যানসি ত্যাগ করে বাইরে যাবার প্রয়োজন হয়েছিল ল মেতর-এর। মাদাম রুশোকে তাঁর সঙ্গে পাঠিয়ে দিলেন। শিল্পী গায়ক হিসেবে ল মেতর-এর খ্যাতি ছিল। তাঁর সঙ্গে রুশো যে কদিন ছিলেন তরুণ সঙ্গীত শিক্ষার্থী হিসেবে উপযুক্ত সমাদর পেয়েছেন। কিন্তু সহজাত অস্থিরতা রুশোকে বেশি দিন এক জীবনে সুস্থির থাকতে দিত না। ল মেতর-এর সঙ্গও তাই একঘেয়ে হয়ে উঠল। একদিন কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে গেলেন রুশো।

মাদামের কটেজে রুশো

দুদিন পথে কাটিয়ে উপস্থিত হলেন অ্যানসিতে। কিন্তু মাদামের কটেজে এসে দেখেন মাদাম নেই। কোথায় গেছেন কেউই বলতে পারল না। মাদামকে দেখার ব্যাকুলতা নিয়েই ছুটে এসেছিলেন তিনি। তাঁর অদর্শনে খুবই বিচলিত হয়ে পড়লেন। কোথায় গেলে তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে? অনেক অনুসন্ধানের পর তিনি জানতে পারলেন, রাজা তাঁকে গোপন কাজে প্যারিসে পাঠিয়েছেন। একুশ বছরের ভবঘুরে যুবক রুশো। সম্বলহীন অসহায়। প্যারিসে যাবার আর্থিক সঙ্গতি তাঁর কোথায়?

সঙ্গীত শিক্ষক রুশো

কিন্তু নানা স্থানে বিভিন্ন চরিত্রের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে ততদিনে তাঁর মন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ও সজাগ পোক্ত হয়েছে। তাই তিনি স্থির করলেন প্যারিসে যাবার অর্থ যে করেই হোক তাঁকে সংগ্রহ করতে হবে। গান বাজনাতে যেটুকু দখল জন্মেছিল তাই তাঁর পুঁজি। সেই সম্বল নিয়েই তিনি চলে এলেন লুজানে। একজন ফরাসী সঙ্গীতজ্ঞ এই ছদ্ম পরিচয়ে খুলে বসলেন গানের স্কুল। মনের ইচ্ছা, গান শিখিয়ে প্যারিসে যাবার পথখরচ জোগাড় করবেন। দেখতে দেখতে জনা কয় ছাত্রীও জুটে গেল। শিক্ষক হিসাবে পরিচিতিও লাভ করলেন তিনি।

প্যারিসে রুশো

এই সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবেই প্যারিসে যাবার সুযোগ এসে গেল। এক উচ্চপদস্থ রাজপুরুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। তাঁর এক ভাগ্নেকে প্যারিসে নিয়ে যেতে হবে। এককথায় রাজি হয়ে গেলেন রুশো। আভিজাত্য আর আড়ম্বরে মোড়া প্রাসাদনগরী প্যারিসে সেই প্রথম পদার্পণ রুশোর। মুগ্ধ হয়ে তিনি কর্মব্যস্ত নগরীর বাড়িঘর লোকজন দেখেন। এখানে সকলেই সকলের কাজে ব্যস্ত। পাশে ফিরে তাকাবার ফুরসৎ নেই কারো। নিজের চিন্তায় থৈ পান না রুশো।

চেম্বারীর পথে রুশো

মাদাম কোথায় থাকেন কিছুই জানেন না। অনুমানে নির্ভর করে সম্ভাব্য জায়গায় সন্ধান করতে থাকেন। এই সময় সৌভাগ্যক্রমে মাদামের এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা। তাঁর কাছ থেকেই রুশো জানতে পারলেন মাদাম রয়েছেন চেম্বারীতে। রুশোর ব্যাকুল হৃদয় মাদামের সাক্ষাৎ লাভের জন্য উদ্বেল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বহু দূরের পথ চেম্বারী। সেখানে যাবার মতো সঙ্গতি পকেটে নেই। তবুও পথকেই সম্বল করে রওনা হয়ে পড়লেন।

মাদামের সন্ধানে রুশো

গ্রামের পর গ্রাম পার হতে লাগলেন পায়ে হেঁটে। আহার নিদ্রা বিশ্রামের বালাই নেই। কখনো কোন গ্রামে কারো বাড়িতে আশ্রয়, আহার জোটে তো পরদিন অনাহারে। পথের গাছতলাতেই কাটে রাত। এমনি অমানুষিক ক্লেশ সয়ে সাতদিন পরে তিনি এসে পৌঁছলেন চেম্বারীতে। মলীন জীর্ণ পোশাকে বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে মাদামের খোঁজ করতে লাগলেন। অবশেষে শহরের একপ্রান্তে একটা ছোট্ট বাড়িতে মাদামের সন্ধান পেলেন। অবসন্ন দেহে সামনে গিয়ে দাঁড়াতে সস্নেহে কাছে টেনে নিলেন মাদাম।

অসহায় মাদামের জীবন

মাদামের জীবনেও চলছিল ঝড়। তার চিহ্ন ছিল তাঁর জীবনযাত্রায় জীর্ণ বাসগৃহে। অ্যানসির প্রাচুর্য বিলাসিতা সবই অনুপস্থিত এখানে। বিস্মিত বিহ্বল রুশো ক্রমে জানতে পারলেন, মাদাম রাজার কাছ থেকে যে মাসোহারা পেতেন, নানা কারণে তা বন্ধ হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। রাজার সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব ছিল না। তিনি জানতে পেরেছিলেন রাজার এক জেনারেলের তত্ত্বাবধানেই রয়েছে তাঁর মাসোহারা পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি। সুন্দরী বুদ্ধিমতী মাদাম তাই সেই জেনারেলেরই শরণাপন্ন হয়েছিলেন। অনুগ্রহ পেতেও দেরি হয় নি। জেনারেলকে খুশি করার জন্যই তিনি তাঁর এই পরিত্যক্ত জীর্ণ বাড়িতে এসে উঠেছেন। জেনারেলের অনুগ্রহে তাঁর মাসোহারাও বজায় রয়েছে।

সরকারী জরীপ বিভাগে রুশোর চাকরি

  • (১) মাদামের সুপারিশে জেনারেল রুশোকে দিন কয়েকের মধ্যেই সরকারী জরীপ বিভাগে উঁচু পদে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেন। এতদিনে সুস্থির হবার মত অর্থোপার্জনের একটা সুয়োগ পেলেন রুশো।
  • (২) কিন্তু তাঁর মন স্থির হল না। মাদামের কাছে থেকেও তিনি যেন মাদামকে কাছে পান না। নানান উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ সর্বক্ষণ আসছে মাদামের কাছে। তাদের সঙ্গে হাসি আনন্দ হৈ হল্লায় মেতে থাকেন মাদাম। এসব রুশোর কাছে খুবই পীড়াদায়ক হয়ে উঠল।
  • (৩) মাদাম তাঁর মনের অবস্থা বুঝতে পারেন। কিন্তু জেনারেলকে খুশি রাখার জন্য এই জীবন থেকে বেরিয়ে আসার কোন উপায় ছিল না তাঁর। রুশো চাকরিতে মনোযোগ দিলেন। সেই সঙ্গে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেন পড়াশুনা আর সঙ্গীতচর্চায়।

রুশোর চাকরী ত্যাগ

ছোট্ট শহর চেম্বারী। গানবাজনা জানা গুণী মানুষ এখানে তেমন কেউ ছিলেন না। তাই রুশোর গানের খ্যাতি মুখে মুখে চারদিকে অল্পদিনেই ছড়িয়ে পড়ল, ধনী পরিবারগুলো থেকে অহরহ ডাক আসতে লাগল। সকলেই চায় তিনি তাদের ছেলেমেয়েদের গান শেখান। রুশোর মনও চাকরির একঘেয়ে জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছিল। তাই একদিন চাকরি ছেড়ে সঙ্গীত শিক্ষকের জীবনই বেছে নিলেন তিনি। তাঁর মনের কথা ভেবে মাদামও তাঁকে বাধা দিলেন না।

রুশোর অস্থির মন

চাকরি ছেড়েও স্বস্তি পান না রুশো। কেমন এক মানসিক অস্থিরতা প্রতিনিয়ত তাঁকে চঞ্চল করে রাখে। শহরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরা গান শিখতে আসে তাঁর কাছে। তাদের অনেকের চোখেই তিনি অন্য আলো দেখতে পান। কিন্তু সে অনুভূতি ক্ষণিকের। মন স্থির করতে পারেন না কোথাও।

রুশোর তৈরি গানের স্বরলিপি

মাদামের আর্থিক অবস্থা যত খারাপের দিকে যাচ্ছে ততই নতুন নতুন অতিথির সমাগম বাড়ছে তার বাড়িতে। তাদের সঙ্গদান করতেই ব্যস্ত থাকেন মাদাম। রুশো তাঁর একাকীত্ব ভুলে থাকেন গানের স্বরলিপি তৈরি করে। এভাবে বেশ কিছু স্বরলিপি তৈরি হতে থাকে। একদিন তাঁর ইচ্ছা হল, স্বরলিপিগুলি নিয়ে প্যারিসে গেলে হয়তো সমাদর পাবেন। একবার কোনওরকমে একটু ঠাঁই সেখানে করে নিতে পারলে তাঁর অভাবও দূর হবে।

পাণ্ডুলিপি সংশোধিত রুশোর বই

সঙ্কল্প মতন একদিন মাদামের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্যারিসে রওনা হলেন। সেখানে দেখা করলেন সঙ্গীত অ্যাকাডেমির প্রধানের সঙ্গে। পরীক্ষা করে দেখা হল তাঁর স্বরলিপি। বিশেষজ্ঞরা রায় দিলেন এ ধরনের স্বরলিপিতে বিশেষত্ব রয়েছে। কিন্তু সাধারণ রুচিতে গ্রহণযোগ্য হবে না। রুশো বুঝতে পারলেন, ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। পাণ্ডুলিপিতে কিছুটা সংশোধন করে বই দাঁড় করালেন। হাতে টাকা যা আছে তাতে একা বই ছাপার ঝুঁকি নেওয়া চলে না। আধাআধি খরচে একজন প্রকাশক জুটিয়ে বই বার করলেন। কিন্তু বই তেমন বিক্রি হল না।

মেয়েদের মধ্যে রুশোর বই প্রচার

এরপর কি করা যায় বুঝতে পারছিলেন না রুশো। সৌভাগ্যক্রমে এমনি সময়ে দুজন শুভানুধ্যায়ী পেয়ে গেলেন তিনি। তাঁদের একজন দিদেরো, তাঁরই সমবয়সী লেখক। অন্যজন বর্ষীয়ান ফাদার কাস্তেল। তাঁর পরামর্শে রুশো তাঁর বই মেয়েদের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করলেন। তাতে কাজও হল। মেয়েরা গ্রহণ করল তাঁর স্বরলিপি। এই সুবাদে রুশো পরিচিত হলেন মাদাম দুপ্যাঁ-এর সঙ্গে। একজন সম্ভ্রান্ত রাজকর্মচারীর দ্বিতীয়া পত্নী তিনি। তরুণী, সুন্দরী। প্রথম পরিচয়েই দুজনে দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হলেন।

চাকরী নিয়ে ভেনিসে রুশো

মাদামের মাধ্যমে এই সময়ে একটা সম্মানজনক চাকরিও জুটে গেল রুশোর। ফরাসী রাষ্ট্রদূতের সেক্রেটারীর চাকরি নিয়ে চলে এলেন ভেনিসে। এখানে বছর দেড়েক চাকরি করতে পেরেছিলেন রুশো। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় চাকরি ছেড়ে চলে এলেন প্যারিসে।

হোটেলে রুশোর আশ্রয় গ্রহণ

পুরনো বন্ধু দিদেরো। তাঁর পরামর্শে ও উৎসাহে নানান বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতে লাগলেন। লেখালিখির সূত্রে পরিচিত হতে লাগলেন অনেকের সঙ্গে। সামান্য অর্থাগমও হতে লাগল। নতুন জায়গায় এবারে কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন রুশো। কম খরচের একটা হোটেলে গিয়ে উঠলেন। কিন্তু সেখানে সমাজের যত নীচু স্তরের মানুষের আনাগোনা। হৈ চৈ, মদ আর জুয়ার ছড়াছড়ি। অসহ্য হলেও নিজের মনেই থাকেন রুশো। কোনও কিছু নিয়ে মাথা ঘামান না।

রুশোর ভালোবাসা

  • (১) কিন্তু সেখানেই একদিন ঘটনাচক্রে তের‍্যাজ নামে সহজ সরল একটা গ্রাম্য মেয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন রুশো। তের‍্যাজ কাজ করত হোটেলে। তার প্রতি অশোভন আচরণ হচ্ছে দেখে রুশো প্রতিবাদ না করে থাকতে পারলেন না। মেয়েটির ভার নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন।
  • (২) কৃতজ্ঞ তের‍্যাজ তার ভালবাসা সরলতা ও অন্তরের মাধুর্যে অল্পদিনেই রুশোর মন জয় করে নিল। রুশোর অশান্ত জীবনে শান্তি নিয়ে এল গ্রাম্য মেয়েটি। বিবাহিত না হয়েও স্বামী-স্ত্রীর মতো বাস করতে লাগলেন দুজনে। রুশোর লেখালিখির সামান্য টাকাতেই সংসার চালান তের‍্যাজ।
  • (৩) সন্তানের ভরণপোষণের ক্ষমতা ছিল না রুশোর। তবুও এক বছরের মধ্যেই তিনি সন্তানের পিতা হলেন। অবাঞ্ছিত এই সন্তানকে তিনি রেখে এলেন সরকারী হাসপাতালের পরিত্যক্ত শিশুদের মধ্যে। এভাবে পাঁচ-পাঁচটি সন্তান পরিত্যাগ করলেন রুশো।
  • (৪) সন্তান প্রতিপালনের দায় এড়াতে রুশো সেদিন নিজের আর্থিক অক্ষমতাটাকেই বড় করে দেখেছিলেন। সন্তানহারা মাতা তের‍্যাজের হৃদয়ের হাহাকার তাঁর কানে পৌঁছয় নি। পরপর পাঁচটি সন্তান হারিয়েও তের‍্যাজ কিন্তু রুশোর কাজে বাধা দেন নি। পরবর্তীকালে অবশ্য এই হৃদয়হীন কাজের কৈফিয়ত হিসাবে রুশো তাঁর দারিদ্র্যের দোহাই পেড়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেছিলেন।

দিদেরোর সাথে রুশোর সাক্ষাৎ

ইতিমধ্যে দিদেরো সরকারবিরোধী লেখার জন্য বন্দী হয়েছিলেন। সংবাদ পেয়ে রুশো বন্ধুকে মুক্ত করার অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু ব্যর্থ হলেন। তবে চেষ্টাচরিত্র করে সাক্ষাতের অনুমতি জোগাড় করলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাবার পথে একদিন একটা সাহিত্য পত্রিকা হাতে পেলেন। তাতে দেখলেন, দিজোঁ অ্যাকাডেমি একটি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা আহ্বান করেছেন, প্রবন্ধের বিষয় হল বিজ্ঞান ও শিল্পকলার উন্নতি কি মানুষের নৈতিক উন্নতি ঘটিয়েছে?

লেখার জন্য রুশোর তীব্র উন্মাদনা

অস্থিরমতি রুশোর সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজন ছিল সমাজসচেতক আন্তর অনুভূতির। প্রতিযোগিতার প্রবন্ধের বিষয়টি এতদিনে সেই কাজ করল। রুশো লেখার জন্য এক তীব্র উন্মাদনা অনুভব করলেন। কিন্তু কী লিখবেন? হাজারো চিন্তা মনে উদয় হতে থাকে। ক্রমে তাঁর অন্তরের গভীর থেকে জেগে উঠতে থাকে ঘুমন্ত বিদ্রোহী সত্তা।

সাধারণ মানুষের হয়ে রুশোর লেখা

ফরাসী সমাজের যাবতীয় অনাচার অবিচার ও অত্যাচার, অভিজাত শ্রেণীর শোষণ, রাজশক্তির অপশাসন, সাধারণ মানুষের অন্তরের ক্ষোভ সমস্ত কিছু জ্বালাময়ী ভাষায় রূপ পেল রুশোর প্রবন্ধে। যেন এক সুপ্ত আগ্নেয়গিরি সহসা বিস্ফোরণ ঘটাবার পথ খুঁজে পেল। সব শেষে রুশো ঘোষণা করলেন সমস্ত অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষের মুক্তি-সংগ্রামের কথা।

প্রতিযোগিতায় রুশোর প্রথম পুরস্কার

লেখা শেষ করে প্রবন্ধ জমা দিয়ে এলেন। ফলাফল ঘোষণা হতে অখ্যাত রুশো রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন। প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেলেন তিনি। একটি সামান্য ঘটনাকে অবলম্বন করে সেদিন আবির্ভাব ঘটল মানব ইতিহাসের এক মহাজীবনের। এই পুরস্কার রুশোর মনের আগল খুলে দিল। তাঁর ভেতর থেকে যেন বেরিয়ে এল এক নতুন মানুষ।

রুশোর প্রথম নাটক

আগুন-ঝরা ভাষায় তাঁর কলম থেকে একের পর এক লেখা প্রকাশ পেতে লাগল। ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হল রুশোর নাটক The village soothsayer. এক গ্রামীণ দৈবজ্ঞর কাহিনী। প্যরিসে অভিনীত হল নাটকটি। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অভিনন্দনে অভিষিক্ত হলেন রুশো। এই সময়ে রাজদরবারেও অভিনীত হল রুশোর নাটক। আমন্ত্রিত হয়ে রাজা রানী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে রুশো অভিনয় উপভোগ করলেন।

রাজার ভাতা ত্যাগ

সেই রাতে রাজা ঘোষণা করলেন, রুশোকে ভাতা দেওয়া হবে। তিনি যেন নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত থেকে রাজার দেওয়া ভাতা গ্রহণ করেন। রুশো কিন্তু রাজার ভাতা গ্রহণ করেন নি। রাজার অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর লেখা যে তাহলে অর্থহীন হয়ে যাবে। অসুস্থতার অজুহাতে রুশো পালিয়ে গেলেন।

রুশোর নতুন আবাস হার্মিটেজ

অখ্যাত রুশোর এখন প্যারিস জোড়া খ্যাতি। গুণগ্রাহী ও ভক্তদের ভিড় ক্রমশই বাড়তে থাকে। লেখায় বিঘ্ন ঘটতে লাগল। একদিন তের‍্যাজকে নিয়ে চলে এলেন জেনেভায়। এখানে এক অভিজাত গৃহিণীর বদান্যতায় রুশো শহর থেকে দূরে ফুলে ফুলে সাজানো ছোট্ট একটা বাগানবাড়ি পেয়ে গেলেন বসবাসের জন্য। তের‍্যাজকে নিয়ে সেখানেই উঠলেন। স্থির করলেন, এই পাখির কুজন মুখরিত, কোলাহলহীন, গাছপালা ঘেরা বাড়িতে বসেই এতকালের মনে জমানো কথা লিখবেন। রুশো তাঁর নতুন আবাসের নাম দিলেন হার্মিটেজ। এখানে এসে তিনি প্রথম লিখলেন একটি উপন্যাস La Nouvelle Helaise (The New Eloisa)। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পাঠক সমাদর পেল এই উপন্যাস।

সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির প্রাসাদে রুশো

এই সময় হার্মিটেজের মালিক মাদাম এপিনের বৈমাত্রেয় বোনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে রুশোর। মাদাম এপিনে তাঁদের এই সম্পর্ক সহজভাবে মেনে নিতে পারলেন না। রুশো হার্মিটেজের আশ্রয়চ্যুত হলেন। প্যারিসের কোলাহল থেকে দূরে থাকার জন্যই এই নির্জন প্রকৃতির কোলে চলে এসেছিলেন রুশো। তাই সেখানে আর ফিরে গেলেন না। ঠাঁই পেলেন মার্শাল ডিউক দ্য লুক্সেমবুর্গ নামে এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির প্রাসাদে।

লেখক রুশোর এমিলি উপন্যাস

নিশ্চিন্তে নিজের লেখায় মনোনিবেশ করলেন এবারে রুশো। একই সঙ্গে দুটো লেখায় হাত দিলেন। একটি উপন্যাস, অপরটি রাষ্ট্র-সমাজ বিষয়ে তাঁর স্বাধীন মতামত বিষয়ক বই। উপন্যাসটি Emile নামে প্রকাশিত হল ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে। এটি প্রকাশের দায়িত্ব নিলেন স্বয়ং মাদাম লুক্সেবুর্গ।

রুশোর এমিলি উপন্যাসে শিশু শিক্ষা

  • (১) আদর্শ শিক্ষা বিষয়ে রুশোর চিন্তাভাবনা প্রকাশিত হয়েছে এমিলি উপন্যাসে শিশু এমিলের জীবনকে অবলম্বন করে। মুক্ত প্রকৃতি থেকে শিশু তার স্বভাব অনুসারে আপনা থেকেই শিক্ষা নেবে। তাকে কোনও কৃত্রিম শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় এনে স্বাভাবিক বিকাশের পথ বন্ধ করা উচিত নয়।
  • (২) রুশো তাঁর এই বক্তব্য প্রকাশের জন্য এমিলের শিক্ষা-জীবনকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। জন্ম থেকে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের সময়। অভিভাবকদের কর্তব্য দেখা এই সময় যাতে শিশুর কোনও খারাপ অভ্যাস গড়ে না ওঠে।
  • (৩) শিশুর শিক্ষার দ্বিতীয় স্তর হল ছয় থেকে বারো বছর বয়স। এই সময়টায় নজর দেওয়া উচিত শিশুর দৈহিক বিকাশের প্রতি। সুস্থ মন পাবার জন্য সুস্থ দেহের প্রয়োজন। রুশো অভিভাবকদের সতর্ক করে বলেছেন, শিশু বড়দের কাছ থেকেই ভাল মন্দ অভ্যাসগুলো পেয়ে থাকে।
  • (৪) রুশো বারো থেকে পনেরো বছর বয়সটাকে বলেছেন শিশুর বাস্তবধর্মী শিক্ষার কাল। এই সময় সামাজিক বিষয় ও কর্তব্যের সঙ্গে সে পরিচিত হবে। ভবিষ্যৎ জীবনের দিকে লক্ষ্য রেখে পছন্দমতো বৃত্তি শিক্ষা করবে। পনেরো থেকে কুড়ি-এই বয়সে এমিলের হবে হৃদয়ের শিক্ষা। সমাজ বিজ্ঞান, নীতিশিক্ষা, ধর্মশিক্ষা হবে তার চর্চার বিষয়।
  • (৫) এমিলের শিক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে রুশো মেয়েদের শিক্ষার সম্পর্কেও অনেক কথা বলেছেন। রুশো তাঁর এমিল উপন্যাসের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিক দর্শনের বীজ রোপন করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে তাঁর এই অপ্রবর্তী চিন্তাধারা অনুধাবন করার মতো অবস্থা ছিল না তৎকালীন সমাজ-মানসের।

রুশোর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ফলে এমিল পেল প্রচন্ড বিরূপ সমালোচনা। বইটিকে সমাজহানিকর অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল প্যারিসের আদালত থেকে। লেখকের বিরুদ্ধে বেরুল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। গ্রেপ্তার এড়াতে বন্ধুদের পরামর্শে রুশো তের‍্যাজকে মার্শালের প্রাসাদে রেখে পোলিয়ে গেলেন সুইজারল্যান্ডে। কেবল প্যারিসে নয়, গোটা ইউরোপ-এই এমিল আলোড়ন তুলেছিল। প্রচলিত চিন্তার জগতে প্রচন্ড আঘাত হিসাবে সমালোচিত হতে থাকল এমিল। রুশোকে ঈশ্বরবিদ্বেষী বলেও অভিহিত করা হল।

রুশোর Social Contract গ্রন্থ

সুইজারল্যাণ্ডেও চার্চের উষ্মা ধূমায়িত হচ্ছে বুঝতে পেরে শহর ছেড়ে রুশো চলে গেলেন দূরের গ্রামে। পরে তের‍্যাজকেও নিয়ে এলেন কাছে। রাষ্ট্র-সমাজ বিষয়ে লেখা রুশোর বইটিও Social Contract নামে প্রকাশিত হয় এই সময়। এই বইতে তিনি বলেছেন, মানুষের সর্বাত্মক মুক্তি ও কল্যাণের লক্ষ্যে সরকারের উচিত একটি সামাজিক চুক্তি সম্পাদন করা। তাঁর এই উক্তিও ছিল বিপ্লবাত্মক।

নির্জন দ্বীপে রুশো

পত্রপত্রিকাগুলো রুশোর লেখার বিরুদ্ধে এমনই বিষোদগার করতে আরম্ভ করেছিল যে সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিল। তাই নির্বাসিত জীবনেও স্বস্তি ছিল না রুশোর। একদিন নিভৃত গাঁয়ের বাসস্থানও তাঁকে ত্যাগ করতে হল। তের‍্যাজকে সঙ্গে করে তিনি চলে এলেন স্যাঁ পিয়ের নামে এক নির্জন শান্ত দ্বীপে, যার সঙ্গে বাইরের জগতের যোগাযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু জনরোষ রুশোর বিরুদ্ধে এমনই তীব্র আকার ধারণ করেছিল যে এই নিরালা দ্বীপও তাঁকে আশ্রায় দিতে ভরসা পেল না। ভাগ্য রুশোকে পথে এনে দাঁড় করাল। কোথায় যাবেন তিনি?

ইংল্যান্ডে রুশো

এই সঙ্কট সময়ে রুশোকে উদ্ধার করে ইংল্যান্ড-এ নিয়ে গেলেন দার্শনিক ডেভিড হিউম। এখানকার উদার স্বাধীন পরিবেশে হাঁপ ছেড়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হলেন ভাগ্যবিড়ম্বিত রুশো। কিন্তু ততদিনে শরীর মন দুইই ভেঙ্গে পড়েছে তাঁর। বয়সও হয়েছে আটান্ন। ক্রমাগত আঘাত পেয়েছেন তিনি মানুষের কাছ থেকে।

রুশোর অবিস্মরণীয় গ্রন্থ The confession

এই মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যেও রুশো লিখলেন তাঁর অবিস্মরণীয় গ্রন্থ The confession. দীর্ঘ পাঁচ বছরে সম্পূর্ণ করা রুশোর আত্মজীবনীমূলক এই গ্রন্থ বিশ্বসাহিত্যের কালজয়ী গ্রন্থগুলোর অন্যতম। বারোখণ্ডে সম্পূর্ণ রুশোর এই গ্রন্থকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। দেশের বহুধাবিভক্ত ধারার অর্থনীতির সঙ্গে এতে আলোচিত হয়েছে সামাজিক মানুষের আচার ব্যবহার হৃদয় ও মনোজগতের সমস্ত ভাব অনুভূতি। একদিকে রয়েছে সমাজব্যবস্থার বাস্তব চিত্র, উদার মহৎ প্রকৃতির সাধারণ মানুষের জীবন। অন্যদিকে স্বার্থপর অভিজাত শ্রেণীর দুর্নীতি ও ব্যভিচার। মানবজীবনের এক পূর্ণাঙ্গ দলিল বলা চলে রুশোর Confession কে। এই বইটিও সমসাময়িক পৃথিবীর মানুষ সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে নি। ফ্রান্স সহ পৃথিবীর বহু দেশেই এ বই নিষিদ্ধ হয়েছিল।

প্যারিসে রুশোর প্রত্যাবর্তন

তীব্র এক মানসিক বিপর্যয়ে ভুগছিলেন রুশো। স্বভাবও হয়ে পড়েছিল খুবই এই অবস্থায় বছরখানেক ইংল্যান্ডে থাকার পর গোপনে পালিয়ে চলে আসেন ফ্রান্সে। সৌভাগ্যবশতঃ কিছুদিন পরে প্যারিসে আসার সরকারী অনুমতিও পাওয়া গেল।

রুশোর ভাগ্যবিড়ম্বনা

একটা গোটা জীবন নিরবচ্ছিন্ন কঠিন সংগ্রাম ও অনিয়মের মধ্যে অতিবাহিত হল। দেহ মন কোনটাই আর টানতে পারছিল না। তাঁর সুখ-দুঃখের সঙ্গী তের‍্যাজ কিন্তু ধৈর্যহারা হন নি। জগতের এই মহান চিন্তা নায়কের ভাগ্যবিড়ম্বনার অংশভাগিনী হয়ে নীরবে শেষদিন পর্যন্ত সংসারের ভার বহন করে গেছেন। রুশোর জীবনে ও কর্মকৃতিত্বে এই অসামান্যা নারীর অবদানও সামান্য নয়।

দার্শনিক রুশোর মৃত্যু

অবশেষে ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২ জুলাই প্যারিসে রুশো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

উপসংহার :- জ্যাঁ জ্যাক রুশো ছিলেন এক আধুনিক যুগান্তকারী দার্শনিক, যিনি মানুষের স্বাধীনতা, সমতা ও প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগের গুরুত্বকে তুলে ধরেছিলেন। তাঁর চিন্তাধারা ফরাসি বিপ্লব, গণতন্ত্র এবং আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। The Social Contract এবং Emile এর মতো রচনাগুলোর মাধ্যমে তিনি সামাজিক ন্যায়বিচার ও ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণাকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। রুশো প্রমাণ করেছিলেন যে সত্যিকার পরিবর্তনের জন্য সমাজের মূল কাঠামোতে প্রশ্ন তোলা এবং প্রকৃতির মূলগত নীতিগুলোতে ফিরে যাওয়া অপরিহার্য। তাঁর জীবন ও কাজ মানব সভ্যতার জন্য এক মূল্যবান দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

(FAQ) জাঁ জ্যাক রুশো সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১। রুশোর সবচেয়ে বিখ্যাত বই কোনটি?

রুশোর সবচেয়ে বিখ্যাত বই হলো The Social Contract, যেখানে তিনি সামাজিক চুক্তি ও জনগণের সার্বভৌমত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

২। রুশোর মতাদর্শের মূল ভিত্তি কী?

রুশোর মতাদর্শের মূল ভিত্তি হলো প্রাকৃতিক অবস্থা, যেখানে মানুষ প্রকৃতিগতভাবে স্বাধীন ও সমান। তবে সমাজের উন্নতির জন্য একটি সামাজিক চুক্তির প্রয়োজন।

৩। রুশো ফরাসি বিপ্লবে কীভাবে প্রভাব ফেলেছিলেন?

রুশোর The Social Contract বইটি ফরাসি বিপ্লবের সময় গণতন্ত্র ও জনগণের সার্বভৌমত্বের ধারণার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

৪। রুশোর শিক্ষার ধারণা কী?

রুশোর Emile বইটি শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে লেখা, যেখানে তিনি প্রকৃতি ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখার ওপর জোর দিয়েছেন।

৫। রুশো কোন দার্শনিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

রুশো ইউরোপের প্রজ্ঞা আন্দোলনের (Enlightenment) অংশ ছিলেন, তবে তাঁর কাজ অনেক সময় এই আন্দোলনের মূলধারার বিপরীতে ছিল।

৬। রুশোর জীবন কেমন ছিল?

রুশোর জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। তিনি অনাথ হিসেবে বড় হন এবং জীবনের বিভিন্ন সময় দারিদ্র্যের মুখোমুখি হন। তবে তাঁর কাজ তাঁকে দার্শনিক ও লেখক হিসেবে অমর করেছে।

Leave a Comment