মহিয়ষী সন্ধ্যারাণী সিংহ ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সাহসী নারী সংগ্রামী ও সমাজসেবী। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল সমাজে নারী জাগরণ ঘটানো এবং জাতির মুক্তিসংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। তিনি কারাবরণ করতেও ভয় পাননি এবং নিজের আদর্শে অটল থেকেছেন। সন্ধ্যারাণী সিংহ ছিলেন আত্মত্যাগ, সাহস ও দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যিনি পরবর্তী প্রজন্মকে স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়ের পথে অনুপ্রাণিত করেছেন।
বিপ্লবী সন্ধ্যারাণী সিংহ
| ঐতিহাসিক চরিত্র | সন্ধ্যারাণী সিংহ |
| জন্ম | উত্তরপ্রদেশের বালিয়া |
| পরিচিতি | স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসেবী |
| কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্র | জাতীয় মুক্তি আন্দোলন, নারী সংগঠন ও সমাজ সংস্কার |
| প্রধান ভূমিকা | ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, নারী শিক্ষার প্রচার |
| আদর্শ | দেশপ্রেম, সাহস, ন্যায় ও সমাজসেবা |
| উল্লেখযোগ্য অবদান | নারীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত করা ও সমাজে নারী জাগরণের প্রচার |
| স্মৃতি | স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক সাহসী নারী বিপ্লবী হিসেবে স্মরণীয় |
সন্ধ্যারাণী সিংহ
ভূমিকা :- সন্ধ্যারাণী সিংহ ছিলেন ভারত-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের এক সাহসী ও নির্ভীক নারী বিপ্লবী। ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার ও দমননীতির বিরুদ্ধে তিনি যুবক বয়স থেকেই প্রতিবাদী ভূমিকা গ্রহণ করেন। সমাজে নারীর অধিকার ও শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে দেশের মুক্তির জন্য নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ প্রয়োজন, এবং সেই বিশ্বাস থেকেই তিনি অসংখ্য নারীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত করেছিলেন। নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন জাতির কল্যাণে, আর তাঁর ত্যাগ ও আদর্শ আজও অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিপ্লবী সন্ধ্যারাণী সিংহর জন্ম
সন্ধ্যারাণী দেবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলায়। উত্তরপ্রদেশের মেয়ে হয়েও তিনি কাজ করেছেন বাংলাদেশ-এ।
সন্ধ্যারাণী সিংহর বিবাহ
তাঁর বিবাহ হয়েছিল বিহারের লালবিহারী সিংহের সঙ্গে। লালবিহারী সিংহ বীরভূমে স্বায়ীভাবে বসবাস করেন। তিনি বীরভূম-এর প্রসিদ্ধ কংগ্রেস কর্মী।
বিপ্লবী সন্ধ্যারাণী সিংহর কংগ্রেসে যোগদান
স্বামীর প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে সন্ধ্যারাণী দেবী স্বামীর সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগদান করেন। ১৯৪০ সালে তিনি রামগড় কংগ্রেসের স্বেচ্ছাসেবিকা হয়ে কর্মনিষ্ঠার পরিচয় দেন। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে কংগ্রেসের আদর্শ প্রচার করেন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সন্ধ্যারাণী সিংহ
১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন-এ তিনি যোগদান করেন। সন্ধ্যারাণী দেবী আধা হিন্দী মেশানো বাংলাভাষায় মিষ্টি করে কথা বলে বড় সরকারী অফিসার থেকে আরম্ভ করে সহকর্মীদের পর্যন্ত হাসির খোরাক যোগাতেন।
বোলপুর কোর্টে সন্ধ্যারাণী দেবী
এই আন্দোলনের সময় সদলবলে বোলপুর কোর্টে গিয়ে তিনি বিচারককে বলেন “এইবার দাদা, আপনি ওখান থেকে নেমে আসুন, আমরা গিয়ে বসব।” শেষপর্যন্ত তাঁরা বোলপুরের কোর্ট বন্ধ করে দিতে সমর্থ হন।
দেওয়ানী আদালতে সন্ধ্যারাণী সিংহ
তিনি রামপুরহাটে এসে সেখানকার কর্মী মায়া ঘোষ-এর সঙ্গে মিলিত হন। রামপুরহাটের দেওয়ানী আদালতে গিয়ে প্রথমে তাঁরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তারপর ফৌজদারী আদালতের সামনে এসে বসে যান তাঁরা কোর্ট বন্ধ করে দেবার জন্য।
গ্রেপ্তার সন্ধ্যারাণী দেবী
সশস্থবাহিনী আসে তাঁদের বাধা দিতে। সাবিত্রী গান্ধীকে তারা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। প্রত্যেকটি কর্মী গুলীর সামনে সগৌরবে দাঁড়িয়ে রইলেন। বুকে তাঁদের অসীম বল, সাহসে মৃত্যুঞ্জয়ী তাঁরা। পুলিস সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় সন্ধ্যারাণী দেবী, মায়া ঘোষ, সাবিত্রী গান্ধী প্রমুখকে।
সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত সন্ধ্যারাণী সিংহ
বিপ্লবী সন্ধ্যারাণী সিংহকে একবছর তিনমাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রেখে দেয় তাঁকে রাজসাহী জেলে।
ভূদান যজ্ঞের কাজে সন্ধ্যারাণী দেবী
তিনি বর্তমানে ভূদান যজ্ঞের কাজে লিপ্ত আছেন। নিজেদের প্রায় সমস্ত জমি তাঁরা ভূদান যজ্ঞে দান করেছেন।
আজও স্মরণীয় সন্ধ্যারাণী সিংহ
স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক সাহসী নারী বিপ্লবী হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয়।
উপসংহার :- সন্ধ্যারাণী সিংহ ছিলেন এক নির্ভীক দেশপ্রেমিকা, যিনি সমাজ ও জাতির মুক্তির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের কঠিন সময়ে তিনি সাহস, আত্মত্যাগ ও দৃঢ়তার মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলেন যে নারীরাও জাতির মুক্তিসংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাঁর জীবন আমাদের শেখায় দেশপ্রেম, ন্যায়বোধ ও সমাজকল্যাণের প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতির মূল্য। সন্ধ্যারাণী দেবী আজও স্মরণীয়, কারণ তিনি শুধু স্বাধীনতার জন্য লড়েননি, বরং সমাজে নারীর মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠার পথও দেখিয়েছিলেন।
(FAQ) সন্ধ্যারাণী সিংহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
সন্ধ্যারাণী সিংহ ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী নারী সংগ্রামী ও সমাজসেবী, যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন এবং নারী সমাজকে এই আন্দোলনে অংশ নিতে উৎসাহিত করেছিলেন।
তাঁর প্রধান অবদান ছিল নারী জাগরণ, শিক্ষা প্রসার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের যুক্ত করা।
হ্যাঁ, ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে তিনি কারাবরণ করেছিলেন।
তাঁর জীবন থেকে আমরা দেশপ্রেম, সাহস, আত্মত্যাগ ও সমাজের উন্নতির জন্য অবিচল নিষ্ঠা শেখার অনুপ্রেরণা পাই।
তিনি স্মরণীয় কারণ তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীর শক্তি ও ভূমিকার এক উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন এবং সমাজে নারীসমাজের মর্যাদা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছিলেন।