জমিদার সভা -র প্রতিষ্ঠাকাল, প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি, অধিক পরিচিতি, সভার ঘোষণা পত্র, সভার সদস্য, সভার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ, সভার উদ্দেশ্য, সভার কর্মসূচি, অবদান ও বিলুপ্তি সম্পর্কে জানবো।
জমিদার সভা প্রসঙ্গে জমিদার সভা টিকা, ভারতের প্রথম বড়ো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান জমিদার সভা, জমিদার সভার সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ, জমিদার সভার প্রতিষ্ঠা, জমিদার সভার অধিক পরিচিতি ভূমি মালিক সমিতি, জমিদার সভার সভাপতি, জমিদার সভার সদস্য, জমিদার সভার কর্মসূচি, জমিদার সভার গুরুত্ব বা তাৎপর্য ও জমিদার সভার বিলুপ্তি সম্পর্কে জানবো।
জমিদার সভা
বিষয় | জমিদার সভা |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দ |
প্রতিষ্ঠাতা | দ্বারকানাথ ঠাকুর, রাজা রাধাকান্ত দেব |
সভাপতি | রাজা রাধাকান্ত দেব |
অপর নাম | ভূমি মালিক সমিতি |
ভূমিকা :- উনিশ শতকের মধ্যভাগে ভারত-এ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এই কারণে ড. অনিল শীল উনিশ শতককে ‘রাজনৈতিক সভাসমিতির যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন।
জমিদার সভা
এই সময় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠনগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল জমিদার সভা। এটিই ছিল ভারতের প্রথম উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক সংগঠন।
জমিদার সভার প্রতিষ্ঠাকাল
১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ নভেম্বর কলকাতায় জমিদার সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
জমিদার সভার প্রতিষ্ঠাতা
দ্বারকানাথ ঠাকুর, রাজা রাধাকান্ত দেব, প্রসন্নকুমার ঠাকুরের উদ্যোগে কলকাতায় জমিদার সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
জমিদার সভার সভাপতি
রাজা রাধাকান্ত দেব ছিলেন জমিদার সভার সভাপতি এবং দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন এই সভার প্রাণ স্বরূপ।
জমিদার সভার অধিক পরিচিতি
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান জমিদার সভা প্রতিষ্ঠার পর ‘ভূমিমালিক সমিতি’ নামে এটি অধিক পরিচিতি লাভ করে।
জমিদার সভার ঘোষণাপত্র
এই জমিদার সভার ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে, জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে ভারতের মাটির সঙ্গে স্বার্থযুক্ত সকল মানুষই এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে পারে।
জমিদার সভার সদস্য
এই জমিদার সভার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন জমিদার এবং ধনী ব্যবসায়ী। বাংলার ব্যাবসাবাণিজ্যে নিযুক্ত বেসরকারি ব্রিটিশরাও জমিদার সভার সদস্য হতে পারত।
জমিদার সভার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি
এই জমিদার সভার সাথে যুক্ত ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর, রাজা রাধকান্ত দেব, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, রাজকমল সেন, ভবানীচরণ মিত্র প্রমুখ বড়ো বড়ো ভূস্বামী।
সাধারণ মানুষের সথে জমিদার সভার দুরত্ব
জমিদার সভার সদস্য হওয়ার বিশেষ সুযোগ সাধারণ মানুষ পেত না।
জমিদার সভার উদ্দেশ্য
- (১) জমিদার সভার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জমিদার শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করা।
- (২) এই উদ্দেশ্যে সভার সদস্যরা কলকাতার ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা চালায়।
- (৩) তারা লন্ডনের ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
- (৪) সোসাইটির সভাপতি জর্জ থম্পসনকে লন্ডনে ভূমিমালিক সমিতির প্রতিনিধি নিয়োগ করে।
জমিদার সভার কর্মসূচি
এই জমিদার সভা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই কর্মসূচি গুলি হল –
- (১) জমিদারদের স্বার্থরক্ষার জন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানায়।
- (২) তারা ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করে।
- (৩) তারা ভারতের সর্বত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত-এর প্রসার ঘটানোর দাবি জানায়।
- (৪) তারা নিষ্কর জমি ভোগদখলের অধিকার পুনঃপ্রবর্তন বন্ধ করার চেষ্টা চালায়।
- (৫) শাসনসংস্কারের জন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানায়।
- (৬) তারা সরকারের কাছে পুলিশবিভাগ, বিচারবিভাগ ও রাজস্ববিভাগের সংস্কারের দাবি জানায়।
জমিদার সভার অবদান
ভারতে আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির ক্ষেত্রে জমিদার সভা একটি নতুন ধারার সূচনা করে। এই সভার আবেদনে সরকার ১০ বিঘা পর্যন্ত ব্রহ্মোত্তর জমির খাজনা মকুব করে।
জমিদার সভা সম্পর্কে রাজেন্দ্রলাল মিত্রের অভিমত
ঐতিহাসিক ড. রাজেন্দ্রলাল মিত্র মনে করেন যে, জমিদার সভাই ছিল ভারতের স্বাধীনতার অগ্রদূত।
আভিজাত্য রক্ষায় জমিদার সভা
জমিদার সভা ছিল একান্তভাবেই জমিদার ও বানিয়াদের একটি সংগঠন। এর সদস্যরা এর আভিজাত্য রক্ষায় সর্বদা যত্নবান থাকতেন। ব্রিটিশরাজের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনেও তারা সচেষ্ট থাকতেন।
জমিদার সভার নিয়মতান্ত্রিক দাবি আদায়ের শিক্ষা
এই প্রতিষ্ঠান থেকেই জনসাধারণ সর্বপ্রথম নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দাবি-দাওয়া আদায়ের শিক্ষা লাভ করে।
জমিদার সভার বিলুপ্তি
বাংলার বাইরে জমিদার সভা তাদের প্রভাব বিস্তারে সফল হয়নি। তা ছাড়া ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ জমিদার সভা ক্রমে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। তবে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এর অস্তিত্ব কোনোরকমে টিকে ছিল। পরবর্তীকালে এর স্থান দখল করে নেয় বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি।
উপসংহার :- জমিদার সভা ভারতে আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এই সংগঠনের অনুকরণে পরবর্তীকালে ভারতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। ফলে এদেশে ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
(FAQ) জমিদার সভা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে।
রাজা রাধাকান্ত দেব।
কলকাতায়।
কলকাতার বিশিষ্ট জমিদাররা নিজেদের স্বার্থেজমিদার সভা প্রতিষ্ঠা করেন।
রাধাকান্ত দেব, দ্বারকানাথ ঠাকুর ও প্রসন্নকুমার ঠাকুর।