লাবণ্যপ্রভা দত্ত

একজন বিশিষ্ট ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসংস্কারক ছিলেন লাবণ্যপ্রভা দত্ত (১৮৮৮ – ৬ জুন ১৯৭১)। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জন্মগ্রহণকারী লাবণ্যপ্রভা অল্প বয়স থেকেই স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি “অগ্নিকন্যা” নামে পরিচিত ছিলেন।

Table of Contents

অগ্নিকন্যালাবণ্যপ্রভা দত্ত

ঐতিহাসিক চরিত্রঅগ্নিকন্যা লাবণ্যপ্রভা দত্ত
জন্ম১৮৮৮ খ্রি
জন্মস্থানবহরমপুর, মুর্শিদাবাদ, ব্রিটিশ ভারত
পিতাহেমচন্দ্র রায়
মাতাকুসুমকুমারী দেবী
স্বামীযতীন্দ্রনাথ দত্ত
রাজনৈতিক অনুপ্রেরণাভাই সুরেন্দ্রনাথ রায়
রাজনৈতিক অংশগ্রহণস্বদেশী আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন, নারী সত্যাগ্রহ
প্রতিষ্ঠিত সংগঠনআনন্দমঠ (১৯৩০), নারী সত্যাগ্রহ সমিতি (১৯৩৩)
গুরুত্বপূর্ণ পদদক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের সেক্রেটারি; চব্বিশ পরগনার কংগ্রেসের ভাইস-প্রেসিডেন্ট
কারাবরণ১৯৩১ ও ১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য জেল (৬ মাস ও ১৮ মাস)
বিশেষ কীর্তিপ্রেসিডেন্সি জেলে ১৪ দিন অনশন করে রান্নার অধিকারে জয়লাভ
উপাধিঅগ্নিকন্যা
মৃত্যু৬ জুন ১৯৭১ খ্রি

সংগ্রামী লাবণ্যপ্রভা দত্ত

ভূমিকা :- লাবণ্যপ্রভা দত্ত ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক প্রগতিশীল ও সংগ্রামী নারী মুখ। তিনি ছিলেন সেই বিরল সাহসিনী নারীদের একজন, যাঁরা নারীত্বের সামাজিক বাঁধা ভেঙে রাজনৈতিক সংগ্রামের অগ্রভাগে উঠে এসেছিলেন। নারী জাগরণ, রাজনীতি, শিক্ষা ও সামাজিক অধিকার অর্জনের পথে তিনি ছিলেন একজন অগ্রদূত। তাঁর সাহস, ত্যাগ ও নেতৃত্বের গুণে তিনি ইতিহাসে “অগ্নিকন্যা” নামে খ্যাতি অর্জন করেন। লাবণ্যপ্রভা দত্তের জীবন কেবল স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নয়, নারী শক্তির জাগরণের প্রতীক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।

লাবণ্যপ্রভা দত্তর জন্ম

১৮৮৮ সালে পিতার মামাবাড়ী পশ্চিমবঙ্গ-এর মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন লাবণ্যপ্রভা দত্ত। মানুষও হন সেখানেই।

নারী সংগ্রামী লাবণ্যপ্রভা দত্তর পিতামাতা

তাদের পরিবার ছিল গোঁড়া পর্দানশীন এক বৈষ্ণব জমিদার পরিবার। পিতা হেমচন্দ্র রায় এবং মাতা কুসুমকুমারী দেবী।

লাবণ্যপ্রভা দত্তর পরিবারের নিয়ম

ঐ জমিদার বাডীর নিয়ম ছিল গ্রহণ লাগলেই বাডীর বৌ ও মেয়েদের সবাইকে পাল্কি করে গঙ্গায় নিয়ে গিয়ে পাল্কিসুদ্ধ ঠিক বেডাল চুবানির মতো চুবিয়ে আনা হবে। বাড়ী এসে তারা কাপড় বদলাবে। সাতবছরের বালিকা লাবণ্যপ্রভা এক শীতের গ্রহণের রাতে পাল্কি বন্দী হয়ে গঙ্গায় না গিয়ে বাড়ীতে লুকিয়ে রয়ে গেলেন। তিনি সেদিন মনে মনে সংকল্প করলেন যে, বড় হয়ে এই নিষ্ঠুর প্রথা দূর করবেন।

মহিলা সমিতি গঠনে লাবণ্যপ্রভা দত্ত

সত্যই যখন ১৯৩০ সালে তিনি দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের সম্পাদিকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন বহরমপুরে গিয়ে ঐ গোঁডা জমিদার বাড়ীর বৌ-দের বাইরে নিয়ে এসে তিনি সভা অনুষ্ঠিত করেন এবং সেখানে চার জায়গায় চারটি মহিলা সমিতি গঠন করেন। গোঁড়া পরিবারের মহিলাদের বাইরে নিয়ে আসা তখন বড় সহজ কথা ছিল না।

লাবণ্যপ্রভা দত্তর বিবাহ

ন’বছর বয়সে তাঁর বিবাহ হয় খুলনা জেলার শ্রীপুর গ্রামের যতীন্দ্রনাথ দত্তর সঙ্গে। তাঁর স্বামী প্রথমে কলকাতার উকিল ছিলেন। পরে বৈষয়িক কাজে সাতক্ষীরাতে ওকালতি করতে যান।

রাজনৈতিক কর্মের প্রেরণায় লাবণ্যপ্রভা দত্ত

লাবণ্যপ্রভা দত্তের বড় ভাই সুরেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন বিপ্লবী বারীন ঘোষের সঙ্গে রাজনৈতিক কাজে জড়িত। বড় ভাইয়ের কাছ থেকেই তিনি রাজনৈতিক কর্মের প্রথম প্রেরণা পান। তিনি দাদার দেওয়া রিভলভার ও নিষিদ্ধ পুস্তক লুকিয়ে রাখতেন।

দাদার আদেশ গ্রহণে লাবণ্যপ্রভা দত্ত

তাঁর দাদা যখন মারা যান তখন লাবণ্যপ্রভা দত্তের বয়স আঠারো। মৃত্যুর পূর্বে ছোট বোন লাবণ্যপ্রভা দত্তের মাথায় হাত রেখে তিনি আশীর্বাদ করে যান যে, তিনি যেন দেশসেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেন এবং তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেন। সেই কথা লাবণ্যপ্রভা দত্ত ভোলেননি সারা জীবন।

স্বদেশীভাবাপন্ন লাবণ্যপ্রভা দত্ত

১৯০৬ সালে স্বদেশী যুগে তিনি স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহার করতেন, স্বদেশী ছেলেদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন। এমনকি তার প্রভাবে তাঁর স্বামীও মত বদলে স্বদেশীভাবাপন্ন হন।

পুরীতে লাবণ্যপ্রভা দত্ত

লাবণ্যপ্রভা দত্তের তেইশ বছর বয়সের সময় অকস্মাৎ তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। অসীম দুঃখসাগর তাকে ঘিরে ফেলে। তিনি পুরী চলে গেলেন। রামদাস বাবাজীর নিকট থেকে সেখানে তিনি দীক্ষা গ্রহণ করেন। বহুদিন তিনি পুরীতে রইলেন।

যতীন দাসের মৃত্যুতে লাবণ্যপ্রভা দত্তর প্রতিজ্ঞা

তার ছোট মেয়ে ও পিতার মৃত্যুর পর পুরী ছেড়ে তিনি প্রথম নবদ্বীপ ও পরে কলকাতায় আসেন। সেই বছরেই ১৯২৯ সালে লাহোর জেলে অনশনে যতীন দাসের মৃত্যু হয়। যতীন দাসের শ্মশানে দাঁড়িয়ে তিনি ও তাঁর কন্যা শোভারাণী প্রতিজ্ঞা করেন যে, তাঁরা দেশসেবায় পরিপূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করবেন।

লাবণ্যপ্রভা দত্ত কর্তৃক আনন্দমঠ প্রতিষ্ঠা

১৯৩০ সালে লাবণ্যপ্রভা দত্ত এবং কন্যা শোভারাণী দত্ত ‘আনন্দমঠ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন দেশসেবা ও জনসেবার আদর্শ নিয়ে। এখান থেকে অনেক কর্মীকে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগদান করতে পাঠানো হত।

নারী সত্যাগ্রহ সমিতিতে লাবণ্যপ্রভা দত্ত

১৯৩০ সালে ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’ গঠিত হয়। তার যুগ্ম-সম্পাদিকা ছিলেন শান্তি দাস (কবীর) ও বিমলপ্রতিভা দেবী। ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’-র আহ্বানে লাবণ্যপ্রভা দত্ত ও শোভারাণী দত্ত কিছুদিন তাঁদের সঙ্গে আন্দোলন পরিচালনা করেন। দুজনেই বড়বাজারে গিয়ে নিজেরা পিকেটিং করতেন এবং পিকেটিং করবার জন্য মহিলা কর্মী সংগ্রহ করতেন।

যতীন্দ্র স্মৃতিমন্দিরের প্রেসিডেন্ট লাবণ্যপ্রভা দত্ত

এরপর লবণ আইন অমান্য আন্দোলনে যোগদান করতে লাবণ্যপ্রভা দত্ত মহিষবাথান চলে যান। ফিরে আসার পর তিনি ‘যতীন্দ্র স্মৃতিমন্দির’-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। স্মৃতিমন্দির থেকে বহু কর্মীকে পিকেটিং ও আন্দোলনে যোগদান করতে পাঠানো হত।

লাবণ্যপ্রভা দত্তর কারাদণ্ড

একদিন বিপ্লবী নেতা হরিকুমার চক্রবর্তী এসে তাঁকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সঙ্গে যোগ দিয়ে দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের কাজ করতে আহ্বান করেন। সেই সময় ১৯৩০ সালে দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের সেক্রেটারি ছিলেন চণ্ডীচরণ ব্যানার্জী এবং প্রেসিডেন্ট সুভাষচন্দ্র বসু। দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেস থেকে যে আইন অমান্য আন্দোলন চলেছিল তার পরিচালনা করতে করতে লাবণ্যপ্রভা দত্ত গ্রেপ্তার হন। তাঁর প্রতি তিনমাস কারাদণ্ডের আদেশ হয়।

দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের সেক্রেটারি লাবণ্যপ্রভা দত্ত

তাঁর জেল থেকে ফিরে আসার পর সেক্রেটারি চণ্ডীচরণ ব্যানার্জী আন্দোলন পরিচালনার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তাঁর কারাদণ্ডের পর লাবণ্যপ্রভা দত্ত দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। এই সময় দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের আইন অমান্য আন্দোলনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে লাবণ্যপ্রভা দত্তের সঙ্গে সঙ্গে শোভারাণী দত্তের দানও অনস্বীকার্য।

চব্বিশ পরগনা কংগ্রেস কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট লাবণ্যপ্রভা দত্ত

  • (১) লাবণ্যপ্রভা দত্ত শুধু যে দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন, তাই নয়, তিনি চব্বিশ-পরগনা কংগ্রেস কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হন। চব্বিশ-পরগনার নীলা গ্রামে একদিন তাঁরা আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনা করতে যান। নীলা গ্রামের হাটের মধ্যে সেদিন আইন অমান্যকারীরা জমায়েত হচ্ছিলেন।
  • (২) মায়ের একমাত্র সন্তান আশু দলুই দুপুরবেলায় খেয়েদেয়ে যখন ঘুমাচ্ছিলেন, তিনি হাটের মধ্যে পুলিসের সঙ্গে আইন অমান্যকারীদের সংঘর্ষের আওয়াজ শুনে জেগে ওঠেন এবং তৎক্ষণাৎ ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে যান আইন অমান্যকারীদের মধ্যে। সেই সময় পুলিস জনতাকে ছত্রভঙ্গ করবার উদ্দেশ্যে গুলী চালাবার পূর্বে সাবধানবাণী উচ্চারণ করছিল।
  • (৩) পুলিসের সেই চ্যালেঞ্জ শুনে আশু দলুই সামনে এগিয়ে গিয়ে বললেন, “আমি এই বুক পেতে দিচ্ছি, গুলী কর।” পুলিশের গুলীতে আশু দলুই-এর রক্তাক্ত দেহ মুহূর্তে ধুলায় লুটিয়ে পড়ল। তাঁর মৃত্যু সেদিন আইন অমান্যকারীদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মাহুতি দিতে শিখিয়ে গেল। কিন্তু আজ সেই অনাথিনী মায়ের একমাত্র সন্তান আশু দলুইকে কেই বা মনে রেখেছে? কজনই বা তাঁর নাম শুনেছে?

শোভাযাত্রা পরিচালনায় লাবণ্যপ্রভা দত্ত

১৯৩১ সালের ২৬শে জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস-এ দক্ষিণ কলকাতায় লাবণ্যপ্রভা দত্ত এক শোভাযাত্রা পরিচালনা করেন। শোভাযাত্রায় পুলিসের লাঠির আঘাতে তাঁর ডান হাতখানা ভেঙে যায়। তার পরদিনই ভোরে ব্যান্ডেজ বাঁধা হাত নিয়ে তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা অনেকে ডাইমণ্ডহারবারের ‘বাণীমন্দির’-এ গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানকার কর্মী প্রেমলতা বসু (বিপ্লবী দুর্গাচরণ বসুর স্ত্রী) প্রভৃতির সঙ্গে তাঁরা গেলেন কোর্টে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে।

রাজদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত লাবণ্যপ্রভা দত্ত

প্রেমলতা বসু যখন লাবণ্যপ্রভা দত্তর উপর পুলিসের লাঠিচার্জের ফলে ভেঙে যাওয়া হাতখানা জনতাকে দেখালেন এবং ওজস্বিনী ভাষায় বক্তৃতা করতে লাগলেন তখন জনতা ক্ষিপ্ত ও উত্তেজিত হয়ে উঠল। তারাও দলে দলে এগিয়ে গেল আইন অমান্য করতে। এবারে রাজদ্রোহের অভিযোগে লাবণ্যপ্রভা দত্তকে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

লাবণ্যপ্রভা দত্তর সশ্রম কারাদণ্ড

১৯৩২ সালে পুনরায় তিনি আইন অমান্য আন্দোলনে যোগদান করেন। হরিশ পার্কে হিজলীর রাজবন্দীদের উপর গুলী চালনার প্রতিবাদে বক্তৃতা দেবার জন্য রাজদ্রোহের অভিযোগে তাঁর পুনরায় ১৮ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।

নারী সংগ্রামী লাবণ্যপ্রভা দত্তর অনশন

প্রেসিডেন্সি জেলের ভিতরে ফিমেল ইয়ার্ডে বিধবাদের নিজেদের রান্না করে খাবার অধিকার পাবার জন্য তিনি ঐ জেলে ১৪ দিন অনশন করে সফল হয়েছিলেন।

বি.পি.সি.সি.-র সভানেত্রী লাবণ্যপ্রভা দত্ত

  • (১) ১৯৩৯ সালে তিনি বি.পি.সি.সি.-র মহিলা সাব কমিটির সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। ১৯৪০ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভাপতি সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ যখন ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগদান করে জেলে চলে যান তখন তিনি লাবণ্যপ্রভা দত্তকে বি.পি.সি.সি.-র সভানেত্রী মনোনীত করেন। ১৯৪০ সালে তিনি বি.পি.সি.সি. থেকে সভানেত্রী নির্বাচিত হন।
  • (২) ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি বি.পি.সি.সি.-র সভানেত্রী ছিলেন। ঐ শেষ সংগ্রামের সময় অত্যন্ত দুর্যোগের মধ্য দিয়ে তিনি কংগ্রেসের কাজ পরিচালনা করেছিলেন। তারপর পূর্বতন সভাপতি সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ জেল থেকে ফিরে আসার পর তাঁকে সভাপতির পদ ছেড়ে দেবার জন্য তিনি নিজে পদত্যাগ করেন।

নারী সংগ্রামী লাবণ্যপ্রভা দত্তর মৃত্যু

লাবণ্যপ্রভা দত্ত ১৯৭১ সালের ৬ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

উপসংহার :- স্বাধীনতা সংগ্রামের অক্লান্ত ও আদর্শনিষ্ঠ সৈনিক লাবণ্যপ্রভা দত্ত বিদেশী শাসকের অত্যাচার ও রক্তচক্ষু অগ্রাহ্য করে হাসিমুখে অগ্রসর হয়ে চলেছিলেন। এই মাতৃসমা স্নেহময়ী নেত্রীর প্রেরণায় কত সৈনিক যে সেদিন কারাগৃহে প্রবেশ করেছিলেন তার সংখ্যা কেউ রাখে নি। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, স্বাধীনতার লড়াই কেবল পুরুষের একচ্ছত্র ক্ষেত্র নয়; সাহস, বুদ্ধিমত্তা এবং আত্মবলিদানের মাধ্যমে নারীরাও সেই লড়াইয়ের অন্যতম কান্ডারি হতে পারেন। “অগ্নিকন্যা” উপাধিতে ভূষিত লাবণ্যপ্রভা দত্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় এক নাম, যাঁর জীবন আজও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস।

(FAQ) লাবণ্যপ্রভা দত্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. লাবণ্যপ্রভা দত্ত কে ছিলেন?

লাবণ্যপ্রভা দত্ত ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সাহসী নারী নেত্রী ও সমাজসংস্কারক। তিনি “অগ্নিকন্যা” নামে পরিচিত ছিলেন।

২. লাবণ্যপ্রভা দত্তের জন্ম কোথায় এবং কবে হয়?

তিনি ১৮৮৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

৩. লাবণ্যপ্রভা দত্ত কোন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

তিনি স্বদেশী আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন এবং নারী সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

৪. তিনি কী কী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন?

তিনি ১৯৩০ সালে “আনন্দমঠ” এবং ১৯৩৩ সালে “নারী সত্যাগ্রহ সমিতি” নামে দুটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

৫. তিনি কবে ও কেন কারাবরণ করেন?

তিনি ১৯৩১ ও ১৯৩২ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য দুইবার কারাবরণ করেন—একবার ৬ মাস এবং পরে ১৮ মাসের সাজা পান।

৬। ‘অগ্নিকন্যা’ উপাধি কেন দেওয়া হয়েছিল?

তাঁর সাহস, দৃঢ়তা, নেতৃত্ব ও বিপ্লবী চেতনার কারণে তাঁকে “অগ্নিকন্যা” বলা হতো।

৭. তাঁর মৃত্যু কবে হয়?

লাবণ্যপ্রভা দত্ত ১৯৭১ সালের ৬ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

৮. লাবণ্যপ্রভা দত্তের অবদান কীভাবে স্মরণীয়?

নারী নেতৃত্ব, দেশপ্রেম, সংগঠন গঠন ও ত্যাগের মাধ্যমে তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং আজও অনুপ্রেরণা হিসেবে স্মরণীয়।

Leave a Comment