বেনিতো মুসোলিনির বৈদেশিক নীতি প্রসঙ্গে বৈদেশিক নীতির মূল কথা, ইতালি ও গ্ৰিস, ইতালি ও যুগোশ্লাভিয়া, ইতালি ও ফ্রান্স, ইতালি ও আবিসিনিয়া, ইতালি ও আলবানিয়া, স্পেনের গৃহযুদ্ধ ও ইতালি ও জার্মানির সম্পর্ক সম্বন্ধে জানবো।
মুসোলিনির বৈদেশিক নীতি
ঐতিহাসিক ঘটনা | মুসোলিনির বৈদেশিক নীতি |
সময়কাল | প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কাল |
প্যারিসের শান্তি সম্মেলন | ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ |
মহামন্দা | ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ |
লুসানের সন্ধি | ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ |
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ |
ভূমিকা:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালির জাতীয় জীবনের এক সংকটময় পরিস্থিতিতে বেনিতি মুসোলিনি নামে এক নেতার আবির্ভাব হয়। তিনি ও তার ফ্যাসিস্ট দল ইতালিকে নব বলে বলিয়ান করে, নতুন পথে পরিচালিত করেন।
মূল কথা
মুসোলিনির পররাষ্ট্রনীতির মূল কথাই হল-
- (১) সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতালির মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে, আন্তর্জাতিক শান্তি হল কাপুরুষের স্বপ্ন – সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধনীতি হল জাতির প্রাণশক্তির প্রাচুর্যের প্রমাণ।
- (২) তিনি মনে করতেন যে, যুদ্ধের মাধ্যমেই মানুষের সুপ্ত গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। তাঁর ভাষায়, “নারীদের কাছে মাতৃত্ব যেমন স্বাভাবিক, পুরুষদের কাছে যুদ্ধও তেমন স্বাভাবিক।”
- (৩) মুসোলিনি যে ফ্যাসিস্ট শাসনের পত্তন করেছিলেন, তাতে যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে জঙ্গিভাব বজায় রাখা ওই শাসনের খাতিরেই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
- (৪) ১৯৩০-এর মহামন্দার ফলে ক্রমাগত বেকার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। আগ্রাসী যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি কিছু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সচেষ্ট হন। এই কারণে তিনি ইতালির জল, স্থল ও বিমান বাহিনীকে অত্যাধুনিকভাবে পুনর্গঠিত করে তিনটি বাহিনীরই অধ্যক্ষ পদ গ্রহণ করেন।
(ক) ইতালি ও গ্রিস
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের শান্তিচুক্তিতে ইতালিকে যেভাবে বঞ্চিত করা হয়, তা তার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ক্ষমতালাভের পর থেকেই মুসোলিনি ইতালির ন্যায্য প্রাপ্য আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন। এক্ষেত্রে তার পদক্ষেপ গুলি হল –
(১) লণ্ডনের গোপন চুক্তি
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত লন্ডনের গোপন চুক্তি অনুসারে রোডস্ দ্বীপ ও ডডিক্যানিজ দ্বীপপুঞ্জ ইতালির পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ইতালি ও গ্রিস-এর মধ্যে এক চুক্তি মারফত ইতালি এই স্থান দুটি গ্রিসকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
(২) লুসানের সন্ধি
ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই মুসোলিনি এই স্থান দুটি ফিরে পাওয়ার দাবিতে সোচ্চার হন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে গ্রিসের সঙ্গে সম্পাদিত লুসানের সন্ধি দ্বারা ইতালি এই স্থানগুলি ফিরে পায়। এই অঞ্চলে একটি শক্তিশালী নৌ-ঘাঁটি স্থাপিত হওয়ায় পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে ইতালির প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়।
(৩) কর্ফু দ্বীপ
১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে গ্রিস ও আলবানিয়ার মধ্যে সীমানা নির্ধারণের তদন্ত কার্যে নিযুক্ত কয়েকজন ইতালীয় প্রতিনিধি আততায়ীর হাতে নিহত হন। এই ঘটনার জন্য মুসোলিনি গ্রিসকে দায়ী করে গ্রিসের কর্ফু দ্বীপটি দখল করেন। শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘ-এর মধ্যস্থতায় গ্রিস ইতালিকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিলে ইতালি গ্রিসকে কর্ফু ফিরিয়ে দেয়। এর ফলে দেশবাসীর চোখে মুসোলিনির মর্যাদা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
(খ) ইতালি ও যুগোশ্লাভিয়া
ইতালি ছিল একটি সঙ্কীর্ণ উপদ্বীপ। এর একদিকে ভূমধ্যসাগর, অন্যদিকে আড্রিয়াটিক সাগর। ইতালি ও যুগোশ্লাভিয়ার সম্পর্কের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) ভূমধ্যসাগরের গুরুত্ব
ইউরোপ-এর যে কোনও দেশ অপেক্ষা ভূমধ্যসাগর ইতালির কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মধ্য ইউরোপীয় রাজ্যগুলি অপেক্ষা ভূমধ্যসাগরীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করা ইতালির স্বার্থের পক্ষে বেশি প্রয়োজনীয় ছিল।
(২) প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা
ভূমধ্যসাগরের প্রবেশদ্বারগুলি শত্রুপক্ষের হাতে চলে গেলে ইতালির পক্ষে বহির্বিশ্বে যাওয়া সম্ভব হত না। এইসব কারণে ইতালির উচ্চাশা পূরণের জন্য ভূমধ্যসাগর ও আড্রিয়াটিক সাগরের উপর ইতালির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য ছিল।
(৩) লণ্ডনের গোপন চুক্তি
১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের গোপন চুক্তি অনুসারে আড্রিয়াটিক অঞ্চলের বেশ কিছু স্থান ইতালির প্রাপ্য ছিল। এইসব অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী ছিল অ-ইতালীয়। সুতরাং উইলসনের আত্মনিয়ন্ত্রণ নীতি অনুসারে ইতালি এইসব স্থান থেকে বঞ্চিত হয় এবং এর অনেক স্থানই যুগোশ্লাভিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়।
(৪) ফিউম বন্দর দখল
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ইতালীয় কবি দ্য অ্যানানসিওর ‘ব্ল্যাক শার্টস’ বাহিনী নিয়ে যুগোশ্লাভিয়াকে প্রদান করা ফিউম বন্দর দখল করেন। মিত্রপক্ষের চাপে ইতালি যুগোশ্লাভিয়াকে ফিউম বন্দর ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
(৫) নেটিউনো চুক্তি
মুসোলিনি ক্ষমতায় এসে ফিউম বন্দর-সহ অন্যান্য স্থানগুলিও যুগোশ্লাভিয়ার কাছে দাবি করতে থাকেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে নেটিউনো চুক্তির দ্বারা ফিউম বন্দর ইতালির অন্তর্ভুক্ত হয় এবং যুগোশ্লাভিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ইতালি বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে। এতেও কিন্তু দু’পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয় নি।
(৬) আলবানিয়ার উপর কর্তৃত্ব স্থাপন
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে যুগোশ্লাভিয়া ফ্রান্সের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করলে মুসোলিনিও আলবানিয়ার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। তাঁর লক্ষ্য ছিল আলবানিয়ার উপর কর্তৃত্ব স্থাপন।
(৭) যুগোশ্লাভিয়ার শংকা
ইতালিকে খুশি করার জন্য ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স -এর উদ্যোগে লিগ পরিষদ এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, আলবানিয়া কোনও শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে ইতালি। এই সিদ্ধান্তের ফলে আলবানিয়ার উপর ইতালির প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়, যা যুগোশ্লাভিয়াকে শংকিত করে তোলে।
(৮) টিরানা চুক্তি
১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ইতালি ও আলবানিয়ার মধ্যে সম্পাদিত টিরানা চুক্তি স্পষ্ট করে দেয় যে, ইতালির মূল লক্ষ্য হল আলবানিয়া গ্রাস করা।
(৯) যুগোশ্লাভিয়া বিরোধী আন্দোলন
ঠিক এই সময়েই যুগোশ্লাভিয়ার সঙ্গে বুলগেরিয়ার সংযুক্তির কথা চলছিল। মুসোলিনির ইন্ধনে বুলগেরিয়ায় ব্যাপক যুগোশ্লাভিয়া-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এর ফলে এই সংযুক্তি বাতিল হয়ে যায়।
(১০) হাঙ্গেরির সাথে চুক্তি
এই সময় মুসোলিনি হাঙ্গেরির সাথে এক চুক্তি করে আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক ও যুগোশ্লাভিয়া সমস্যা মিটিয়ে নিতে সচেষ্ট হন।
(১১) ইতালি বিরোধী আন্দোলন
এইভাবে পূর্ব ইউরোপে ইতালির প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকলে যুগোশ্লাভিয়ায় ইতালি-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়। ১৯২৮ সালে যুগোশ্লাভিয়ায় ব্যাপক ইতালি-বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে দুই দেশের সম্পর্কে প্রবল অবনতি ঘটে।
(১২) ইতালির অনাগ্ৰহ
জার্মানিতে হিটলারের উত্থান ঘটলে যুগোশ্লাভিয়া ইতালির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনে উদ্যোগী হয়, কিন্তু ইতালি এ সম্পর্কে কোনও আগ্রহ দেখায় নি।
(১৩) তিক্ত সম্পর্ক
১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে যুগোরাভিয়ার রাজা আলেকজান্ডার এবং ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্থো মাসাই বন্দরে আততায়ীর হাতে নিহত হলে ইতালি ও যুগোরাভিয়ার সম্পর্ক আরও শুরু হয়ে ওঠে। যুগোশ্লাভিয়া এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইতালিকে দায়ী করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই তিক্ত সম্পর্ক অব্যাহত থাকে।
(গ) ইতালি ও ফ্রান্স
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ফ্রান্সের সঙ্গে ইতালির সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। মুসোলিনিও ফরাসি বিরোধিতার নীতি গ্রহণ করেন। এর পশ্চাতে বেশ কিছু কারণ ছিল। যেমন –
(১) ফ্রান্সের আপত্তি
ইতালি অনেক আশা নিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষে যোগ দেয়, কিন্তু যুদ্ধান্তে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে ইতালিই ছিল সর্বাপেক্ষা বঞ্চিত রাষ্ট্র। মূলত ফ্রান্সের আপত্তিতেই ইতালি বেশ কিছু স্থান, যেমন- টিউনিসিয়া, কর্সিকা, স্যাভয়, নিস প্রভৃতি লাভে বঞ্চিত হয়। এর ফলে ইতালি ফ্রান্সের উপর ক্ষুব্ধ হয়।
(২) মুসোলিনির ক্ষোভ
যুদ্ধের সময় ফ্রান্সের বহু লোকক্ষয় হয়। এই কারণে ফরাসি সরকার পার্শ্ববর্তী দেশগুলির নাগরিকদের স্থায়ীভাবে ফ্রান্সে বসবাসের আহ্বান জানায়। এই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বহু ফ্যাসিবিরোধী ইতালীয় ফ্রান্সে বাস করতে শুরু করে, যা মুসোলিনিকে ক্ষুব্ধ করে।
(৩) সম্পর্কের অবনতি
ভূমধ্যসাগরে আধিপত্য বিস্তারের ব্যাপারে ইতালির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ফ্রান্স। ফ্রান্স ইতালির বিরুদ্ধে যুগোশ্লাভিয়াকে সাহায্য করত। ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের প্রভাব খর্ব করতে ইতালি ফ্রান্সের গুরুত্বপূর্ণ তাঞ্জিয়ার দাবি করলে উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
(৪) শান্তি-শর্তাদি পরিবর্তনের দাবি
টিউনিসিয়ায় ফরাসিদের চেয়ে ইতালীয়দের সংখ্যা বেশি থাকায় মুসোলিনি এই অঞ্চলের উপর দাবি জানাতে থাকেন। ১৯২২ থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইতালি ক্রমাগত শান্তি-শর্তাদি পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছিল। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।
(৫) প্রতিদ্বন্দ্বিতা
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে প্রাধান্য বিস্তারের ব্যাপারেও দুই দেশের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। এইসব কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে ইতালি ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।
(৬) রোম চুক্তি
১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে হিটলারের উত্থান হলে ইতালি ও ফ্রান্স উভয়েই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং দু’পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও ইতালি রোম চুক্তি (লাভাল-মুসোলিনি চুক্তি নামেও পরিচিত) সম্পাদন করে নিজেদের মধ্যে উপনিবেশ-সংক্রান্ত বিরোধগুলি মিটিয়ে নেয়।
(৭) রোম চুক্তির শর্ত
স্থির হয় যে, জার্মানি অস্ট্রিয়ার উপর আক্রমণ হানলে দুই চুক্তিকারী নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করবে। টিউনিসিয়ায় ইতালীয়দের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে এবং ফ্রান্স তার আফ্রিকাস্থ উপনিবেশের কিছু অংশ ইতালিকে ছেড়ে দিতে সম্মত হয়।
(৮) আবিসিনিয়া আক্রমণের পটভূমি
ফরাসি সোমালিল্যান্ড ও লিবিয়াতে ইতালি প্রায় ৪৫ হাজার বর্গমাইল নতুন ভূমি লাভ করে। এই চুক্তি পরোক্ষভাবে ইতালির আবিসিনিয়া আক্রমণের (১৯৩৬ খ্রিঃ) পটভূমি তৈরি করে।
(৯) আক্ষমণকারী ইতালি
আবিসিনিয়ার উপর ইতালির আক্রমণ হলে ফ্রান্সের উদ্যোগে জাতিসঙ্ঘ এই আক্রমণের নিন্দা করে এবং ইতালিকে ‘আক্রমণকারী’ বলে ঘোষণা করে।
(১০) ইতালি-জার্মানি মৈত্রী
হিটলার ইতালিকে সমর্থন করেন। স্পেনের গৃহযুদ্ধ-এ ইতালি ও জার্মানি জেনারেল ফ্রাঙ্কো-কে যুগ্মভাবে সমর্থন জানান। ইতালি-জার্মানি সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হয়। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইতালি জার্মানির সঙ্গে অক্ষশক্তি জোট গঠন করে এবং জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ইতালি ফ্রান্স বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হয়।
(ঘ) ইতালি ও আবিসিনিয়া
আবিসিনিয়া অভিযানের মাধ্যমে ইতালির ফ্যাসিস্ট শক্তির চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যেমন –
(১) ইতালির শ্যেন দৃষ্টি
ইতালির ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য স্থান সংকুলান, প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান, বেকার সমস্যার সমাধান এবং শিল্পের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ ও উৎপাদিত পণ্যের বাজার হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ আবিসিনিয়ার উপর দীর্ঘদিন ধরেই ইতালির শ্যেনদৃষ্টি ছিল।
(২) পূর্ব আফ্রিকা রাজ্য গঠনের পরিকল্পনা
ইতিপূর্বে ইতালি লিবিয়া, ইতালীয় সোমালিল্যান্ড ও ইরিত্রিয়া লাভ করেছিল। সোমালিল্যান্ড ও ইরিত্রিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত আবিসিনিয়া দখল করতে পারলেই ইতালির পূর্ব আফ্রিকা রাজ্য গঠনের পরিকল্পনা পূর্ণতা পেত।
(৩) প্রতিশোধ গ্ৰহণের ইচ্ছা
১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে ইতালি আবিসিনিয়া আক্রমণ করে অ্যাডোয়ার যুদ্ধে নগ্নপদ আবিসিনীয়দের কাছে পরাজিত হয়। এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছাও মুসোলিনিকে আবিসিনিয়া আক্রমণে প্রণোদিত করো।
(৪) ইতালীয় সেনার মৃত্যু
১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর আবিসিনিয়া- সোমালিল্যান্ড সীমান্তে অবস্থিত ওয়াল ওয়াল গ্রামে ইতালীয় ও আবিসিনীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে খণ্ডযুদ্ধে কিছু ইতালীয় সেনার মৃত্যু ঘটে।
(৫) ক্ষমা প্রার্থনা ও ক্ষতিপূরণ
এই ঘটনার অজুহাতে মুসোলিনি আবিসিনিয়ার সম্রাট হাইলে সেলাসি-র কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা ও ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রচুর পরিমাণ অর্থ দাবি করেন, যদিও এই খণ্ডযুদ্ধে মৃতের সংখ্যায় আবিসিনীয়রাই ছিল বেশি।
(৬) জাতিসংঘে আবেদন
আবিসিনিয়া এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘ -এ আবেদন জানায় এবং লিগের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করে। ইঙ্গ-ফরাসি হস্তক্ষেপে লিগ ১৫ সদস্যের একটি মীমাংসা কমিটি নিয়োগ করা ব্যতীত অন্য কিছুই করে নি। এই কমিটি যখন আবিসিনিয়ায় কর্মরত, সে সময় ইতালি আবিসিনিয়া সীমান্তে ব্যাপকভাবে সেনাসমাবেশ করে এবং ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৩রা অক্টোবর আবিসিনিয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই ঘটনা লিগের মর্যাদায় চরম আঘাত হানে।
(৭) জাতিসঙ্ঘের ভূমিকা
লিগের মীমাংসা কমিটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। জাতিসংঘ ইতালিকে আক্রমণকারী’ বলে ঘোষণা করে এবং ৭ই অক্টোবর জাতিসংঘ চুক্তিপত্রের ১৬ নং ধারা অনুসারে তার সব সদস্যকে ইতালির বিরুদ্ধে গৃহীত কিছু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মেনে চলার নির্দেশ দেয়।
(৮) ইতালির সঙ্গে লেনদেন বন্ধ
এই ব্যবস্থা অনুসারে লিগ তার সব সদস্য-রাষ্ট্রকে ইতালির সঙ্গে সর্বপ্রকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশ অনুসারে ৫৩টি দেশ ইতালিকে কোনও রকম আর্থিক ঋণদান না করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ৫০টি দেশ ইতালির সঙ্গে সব লেনদেন বন্ধ করে দেয়।
(৯) ব্রিটেনের সাহায্য
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জাতিসংঘের নির্দেশ পালনে আন্তরিকভাবে আগ্রহী ছিল না। ব্রিটেন ইতালিকে তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখে। এমতাবস্থায়, ব্রিটেন তেল সরবরাহ বন্ধ রাখলে ইতালি যুদ্ধ স্থগিত রাখতে বাধ্য হত।
(১০) হোর-লাভাল চুক্তি
নবোদিত শক্তি জার্মানির সঙ্গে ইতালির প্রীতির সম্পর্ক ইঙ্গ-ফরাসি শক্তিকে ভীত করে তোলে। তারা ইতালিকে তোষণ করে হাতে রাখার চেষ্টা করে। এই উদ্দেশ্যে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিয়ের লাভাল এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যানুয়েল হোর ১৯৩৫ সালের ৮ই ডিসেম্বর ইতালির সঙ্গে এক গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এই যুক্তি হোর-লাভাল চুক্তি নামে খ্যাত।
(১১) হোর-লাভাল চুক্তির শর্ত
স্থির হয় যে, আবিসিনিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড ইতালিকে দেওয়া হবে। স্বাধীন আবিসিনিয়ার অস্তিত্ব বজায় থাকবে। সমুদ্রের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার জন্য ইরিত্রিয়ার কিছু অংশ আবিসিনিয়াকে দেওয়া হবে।
(১২) আবিসিনিয়ার পতন
এই চুক্তি ফাঁস হয়ে গেলে ব্রিটেনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। হোর পদত্যাগে বাধ্য হন। এই চুক্তি বাস্তবায়িত না হলেও আবিসিনিয়ার পক্ষে তার স্বাধীন অস্তিত্ব জায় রাখা সম্ভব হল না। সাত মাস যুদ্ধ করার পর ইতালির চাপের মুখে আবিসিনিয়া ভেঙে পড়ে এবং ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১লা মে আবিসিনিয়ার সম্রাট হাইলে সেলাসি পদত্যাগে বাধ্য হন। ব্রিটিশ জাহাজ তাঁকে ইউরোপে নিয়ে যায়।
(১৩) ইতালির জাতিসংঘ পরিত্যাগ
৯ ই মে ইতালির রাজা আবিসিনিয়ার সম্রাট বলে ঘোষিত হন এবং ইরিত্রিয়া, সোমালিল্যান্ড ও আবিসিনিয়া নিয়ে ‘ইতালীয় পূর্ব আফ্রিকা’ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইতালি জাতিসঙ্ঘ পরিত্যাগ করে।
লিগের দুর্বলতা
এই ঘটনার দ্বারা লিগের দুর্বলতা সর্বসমক্ষে প্রকাশিত হয় – প্রমাণিত হয় যে, শক্তিশালী রাষ্ট্র লিগের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয়। লিগের নির্দেশ অমান্য করে ইতালির আবিসিনিয়া জয় হিটলারকেও ভার্সাই চুক্তি ভঙ্গে উৎসাহিত করে। আবিসিনিয়ার ঘটনা ইতালিকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রজোট থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং সে জার্মানির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। এইভাবে ইউরোপে নতুন শক্তিজোটের আবির্ভাব ঘটে।
(ঙ) ইতালি ও আলবানিয়া
১৯১২ ও ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত পরপর দুটি বলকান যুদ্ধ -এর ফলে আলবানিয়া রাজ্যের সৃষ্টি হয়। প্রিন্স উইলিয়ম ওয়াইড নামে জনৈক জার্মান আলবানিয়ার শাসক নিযুক্ত হন।
(১) দুর্বলতা
শাসকের পক্ষে আলবানিয়ার দুর্ধর্ষ অধিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে তিনি জার্মানিতে ফিরে যান। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে আলবানিয়াতে একটি অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আলবানিয়া লিগের সদস্যপদ লাভ করে। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে আহম্মদ জগু এখানে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে তার সভাপতি নির্বাচিত হন।
(২) ইতালির কর্তৃত্ব
স্বদেশের আর্থিক উন্নতির জন্য আহম্মদ জগু ইতালির সাহায্যপ্রার্থী হন। ইতালির উদ্যোগে আলবানিয়ায় জাতীয় ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইতালি থেকে আলবানিয়াতে প্রচুর ঋণ আসতে থাকে। ইতালির সহযোগিতায় এখানে নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যকলাপ ও সেনাবাহিনীর সংস্কার শুরু হয়। এর ফলে আলবানিয়ার উপর ইতালির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।
(৩) টিরানার সন্ধি
এতে যুগোশ্লাভিয়া আতঙ্কিত হয়ে উঠে এবং ইতালির কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানায়। ইতিমধ্যে আলবানিয়ায় এক বিদ্রোহের সূচনা হলে আহম্মদ জগু ইতালির সাহায্য প্রার্থনা করেন। দুই পক্ষে টিরানার সন্ধি সম্পাদিত হয়।
(৪) টিরানার সন্ধির শর্ত
স্থির হয় যে, আলবানিয়ার উপর কোনও বিদেশি আক্রমণ হলে ইতালি ও আলবানিয়া তা যৌথভাবে প্রতিহত করবে এবং আলবানিয়ার সম্মতিক্রমে ইতালি আলবানিয়ার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে।
(৫) যুদ্ধ অনিবার্য
এই চুক্তিতে যুগোশ্লাভিয়া আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। তার ধারণা হয় যে, আলবানিয়ার উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপনের পর ইতালি যুগোশ্লাভিয়ার স্বার্থ বিপন্ন করে তুলবে। দুপক্ষে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে, কিন্তু কয়েকটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে আপাতত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
(৬) মিত্রতা চুক্তি
এই অবস্থায় যুগোশ্লাভিয়া শক্তি বৃদ্ধির জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনে উদ্যোগী হয়। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে যুগোশ্লাভিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে মিত্রতা স্থাপিত হয়। এর উত্তরে ইতালি ও আলবানিয়া কুড়ি বছরের জন্য পারস্পরিক আত্মরক্ষামূলক মিত্রতা চুক্তি স্বাক্ষর করে।
(৭) আলবানিয়ায় ইতালি বিরোধী মনোভাব
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে আহম্মদ জগু নিজেকে আলবানিয়ার সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন এবং প্রথম জগ উপাধি গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই আলবানিয়ায় ইতালি-বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে।
(৮) আলবানিয়া জয়
এই অবস্থায় ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ইতালি আলবানিয়া আক্রমণ করে টিরানায় প্রবেশ করলে সম্রাট জগ সপরিবারে আলবানিয়া ত্যাগ করেন। ইতালির সঙ্গে আলবানিয়া সংযুক্ত হয়। তৃতীয় ভিক্টর ইম্যানুয়েল ইতালির রাজা এবং আবিসিনিয়া ও আলবানিয়ার সম্রাট বলে ঘোষিত হন।
(চ) স্পেনের যুদ্ধ
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে স্পেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। স্পেনের সেনাপতি জেনারেল ফ্রাঙ্কো পপুলার ফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। আবিসিনিয়ার যুদ্ধের পর ইতালি ও জার্মানি উপলব্ধি করে যে,
- (১) স্পেনে ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়যুক্ত হলে তা ইতালি ও জার্মানির পক্ষে মঙ্গলজনক হবে, কিন্তু পপুলার ফ্রন্ট সরকার জয়ী হলে তা ফ্রান্স ও রাশিয়ার পক্ষে সুবিধাজনক হবে।
- (২) স্পেন-এ ইতালির প্রতি সহানুভূতিশীল ফ্যাসিস্ট শক্তি প্রতিষ্ঠিত হলে ফ্রান্সকে বেষ্টন করা সম্ভব হবে।
- (৩) ফ্রাঙ্কোর সাহায্যে পশ্চিম ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের নৌশক্তি ধ্বংস করা যাবে এবং
- (৪) সেখানে ইতালির প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাবে।
- (৫) এইসব উদ্দেশ নিয়ে হিটলার ও মুসোলিনি প্রচুর সেনা পাঠিয়ে ফ্রাঙ্কোকে সাহায্য করতে থাকেন, যদিও ইতিপূর্বে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স-সহ ইউরোপের ২৭টি দেশ স্পেনীয় বিরোধে হস্তক্ষেপ না করা নীতি গ্রহণ করে।
- (৬) এই যুদ্ধে ফ্রাঙ্কো জয়যুক্ত হন, স্পেনে ফ্যাসিস্ট শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং এই সময় থেকে হিটলার ও মুসোলিনি আরও কাছাকাছি আসেন।
(ছ) ইতালি ও জার্মানি
ইতালি ও জার্মানির সম্পর্কের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ‘কমিন্টার্ন’ একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব দেয়। তখন জার্মানি ও ইতালি-তে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং জাপান-এ একটি গণতন্ত্রের আবরণ থাকলেও সমরনায়কদের অধীনে জঙ্গিবাদই ছিল প্রধান।
(২) কমিন্টার্ন বিরোধী চুক্তি
কমিন্টার্ন এই ঘোষণায় এইসব রাষ্ট্রগুলি নিজ নিজ রাষ্ট্রে গোপন কমিউনিস্ট তৎপরতার আশঙ্কা করে। এর ফলে ১৯৩৬ সালের ২৫শে নভেম্বর জার্মানি ও জাপান “কমিন্টার্ন-বিরোধী চুক্তি” স্বাক্ষর করে। স্থির হয় যে, দু’পক্ষ কমিউনিজমের বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য করবে, কমিউনিজমের অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করবে এবং কখনোই রাশিয়ার সঙ্গে কোনোরকম চুক্তিতে আবদ্ধ হবে না।
(৩) ইতালি-জার্মানি মৈত্রী
১৯৩৬ সালে স্পেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ইতালি ও জার্মানি যুগ্মভাবে ফ্রাঙ্কোর সাহায্যে অবতীর্ণ হয়। ইতিপূর্বে আবিসিনিয়ার ঘটনায় ইতালি ও জার্মানির মৈত্রী গড়ে উঠেছিল।
(৪) রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষ
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ই নভেম্বর ইতালি কমিন্টার্ন-বিরোধী মিত্রজোটে যোগ দিলে রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষ গড়ে ওঠে। অন্যদিকে গড়ে উঠেছিল ব্রিটেন-ফ্রান্স-সোভিয়েত ইউনিয়ন মিত্রজোট। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠল।
(৫) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু
১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। হিটলারের মিত্র মুসোলিনি কিছুদিন নিরপেক্ষ থাকেন।
(৬) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি
মুসোলিনিকে অগ্রাহ্য করে হিটলার রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি (২৩শে আগস্ট, ১৯৩৯ খ্রিঃ) স্বাক্ষর করায় তিনি প্রবল ক্ষুব্ধ হন। এছাড়া এই চুক্তি ছিল রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি-র সম্পূর্ণ বিরোধী।
(৭) যুদ্ধে যোগদান সম্পর্কে দ্বিধান্বিত
যুদ্ধের গতি কোনদিকে যাবে তা না জেনে মুসোলিনি যুদ্ধে যোগ দিতে রাজি ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত হিটলারের ক্রমাগত সাফল্য তাঁর চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
(৮) যুদ্ধে যোগদান
হিটলারের বাহিনী যখন পূর্ণ গতিতে ফ্রান্সের মধ্যে ঢুকে পড়ছে, তখন মুসোলিনি উপলব্ধি করেন যে, ফ্রান্সের পতন আসন্ন এবং মিত্রপক্ষের পরাজয় সুনিশ্চিত। তখনই ১৯৪০ সালের ১০ই জুন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করেন।
উপসংহার:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে মুসোলিনির স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রবল গণ-বিক্ষোভ শুরু হয় এবং গণরোষে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতেই তার মৃত্যু ঘটে। ক্রুদ্ধ জনতা মুসোলিনি ও তাঁর উপপত্নী ক্লারা পেত্রাচ্চি-র মৃতদেহ দুটি গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেয়।
(FAQ) মুসোলিনির বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে।
ইল-ডুচে বা একনায়ক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে।