মহম্মদ ঘুরির কৃতিত্ব প্রসঙ্গে সামরিক প্রতিভা, মামুদ ও ঘুরির পার্থক্য, সাংগঠনিক প্রতিভা, বিবিধ গুণাবলী, শাসন নীতি, শাসন ব্যবস্থার সুবিধা, ও তীক্ষ্ম নজর সম্পর্কে জানবো।
সুলতান মহম্মদ ঘুরির কৃতিত্ব
বিষয় | মহম্মদ ঘুরীর কৃতিত্ব |
সুলতান | মহম্মদ ঘুরী |
বংশ | ঘুর বংশ |
ভারত -এ রাজ্য স্থাপয়িতা | মহম্মদ ঘুরী |
বিশ্বস্ত দাস | কুতুবউদ্দিন আইবক |
ভূমিকা :- মুইজুদ্দিন মহম্মদ ঘুরী ভারতের ইতিহাসে তুর্কী সাম্রাজ্য-এর স্থাপয়িতারূপে পরিচিত হয়েছেন। আফগানিস্তান -এর ক্ষুদ্র ঘুর রাজ্যকে তিনি উত্তর ভারতীয় সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। অক্ষু নদী থেকে বাংলা পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল।
মহম্মদ ঘুরীর সামরিক প্রতিভা
- (১) কোনো কোনো ঐতিহাসিক গজনীর সুলতান মামুদ-এর সঙ্গে মহম্মদ ঘুরীর তুলনা করেন। সম্ভবত এই তুলনা অর্থহীন। কারণ, সুলতান মামুদের মত অসাধারণ সামরিক প্রতিভা মহম্মদ ঘুরীর ছিল না। সুলতান মামুদ ছিলেন রণপণ্ডিত।
- (২) ইরাক থেকে কাম্পিয়ান সাগর পর্যন্ত সকল অঞ্চল তিনি জয় করেন। ভারতে বার বার তিনি অভিযান পরিচালনা করেন। তাঁর সকল অভিযান ছিল সফল। তুলনামূলকভাবে সামরিক দিক থেকে মহম্মদ ঘুরী অনেক নিষ্প্রভ। তিনি অন্তত তিনটি যুদ্ধে পরাস্ত হন।
- (৩) আনহিলওয়ারায় দ্বিতীয় মূলবাজার সঙ্গে যুদ্ধে, চালুক্য ভীম দেব-এর সঙ্গে যুদ্ধে এবং পৃথ্বীরাজ চৌহান -এর বিরুদ্ধে তরাইনের প্রথম যুদ্ধ -এ তিনি পরাস্ত হন। তাছাড়া খারাজম শাহের বিরুদ্ধে আন্ধখুদের যুদ্ধে (Andhkhud) তিনি পরাস্ত হন।
সুলতান মামুদ ও মহম্মদ ঘুরীর পার্থক্য
সুলতান মামুদের সঙ্গে মহম্মদ ঘুরীর সামরিক ক্ষেত্রে দুটি পার্থক্য লক্ষণীয়। যথা –
- (১) মহম্মদ ঘুরী পরাজিত হলেও মনোবল হারান নি। তিনি পরাজয়ের পর, পরাজয়ের কারণগুলির বিশ্লেষণ করে আবার নূতন উদ্যমে প্রচেষ্টা করেছেন। পরাজয়ের ফলে তিনি তার উচ্চাকাঙ্খা ছাড়েন নি।
- (২) সুলতান মামুদ জয়লাভ করলেও ভারতে তার জয়লাভের কোনো স্থায়ী ফল ছিল না। তিনি ভারতে ধন-রত্ন লুঠ করেন, গঠনমূলক কোনো পরিকল্পনা নেননি। কিন্তু মহম্মদ ঘুরী এক স্থায়ী সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। সুতরাং ভারত ইতিহাসে সুলতান মামুদ লুণ্ঠনকারীরূপে চিহ্নিত হয়েছেন। মহম্মদ ঘুরী রাজ্য স্থাপয়িতার সম্মান পেয়েছেন।
মহম্মদ ঘুরীর সাংগঠনিক প্রতিভা
সুলতান মামুদ মধ্য এশিয়ায় বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করলেও সাংগঠনিক প্রতিভা ও শাসনতান্ত্রিক দক্ষতার অভাবে তাঁর সাম্রাজ্য অল্প দিনের মধ্যেই ধ্বংস হয়। কিন্তু মহম্মদ ঘুরীর সাংগঠনিক প্রতিভা ও শাসনতান্ত্রিক দক্ষতার গুণে তাঁর সাম্রাজ্য স্থায়ী হয়।
মহম্মদ ঘুরীর বিবিধ গুণাবলী
- (১) ব্যক্তিগত দিক থেকে সুলতান মামুদ ছিলেন বিবিধ গুণের অধিকারী। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দুর্ধর্ষ, নিষ্ঠুর সেনাপতি, বিদ্বান ব্যক্তিদের প্রতি উদার ও মুক্তহস্ত, শিল্প-স্থাপত্যের বিশেষ অনুরাগী, গজনীর ইসলামীয় সংস্কৃতির স্থাপয়িতা।
- (২) মহম্মদ ঘুরীর মধ্যে সংস্কৃতি চেতনা এত প্রখর ছিল না। যদিও তিনি মৌলনা ফকর-উদ-দিন রাজা, নিজামী উরুজীর মত পণ্ডিতের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তথাপি ইসলামীয় জগতে সুলতান মামুদের মত সংস্কৃতির স্তম্ভ হিসেবে তিনি যশ পান নি।
সুলতান মহম্মদ ঘুরীর শাসন নীতি
- (১) ভারত ইতিহাসে মহম্মদ ঘুরী নিঃসন্দেহে স্থায়ী কীর্তিলাভ করেছেন। যদিও তিনি দিল্লীকে তাঁর নিজ রাজধানী হিসেবে গণ্য করেন নি, তার নিজ পৈত্রিক নগর ঘুর ও অর্জিত নগর গজনীকে কেন্দ্র করে তিনি তার রাজধানী স্থাপন করেন, তথাপি তিনি তার শাসনকর্তা কুতুবউদ্দিন আইবককে দিল্লীতে তার প্রাদেশিক শাসনকেন্দ্র গঠনের অনুমতি দেন। এভাবেই মধ্যযুগের দিল্লীর গৌরবের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
- (২) মহম্মদ ঘুরী ভারতের শাসনের ক্ষেত্রে একটি বাস্তবতা-সম্মত নীতি নেন। রাজপুত রাজারা বশ্যতা স্বীকার করলে তিনি তাদের স্বায়ত্ব শাসনের অধিকার দেন। মহম্মদ জানতেন যে, প্রত্যক্ষ শাসন চালাবার মত তার হাতে ভারতের ভাষা জানা সুদক্ষ কর্মচারী নেই। এজন্য তিনি ভারতীয় রাজাদের স্থানীয় শাসনের অধিকার দেন।
- (৩) নগর ও শাসনকেন্দ্রে তার বাছাই করা বিশ্বস্ত দাস কর্মচারীরা তাঁর তরফে মূল ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতেন। অধিকৃত অঞ্চলের মাঝে মাঝে তিনি তার সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে বিদ্রোহের সম্ভাবনা দূর করেন। মুহাম্মদ ঘুরীর তিন প্রধান দাস কর্মচারীর নাম ছিল তাজউদ্দিন ইলদুজ, নাসিরউদ্দিন কুবাচা ও কুতুবউদ্দিন আইবক।
মহম্মদ ঘুরীর শাসন ব্যবস্থার সুবিধা
তার শাসন ব্যবস্থার সুবিধার দিক এই ছিল যে, গ্রাম ও ছোট শহরগুলি স্থানীয় রায়াত ও রাণারা শাসন করত, ওপরের স্তরে মহম্মদের তুর্কী কর্মচারীরা শাসন করত। তাছাড়া শক্তিশালী রাজপুত রাজাদের বশ্যতা লাভ করে, তিনি তাদের সামন্ত রাজা হিসেবে শাসনের দায়িত্ব দেন।
মহম্মদ ঘুরীর তীক্ষ্ম নজর
মহম্মদ সুদূর ঘুর রাজ্যে থাকলেও ভারতের দিকে সর্বদা নজর রাখতেন। খোক্কর উপজাতির বিদ্রোহ দমন করতে তিনি নিজেই চলে আসেন।
উপসংহার :- মহম্মদের মৃত্যুর পর তাঁর দাস কর্মচারী কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লীতে স্বাধীন সুলতানির প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু হয় দিল্লী সুলতানী শাসন।
(FAQ) মহম্মদ ঘুরীর কৃতিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
তরাইনের প্রথম যুদ্ধ, ১১৯১ খ্রি।
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ, ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে।
কুতুবউদ্দিন আইবক।
ভীমদেব।