সরযূ গুপ্তা

মহিয়ষী সরযূ গুপ্তা ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক সাহসী ও দেশপ্রেমিক মহিলা বিপ্লবী। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং নারী সমাজকে রাজনৈতিক সচেতনতা ও স্বাধীনতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর অবদান সমাজে নারীর ভূমিকা ও স্বাধীনতার সংগ্রামে নারীশক্তির প্রতীক হিসেবে স্মরণীয়। সরযূ গুপ্তার জীবন ত্যাগ, দেশপ্রেম ও সংগ্রামী মনোভাবের উজ্জ্বল উদাহরণ, যা আজও ভারতীয় স্বাধীনতা ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।

সরযূ গুপ্তা

ঐতিহাসিক চরিত্রসরযূ গুপ্তা
জন্ম১৮৮৮ খ্রি, কলকাতা
পরিচিতিস্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসেবিকা
কার্যক্ষেত্রব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, নারী জাগরণ, সমাজসংগঠন
আন্দোলনে ভূমিকাবিভিন্ন দেশপ্রেমিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, নারীদের সংগঠিত করা
অবদাননারী সমাজকে স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত করা ও সামাজিক সংস্কারে ভূমিকা রাখা
আদর্শমহাত্মা গান্ধী ও ভারতীয় বিপ্লবীদের দেশপ্রেমিক চিন্তাধারা
মৃত্যু১৯৪৫ খ্রি

সরযূ গুপ্তা

ভূমিকা :- সরযূ গুপ্তা ছিলেন ভারত-এর স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসিনী নারী, যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশের মুক্তির জন্য। তিনি এমন এক সময়ে সমাজে নারী হিসেবে সংগ্রাম শুরু করেন, যখন নারীদের জনজীবনে অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত সীমিত। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং সমাজে নারী জাগরণের বার্তা ছড়িয়ে দেন। তাঁর চিন্তা, আদর্শ ও কর্মপ্রচেষ্টা ভারতীয় নারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তোলে। সরযূ গুপ্তার জীবন কেবল এক বিপ্লবীর গল্প নয়, বরং নারীশক্তির উত্থান ও সমাজ পরিবর্তনের এক অনুপ্রেরণামূলক অধ্যায়।

সরযূ গুপ্তার জন্ম

কলকাতায় ১৮৮৮ সালে সরযূ গুপ্তা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ী ঢাকা-বিক্রমপুরের সোনারং গ্রামে।

বিপ্লবী সরযূ গুপ্তার পিতামাতা

তাঁর পিতার নাম দেবেন্দ্রমোহন সেন ও মাতার নাম কুমুদিনী সেন।

গান্ধীজীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ সরযূ দেবী

সরযূ দেবী গান্ধীজীর আদর্শে প্রবুদ্ধ হয়ে সারাজীবন কংগ্রেসের কাজ করে গেছেন। ১৯২৪ সালে ঢাকার ‘গেণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি’র সঙ্গে তিনি প্রথম থেকেই যুক্ত ছিলেন।

চিকিৎসায় পারদর্শী সরযূ দেবী

সরযূ গুপ্তার হোমিওপ্যাথী চিকিৎসা এবং ধাত্রীবিদ্যায় পারদর্শিতা ছিল। তিনি ঐ মহিলা-সমিতির স্বাস্থ্য-বিভাগের মাধ্যমে রুগ্নব্যক্তিদের হোমিওপ্যাথী চিকিৎসা দ্বারা সুস্থ করতেন। ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে প্রসূতিদের তিনি প্রসব-কালীন সহায়তা ও শিশুদের পরিচর্যা করতেন।

আইন অমান্য আন্দোলনে সরযূ গুপ্তা

১৯২৮ সালের কলকাতা কংগ্রেসে তিনি ঢাকা জেলার কংগ্রেস প্রতিনিধি-রূপে যোগদান করেন। ১৯৩০ সালে সত্যাগ্রহী সেবিকা দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে তিনি আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

কারাদণ্ডে দণ্ডিত সরযূ দেবী

১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জে বিদেশী বস্ত্রের দোকানে পিকেটিং চলতে থাকে। তার ফলে সরযূ গুপ্তা, কামিনী বসু, সুনীতি বসু ও প্রতিভা সেন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। এঁদের মধ্যে সুনীতি বসু ভিন্ন অন্য তিনজনই ছিলেন বিধবা।

সরযূ গুপ্তার নেতৃত্বে জেলে আন্দোলন

তাঁরা যখন জেলে গেলেন তখন বিধবাদের অখাদ্য সাধারণ লঙ্গরখানার কয়েদীদের রান্না (ফাইলের ভাত) তাঁদের খেতে দেওয়া হয়। তাঁরা সরযূ গুপ্তার নেতৃত্বে স্বহস্তে রান্না করে খাবার দাবী জানান। নানাপ্রকার ভীতিপ্রদর্শনের পরও তাঁদের দৃঢ়তা দেখে জেল কর্তৃপক্ষ বিধবাদের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হন।

ডিক্টেটার সরযূ গুপ্তা

১৯৩২ সালের ৪ঠা জানুয়ারি গান্ধীজীর গ্রেপ্তারের পর যখন পুনরায় আইন অমান্য আন্দোলন আরম্ভ হয় তখন সরযূ দেবী ঢাকা জেলা কংগ্রেস কমিটির ডিক্টেটার নির্বাচিত হন।

শোভাযাত্রার পরিচালনায় সরযূ দেবী

তিনি কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকসহ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে একটি শোভাযাত্রা পরিচালনা করেন। সেই সময়ে ঘোডসোয়ার পুলিস তাঁদের ঘিরে ফেলে ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি জাতীয় পতাকাহস্তে দৃঢ়পদক্ষেপে শোভাযাত্রা নিয়ে অগ্রসর হন। অবশেষে তাঁকে এবং স্বেচ্ছাসেবকদের গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

সরযূ গুপ্তার মৃত্যু

কারামুক্তির কিছুকাল পরে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে যায়। ১৯৪৫ সালে তিনি পরলোকগমন করেন।

উপসংহার :- সরযূ দেবী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ও অনুপ্রেরণাদায়ী নাম। তিনি সমাজে নারীর ভূমিকার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন এবং প্রমাণ করেছিলেন যে দেশপ্রেম ও সাহসের কোনো লিঙ্গভেদ নেই। তাঁর ত্যাগ, সাহস ও দৃঢ়সংকল্প পরবর্তী প্রজন্মের নারীদের স্বাধীনচেতা ও দেশপ্রেমিক হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। যদিও তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত ঐতিহাসিক তথ্য সীমিত, তবুও সরযূ দেবী ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের এক নির্ভীক কণ্ঠস্বর হিসেবে স্মরণীয় — যিনি নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে দেশের মুক্তির জন্য লড়ে গেছেন।

(FAQ) সরযূ গুপ্তা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?

১. সরযূ গুপ্তা কে ছিলেন?

সরযূ গুপ্তা ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক সাহসী নারী বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে জাতীয় চেতনা ও নারী জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

২. সরযূ গুপ্তা কোন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

তিনি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয় ছিলেন এবং সমাজে নারীদের সংগঠিত করে জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতেন।

৩. সরযূ গুপ্তার প্রধান অবদান কী ছিল?

তাঁর প্রধান অবদান ছিল নারী সমাজকে স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করা এবং সমাজে নারীশিক্ষা ও দেশপ্রেমের চেতনা জাগিয়ে তোলা।

৪. সরযূ গুপ্তা কি কোনো নির্দিষ্ট সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী তাঁর নির্দিষ্ট সংগঠন সংযুক্তির তথ্য সীমিত, তবে তিনি স্থানীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

৫. সরযূ গুপ্তা কীভাবে স্মরণীয়?

তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নারী অগ্রদূতদের অন্যতম হিসেবে স্মরণীয়, যিনি ত্যাগ, সাহস ও দেশপ্রেমের এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

Leave a Comment