শক-ক্ষত্রপগণ প্রসঙ্গে ক্ষত্রপ ব্যবস্থার উৎপত্তি, ক্ষত্রপদের দুই শাখা, মথুরার ক্ষত্রপ, ক্ষহরত ক্ষত্রপগণ, কার্দমক ক্ষত্রপ ও অন্যান্য ক্ষত্রপ সম্পর্কে জানবো।
শক ক্ষত্রপগণ প্রসঙ্গে ক্ষত্রপ কি, ক্ষত্রপ ব্যবস্থার উৎপত্তি, ক্ষত্রপদের দুটি শাখা, মথুরার ক্ষত্রপ, ক্ষহরত ক্ষত্রপগণ, ক্ষহরত ক্ষত্রপ ভুমক ও নহপান, মহাক্ষত্রপ নহপান, কার্দমক ক্ষত্রপ চষ্টন, সর্বশ্রেষ্ঠ শক ক্ষত্রপ রুদ্রদামন, শক ক্ষত্রপ রুদ্রদামনের জুনাগড় শিলালিপি, ভারতের প্রথম শক রাজা, ভারতের শ্রেষ্ঠ শক রাজা ও অন্যান্য ক্ষত্রপগণ।
শক-ক্ষত্রপগণ
ঐতিহাসিক চরিত্র | শক-ক্ষত্রপগণ |
শাখা | ক্ষহরত ও কার্দমক |
ক্ষহরত শ্রেষ্ঠ | নহপান |
কার্দমক শ্রেষ্ঠ | রুদ্রদামন |
ভূমিকা :- প্রাচীন পারসিক শব্দ ক্ষত্র-পবন থেকে ‘ক্ষত্রপ’ কথাটির উদ্ভব হয়েছে। গ্রীকরা এই কথাটিকে স্যাট্রাপ বলে উচ্চারণ করত। কথাটির আদি অর্থ ছিল “রাজ্যের রক্ষক”।
ক্ষত্রপ ব্যবস্থার উৎপত্তি
- (১) খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে পারসিক অধিকার বিস্তৃত হলে পারসিকরা শাসন চালাবার জন্য ক্ষত্রপ নামে শাসনকর্তা নিয়োগ করত। খ্রিস্ট পূর্ব প্রথম শতকে ভারত -এ ইন্দো-গ্রীক শাসন স্থাপিত হলে ইন্দো-গ্রীক রাজারা ক্ষত্রপ দ্বারা শাসন ব্যবস্থা চালু করেন।
- (২) শক-পার্থিয় যুগে ক্ষত্ৰপ দ্বারা শাসন ব্যবস্থা একটি স্বীকৃত প্রথায় পরিণত হয়। মুদ্রা ও শিলালিপি থেকে আমরা বহু শক-ক্ষত্রপের নাম পাই। ক্ষত্রপ ব্যবস্থা কুষাণ যুগ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।
ক্ষত্রপদের দুই শাখা
ভারতে শক-ক্ষত্রপদের দুটি প্রধান শাখার কথা জানা যায়। যথা – তক্ষশীলা ও মথুরার ক্ষত্রপগণ। এঁদের বলা হত উত্তরের ক্ষত্রপ। উজ্জয়িনীর ক্ষত্রপদের বলা হত পশ্চিমী ক্ষত্রপ। উত্তরের ক্ষত্রপদের প্রধান কেন্দ্র ছিল তক্ষশিলা।
মোগের সময় ক্ষত্রপ
শক সম্রাট ময়েস বা মোগের অধীনে তক্ষশিলার ক্ষত্রপ ছিলেন লাইকা কুশুলুকা। লাইকার পুত্র মহারাজ পাতপাতিকাও বিখ্যাত ক্ষত্রপ ছিলেন। এরা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্ম অবলম্বী। উত্তরের ক্ষত্রপরা ছিলেন সম্ভবত ক্ষহরত গোষ্ঠীর লোক।
মথুরার ক্ষত্রপ
- (১) উত্তরের ক্ষত্রপদের অপর প্রধান শাসনকেন্দ্র ছিল মথুরা। ডঃ জে. এন. ব্যানার্জীর মতে, মথুরার সর্বপ্রথম শক-ক্ষত্রপের নাম ছিল রাজুবুলু। ভগবান লাল ইন্দ্রজী নামে এক প্রত্নতত্ববিদ ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে একটি সিংহের মূর্তি যুক্ত শিলালিপি আবিষ্কার করেন।
- (২) এই লিপি থেকে রাজুবুলুর নাম জানা যায়। তিনি মহাক্ষত্রপ উপাধি নেন। তিনি একটি বৌদ্ধ স্তূপ নির্মাণ করেন। রাজুবুলুর পর যোডাশ বা সুদাস মথুরার ক্ষত্রপ হন।
- (৩) তিনি মহাক্ষত্রপ উপাধি নেন এবং ব্রাহ্মী লিপিতে মুদ্রা প্রচার করেন। ষোডাশের পর মথুরার ক্ষত্রপদের ক্ষমতা কমতে থাকে। ক্ষত্রপরা হিন্দু নাম গ্রহণ করেন এবং কুষাণ আক্রমণের ফলে তাদের পতন হয়।
ক্ষহরত ক্ষত্রপগণ
শক-ক্ষত্রপদের অপর একটি শাখা পশ্চিম ভারতে রাজত্ব করত। এই শাখাটি দুটি উপশাখায় বিভক্ত ছিল। যথা ক্ষহরত ও কার্দমক। র্যাপসনের মতে, পশ্চিম ভারতের ক্ষহরত শকরা পুরোপুরি শক ছিলেন না। তাদের রক্তে পার্থিয় মিশ্রণ ঘটেছিল। ডঃ এস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ক্ষহরত শকরা মূলত শক ছিল। কিন্তু তারা পারসিক ও পার্থিয় সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
শক-ক্ষত্রপগণ কর্তৃক কণিষ্কের অধীনতা স্বীকার
র্যাপসন মনে করেন যে, ভূমক ও অন্যান্য ক্ষহরত শক-ক্ষত্রপরা কুষাণ সম্রাট কণিষ্ক -এর সার্বভৌম ক্ষমতা মেনে চলতেন। নাসিক লিপি থেকে একথা মনে করা হয়। কিন্তু এই মতের বিরোধিতা অনেকে করে থাকেন।
ক্ষহরত ক্ষত্রপ ভুমক
পশ্চিম ভারতের ক্ষহরত ক্ষত্রপদের মধ্যে ভুমকের নাম প্রথমে পাওয়া যায়। তিনি মালব, গুজরাট, পশ্চিম রাজপুতানা শাসন করতেন।
মহাক্ষত্রপ নহপান
- (১) ভূমকের পরে বিখ্যাত ক্ষহরত ক্ষত্রপ ছিলেন নহপান। নহপান সম্পর্কে নাসিক শিলালিপি, পেরিপ্লাসের রচনা এবং জোগালথম্বিতে নহপানের মুদ্রা সংগ্রহ থেকে বহু তথ্য পাওয়া যায়। ক্ষহরত গোষ্ঠীর সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষত্রপ ছিলেন নহপান।
- (২) তিনি মহাক্ষত্রপ উপাধি নেন। তিনি ভূমকের মতই মুদ্রায় একটি সন ব্যবহার করতেন। পণ্ডিতদের মতে, এটি ছিল শকাব্দ। কণিষ্ক ৭৮ খ্রী: এটি প্রচলন করেন। নহপান সাতবাহন রাজা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণির সমকালীন ছিলেন।
কার্দমক ক্ষত্রপ
সাতবাহন সাম্রাজ্য -এর আক্রমণে ক্ষহরত শক শক্তি ক্ষয় পেলে, এই শূন্য স্থান কার্দমক শকগণ পূর্ণ করে। কার্দমক শকদের কেন্দ্র ছিল মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী।
কার্দমক ক্ষত্রপ চষ্টন
- (১) ডঃ ডি. সি. সরকারের মতে, কার্দমক শকদের প্রভু ছিল কুষাণ শক্তি। তাদের নির্দেশে কার্দমক শক-ক্ষত্ৰপ চষ্টন সাতবাহনদের হাত থেকে হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা আরম্ভ করেন। প্রায় ১৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে চষ্টন এই কাজে তাঁর উদ্যমকে নিয়োজিত করেন। চষ্টনের পুত্র জয়দমন ও পৌত্র রুদ্রদামন তাঁকে সহায়তা দেন।
- (২) চষ্টনের নেতৃত্বে উজ্জয়িনীর পশ্চিমা ক্ষত্রপদের বিখ্যাত রাজত্বকাল আরম্ভ হয়, যা প্রায় তিনশ বছর ধরে স্থায়ী হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত -এর আক্রমণে শক শক্তির পতন ঘটে।
সর্ব শ্রেষ্ঠ ক্ষত্রপ রুদ্রদামন
চষ্টনের পৌত্র রুদ্রদামন ছিলেন শক-ক্ষত্রপদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। জুনাগড় লিপি থেকে রুদ্রদামনের কীর্তিকলাপের কথা জানা যায়। আন্ধাউ লেখ থেকে জানা যায় যে, তিনি পিতামহ চষ্টনের সঙ্গে যুগ্মভাবে কিছুকাল রাজত্ব করেন। জুনাগড় শিলালিপিতে বলা হয়েছে যে, সকল বর্ণের লোক তাঁকে রক্ষকরূপে মনোনীত করে এবং তিনি মহাক্ষত্রপ উপাধি নেন।
অন্যান্য ক্ষত্রপ
রুদ্রদামনের পরে শক-ক্ষত্রপদের মধ্যে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য নাম পাওয়া যায়না। যদিও বহু শক-ক্ষত্রপের নাম মুদ্রা ও লিপি থেকে পাওয়া যায়, তাদের বিশেষ কোনো কৃতিত্বের কথা জানা যায় না। বিশ্বসেন ছিলেন সর্বশেষ কার্দমক শক-ক্ষত্রপ, যিনি ২৯৩-৩০৫ খ্রিস্টাব্দে রাজত্ব করতেন। এর পর রুদ্রসিংহ ক্ষত্রপের পদে বসেন। তিনি কর্দমাক বংশের লোক ছিলেন না।
উপসংহার :- শক-শক্তির পতন ঘটার কারণ ছিল শকদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও সাসানীয় আক্রমণ। উত্তর-পশ্চিম ভারতে পারস্যের সাসানীয় শক্তির বিস্তার হলে শক শক্তির পতন ঘটে। এছাড়া পশ্চিম ভারতে গুপ্ত সাম্রাজ্য -এর বিস্তার ও চতুর্থ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত দ্বারা শক-শক্তি ধ্বংস হলে শত্রু-ক্ষত্রপদের পতন ঘটে।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “শক-ক্ষত্রপগণ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) শক-ক্ষত্রপগণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
দুটি, ক্ষহরত ও কার্দমক।
নহপান।
রুদ্রদামন।
শক রাজা রুদ্রদামন।