বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস প্রথম অধ্যায়: প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাসের উপাদান থেকে প্রশ্ন উত্তর দেওয়া হল। B.A. history pass – (1st semester) short question suggestions
প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাসের উপাদান থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
১. প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের বিভিন্নতানুসারে ভারতবর্ষকে কয়টি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে ভাগ করা হয়?
উত্তর:- প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের বিভিন্নতানুসারে ভারতবর্ষকে ‘পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা – (i) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল, (ii) সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত অঞ্চল, (iii) মধ্য ভারতের মালভূমি অঞ্চল, (iv) দক্ষিণের মালভূমি অঞ্চল, (v) সুদূর দক্ষিণের উপদ্বীপ অঞ্চল।
২. ‘হিন্দুরা ইতিহাস রচনা সম্পর্কে উদাসীন’- কোন্ আরব পণ্ডিত একথা বলেছেন? কেন বলেছেন?
উত্তর:- আরব পণ্ডিত অলবেরুণী একথা বলেছেন।
তাঁর মতে, হিন্দুগণ বিভিন্ন ঘটনার কালনুক্রমিক বিবরণ লিপিবদ্ধ করার ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দেননি, তাঁর বদলে বিভিন্ন কাহিনী বিচ্ছিন্নভাবে লিপিবদ্ধ করার ব্যাপারেই তাঁরা বেশী মনোযোগী ছিলেন।
৩. ‘হর্ষচরিত’ কার রচনা? এর বিষয়বস্তু কি?
উত্তর:- ‘হর্ষচরিত’ কবি বাণভট্টের রচনা।
এই গ্ৰন্থে রাজা হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালের বিস্তৃত বিবরণ ও তৎসহ সমাজব্যবস্থা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, আর্থিক অবস্থা এবং হর্ষবর্ধনের চরিত্র সম্বন্ধেও বহু তথ্য আছে।
৪. ‘রাজতরঙ্গিণী’ কার রচনা? এর বিষয়বস্তু কি?
উত্তর:- ‘রাজতরঙ্গিণী’ কবি কলহন-এর রচনা।
এই গ্ৰন্থে কাশ্মীরের রাজবংশগুলির সুবিস্তৃত ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে।
৫. ‘গৌড়বহো’-র রচয়িতা কে? এর বিষয়বস্তু কি?
উত্তর:- ‘গৌড়বহো’র রচয়িতা বাকপতিরাজ।
এই গ্ৰন্থে রাজা যশোবর্মনের গৌড় অভিযান ও বিজয়ের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
৬. ‘বিক্রমাঙ্কদেবচরিত’-এর রচয়িতা কে? কার সম্বন্ধে এটি রচিত?
উত্তর:- ‘বিক্রমাঙ্কদেবচরিত’ -এর রচয়িতা কবি বিলহন।
এই গ্ৰন্থে চালুক্যরাজ ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের রাজত্বের ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে।
৭. প্রাচীনকালে ভারতে আগত কয়েকজন বিদেশী পর্যটকদের নাম লেখ।
উত্তর:- প্রাচীনকালে ভারতে আগত কয়েকজন বিদেশী পর্যটক হল গ্রীস দেশের মেগাস্থিনিস, সিরিয়ার ডেইমেকাস, চীনদেশের হিউয়েন সাঙ, ফা-হিয়েন, ইৎ-সিং প্রমুখ।
৮. ‘আইহোল প্রশস্তি কে, কার সম্বন্ধে রচনা করেন?
উত্তর:- চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর সভাকবি রবিকীর্তি ‘আইহোল প্রশস্তি’ রচনা করেন।
দ্বিতীয় পুলকেশীর কীর্তি কাহিনী সম্বন্ধে এই গ্ৰন্থটি রচিত।
৯. কৌটিল্য কে ছিলেন? তার গ্ৰন্থের নাম কি?
উত্তর:- মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী এবং মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রধান স্থাপয়িতা ছিলেন চাণক্য বা কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত।
কৌটিল্য বা চাণক্য ‘অর্থশাস্ত্র’ রচনা করেন।
১০. ‘হাতিগুম্ফা লিপি’ ও ‘জুনাগড় লিপি’ কার কার আমলে রচিত?
উত্তর:- ‘হাতিগুম্ফা লিপি’ রচিত হয় কলিঙ্গরাজ খারবেলের আমলে। ‘জুনাগড় শিলালিপি’ রচিত হয় শকরাজ রুদ্রদামনের আমলে।
১১. ‘এলাহাবাদ প্রশস্তি’ কার সম্বন্ধে, কে রচনা করেন?
উত্তর:- গুপ্তসম্রাট সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরিষেণ এলাহাবাদ প্রশস্তি রচনা করেন।
এই প্রশস্তিতে সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যজয় ও অন্যান্য গুণাবলীর বর্ণনা আছে।
১২. রামচরিত কার লেখা? এই গ্রন্থে কোন্ শাসকের মহিমা কীর্তন করা হয়েছে?
উত্তর:- রামচরিত গ্রন্থের লেখক সন্ধ্যাকর নন্দী।
রামচরিত গ্রন্থে বাংলার রাজা রামপালের মহিমা কীর্তন করা হয়েছে।
১৩. বিষ্ণুপুরাণে ভারত সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর:- বিষ্ণুপুরাণে বলা হয়েছে যে দেশ সমুদ্রের উত্তরে ও হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত সেই দেশের নাম ভারত। আর সেখানকার বসবাসকারীরা ভারতের বংশধর নামে পরিচিত।
১৪. কার, কার রচনা থেকে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়?
উত্তর:- স্ট্যাবো, ডিওডোরাস, মেগাস্থিনিস প্রমুখের রচনা থেকে।
১৫. ‘হিন্দুস্তান’ শব্দটির উল্লেখ কোন্ কোন্ রচনাতে পাওয়া যায়?
উত্তর:- সাসানীয় বংশের শাসক প্রথম সাহপুর-এর ‘নকশ-ই-রুস্তম লেখতে হিন্দুস্তান-নামের প্রাচীনতম প্রয়োগ দেখা যায়। এটি উৎকীর্ণ হয়ে ছিল ২৬২ খ্রিস্টাব্দে।
আনুমানিক ৯৮২ খ্রিস্টাব্দে রচিত জনৈক অজ্ঞতনামা লেখকের ‘হুদুদ-অল-আলম’-গ্রন্থে সমগ্র উপমহাদেশকে ‘হিন্দুস্তান’-বলে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে।
১৬. কে এবং কেন ভারতকে ‘নৃতত্ত্বের যাদুঘর’-বলে অভিহিত করেছেন।
উত্তর:- ইংরেজ ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ ভারতকে ‘নৃতত্ত্বের যাদুঘর’ বলে অভিহিত করেছেন
ভারত এক অতি প্রাচীন দেশ এবং ভারতের সভ্যতাও হলো অতি প্রাচীন। বিভিন্ন জনগোষ্ঠী নিয়ে এই বিরাট সুপ্রাচীন উপমহাদেশ গড়ে উঠেছে। যুগ যুগ ধরে কত বিদেশী জাতি ও উপজাতি ভারতে প্রবেশ করে ভারতের জনস্রোতে মিশে গেছে। তাই জনসমষ্টির মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও তাতে ভারত ইতিহাসের মূল ঐক্যের সুরটি ধ্বনিত হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি ভারতকে ‘নৃতত্বের যাদুঘর’ বলেছেন।
১৭. ভারতের কোন অঞ্চলকে আর্যাবত বলা হয় এবং কেন?
উত্তর:- হিমালয় ছাড়া অন্য যে পর্বতটি ভারতের ইতিহাসকে যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে তা হল বিন্ধপর্বত। এই বিন্ধ্যপর্বতমালা ভারতকে দুটি অংশে বিভক্ত করেছে – উত্তর ও দক্ষিণ। এই উত্তর অংশের নাম আর্যাবত।
প্রাচীন ধর্মশাস্ত্রসমূহে উত্তর ভারতকে ‘আর্যাবত’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। ভৌগলিক বৈচিত্র্যের কারণেই উত্তর ভারতে বিভিন্ন বিদেশী জাতির (আর্য, গ্রীক, শক, হুন, তুর্কী, মুঘল প্রভৃতি) আগমন ঘটেছে যার অন্যতম হলো আর্যজাতি। আর্যদের বাসভূমি নিয়ে ঐতিহাসিকগণ একাধিক স্থানের কথা উল্লেখ করলেও স্বাভাবিক ভাবে মনে করা হয় আর্যজাতির আগমন ও বসতি স্থাপনের জন্যই এই অঞ্চল ‘আর্যাবর্ত’-নামে পরিচিত।
১৮. ভারতবর্ষকে কোন্ পর্বতমালার দান বলা হয় এবং কেন?
উত্তর:- ভারতবর্ষকে হিমালয় পর্বতমালার দান বলা হয়।
ভারতের উত্তরে অবস্থিত সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা ভারতকে এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য দেশ থেকে পৃথক করেছে। এর ফলে মধ্য-এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলি অবাধে ভারতে প্রবেশ করতে পারেনি। ভারত বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছে। মধ্য এশিয়ার শুষ্ক ও শীতল বাতাসও ভারতে প্রবেশ করতে পারেনি। হিমালয়ের জন্যই ভারতের আবহাওয়া হয়েছে নাতিশীতোষ্ণ। আবার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু হিমালয়ে বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে ভারতকে করে তুলেছে শস্যশ্যামলা। হিমালয়ের বরফগলা জলে পুষ্ট হয়েছে সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র-ভারতের তিন প্রধান নদ-নদী। তাই সব মিলিয়ে ভারতবর্ষকে হিমালয় পর্বতমালার দান বলা চলে।
১৯. মহাকাব্যগুলি থেকে ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতা সম্পর্কে কিরূপ ধারণা পাওয়া যায়?
উত্তর:- মহাকাব্যের যুগে (রামায়ণ ও মহাভারত) রাজতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র উভয় ধরনের শাসন প্রচলিত ছিল। শাসনের সবনিম্ন একক গ্রাম, বিভিন্ন গোষ্ঠী, সমবায় সংঘ ও গ্রামীন সম্প্রদায়ের মধ্যে আংশিক স্বায়ত্তশাসন প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুশাসন, প্রথা ও বিশ্বাস, আইন হিসেবে মানা হত। রাজা ছিলেন কেন্দ্রীয় শাসনের প্রধান। তবে তিনি স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। তবে মহাকাব্যের যুগে ব্রাহ্মণদের স্থলে ক্ষত্রিয়দের প্রাধান্য স্থাপিত হয়েছিল। মহাকাব্যগুলিতে সতীদাহ ও জাতিভেদ প্রথার অস্তিত্ব জানা যায়। অসবর্ণ বিবাহ বা বৃত্তি পরিবর্তনের একাধিক দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।
২০. ইতিহাস রচনার ঐতিহাসিক উপাদানকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উত্তর:- প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ঐতিহাসিক উপাদানগুলিকে প্রধানত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় – (১) সাহিত্যিক উপাদান ও (২) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান।
২১. সাহিত্যিক উপাদানের শ্রেনীবিভাগ কর।
উত্তর:- সাহিত্যিক উপাদানগুলি দুই ধরনের – দেশীয় সাহিত্য ও বৈদেশিক সাহিত্য। দেশীয় সাহিত্যগুলিকে আবার ৪টি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা- (ক) ধর্মীয় গ্রন্থ, (খ) ধর্মনিরপেক্ষ গ্রন্থ (গ) জীবনচরিত এবং (ঘ) আঞ্চলিক ইতিহাস।
এই সমস্ত সাহিত্যিক উপাদানগুলি থেকে ভারতের সমাজ, ধর্ম, শিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চার তথ্য পাওয়া যায়।
২২. বৈদেশিক সাহিত্য বলতে কি বোঝ?
উত্তর:- বৈদেশিক সাহিত্য বলতে ভারতে আশা বিদেশী লেখক ও সাহিত্যিকদের বিবরণ গুলিকে বোঝায়, যেগুলি থেকে ভারতের ইতিহাস সম্পর্কিত নানা তথ্য পাওয়া যায়।
গ্রীক দূত মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’, অলবেরুনী রচিত ‘তহকিক-ই-হিন্দ’ গ্রন্থ ইত্যাদি বৈদেশিক সাহিত্য।
২৩. প্রত্নতাত্বিক উপাদানকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উত্তর:- প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস রচনার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানাগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – (১) লিপি (২) মুদ্রা (৩) স্থাপত্য ও ভাস্কর্য।
২৪. ঐতিহাসিক উপাদান হিসাবে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের গুরুত্ব লেখ?
উত্তর:- প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের গুরুত্ব হল – (i) প্রাচীন ভারতের দেশীয় লিপিগুলি থেকে ভারতীয় রাজাদের বংশতালিকা, রাজ্যজয়, রাজপ্রশস্তি, ভূমিদান, শাসনব্যবস্থা, ধর্ম ও সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ঘটনাবলি ব্যবসাবাণিজ্য সম্পর্কে জানা যায়। (ii) বিদেশি লিপিগুলি থেকে ভারতের সাথে বিদেশের সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। (iii) সাধারণত সাহিত্যিক উপাদান ও লিপির থেকে প্রাপ্ত তথ্য-এর যথার্থতা যাচাই করা হয় মুদ্রা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে। (iv) প্রাচীন ভারতের শিল্প-সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের গুরত্ব অপরিসীম।
২৫. ইতিহাসের উপাদান হিসাবে লিপির গুরুত্ব?
উত্তর:- প্রাচীন লিপির গুরুত্ব প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক স্মিথ বলেছেন, “প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানসমূহের মধ্যে লিপি বা লেখগুলিকে প্রথম স্থান দেওয়া হয় কারণ তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে এদের অবদান অমূল্য।” প্রাচীনকালের লিপিগুলি তামা, লৌহ, ব্রোঞ্জ, পাথর প্রভৃতি ধাতুর উপর উৎকীর্ণ করা হতো, এমনকি মাটি পুড়িয়ে লিপি তৈরীর নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই সমস্ত লিপিগুলি থেকে তৎকালীন ভারতের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনযাত্রা এমনকি বিকল্পের সাথে সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের যোগসূত্রের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তাই লিপিকে ইতিহাসের জীবন্ত দলিল বলা হয়।
২৬. প্রাচীন ভারতের কয়েকটি লিপির নাম উল্লেখ কর।
উত্তর:- প্রাচীন ভারতের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য লিপি হল অশোকের লিপি, সমুদ্রগুপ্তের ‘এলাহাবাদ প্রশস্তি’, সাতবাহনরাজ গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর ‘নাসিক প্রশস্তি’, চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর ‘আইহোল প্রশস্তি’, রুদ্রদামনের জুনাগড় শিলালিপি’, কলিঙ্গরাজের হাতিগুম্ফালিপি।
২৭. মুদ্রা থেকে ইতিহাসের কোন্ কোন্ তথ্য জানা যায়?
উত্তর:- প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মুদ্রার গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণভাবে সাহিত্যিক উপাদান ও লিপি থেকে যে তথ্য পাওয়া যায় তার সত্যতা বা যথার্থতা জানার ক্ষেত্রে মুদ্রার গুরুত্ব অপরিহার্য। মুদ্রাগুলি থেকে প্রাচীনকালের রাজাদের নাম, সাল, তারিখ, তৎকালীন রাজনৈতিক, আর্থিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস এমনকি সাম্রাজ্যের ভৌগলিক পরিধি, ধর্ম, সামাজি অবস্থা বৈদেশিক বাণিজ্য প্রভৃতির কথা জানা যায়।
২৮. প্রশস্তি বলতে কী বোঝ?
উত্তর:- প্রশস্তিগুলির মধ্যে রাজ প্রশস্তিগুলি সাধারণত কোন দান বা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে রচিত হতো। তাই অনেক সময় দানপত্র ও প্রশস্তির মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন। খারবেলের ‘হাতিগুম্ফা’ একটি অবিমিশ্রিত প্রশস্তি। অধিকাংশ প্রশস্তি কাব্যসূচক মণ্ডিত। প্রশস্তিগুলি সাধারণত স্তুতি বা অনুরূপ কোনো শুভশব্দ দিয়ে আরম্ভ হয়। প্রশস্তি লেখতে রাজার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি বর্ণিত থাকে এবং একেবারে শেষে থাকে প্রশস্তি লেখগুলির রচনার উদ্দেশ্য।
২৯. এলাহাবাদ প্রশস্তিতে কোন রাজার সম্বন্ধে কী বর্ণনা পাওয়া যায়?
উত্তর:- এলাহাবাদ প্রশস্তিতে গুপ্তরাজ সমুদ্রগুপ্তের বর্ণনা পাওয়া যায়। সাধারণত লেখাগুলিতে রাজার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি কিভাবে বর্ণিত হয়। তার চমৎকার দৃষ্টান্ত হলো সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তি। সেখানে সমুদ্রগুপ্তকে যেসব বিশেষণ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ব্যাঘ্র পরাক্রম, প্রচণ্ডশাসন, মৃদুহৃদয়, অচিন্ত্যপুরুষ, কবিরাজ ইত্যাদি। তাছাড়া ওই প্রশস্তিতে সমুদ্রগুপ্তকে ‘লিচ্ছবি দৌহিত্র’ বলে বর্ণনা করে হরিষেণ গুপ্তরাজবংশের সঙ্গে লিচ্ছবিদের বৈবাহিক সম্বন্ধের তাৎপর্যকে স্পষ্ট করেছেন।
৩০. অশোকের লেখমালা গুলির গুরুত্ব কি?
উত্তর:- মৌর্য যুগে শিল্পরীতির বিশেষ উৎকর্ষতার বিশেষ প্রমাণ মেলে অশোকের আমলের লেখমালাগুলিতে। এই লেখতে ব্যবহৃত হয়েছে পাথর, গুহা, স্তম্ভ। অশোকের লেখমালার নক্সা উন্নত স্থাপত্যরীতির নিদর্শন দেয়। অশোক বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতিকে সংশোধন করে নিজ ধর্মনীতির প্রচার করতে চেয়েছিলেন তাঁর প্রস্তর লেখার মাধ্যমে। তৎকালীন মানুষের জীবনে এই লেখামালাগুলির যথেষ্ট প্রভাব ছিল।
৩১. ভারতের কয়েকটি স্মৃতিশাস্ত্রের নাম উল্লেখ করো। এই সমস্ত স্মৃতিশাস্ত্র থেকে কী জানা যায়?
উত্তর:- মনুস্মৃতি, নারদস্মৃতি, বৃহস্পতিস্মৃতি।
খ্রীস্টিয় পঞ্চম শতকে রচিত স্মৃতিশাস্ত্রগুলি থেকে দণ্ডনীতি, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত নীতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।
৩২. বৈদেশিক বিবরণগুলি কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উত্তর:- বৈদেশিক বিবরণগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়- গ্রীকো-রোমান, চৈনিক ও আরব।
৩৩. মেগাস্থিনিস কে ছিলেন এবং তার রচিত গ্রন্থের নাম কী?
উত্তর:- মেগাস্থিনিস ছিলেন গ্রীক দূত। আলেকজাণ্ডারের ভারত আক্রমণের বেশ কয়েকবছর পরে সেলুকাস চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজসভায় দূত হিসেবে মেগাস্থিনিসকে প্রেরণ করে।
বেশ কিছুদিন ভারতে বসবাসের অভিজ্ঞতা তাঁর হয়। সেই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে তিনি রচনা করেন ‘ইন্ডিকা’ নামক গ্রন্থটি। দুর্ভাগ্যবশত মূল গ্রন্থখানি পাওয়া যায়নি।
৩৪. ফা-হিয়েন কোন সম্রাটের আমলে ভারতে আসেন এবং তার রচিত গ্ৰন্থ থেকে কী জানা যায়?
উত্তর:- চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন গুপ্তসম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে ভারতে এসেছিলেন।
তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ‘ফো-কুও-কি।’ তিনি উত্তর-পশ্চিম ভারত, মধ্যভারত এমনকি গাঙ্গেয় উপত্যকা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন ও বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলি পরিদর্শন করেন। তাঁর এই গ্রন্থে বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত বিষয়গুলিই প্রাধান্য পেয়েছিল।
৩৫. হিউয়েন-সাঙ কার রাজত্বকালে ভারতে আসেন এবং তাঁর রচিত গ্রন্থের বিষয়বস্তু কী ছিল?
উত্তর:- রাজা হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে ভারতে ভ্রমণে আসেন হিউয়েন-সাঙ।
তিনি দীর্ঘকাল ভারতে অবস্থান করেন (৬২৯-৪৪ খ্রীষ্টাব্দ) ও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেন। এই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই তিনি ‘সি-ইউ-কি’ বা ‘পশ্চিমী দেশের স্মৃতি’-নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থ থেকে সমসাময়িক ভারত ও ভারতবাসী সম্পর্কে বহুসংবাদ জানা যায়। তবে বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে তার আগ্রহের বিষয়টিও এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়। ফলে তাঁর রচনায় বৌদ্ধরাজা হর্ষবর্ধনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখা যায়।
৩৬. সৌধ, স্মৃতিস্তম্ভের গুরুত্ব কি?
উত্তর:- সৌধ, স্মৃতিস্তম্ভ, মন্দির বা প্রাচীন নগরের ধ্বংসাবশেষ থেকেও প্রাচীনকালের সভ্যতার বিকাশ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়। কোনো জাতির সংস্কৃতিকে জানার ব্যাপারে এগুলির গুরুত্ব অসীম, খননকার্যের ফলে যেসব নিদর্শন পাওয়া যায় তা কখনো কখনো ইতিহাসের নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় হরপ্পা-মহেঞ্জোদড়োর ধ্বংসাবশেষ থেকে ঐ যুগের উন্নত সংস্কৃতি ও ধর্মবিশ্বাসের তথ্য, সমাজজীবনের সুদীর্ঘ বিবরণ রচনা করা সম্ভব হয়েছে।
৩৭. ইতিহাসের উপাদান বলতে কী বোঝ?
উত্তর:- যে সমস্ত তথ্যসূত্রকে বিচার-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে ইতিহাস রচিত হয়, সেগুলিকে ইতিাসের উপাদান বলে, অর্থাৎ ঐতিহাসিকরা ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে যে সমস্ত তথ্যসূত্রকে আশ্রয় করে ইতিহাস রচনা করে থাকেন, তা সাধারণভাবে ইতিহাসের উপাদান রূপে বিবেচিত।
ইতিহাসের উপাদান হিসাবে পাওয়া যায় সাহিত্যিক ও প্রত্নতাত্বিক উপাদান। উপাদানগুলি থেকে তৎকালীন ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্ম, সংস্কৃতি, শাসনব্যবস্থা ও বিভিন্ন রাজ বংশের তালিকা, রাজাদের জীবনকাহিনী, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচারণ ও তাদের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে জানা যায়।
৩৮. প্রাচীন ভারত-ইতিহাসের উপাদান হিসেবে পুরাণের গুরুত্ব এত কম কেন?
উত্তর:- উত্তর পুরাণ-কাহিনি প্রচলিত কিংবদন্তি রূপে বিখ্যাত। তাই এতে কল্পনার আধিক্য থাকা অসম্ভব। নয়। তা ছাড়া, পুরাণে বর্ণিত ঘটনার সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী বা তারও আগের। কিন্তু পুরাণ সংকলিত হয়েছে গুপ্তযুগে। তাই এতে অসংগতি থাকা স্বাভাবিক। তাই ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে এর গুরুত্ব কম।
৩৯. প্রাচীন ভারতের কয়েকটি অব্দের (era) নাম লেখো।
উত্তর:- প্রাচীন ভারতে কোনো বিশেষ সন প্রচলিত ছিল না। বিভিন্ন সময়ে একাধিক সনও চালু ছিল। যথা – বৌদ্ধ সম্বত, জৈন সম্বত যথাক্রমে ৫৫৪ ও ৫২৭ খ্রিস্টপূর্ব থেকে প্রচলিত ছিল। বিক্রম সম্বত (৫৮ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ), শকাব্দ (৭৮ খ্রিঃ কণিষ্ক প্রচলন করেন), গুপ্তাব্দ (৩১৯-২০ খ্রিঃ) হিজিরা সন এবং ইলাহি সম্বত (১৫৫৬ খ্রিঃ) প্রভৃতি।
৪০. প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনার উপাদান কী কী?
উত্তর:- প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার প্রধান উপাদান হল সুপ্রাচীন গ্রন্থসমূহ। যথা – বেদ, রামায়ণ, মহাভারত। বিভিন্ন পণ্ডিতের লেখা জীবনচরিত। যথা – হর্ষচরিত, গৌড়বহো, রামচরিত, বিক্রমাঙ্কদেবচরিত প্রভৃতি। সমসাময়িক বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ এবং খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত মুদ্রা, লিপি, শিলাস্তম্ভ প্রভৃতি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনাদি।
৪১. ভারতে আগত কয়েকটি বিদেশী জাতির নাম উল্লেখ করো?
উত্তর:- ভারতে আগত কয়েকটি বিদেশী জাতি হল আর্য, গ্রীক, শক, হুন, তুর্কি, মুঘল প্রভৃতি।
৪২. প্রাচীন ভারতের কয়েকটি বিখ্যাত বন্দরের নাম কর।
উত্তর:- প্রাচীন ভারতের অন্যতম বিখ্যাত বন্দর ছিল চম্পা, তাম্রলিপ্ত, মসোলিয়া, মহাবলীপুরম, কাবেরীপত্তনম্, সপ্তগ্রাম, পুলিকট, মুসলিপত্তনম্ প্রভৃতি।
৪৩. প্রাচীন ভারতের কয়েকটি নগরের নাম লেখ।
উত্তর:- ভারতের প্রাচীন যুগের কয়েকটি বিখ্যাত নগর হল হস্তিনাপুর, ইন্দ্রপ্রস্থ, রাজগৃহ, চম্পা, কৌশল, সাঁচী, তক্ষশিলা, পুরুষপুর, উজ্জয়িনী, দ্বারকা, বলভী ইত্যাদি।
৪৪. ভারতের পুরাণের সংখ্যা কয়টি? কয়েকটি পুরাণের নাম কর।
উত্তর:- ভারতের পুরাণের সংখ্যা ১৮টি।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুরাণ হল বায়ুপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, মৎস্যপুরাণ, ভবিষ্যপুরাণ।
৪৫. প্রাচীন ভারতের দুটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কর।
উত্তর:- প্রাচীন ভারতের দুটি বিখাত বিশ্ববিদ্যালয় হল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ও তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়।
৪৬. ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের তিনটি গিরিপথের নাম কর।
উত্তর:- ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের তিনটি গিরিপথ হল খাইবার, বোলান ও গোমাল।
৪৭. ‘রঘুবংশম্’ ও ‘রত্নাবলী’ গ্রন্থদ্বয়ের লেখক কারা?
উত্তর:- ‘রঘুবংশম্’-এর রচয়িতা মহাকবি কালিদাস এবং ‘রত্নাবলী’র রচয়িতা হর্ষবর্ধন।
৪৮. ‘মুদ্রারাক্ষস’ কে রচনা করেন?
উত্তর:- বিশাখ দত্ত।
৪৯. ‘দায়ভাগ” গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
উত্তর:- জীমূতবাহন।
৫০. ‘মিতাক্ষরা’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
উত্তর:- বিজ্ঞানেশ্বর।
৫১. দুটি সিংহলী বৌদ্ধ সাহিত্য উপাদানের নাম লেখ।
উত্তর:- দুটি সিংহলী বৌদ্ধ সাহিত্য উপাদানের নাম দীপবংশ ও মহাবংশ।
৫২. প্রাচীন ভারতের লেখমালায় ব্যবহৃত দুটি প্রধান লিপির নাম লেখো।
উত্তর:- প্রাচীন ভারতের লেখমালায় ব্যবহৃত দুটি প্রধান লিপি হল ‘ব্রাহ্মী লিপি’ ও ‘খরোষ্ঠী লিপি’।
৫৩. বিষ্ণুপুরাণ থেকে কোন রাজবংশের কথা জানা যায়?
উত্তর:- মৌর্য বংশের।
৫৪. পুরাণে ভারতকে অন্য কী নামে উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর:- জম্বুদীপ।
৫৫. জনতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতাসীকে প্রধান কটি শাখায় ভাগ করা যায়?
উত্তর:- চারটি শাখায়।
৫৬. প্রাচীন ভারতবর্ষের একমাত্র ঐতিহাসিক গ্রন্থ কোনটি?
উত্তর:- রাজতরঙ্গিনী।
৫৭. মধ্যযুগে ভারতে আসা দুজন মুসলিম পর্যটকের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর:- মধ্যযুগে ভারতে আসা দুজন মুসলিম পর্যটক হলেন অলবেরুনী ও আলমামুদি (সুলেমান) ।
৫৮. প্রাচীন ভারত-ইতিহাসের উপাদান হিসেবে পুরাণের গুরুত্ব এত কম কেন?
উত্তর:- পুরাণ-কাহিনি প্রচলিত কিংবদন্তি রুপে বিখ্যাত। তাই এতে কল্পনার আধিক্য থাকা অসম্ভব নয়। তাছাড়া, পুরাণে বর্ণিত ঘটনার সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী বা তারও আগের। কিন্তু পুরাণ সংকলিত হয়েছে গুপ্তযুগে। তাই এতে অসংগতি থাকা স্বাভাবিক। তাই ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে পুরাণের গুরুত্ব কম।
৫৯. প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের মুখ্য উপাদান দুটি কি কি?
উত্তর:- সাহিত্যিক উপাদান ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান
৬০. অলবেরুনী রচিত গ্ৰন্থের নাম কি? তিনি কার সঙ্গে ভারতে আসেন?
উত্তর:- ‘তহকিক-ই-হিন্দ’। সুলতান মামুদের সঙ্গে ভারতে আসেন।