মুক্তি সংগ্রামী সরোজ আভা দাসচৌধুরী (নাগ) একজন সাহসী নারী বিপ্লবী ছিলেন, যিনি অনুশীলন সমিতির মহিলা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে, বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়ে এবং কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হয়েও স্বাধীনতা সংগ্রামে অবিরাম অবদান রেখেছেন। তিনি একজন নারী নেত্রী হিসেবে সমাজ ও রাজনীতির জটিলতায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
বিপ্লবী সরোজ আভা দাসচৌধুরী (নাগ)
ঐতিহাসিক চরিত্র | সরোজ আভা দাসচৌধুরী (নাগ) |
জন্মস্থান | বরিশাল (বর্তমান বাংলাদেশ) |
পিতামাতা | রোহিণীকুমার দাসচৌধুরী, প্রমোদাসুন্দরী দেবী |
স্বামীর নাম | ধীরেন্দ্রনাথ নাগ (বিপ্লবী) |
বিপ্লবী সংগঠন | অনুশীলন সমিতি |
প্রধান কার্যকলাপ | বিপ্লবীদের আশ্রয় ও সহায়তা, ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ |
গুরুত্বপূর্ণ মামলা | টিটাগড় ষড়যন্ত্র মামলা |
মৃত্যু | কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিক মৃত্যু |
সরোজ আভা দাসচৌধুরী (নাগ)
ভূমিকা :- সরোজ আভা দাসচৌধুরী (নাগ) ছিলেন ভারতবর্ষ-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের এক সাহসিনী নারী বিপ্লবী। তিনি বিশেষত বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। সরোজ দাসচৌধুরী (নাগ) কেবল একজন বিপ্লবীই নন, তিনি নারীদের বিপ্লবী আন্দোলনে যুক্ত করার পথিকৃত হিসেবেও ইতিহাসে স্মরণীয়। তাঁর জীবন ছিল আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও আদর্শের প্রতিচ্ছবি।
সরোজ আভা দাসচৌধুরীর জন্মস্থান
নারী বিপ্লবী সরোজ আভা দাসচৌধুরী জন্মগ্রহণ করেছিলেন বরিশালে। পৈতৃক দেশ তাঁদের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের জামির্তা গ্রামে।
বিপ্লবী সরোজ আভার পিতামাতা
তাঁর পিতার নাম রোহিণীকুমার দাসচৌধুরী, মায়ের নাম প্রমোদাসুন্দরী দেবী।
সরোজ দাসচৌধুরীর শিক্ষা
১৯৩৭ সালে তিনি বরিশাল থেকে বি.এ. পাস করেন।
অনুশীলন সমিতির নীতিতে দীক্ষিত সরোজ আভা দাস
১৯২৯ সালে তিনি বিপ্লবী প্রতিষ্ঠান অনুশীলন সমিতির নীতিতে বরিশালে দীক্ষিত হন। তিনি স্থানীয় অনুশীলন দলের মহিলা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাত্রী ছিলেন।
বিপ্লবীদের প্রধান অবলম্বন সরোজ আভা দাসচৌধুরীর বাড়ী
ছাত্রীদের মধ্যে সংগঠন তো করতেনই, তার প্রভাবে তার মা-ভাইরাও প্রভাবিত হন এবং সমস্ত পরিবারটাই বিপ্লবীদের একটি প্রধান অবলম্বন স্বরূপ হয়। তাঁদের বাড়ীতে নিষীদ্ধ পুস্তক ও অন্যান্য দ্রব্য লুক্কায়িত থাকত।
বিপ্লবীদের সহায়তায় সরোজ আভা দাস
টিটাগড় ষড়যন্ত্র মামলার পূর্বে সংশ্লিষ্ট আত্মগোপনকারী বিপ্লবীরা দুর্যোগের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন। এই সময় সরোজ আভা দাসচৌধুরী ও তাঁর সহকর্মী মেয়েরা অর্থ দিয়ে এবং অলঙ্কার বিক্রি করে বিপ্লবীদের জীবন-যাপনের ও বিপ্লব প্রচেষ্টায় সাহায্য করতেন।
গোপন বিপ্লবী কেন্দ্র সরোজ আভা দাসের বাড়ী
বিপ্লবীদের আশ্রয়ের একটা গোপন কেন্দ্র ছিল সরোজ আভার গৃহ। এই নিশ্চিত আশ্রয় যদি উন্মুক্ত না থাকত তবে বিপ্লবীদের অনেকেরই সেই সময় বাইরে থেকে কাজ করা প্রায় অসম্ভব হত।
পুলিসের জেরায় সরোজ আভা দাস
এরপর সরোজ আভা দাসচৌধুরী পুলিসের নজরে পড়ে যান। তাদের বাড়ী তল্লাসী করা, তাকে বার বার থানার নিয়ে গিয়ে জেরা করা হতে থাকে। কিন্তু তিনি তাঁর বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দ্বারা সব সময় পুলিসের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিয়েছেন।
রাজবন্দী সরোজ দাসচৌধুরী
অবশেষে ১৯৩৫ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ডেটিনিউ রূপে দিনাজপুর, দার্জিলিং, মেদিনীপুর প্রভৃতি নানা জেলে বন্দী রাখে প্রায় দুই বছর। ১৯৩৭ সালে তিনি মুক্তি পান।
সরোজ আভা দাসের বিবাহ
১৯৩৮ সালে বিপ্লবী কর্মী ধীরেন্দ্রনাথ নাগের সঙ্গে সরোজ আভা দাসচৌধুরীর বিবাহ হয়।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সরোজ আভা নাগ
১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন-এর সময়ও তিনি নিজের বাড়ীকে কর্মীদের আশ্রয়-কেন্দ্র করেন। কর্মীরা তাঁর আশ্রয়ে থেকে আন্দোলন পরিচালনা করেন।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরোজ আভা নাগ
১৯৩৮ সালে তিনি ও তাঁর স্বামী কলকাতায় ‘মহামানব শিক্ষাসদন’ নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন জাতিগঠনের উদ্দেশ্যে। এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমে সরোজ আভা নাগ অনেক বস্তী ও দরিদ্রের মধ্যে সমাজসেবার কাজ করতেন।
সরোজ আভা নাগের মৃত্যু
১৯৫১ সালের ১৯শে আগস্ট দুরারোগ্য রোগে অকস্মাৎ তাঁর মৃত্যু হয়। একটি নিরভিমান ও নীরব কর্মী সেদিন অকালে বিদায় নিলেন। কত দরিদ্র পরিবার ও অসহায় নারী যে সেদিন অনাথ হয়ে গেলেন তা বলা যায় না।
উপসংহার :- বিপ্লবী সরোজ আভা দাসচৌধুরী (নাগ) ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক নির্ভীক, সাহসী ও সংগ্রামী নারীর প্রতীক। তিনি শুধু একজন বিপ্লবীর সহধর্মিণী নন, বরং নিজেই ছিলেন বিপ্লবী আদর্শের ধারক ও বাহক। সরোজ আভা দাসচৌধুরীর সংগ্রামী অবদান আজও ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে আছে। তাঁর মত নারীদের আত্মোৎসর্গ ও সাহসিকতা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
(FAQ) বিপ্লবী সরোজ আভা দাসচৌধুরী (নাগ) সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
সরোজ আভা দাসচৌধুরী (নাগ) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী নারী বিপ্লবী। তিনি অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত থেকে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তিনি মূলত অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সমিতির নারী শাখা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
তাঁর স্বামী ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ নাগ, যিনি নিজেও একজন খ্যাতনামা বিপ্লবী ছিলেন।
তিনি টিটাগড় ষড়যন্ত্র মামলার সময় বিপ্লবীদের আশ্রয় ও সহযোগিতা করেছিলেন। এছাড়া ১৯৪২ সালের ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’-এও তিনি গোপনে বিপ্লবীদের সহায়তা করেছিলেন।
হ্যাঁ, ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৭ সালের মধ্যে তিনি রাজবন্দি হিসেবে ব্রিটিশ শাসকদের দ্বারা কারাবন্দি হন।
তিনি এক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
নারীদের বিপ্লবী আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা, বিপ্লবীদের গোপনে সহায়তা এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা তাঁর স্মরণীয় অবদান।