বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস প্রথম অধ্যায়: প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাসের উপাদান থেকে ৫ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – ইতিহাস রচনার উপাদন হিসাবে পুরাণের ভূমিকা আলোচনা করা হল।
ইতিহাস রচনার উপাদন হিসাবে পুরাণের ভূমিকা
প্রশ্ন:- ইতিহাস রচনার উপাদন হিসাবে পুরাণের ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তর:- প্রাচীনযুগে ইতিহাস রচনা করার উপযোগী উপাদানের অভাব ছিল না। বংশাবলীর সংকলন রচনা তৎকালীন ভারতীয় সমাজের একরূপ সংস্কার ছিল। প্রাচীনযুগে রাজবংশগুলির সংকলন এবং সেগুলি যত্নকরে রক্ষা করার প্রথা প্রচলিত ছিল। রাজবংশ এবং রাজাদের এইরূপ বহু তালিকা রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে পুরাণের গুরুত্ব অপরিসীম। পুরাণের বিষয়বস্তু হল স্বর্গ, প্রতিস্বর্গ, বংশ ও বংশানুচরিত। উইন্টারনিৎসের মতে-রাজনৈতিক ইতিহাস ও রাজবংশগুলির পরিচয় সম্পর্কে পুরাণের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। ভারতের পুরাণের সংখ্যা ১৮টি – (১) ব্রহ্মপুরাণ, (২) পদ্মপুরাণ, (৩) বিষ্ণুপুরাণ, (৪) শৈব পুরাণ, (৫) ভগবৎপুরাণ, (৬) নারদিয় পুরাণ, (৭) মারকাণ্ড পুরাণ, (৮) আগ্নেয় পুরাণ, (৯) ভবিষ্য পুরাণ, (১০) ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, (১১) লৈঙ্গ পুরাণ, (১২) বরাহ পুরাণ, (১৩) স্কন্দ পুরাণ, (১৪) বামণ পুরাণ, (১৫) কর্ম পুরাণ, (১৬) মৎস্য পুরাণ, (১৭) গরুড় পুরাণ (১৮) ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ।
হিন্দুধর্মের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে পুরাণের মুল্য যথেষ্ট। আঠারোটি পুরাণের মধ্যে বিষ্ণুপুরাণ, বায়ুপুরাণ, মৎস্যপুরাণ, ব্রহ্মপুরাণ, ভবিষ্যপুরাণ – এই পাঁচটি ইতিহাসের উপাদান হিসাবে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। পুরাণ থেকে মধ্য দেশের রাজাদের রাজত্বকালের বিবরণ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক স্মিথের মতে, “বিষ্ণুপুরাণ, মৎস্যপুরাণ যথাক্রমে মৌর্য এবং শিশুনাগ বংশের ইতিহাস জানতে সাহায্য করে।” পুরাণ থেকে ভারতের ভৌগোলিক অবস্থা ও বহু প্রাচীন শহরের বিবরণ পাওয়া যায়।
পুরাণের গুরুত্ব সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। কারো মতে পুরাণে বর্ণিত রাজবংশগুলি কল্পনাপ্রসূত এবং সমকালীন নৃপতিদের ইচ্ছানুযায়ী রচিত। কিন্তু এরূপ অনুমান যথার্থ নয়। ঐতিহাসিক স্মিথ দেখিয়েছেন যে, মৎস্য পুরাণে অন্ধ্র রাজাদের বংশতালিকা ও তাদের রাজত্বকাল যথার্থই দেওয়া হয়েছে। তবে পুরাণ ত্রুটিহীন নয়। পুরাণে বর্ণিত ঘটনাগুলির সত্যতা নির্ণয় করা কঠিন ও কষ্টসাধ্য। পুরাণে কিংবদন্তী এবং ঐতিহাসিক তথ্য এমনভাবে মিশে আছে যে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তথ্য আহরণ করা দরকার।
পুরাণে বর্ণিত সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক বা তারও পূর্ববর্তী। অথচ পুরাণ সংকলিত হয়েছে সম্ভবত গুপ্তযুগে। তাই এর মধ্যে প্রক্ষিপ্ত অংশ থাকা সম্ভব। অন্যদিকে আর. সি. হাজরা গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, প্রাচীনকালের ইতিহাস রচনায় পুরাণের সাহায্য নিশ্চিন্ত ভাবে নেওয়া যেতে পারে। তবে এই বিতর্কে না গিয়ে বলা যায় যে, অনান্য উপাদান থেকে সংগৃহীত তথ্যের পরিপূরক হিসেবে বা সমর্থনকারী হিসেবে পুরাণে বিবৃত তথ্যকে গ্রহণ করা যেতে পারে।