প্রফুল্লমুখী বসু

মহিয়ষী প্রফুল্লমুখী বসু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী মহিলা বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিকা। তিনি ব্রিটিশবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে নারী সমাজে দেশপ্রেমের চেতনা জাগিয়ে তুলেছিলেন। তিনি ছিলেন এমন এক নারী যিনি সমাজে নারীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকার গুরুত্ব প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

বিপ্লবী প্রফুল্লমুখী বসু

ঐতিহাসিক চরিত্রপ্রফুল্লমুখী বসু
জন্ম৩ রা নভেম্বর ১৮৯৮ খ্রি, বরিশাল (বর্তমান বাংলাদেশ)
পরিচিতিভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সাহসী মহিলা বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিকা
কার্যক্ষেত্রস্বাধীনতা আন্দোলন, নারী জাগরণ, সমাজসেবা
আদর্শস্বদেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, নারী স্বাধীনতা ও শিক্ষার প্রসার
সংযুক্ত আন্দোলনস্বদেশি আন্দোলন ও বিপ্লবী কর্মকাণ্ড
গুরুত্বনারী স্বাধীনতার অগ্রদূত ও দেশপ্রেমিক চেতনার প্রতীক
উত্তরাধিকারতাঁর জীবন ও সংগ্রাম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে

প্রফুল্লমুখী বসু

ভূমিকা :- বিপ্লবী প্রফুল্লমুখী বসু ছিলেন ভারত-এর স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী ও অনন্য বিপ্লবী নারী, যিনি দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করেছিলেন। তিনি এমন এক সময়ে সক্রিয় হন, যখন সমাজে নারীর অবস্থান ছিল সীমাবদ্ধ, কিন্তু তাঁর দৃঢ় মনোবল ও দেশপ্রেম নারীদের মধ্যে নতুন চেতনার সঞ্চার ঘটায়। স্বদেশি আন্দোলন, শিক্ষা ও সমাজসেবার মাধ্যমে তিনি নারীদের আত্মনির্ভর ও সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করেন। প্রফুল্লমুখী বসুর জীবনকাহিনি শুধু একটি বিপ্লবীর ইতিহাস নয়, বরং নারী শক্তির উদ্ভব ও জাতীয় চেতনার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। তাঁর কর্মজীবন ভারতবর্ষ-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

প্রফুল্লমুখী বসুর জন্ম

১৮৯৮ সালের ৩ রা নভেম্বর বরিশাল জেলার বানবীপাড়া গ্রামে প্রফুল্লমুখী গুহঠাকুরতা জন্মগ্রহণ করেন।

বিপ্লবী প্রফুল্লমুখী বসুর পিতামাতা

তাঁর পিতার নাম যোগেন্দ্রনাথ গুহঠাকুরতা ও মাতার নাম নির্মলা সুন্দরী দেবী। তাঁর পিতা ছিলেন আজীবন কংগ্রেস-কর্মী, এবং কন্যা পেয়েছিলেন পিতার নিকট থেকে স্বদেশপ্রেমের শিক্ষা।

প্রফুল্লমুখী বসুর বিবাহ

১৩ বছর বয়সে তার বিবাহ হয় এবং ২৮ দিন পরেই তিনি বিধবা হন ও পিত্রালয়ে ফিরে আসেন। কন্যাকে পুনর্বিবাহে অসম্মত দেখে পিতা তাঁকে সেবামূলক কাজের শিক্ষা দেন।

সারদামাতার আশীর্বাদ লাভ করেন প্রফুল্লমুখী বসু

১৬ বছর বয়সের সময় তিনি শ্রীশ্রীসারদামাতা ও স্বামী প্রেমানন্দজীর আশীর্বাদ লাভ করেন। সারদামাতা তাঁকে দেখেই বলে উঠলেন- “অত নিরাশ কেন মা তুমি তো তুচ্ছ নও, ঠাকুর তোমাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নেবেন।” প্রফুল্লমুখী একথা শুনে প্রাণে নতুন আলোর ইঙ্গিত পান।

কংগ্রেসের কাজে প্রফুল্লমুখী বসু

১৯২১ সালে গান্ধীজী যখন ঢাকা যান তখন প্রফুল্লমুখী দেবী কংগ্রেসের কাজে যোগদান করেন। তিনি চরকা ও খদ্দরের প্রচারকার্য করতে থাকেন। মুন্সীগঞ্জে গিয়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করাতে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে ৬ ঘণ্টা থানায় আটক থাকেন।

আইন অমান্য আন্দোলনে প্রফুল্লমুখী বসু

১৯২৫ সাল থেকে তিনি রাজনৈতিক কাজে আরো সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে তিনি যোগদান করেন। সেই সঙ্গে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবেড়িয়া প্রভৃতি স্থানে তিনি বক্তৃতা ও প্রচারকার্য করতে থাকেন।

জেলে আটক প্রফুল্লমুখী বসু

১৯৩১ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে অর্ডিনান্স আইনে একমাস জেলে আটক রাখার পর চট্টগ্রাম বিভাগে প্রবেশ নিষেধ করে মুক্তি দেওয়া হয়।

কারাদণ্ডে দণ্ডিত প্রফুল্লমুখী বসু

১৯৩২ সালের ১৩ই এপ্রিল ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ দিবসে’ কংগ্রেসের ডিক্টেটার হিসাবে ১৪৪ ধারা অমান্য় করাতে তাঁকে কুমিল্লায় ১ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। কুমিল্লা, হিজলী ও বহরমপুর প্রভৃতি নানা জেলে তিনি বন্দী ছিলেন।

গঠনমূলক কাজে প্রফুল্লমুখী বসু

মুক্তির পর শিক্ষয়িত্রী জীবনের ফাঁকে ফাঁকে তিনি অনেকসময় গ্রীষ্মের ছুটিতে আশালতা সেন ও সরমা গুপ্তার সঙ্গে বিক্রমপুরে গঠনমূলক কাজের জন্য পরিভ্রমণ করতেন।

জনসেবার কাজে প্রফুল্লমুখী বসু

এরপর তিনি পাকিস্তান-এ গঠনমূলক কাজ, রিলিফের কাজ ও নানা জনসেবার কাজ করে চলেছেন। কুমিল্লার ‘সারদা দেবী মহিলা সমিতি’র তিনিই সম্পাদিকা ও প্রাণশক্তি।

অনুপ্রেরণার নাম প্রফুল্লমুখী বসু

তাঁর জীবন ও সংগ্রাম বাংলার বিপ্লবী নারী সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে আছে।

উপসংহার :- প্রফুল্লমুখী বসু ছিলেন সেই সব মহীয়সী নারীদের অন্যতম, যাঁরা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মনিবেদিত হয়ে জাতির ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি শুধু একজন বিপ্লবী নন, ছিলেন এক সমাজজাগরণকারিণী, যিনি নারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, সাহস ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর জীবন আমাদের শেখায় যে, স্বাধীনতার লড়াই কেবল অস্ত্রের নয়, আদর্শ, শিক্ষা ও চেতনারও। প্রফুল্লমুখী বসুর সংগ্রামী জীবন নারীদের মুক্তি ও জাতীয় গৌরবের প্রতীক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

(FAQ) প্রফুল্লমুখী বসু সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?

১. প্রফুল্লমুখী বসু কে ছিলেন?

প্রফুল্লমুখী দেবী ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী মহিলা বিপ্লবী, যিনি নারীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে সমাজে নতুন চেতনার সৃষ্টি করেছিলেন।

২. তিনি কোন সময়ে সক্রিয় ছিলেন?

তিনি উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

৩. প্রফুল্লমুখী বসুর প্রধান অবদান কী ছিল?

তিনি নারী সমাজকে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেন, গোপন বিপ্লবী কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন এবং স্বদেশি আন্দোলনের প্রচার চালান।

৪. তাঁর আদর্শ কী ছিল?

স্বদেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, নারী শিক্ষা ও স্বাধীনতার চেতনা ছিল তাঁর জীবনের মূল আদর্শ।

৫. প্রফুল্লমুখী বসুর গুরুত্ব কীভাবে বিবেচিত হয়?

তিনি নারী স্বাধীনতার অগ্রদূত এবং দেশপ্রেমিক চেতনার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত, যাঁর জীবন পরবর্তী প্রজন্মের নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।

৬. তাঁর জীবন থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?

প্রফুল্লমুখী বসুর জীবন আমাদের শেখায় যে জাতির মুক্তি ও অগ্রগতির জন্য সাহস, আত্মত্যাগ ও শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

Leave a Comment