মহিয়ষী প্রভানলিনী ভাণ্ডারী ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী নারী যোদ্ধা ও সমাজসেবী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি নারীশিক্ষা, সমাজ সংস্কার এবং দেশমুক্তির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতীয় আন্দোলনে যুক্ত হন। প্রভানলিনী ভাণ্ডারীর জীবন ছিল আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম ও ন্যায়ের সংগ্রামের এক উজ্জ্বল উদাহরণ, যা আজও ভারতীয় ইতিহাসে নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে স্মরণীয়।
প্রভানলিনী ভাণ্ডারী
| ঐতিহাসিক চরিত্র | প্রভানলিনী ভাণ্ডারী |
| জন্ম | ডিসেম্বর ১৯০৯, ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ |
| পরিচিতি | নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসেবী |
| সংগঠন | কংগ্রেস ও স্থানীয় দেশপ্রেমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন |
| বিশেষ কার্যক্রম | ব্রিটিশবিরোধী সভা আয়োজন, নারীশিক্ষা প্রচার, দরিদ্র ও নিপীড়িতদের সহায়তা |
| ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য | দেশপ্রেমিক, উদার, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসচেতন |
| ঐতিহাসিক গুরুত্ব | নারী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব |
| উত্তরাধিকার | নারী শিক্ষার প্রসার ও সমাজসেবার মাধ্যমে জাতীয় চেতনা জাগিয়ে তুলেছেন |
প্রভানলিনী ভাণ্ডারী
মহিয়ষী প্রভানলিনী ভাণ্ডারী ছিলেন ভারত-এর স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী ও প্রগতিশীল নারী, যিনি সমাজসেবা, শিক্ষা ও দেশমুক্তির আদর্শকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি এমন এক সময়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন, যখন সমাজে নারীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রের অংশগ্রহণ সীমিত ছিল। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে তিনি নারীসমাজকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। পাশাপাশি, নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে তিনি একটি নতুন চেতনার সঞ্চার ঘটান। প্রভানলিনী ভাণ্ডারীর জীবন কেবল রাজনৈতিক সংগ্রামের নয়, বরং জাতীয় পুনর্জাগরণের ইতিহাসে এক অনুপ্রেরণাদায়ী অধ্যায়।
প্রভানলিনী ভাণ্ডারীর জন্ম
১৯০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ডহারবার মহকুমার যাদবপুর গ্রামে প্রভানলিনী দেবীর জন্ম হয়। তাঁর পিতা হেমচন্দ্র হালদার।
সংগ্রামী প্রভানলিনী ভাণ্ডারীর বিবাহ
বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির ভূতপূর্ব সম্পাদক এবং বর্তমানে ভূদান যজ্ঞের নেতা চারুচন্দ্র ভাণ্ডারীর সঙ্গে তার অল্পবয়সে বিবাহ হয়। তাঁর শ্বশুরবাড়ীও ডায়মণ্ডহারবারে।
লবণ আইন আন্দোলনে প্রভানলিনী ভাণ্ডারী
স্বামীর নিকট থেকে তিনি দেশসেবার প্রেরণা লাভ করেন। ১৯৩০ সালের লবণ আইন আন্দোলন-এ অংশগ্রহণ করে তিনি প্রথম গ্রেপ্তার হন, কিন্তু তাঁর কারাদণ্ড হয় নি।
কারারুদ্ধ প্রভানলিনী ভাণ্ডারী
১৯৩২ সালে আইন অমান্য় আন্দোলনে যোগদান করাতে তিনি তিনমাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। মুক্তি পাবার পর পুনরায় ১৯৩৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পিকেটিং পরিচালনা করার অপরাধে তিনি তিনমাস কারারুদ্ধ থাকেন।
প্রভানলিনী ভাণ্ডারীর সশ্রম কারাবাস
১৯৩৭ সালের ২৬শে জানুয়ারি ডায়মন্ডহারবার আদালতের মাঠে স্বাধীনতা দিবস-এর অনুষ্ঠান পরিচালনা করবার সময় তিনি গ্রেপ্তার হন ও তাঁর প্রতি তিনমাস সশ্রম কারাবাসের আদেশ হয়।
নিরলস ও দৃঢ়সংকল্প নারী প্রভানলিনী দেবী
এই নিরলস ও দৃঢ়সংকল্প নারীকে বাধা দেবার সাধ্য ইংরেজ সরকারেব ছিল না। যতবারই দণ্ডভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন ততবারই দ্বিগুণ উৎসাহে তিনি আবার এগিয়ে গেছেন।
খাদি মন্দিরের একনিষ্ঠ কর্মী প্রভানলিনী ভাণ্ডারী
স্বামী চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী প্রতিষ্ঠিত ‘খাদি-মন্দির’-এর সূতাকাটা, হরিজন-সেবা প্রভৃতির তিনি একনিষ্ঠ কর্মী ১৯৩৪ সাল থেকেই।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে প্রভানলিনী দেবী
১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন-এ অংশগ্রহণ করে সাতমাস কারাদণ্ড নিয়ে রইলেন তিনি প্রেসিডেন্সি জেলে।
ভূদান-যজ্ঞের কর্মে প্রভানলিনী ভাণ্ডারী
এরপর তিনি ভূদান-যজ্ঞের আদর্শে পরিপূর্ণ বিশ্বাসী হন এবং স্বামীর সঙ্গে তিনি এই কর্মেই যুক্ত থাকেন।
উপসংহার :- প্রভানলিনী ভাণ্ডারী ছিলেন এমন এক নারী যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও জাতির উন্নয়নে নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। তাঁর জীবন ছিল সাহস, ত্যাগ ও আদর্শে ভরপুর। তিনি শুধু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ মুখ নন, বরং নারীশিক্ষা ও সমাজসেবার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক আলোকবর্তিকা স্থাপন করেন। প্রভানলিনী ভাণ্ডারীর দেশপ্রেম, মানবতা ও নেতৃত্বগুণ আজও সমাজে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিরাজমান, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — সত্যিকারের স্বাধীনতা আসে শিক্ষা, সচেতনতা ও ঐক্যের মাধ্যমে।
(FAQ) প্রভানলিনী ভাণ্ডারী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
প্রভানলিনী ভাণ্ডারী ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসেবী, যিনি দেশমুক্তি ও নারীশিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি ভারতের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং কংগ্রেস ও স্থানীয় দেশপ্রেমিক সংগঠনগুলির কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
তিনি নারীশিক্ষা প্রসার, সমাজ সংস্কার এবং জাতীয় চেতনা জাগ্রত করার মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তনের সঞ্চার ঘটান।
তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক, শিক্ষানুরাগী, সাহসী এবং সমাজকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ।
স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান, নারীশিক্ষা ও সমাজসেবার প্রতি তাঁর অঙ্গীকার তাঁকে ইতিহাসে এক অনন্য স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর জীবন আজও নারীর ক্ষমতায়ন ও দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা হিসেবে স্মরণীয়।