২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় শিভালরি

সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় শিভালরি প্রসঙ্গে কথার উৎপত্তি ও অর্থ, প্রতিরক্ষা বাহিনী, নাইটের নিয়োগ, নাইটদের জীবনযাত্রা, শিভালরির আচরণবিধি, শিভালরির যুগে নাইটদের বীরত্ব, আদর্শ ও তার গাঁথা, ট্রুবাদুরদের গানের বিষয়, শিভালরির অবক্ষয় ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।

শিভালরি প্রসঙ্গে ফরাসি শব্দ শিভেলিয়ার থেকে ‘শিভালরি’ কথার উত্পত্তি, শিভালরি কথার অর্থ অশ্বারােহী, শিভালরির আচরণবিধি, নাইটের নিয়োগ, শিভালরির যুগে নাইটদের বীরত্ব, নাইটদের জীবনযাত্রা, শিভালরির অবক্ষয় ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।

Table of Contents

শিভালরি

ঐতিহাসিক ঘটনাশিভালরি
‘শিভেলিয়ার’অশ্বারোহী
‘ক্যাবালাস’ঘোড়া
কৃত্রিম যুদ্ধটুর্নামেন্ট
‘ট্রুবাদুর’ফ্রান্স
‘মিনস্ট্রেল’ইংল্যান্ড
জার্মানি‘মিনেসিঙ্গার’
শিভালরি

ভূমিকা :- ইউরোপ-এ সামন্ততন্ত্র-এর শেষদিকে, বিশেষ করে ত্রয়োদশ শতকে সামন্ত ব্যবস্থায় বিশেষ এক ধরনের বীরত্বের আদর্শ গড়ে ওঠে। এই ব্যবস্থা সাধারণভাবে শিভালরি (Chivalry) নামে পরিচিত।

শিভালরি কথার উৎপত্তি ও অর্থ

এই ‘শিভালরি’ কথাটির উৎপত্তি হয়েছে ফরাসি শব্দ ‘শিভেলিয়ার’ থেকে যার অর্থ হল ‘অশ্বারোহী’। কারও কারও মতে, লাতিন শব্দ ‘ক্যাবালাস’ থেকে ‘শিভালরি’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। ক্যাবালাস শব্দটির অর্থ হল ঘোড়া।

প্রতিরক্ষা বাহিনী শিভালরি

সামন্তপ্রভুদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে নাইটদের নিয়ে গঠিত বিশেষ প্রতিরক্ষা বাহিনীই ছিল শিভালরি। মধ্যযুগের অরাজকতা ও বিশৃঙ্খল সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই এই প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে উঠেছিল।

শিভালরির যুগে নাইটের নিয়োগ

  • (১) সামন্তপ্রভুর নিরাপত্তার প্রয়োজনে গঠিত প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নাইটদের নিয়োগ করা হত। নাইটরা ছিল উচ্চবংশীয় যোদ্ধা। সাধারণত সামন্তপ্রভু বা অভিজাত পরিবারের পুত্রসন্তানরাই নাইট হত। সামন্তপ্রভু তাঁর সন্তানকে নাইট তৈরি করার উদ্দেশ্যে বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষিত করতেন। অশ্বারোহণ, যুদ্ধবিদ্যা, শিকার প্রভৃতি ছিল এই শিক্ষার প্রধান অঙ্গ।
  • (২) অভিজাত পিতা তাঁর পুত্রকে মাত্র সাত বছর বয়সেই আত্মীয়, বন্ধু বা প্রভুর আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিত। সেখানে সে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি ভদ্রতা, সদাচরণ, শিকার, ধর্মনীতি, আজ্ঞা পালন প্রভৃতি সম্পর্কে শিক্ষালাভ করত। চোদ্দো বছর বয়সে সে কোনো যোদ্ধার কাছ থেকে যুদ্ধবিদ্যার পাঠ নিত। এই সময় তাকে অশ্বারোহণ, অস্ত্রচালনা, ঢাল বহন প্রভৃতি শিখতে হত।
  • (৩) যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষার পর একুশ বছর বয়সে অভিজাত যুবকটি এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘নাইট’ বা বীর যোদ্ধা হিসেবে গণ্য হত। অবশ্য নাইটদের বহু বিষয়ে শিক্ষালাভ করতে হলেও তাতে লেখাপড়া শেখার কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে বহু নাইট সম্পূর্ণ নিরক্ষর থাকত।

ইউরোপে শিভালরির যুগে নাইটদের জীবনযাত্রা

  • (১) শিভালরির আদর্শের দ্বারা বিশেষ এক ধরনের আচরণবিধিকে বোঝানো হত। মধ্যযুগের ‘নাইট’ নামে বীর যোদ্ধারা এই আচরণবিধি মেনে চলত। নাইটদের প্রধানত তিনটি আচরণবিধি বা দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট ছিল – যুদ্ধ করা, ধর্মপালন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করা এবং নারীজাতির মর্যাদা রক্ষা করা।
  • (২) নাইটরা ছিল সামন্ততান্ত্রিক যুগের বীর যোদ্ধা। তারা সমগ্র দেহ লৌহ বর্মে আবৃত করে দুরন্ত গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত এবং শত্রুর আক্রমণ থেকে স্থানীয় সাধারণ মানুষকে রক্ষা করত। ধর্মপালন ও নারীজাতির প্রতি মর্যাদা দানেও তাদের বিশেষ ভূমিকা ছিল।
  • (৩) এ ছাড়া প্রভুর প্রতি বিশ্বস্ততা, দুর্বলকে রক্ষা, ভদ্রতা প্রদর্শন প্রভৃতিও নাইটদের আচরণবিধির অন্যতম অঙ্গ ছিল। নাইটরা অবসর সময়ে কৃত্রিম যুদ্ধ, শিকার প্রভৃতির মাধ্যমে সময় কাটাত। প্রতিদ্বন্দ্বীর বর্শা ভেঙে বা তাকে ঘোড়া থেকে ফেলে দিয়ে একজন নাইট বিজয়ীর পুরস্কার পেত। নাইটদের এই কৃত্রিম যুদ্ধ ‘টুর্নামেন্ট’ নামে পরিচিত ছিল।

শিভালরির আচরণবিধি

ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, প্রভুর প্রতি বিশ্বস্ততা, যুদ্ধযাত্রা, ধর্মরক্ষা, দুর্বলকে রক্ষা, ভদ্রতা, নারীর প্রতি সম্মান প্রভৃতি ছিল শিভালরির প্রধান আচরণবিধি। মধ্যযুগের নাইটদের এই আচরণবিধি মেনে চলতে হত।

নাইটদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ

মধ্যযুগে সামন্তপ্রভু ও অভিজাতদের প্রধান কাজ ছিল তাঁদের প্রভুর প্রয়োজনে যুদ্ধকার্যে নিযুক্ত হওয়া। এজন্য অভিজাত পরিবারের সন্তানদের বাল্যকাল থেকেই যুদ্ধবিদ্যা ও বিভিন্ন আদর্শ শিক্ষাদান করা হত ।

নাইট যোদ্ধার শিক্ষালাভ

অভিজাত পিতা তাঁর পুত্রকে মাত্র সাত বছর বয়সেই আত্মীয়, বন্ধু বা প্রভুর আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিতেন। সেখানে সে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি ভদ্রতা, সদাচরণ, শিকার, ধর্মনীতি, আজ্ঞা পালন প্রভৃতি সম্পর্কে শিক্ষালাভ করত। চোদ্দো বছর বয়সে সে কোনো যোদ্ধার কাছ থেকে যুদ্ধবিদ্যার পাঠ নেওয়ার সময় অশ্বারোহণ, অস্ত্রচালনা, ঢাল বহন প্রভৃতি শিখত।

নাইট হিসেবে স্বীকৃতিলাভ

যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষার পর একুশ বছর বয়সে অভিজাত যুবকটি এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্নান করে সারারাত দুর্গের গির্জায় প্রার্থনা করত। প্রভুর কাছে দীক্ষালাভ করে সে ‘নাইট’ বা বীর যোদ্ধা হিসেবে গণ্য হত।

নাইটদের নিরক্ষরতার অভিশাপ

শিভালরির আদর্শে লেখাপড়া শেখার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নাইটরা অনেকেই সম্পূর্ণ নিরক্ষর হত।

শিভালরির যুগে নাইটদের বীরত্ব ও আদর্শ

মধ্যযুগে যুদ্ধের মাধ্যমে বহিরাগত শত্রুর মোকাবিলা করে স্থানীয় সাধারণ মানুষদের রক্ষা, ধর্ম রক্ষা, নারীজাতির মর্যাদা রক্ষা, অসহায় ও আর্তের সেবা প্রভৃতি কাজে বীর নাইটরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।

শিভালরির যুগে নাইটদের বীরত্ব ও আদর্শ-গাথা

  • (১) মধ্যযুগে নাইটদের বীরত্ব, আদর্শ ও প্রেমের কাহিনি ইউরোপে একদল চারণকবি গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে গেয়ে শোনাতেন। এই সকল চারণকবি দক্ষিণ ফ্রান্সে ‘ট্রুবাদুর’, ইংল্যান্ডে ‘মিনস্ট্রেল’ এবং জার্মানিতে ‘মিনেসিঙ্গার’ নামে পরিচিত ছিল। নাইটদের শিভালরি বা বীরত্বের কাহিনিই ছিল ট্রবাদুরদের গানের প্রধান বিষয়বস্তু।
  • (২) ফ্রান্সের চারণকবিরা বীর যোদ্ধা রোল্যান্ড ও শার্লামেন-এর বীরত্বের কাহিনি নিয়ে, স্পেন-এর চারণকবিরা এল সিড ও অন্যান্য বীরদের কাহিনি নিয়ে, ইংল্যান্ডের চারণকবিরা রাজা আর্থার ও রবিন হুডের কাহিনি নিয়ে গান রচনা করেছিলেন।
  • (৩) তাদের গানে অসুস্থ, বৃদ্ধ ও আর্তের প্রতি নাইটদের সেবা, নারীজাতির প্রতি নাইটদের শ্রদ্ধা প্রভৃতি বিষয়ও প্রকাশ পেয়েছিল। এ ছাড়া এই সকল চারণকবিরা নাইটদের জীবনের প্রেমকাহিনি নিয়েও গান রচনা করতেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ইসোল্ড ও ট্রিস্টান-এর প্রেমকাহিনি নিয়ে রচিত অনবদ্য গান।

টুবাদুরদের গানের বিষয়বস্তু

ট্রুবাদুরদের গানের বিষয়বস্তুর বেশ বৈচিত্র্য ছিল। যেমন –

(১) বীরত্বের কাহিনি

নাইটরা যে শিভালরি বা বীরত্বের আদর্শ মেনে চলত সেই কাহিনি ছিল চারণকবিদের গানের প্রধান বিষয়বস্তু। ফ্রান্সের চারণকবিরা বীর নাইট রোল্যান্ড ও শার্লামেনের বীরত্বের কাহিনি নিয়ে, স্পেনের চারণকবিরা এল সিড ও অন্যান্য বীরদের নিয়ে, ইংল্যান্ডের চারণকবিরা রাজা আর্থার, তাঁর অনুগামী নাইট ও রবিন হুডের কাহিনি নিয়ে গান রচনা করেছিলেন।

(২) সেবাকার্যের কাহিনি

বীর নাইটরা মধ্যযুগীয় সমাজের অস্থিরতার মধ্যেও নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে আর্ত ও অসহায়ের সেবায় নিবেদিত প্রাণ হয়ে উঠেছিল। অসুস্থ, বৃদ্ধ ও অসহায়দের সহায়তা করে, শরণাগতকে যে-কোনো মূল্যে রক্ষা করে নাইটরা নিজেদের বীরধর্মের যে পরিচয় স্থাপন করেছিল তা ট্রুবাদুরদের গানে প্রকাশ পেত।

(৩) প্রেমকাহিনি

বীর নাইটদের প্রেমকাহিনি নিয়ে চারণকবিরা গান রচনা করতেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ইসোল্ড ও খ্রিস্টান-এর কাহিনি নিয়ে অনবদ্য গান। নাইটরা তাদের ‘লেডি লাভের’ প্রতি প্রেমের জন্য আত্মবিসর্জন দিতেও প্রস্তুত ছিল। নাইটের প্রণয়িনীই ছিল তার যাবতীয় ত্যাগ, বীরত্ব ও মহানুভবতার মূল উৎস – এ কথা ট্রুবাদুরদের গানে উঠে এসেছে।

(৪) নারীর মর্যাদা রক্ষার কাহিনি

নারীজাতির প্রতি নাইটদের সীমাহীন শ্রদ্ধা ছিল। তাঁরা নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার উদ্দেশ্যে সর্বদা গভীর মনোযোগী ছিলেন এবং সংকটাপন্ন নারীকে সহায়তা প্রদানের জন্য জীবন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত ছিলেন। নারীজাতির প্রতি নাইটদের মর্যাদা প্রদানের কাহিনি নিয়েও চারণকবিরা প্রচুর গান রচনা করেছেন।

(৫) লোকসংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ভাষার বিকাশ

ট্রুবাদুররা বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে ব্যারন, ডিউক প্রমুখ সামন্তপ্রভুদের প্রাসাদে ও দুর্গে, কৃষকের বাসস্থানে তাঁদের সংগীত পরিবেশন করে লোকসংস্কৃতির বিকাশ ঘটান। এঁরা আঞ্চলিক ভাষায় গান রচনা করতেন বলে আঞ্চলিক ভাষাগুলিও ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

শিভালরির অবক্ষয়

নাইটরা শিভালরির যেসব সুমহান আদর্শ পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল সেই অঙ্গীকার থেকে বারংবার বিচ্যুত হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিরূপ সমালোচনা করা হয়। সমালোচনা করা হয় যে, তারা ধর্মের চেয়ে কুসংস্কারে বেশি ডুবে গিয়েছিল, যুদ্ধের চেয়ে লুঠতরাজে বেশি জড়িয়ে পড়েছিল এবং সুযোগ পেলেই তারা নারীজাতির অসম্মান করত। ফলে নাইটদের বীরত্বের তথাকথিত আদর্শ বাস্তবে রূপায়িত হয় নি।

শিভালরির গুরুত্ব

তা সত্ত্বেও মধ্যযুগে নাইটদের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেমন –

  • (১) নাইটরা অরাজকতা দূর করে ইউরোপে শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে এসেছিল।
  • (২) তারা ধর্মযুদ্ধে (ক্রুসেড) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
  • (৩) তারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসহায়ের সেবায় যেভাবে কাজ করেছিল তা প্রশংসার যোগ্য।
  • (৪) তারা ধর্মরক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

উপসংহার :- মধ্যযুগের শিভালরির আদর্শ ও নাইটদের কেন্দ্র করে ইউরোপে নতুন ধরনের সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছিল। নাইটদের বীরত্বের কাহিনি নিয়ে রচিত চারণকবিদের গানের মধ্যে দিয়েই লিরিক বা গীতিকবিতার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

(FAQ) সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় শিভালরি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন ফরাসি শব্দ থেকে শিভালরি কথার উৎপত্তি হয়েছে?

‘শিভেলিয়ার’ এর অর্থ অশ্বারোহী।

২. নাইটদের দায়িত্ব কি ছিল?

যুদ্ধ করা, ধর্মপালন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করা এবং নারীজাতির মর্যাদা রক্ষা করা।

৩. নাইটদের কৃত্রিম যুদ্ধ কি নামে পরিচিত ছিল?

টুর্নামেন্ট।

৪. নাইটদের বীরত্বের কাহিনী গেয়ে শোনাতেন কারা?

একদল চারণকবি।

৫. সামন্ততন্ত্রের পুষ্প কাকে বলা হয়?

শিভালরি।

Leave a Comment