‘জেন-জি’ কে সাফল্য এনে দেবার গুণাবলী

চলুন জেনে নেওয়া যাক ‘জেন-জি’ কে সাফল্য এনে দেবার গুণাবলী হল- ফাংশনাল স্কিল, কমিউনিকেশন স্কিল, ডিজিটাল দক্ষতা, ধৈর্য ও সহনশীলতা, ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স, নেটওয়ার্কিং।

‘জেন-জি’ কে সাফল্য এনে দেবার গুণাবলী

১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রজন্মকে জেনারেশন-জেড (জেন-জি) বলে অভিহিত করা হয়। তারা সম্প্রতি চাকরিতে বা পেশাদার হিসেবে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন।

কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে তারা স্থায়ী হতে পারছেন না। তাদের কাজের পরিবেশে অভ্যস্ত হতে ও সাফল্য লাভে সহায়ক কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও ক্যারিয়ার কলামিস্ট শিবলী হুসাইন আহমদ

জেনারেশন জেড বা জেন-জি’কে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। জুমারস, নেটাজেন, টেকজেন বা নিও-ডিজিটাল নেটিভস, সাইড হ্যাসেল, ফিজিটাল জেনারেশনও, ওপেন-টু-ওয়ার্ল্ড জেনারেশনও বলা হয়।

তারা খুবই দ্রুত শিখতে পারে। তারা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। শুধু দরকার কিছুটা নিজেদের টিউন করে নেওয়া ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য।

চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে তারা সিনিয়র বা জুনিয়র ভেদাভেদ কম করেন কাজের ক্ষেত্রে। বসের বা অভিভাবকের কাছে নিজের মতামত মুখোমুখি ও সরাসরি দিতেই পছন্দ করেন।

কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতে বেড়ে ওঠা এই জেনারেশন জ্ঞানী, চটপটে, স্পষ্টবাদী, ভিশনারি ও বৈশ্বিক ধ্যানধারণার অধিকারী। কিন্তু তাদের কিছু দুর্বলতাও আছে।

তারা কিছুটা অস্থির প্রকৃতির, আনুষ্ঠানিক আদব-কায়দার ধার ধারে কম, ধৈর্য কম। ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, দূরদৃষ্টি, স্মার্ট কমিউনিকেশন, নন-বায়াসড, পজিটিভ, লার্নিং ও চ্যালেঞ্জিং অ্যাটিচুড ক্যারিয়ারের জন্য খুব জরুরি।

এর মধ্যে কিছু জেন-জি’র মধ্যে দেখা যায় আর কিছু গুণাবলি নিজেদের দুর্বলতাগুলোকে একটু টিউন করে নিয়ে অর্জন করতে হবে। তাহলে শুধু তারাই নয়, সামগ্রিকভাবে লাভবান হব আমরা সবাই। কারণ আগামীর পৃথিবীর দায়িত্ব যে তাদেরই।

ক্যারিয়ারে বা পেশাগত জীবনে সফল হতে জেন-জিরা যদি নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে আমলে নেয়, তাহলে দ্রুততার সঙ্গে দারণভাবে এগিয়ে যেতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস।

ফাংশনাল স্কিল

জেন-জিরা যেহেতু দ্রুত কাজ শিখে দ্রুত ডেলিভারি দিতে পারে, তাই তাদের ওপর প্রতিষ্ঠানের সিনিয়রদের চাহিদাও থাকে বেশি।

তাই ফাংশনাল স্কিল বাড়ানোর জন্য ওয়েব, এআই, গুগল, উইকিপিডিয়া, ই-লার্নিং সিস্টেম, সার্চ ইঞ্জিন, ব্লগ, ভ্লগ, ইউটিউব, বিজনেস অটোমেশন, বট টেকনোলজি, ই-কমার্স, সোশ্যাল মিডিয়া, প্রফেশনাল প্ল্যাটফর্ম, অরগানাইজেশনাল ডেটাবেজ, ডেটা আর্কাইভ, এক্সিকিউটিভ এডুকেশন, প্রফেশনাল ট্রেনিং, আপ- স্কিলিং, রি-স্কিলিংয়ের জন্য ডিজিটাল অ্যাপস ব্যবহার করলে দারুণ কাজে দেবে।

একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে। সিনিয়ারদের সঙ্গে লেগে থেকে ফাংশনাল স্কিল বাড়ানোর জন্যও সর্বদা চেষ্টা করে যেতে হবে।

কমিউনিকেশন স্কিল

জেন-জিরা ভার্চুয়াল কমিউনেকশনে দারুণ ভালো, কিন্তু মুখোমুখি বা লিখিত কমিউনিকেশনে ততটা নয়, যেটা আবার পেশায় উন্নতি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইমেইল লেখা, প্রেজেনটেশন দেওয়া ও মতামত প্রকাশে ফিজিক্যাল কমিউনিকেশনের দক্ষতা অর্জন করতে হবে তাদের।

ডিজিটাল দক্ষতা

জেন-জি প্রজন্ম তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সঙ্গে যেমন- মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন, ইউটিউবিং, এআই, চ্যাটবট, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জন্মাগতভাবে মানিয়ে গেছে।

কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে প্রফেশনাল সফটওয়্যার যেমন- ইআরপি, ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং অ্যাডভান্স লেভেলের মাইক্রোসফট অফিস ৩৬০ ডিগ্রি, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুলসের ব্যবহার জানতে হবে।

ধৈর্য ও সহনশীলতা

জেন-জি দ্রুত ফল বা সফলতা দেখতে চায়। কিন্তু অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে কাজ করতে হয়, অন্যকে বুঝতে হয় এবং সহনশীলতার চর্চা করতে হয়। কাজের চাপ, প্রতিক্রিয়া এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জে ধৈর্য ধরে এগিয়ে চলা একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এই গুণ অর্জন করতে হবে।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স

মুখের ওপর রূঢ় সত্যি বলতে দ্বিধা করে না জেন-জি। কিন্তু এতে স্থায়ীভাবে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে পেশাজীবনে। তাই সত্য কথাটিও গ্ৰহণযোগ্য ভাবে বলার অভ্যাস করতে হবে। সামনের মানুষটির আবেগিক দিকটিও বিবেচনায় নেওয়ার অভ্যাস করতে হবে তাদের।

নেটওয়ার্কিং

চাকরি পাওয়ার জন্য বা পেশায় উন্নতি করার জন্য পারসোনাল নেটওয়ার্কিংয়ের কোনো বিকল্প আজও তৈরি হয় নি। তাই যে পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুক, সেই পেশার মানুষের সঙ্গে প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা।

যেমন- এইচআরে ক্যারিয়ার করতে চাইলে বিএসইএইচআরএম।মার্কেটিং বা সেলসে ক্যারিয়ার করতে চাইলে ডুমা-এমএবি, সাপ্লাইচেইনে যেতে চাইলে আইএসসিএ, অ্যাকাউন্টিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আইসিএমএবি ইত্যাদি প্রফেশনা অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে নিজেকে অংশীদার করতে পারলে কাজে দেবে।

প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার প্রকৃতি ও লেভারেজিং ফ্যাক্টরগুলোকে বোঝা

ক্যারিয়ারে ভালো করতে হলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাটি বুঝতে হবে। ব্যবসার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশতে হবে। ব্যবসার গতি, প্রকৃতি, উৎপাদন, পণ্য সরবারহ প্রক্রিয়া, সার্ভিস, ডেলেভারি, প্রোডাক্ট ফ্রো, ভিশন ভ্যালুজ, মালিক ও কর্মীদের চাহিদা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি সেখানে দায়িত্বরত কর্মীরা কী কাজ করে।

এসব বুঝে কীভাবে কার সিস্টেম ডেভেলপ করলে আরও দক্ষতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াবে, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। এর ফলে কর্মী একজন সম্পদে পরিণত হয়। তার পেশাগত সাফল্যও অর্জিত হয়।

কাজের নিয়মিত ফিডব্যাক নেওয়া

একটি কাজ কত ভালোভাবে সম্পন্ন হলো তা জানা যায় কাজটির ফিডব্যাকের মাধ্যমে। তাই কাজের ফিডব্যাক নেওয়ার অভ্যাস করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া না দেখানোই উত্তম।

নিরপেক্ষভাবে দেখে যদি মনে হয়, এই সমালোচনার মধ্যে কোনো সত্যতা আছে, সে ক্ষেত্রে নিজেকে সংশোধন করে নিতে হবে।

পারসোনাল ব্র্যান্ডিং

কর্মদক্ষতা ও ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে পেশাগত পরিচয় তৈরি করা বেশ জরুরি। প্রতিষ্ঠানে ও পেশায় নিজের সিনিয়রদের কাছে একজন নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করতে হবে এবং আত্মত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হবে।

পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করতে গেলে বা নিজের পারসোনাল ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নিজের সম্পর্কে সর্বপ্রথমে ভালোভাবে জানতে হবে আপনার ভিতর কী কী গুণ আছে এবং আপনি কী করতে ভালোবাসেন। নিজের পারসোনাল ব্র্যান্ডিং প্রতিষ্ঠা করতে হলে নিজের পরিচয়কে সুন্দরভাবে অন্যের সামনে মেলে ধরতে হবে বিভিন্ন মাধ্যমে।

বৈশ্বিক জ্ঞান

আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা, সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যে, ওয়ার্কস্কোপ সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। গ্লোবাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকা। বিশেষ করে মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হলে বৈশ্বিক জ্ঞান থাকাটা জরুরি।

পেশাদারিত্বের উন্নতি

পেশায় একজন পেশাদার হওয়ার অর্থ কেবল কলেজ ডিগ্রি অর্জন করা নয়। অফিসে লেট করে আসা থেকে শুরু করে অফিসের কাজে অসাধুতা, প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক আচরণ থেকে শুরু করে নেতিবাচক কাজ সবই আসলে অপেশাদারিত্ব বা আনপ্রফেশনালিজমের মধ্যে পড়ে। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রফেশনাল প্রেজেন্স নিশ্চিত করা

এখন রিক্রুটমেন্ট বা এপ্লয়ার ব্র্যান্ডিংয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা লিংকডিন। তাই লিংকডিন বা ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজের পার্সোনাল ইমেজ যেন প্রফেশনালি পজিটিভ দেখায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

Leave a Comment