কোল বিদ্রোহ সম্পর্কে টীকা

দশম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে কোল বিদ্রোহ সম্পর্কে টীকা

Table of Contents

কোল বিদ্রোহ সম্পর্কে টীকা

প্রশ্ন:- কোল বিদ্রোহ সম্পর্কে টীকা লেখ।

ভূমিকা :- বিহারের ছোটোনাগপুর অঞ্চলে বসবাসকারী কোলরা নিজেদের প্রচলিত আইনকানুন ও বিচারপদ্ধতি অনুসারে জীবন যাপন করত। তাদের ওপর ব্রিটিশ সরকার, বহিরাগত জমিদার ও মহাজনদের তীব্র শোষণের ফলে তারা ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে যে বিদ্রোহ শুরু করে তা কোল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

বিদ্রোহের কারণ

কোল বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল নিম্নরূপ –

(১) শোষণ

ভারত -এ ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসী কোল অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্রিটিশদের শাসন শুরু হয়। ব্রিটিশ সরকার নানান উপায়ে কোলদের শোষণ করতে থাকে।

(২) কোল ঐতিহ্য ধ্বংস

ব্রিটিশরা কোল অধ্যুষিত অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে কোলদের চিরাচরিত ঐতিহ্য ধ্বংস করে। তারা সেখানে নতুন আইন ও বিচার ব্যবস্থা চালু করে। ফলে কোলদের নিজস্ব আইন ও বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস হতে থাকে।

(৩) রাজস্ব বৃদ্ধি

ইংরেজরা কোল অধ্যুষিত অঞ্চলে বহিরাগত বিভিন্ন জমিদারদের ইজারা দেয়। জমিদাররা কোলদের উপর রাজস্বের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি করে। ফলে কোলরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

(৪) নগদ খাজনা আদায়

সরকার ও জমিদাররা দরিদ্র কোলদের নগদে খাজনা দিতে বাধ্য করে। ফলে কোলরা নগদ অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে মহাজনদের দ্বারা প্রতারিত হয়।

(৫) জীবিকায় আঘাত

সরকার ও জমিদাররা কোলদের খাদ্য উৎপাদনের পরিবর্তে আফিম চাষে বাধ্য করলে তারা খাদ্যাভাবের শিকার হয়। এই সব কারণে কোলরা বিদ্রোহ করে।

কোল বিদ্রোহের সূচনা

ব্রিটিশ সরকার, জমিদার ও মহাজনদের তীব্র শোষণের প্রতিবাদে ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে আদিবাসী কোলরা শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে।

বিদ্রোহের প্রসার

কোল বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর তা দ্রুত সিংভূম, মানভূম, হাজারিবাগ ও পালামৌ জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

বিদ্রোহের নেতৃত্ব

এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন বুন্ধু ভগত, জোয়া ভগত, সিংরাই, ঝিন্দরাই মানকি, সুই মুন্ডা প্রমুখ।

বিদ্রোহের অবসান

ক্যাপটেন উইলকিনসনের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন চালায় এবং বহু আদিবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করলে বিদ্রোহ বন্ধ হয়ে যায়।

ফলাফল

কোল বিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলি ছিল –

  • (১) বিদ্রোহের ফলে কোল অধ্যুষিত অঞ্চলে সরকারি নীতির কিছু পরিবর্তন ঘটে।
  • (২) কোলদের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নামে একটি পৃথক ভূখণ্ড নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় (১৮৩৪ খ্রি.)।
  • (৩) ব্রিটিশ আইনকানুনের পরিবর্তে কোলদের নিজস্ব আইনকানুন চালু করা হয়।
  • (৪) জমিদাররা যেসব জমি দখল করে নিয়েছিল তা কেড়ে নিয়ে কোলদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

উপসংহার :- ব্রিটিশ শাসনকালে উপজাতি বিদ্রোহের ইতিহাসে কোল বিদ্রোহ ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ব্রিটিশ শাসকদের সাথে কোলদের এই অসম লড়াইয়ে কোলদের পরাজয় ছিল বিদ্রোহের দুঃখজনক পরিণতি।

দশম শ্রেণীর ইতিহাস (তৃতীয় অধ্যায়) প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে অন্যান্য সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

দশম শ্রেণী ইতিহাস সিলেবাস তৃতীয় অধ্যায়- প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে সকল সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি দেওয়া হল।

দশম শ্রেণী ইতিহাস সিলেবাস তৃতীয় অধ্যায় – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন ও সেই বিষয়ে আদিবাসী জনগণের প্রতিক্রিয়া বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা; প্রসঙ্গত বিদ্রোহ, অভ্যূত্থান ও বিপ্লব-এর ধারণাগত আলোচনা।

৩.১. আদিবাসী বিদ্রোহ

৩.১.ক. চুয়াড় বিদ্রোহ (দ্বিতীয় পর্ব, মেদিনীপুর, ১৭৯৮-৯৯)
৩.১.খ. কোল বিদ্রোহ (১৮৩১-৩২)
৩.১.গ. সাঁওতাল হুল (১৮৫৫-৫৬)
৩.১.ঘ. মুন্ডা বিদ্রোহ (১৮৯৯-১৯০০)

এই বিদ্রোহগুলির অতিসংক্ষিপ্ত আলোচনাসহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ।

টুকরো কথা

রংপুর বিদ্রোহ (১৭৮৩)
ভিল বিদ্রোহ (১৮১৯)

(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি, আলোচ্য বিদ্রোহগুলির সময়কাল উল্লেখসহ মানচিত্রে সেগুলির অঞ্চল চিহ্নিতকরণ, বিদ্রোহগুলির সময়সারণি)

৩.২. ধর্ম প্রভাবিত বিদ্রোহ

(৩.২.ক.) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ (১৭৬৩-১৮০০)
(৩.২.খ.) ওয়াহাবি আন্দোলন
(৩.২.গ.) ফরাজি আন্দোলন

এই বিদ্রোহ গুলির অতি সংক্ষিপ্ত আলোচনাসহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

টুকরো কথা

(ক) পাগলপন্থি বিদ্রোহ (১৮২৫-২৭)
(খ) তারিখ-ই-মহম্মদীয়া

(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি, আলোচ্য বিদ্রোহগুলির সময়কাল উল্লেখসহ মানচিত্রে সেগুলির অঞ্চল চিহ্নিতকরণ, বিদ্রোহগুলির সময়সারণি)

৩.৩. নীল বিদ্রোহ

এই বিদ্রোহের অতি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

টুকরো কথা

পাবনার কৃষক বিদ্রোহ

(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি, আলোচ্য বিদ্রোহগুলির সময়কাল উল্লেখসহ মানচিত্রে সেগুলির অঞ্চল চিহ্নিতকরণ, বিদ্রোহগুলির সময়সারণি)।

Leave a Comment