বিপ্লবী প্রমীলা গুপ্ত ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী নারী যোদ্ধা। তিনি শুধু একজন সমাজসচেতন শিক্ষিতা নারীই ছিলেন না, ছিলেন এক দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিকা, যিনি তরুণ বয়সে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।
প্রমীলা গুপ্ত নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উজ্জ্বল প্রতীক। তাঁর সংগ্রামী জীবনকাহিনী স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে চিরস্মরণীয়।
বিপ্লবী প্রমীলা গুপ্ত
ঐতিহাসিক চরিত্র | প্রমীলা গুপ্ত |
জন্ম | ১৯১২, বিক্রমপুর (বর্তমানে বাংলাদেশ) |
পিতামাতা | কুমুদিনী গুপ্ত, কাদম্বিনী দেবী |
রাজনৈতিক সংযোগ | “শ্রীসংঘ” নামক বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য |
আন্দোলনে ভূমিকা | গ্রামেগঞ্জে ঘুরে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রচার, বক্তৃতা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি |
সম্পাদনা কাজ | “জয়শ্রী” নামক পত্রিকার সম্পাদনায় যুক্ত |
বিশেষ অবদান | স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা |
ঐতিহাসিক গুরুত্ব | একজন নারী বিপ্লবী হিসেবে সাহস, শিক্ষা ও আদর্শের প্রতীক |
প্রমীলা গুপ্ত
ভূমিকা :- প্রমীলা গুপ্ত ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসিনী, যিনি শিক্ষা, আদর্শ ও অপরিসীম দেশপ্রেম নিয়ে সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন সেই যুগের নারী, যিনি সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ভেঙে হাতে তুলে নিয়েছিলেন রাজনৈতিক সচেতনতাকে অস্ত্র হিসেবে। “শ্রীসংঘ” নামক গোপন বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হয়ে তিনি গ্রামেগঞ্জে ঘুরে জনমত গঠন, বক্তৃতা প্রদান ও নারী সমাজকে জাগিয়ে তোলার কাজ করেছেন। বন্দিত্ব, ত্যাগ ও সাহসের মধ্য দিয়ে তাঁর বিপ্লবী জীবন আজও আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। নারী শক্তির এক উজ্জ্বল প্রতীক হিসেবে প্রমীলা দেবী ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন এক গর্বিত সংগ্রামী রূপে।
প্রমীলা গুপ্তর জন্ম
মহিয়ষী প্রমীলা গুপ্তর জন্ম হয় ১৯১২ সালে লাকসামে। তার দেশ ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের মধ্যপাড়া গ্রামে।
বিপ্লবী প্রমীলা গুপ্তর পিতামাতা
তাঁর পিতার নাম কুমুদিনী গুপ্ত ও মাতার নাম কাদম্বিনী দেবী।
প্রমীলা গুপ্তর শিক্ষা
তিনি ঢাকা ইডেন হাইস্কুল ও কলেজে পড়াশুনা করেন এবং ১৯২৯ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। কলকাতায় এসে স্কটিশ চার্চ কলেজে তৃতীয় বার্ষিক শ্রেণীতে পড়বার সময় তিনি সুশীলা দাশগুপ্তর সঙ্গে গ্রেপ্তার হন ১৯৩২ সালে। তাঁরা দুজনে মাসতুতো বোন।
শ্রীসংঘ বিপ্লবীদলে প্রমীলা গুপ্ত
ঢাকা ইডেন কলেজে পড়বার সময় ইংরেজের উৎপীড়ন ও অত্যাচার তাঁদের বিচলিত করে তোলে। আরেকদিকে ছিল ইংরেজের বিরুদ্ধে গান্ধীজীর সংগ্রামের আহ্বান ও তার প্রভাব। ক্রমে তাঁরা ‘শ্রীসংঘ’ নামক বিপ্লবীদলের সঙ্গে যুক্ত হন।
গ্রামে গ্রামে বক্তৃতা দানে রত প্রমীলা গুপ্ত
সুশীলা দাশগুপ্ত ও প্রমীলা দেবী অন্য কর্মীদের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বক্তৃতা দিতেন, চাঁদা তুলে কংগ্রেসকে দিতেন। ইডেন হোস্টেলের মতো গভর্নমেন্ট হোস্টেলের মধ্যেও পিস্তল লুকিয়ে রাখতেন এবং সেগুলি নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়ে আসতেন।
পত্রিকা সম্পাদনায় প্রমীলা গুপ্ত
যাঁরা ‘জয়শ্রী’ পত্রিকা পরিচালনা করতেন তাঁদের মধ্যে প্রমীলা গুপ্ত ছিলেন অন্যতম।
গ্রেপ্তার প্রমীলা গুপ্ত
১৯৩২ সালে সুশীলা দাশগুপ্ত ও প্রমীলা দেবী স্কটিশ চার্চ কলেজে বি.এ. পড়বার সময় গ্রেপ্তার হন। তাঁরা ডেটিনিউ রূপে বন্দী থাকেন প্রেসিডেন্সি, হিজলী প্রভৃতি জেলে। জেলের মধ্যে পরীক্ষা দিয়ে তাঁরা বি.এ. পাস করেন।
প্রমীলা গুপ্তর মুক্তি লাভ
১৯৩৭ সালে প্রমীলা দেবী মুক্তি পান।
উপসংহার :- প্রমীলা দেবী ছিলেন এক সাহসী ও আদর্শবাদী নারী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে নিজের শিক্ষা, চিন্তা ও কর্মকে কাজে লাগিয়ে সংগ্রাম করেছেন। “শ্রীসংঘ”-এর মতো গোপন বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হিসেবে তিনি যেভাবে জনমত গঠনে, প্রচারে ও আত্মত্যাগে অংশগ্রহণ করেছেন, তা নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণামূলক। নারীর ভূমিকা যেখানে সামাজিকভাবে সীমিত ছিল, সেখানে তিনি শুধু একজন শিক্ষিতা নারীই নন—একজন দেশপ্রেমিক ও সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব হিসেবেও উঠে এসেছেন। প্রমীলা গুপ্তের মতো নারী বিপ্লবীদের অবদান স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল, কিন্তু প্রায় ভুলে যাওয়া অধ্যায়। তাঁর জীবন আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়—দেশপ্রেম ও সাহসের জন্য লিঙ্গ বা বয়স কোনো বাধা নয়।
(FAQ) বিপ্লবী প্রমীলা গুপ্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
প্রমীলা দেবী ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন নারী বিপ্লবী, যিনি “শ্রীসংঘ” নামক বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি বিক্রমপুর (বর্তমানে বাংলাদেশ) জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি “শ্রীসংঘ” নামের গোপন বিপ্লবী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
হ্যাঁ, ১৯৩২ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং প্রেসিডেন্সি জেল ও হিজলি ক্যাম্পে অন্তরীণ ছিলেন।
তিনি গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বক্তৃতা দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মানুষকে সচেতন করেছেন, যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং “জয়শ্রী” পত্রিকার মাধ্যমে বিপ্লবী চিন্তাধারার প্রচার করেছেন।
তিনি নারীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের পথপ্রদর্শক ছিলেন এবং তাঁর সংগ্রামী জীবন নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।