স্বাস্থ্য বিমার সহজ পাঠ
বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনও মানুষের জীবনে স্বাস্থ্য বিমার গুরুত্ব নতুন করে বুঝিয়ে বলা নিরর্থক। শারীরিক যে কোনও বিপদে-আপদে, এই বিমা পাশে থাকে বন্ধুর মতো, কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে প্রতিকূল পরিস্থিতি। তবে বিষয়টি নিয়ে সম্যক জ্ঞান অনেকেরই এখনও নেই। তাই জরুরি তথ্য সাজিয়ে আজকের এই লেখনী।
কিছু প্রশ্ন স্বাস্থ্য বিমা সংক্রান্ত
স্বাস্থ্য বিমা সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা পেতে গেলে যে ক’টি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া খুবই প্রয়োজন। সেই প্রশ্নগুলি হল – স্বাস্থ্য বিমা কি? স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজনীয়তা কি? স্বাস্থ্য বিমা কয় প্রকার ও কি কি? স্বাস্থ্য বিমা কেনার সময় কী কী বিষয়ে মূলত নজর রাখা দরকার? মোটামুটি কত টাকার স্বাস্থ্য বিমা থাকার প্রয়োজন?
মূলত, আমাদের স্বাস্থ্য বিমা সংক্রান্ত প্রথম দু’টি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া খুবই প্রয়োজন। সেই দুটি উত্তর থেকে আমরা বুঝতে পারি, আপনার বা আমাদের আদৌ স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজন আছে কি না। প্রয়োজন আছে মনে হলে এরপর যথারীতি খুব স্বাভাবিক ভাবেই মনে তখন প্রশ্ন আসে, আপনার আমার ঠিক কত টাকার স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজন আছে।
প্রথম প্রশ্ন স্বাস্থ্য বিমা কী?
এই স্বাস্থ্য বিমা হল একজন ব্যক্তি এবং একটি বিমা কোম্পানির মধ্যে একটি চুক্তি, যা প্রিমিয়ামের বিনিময়ে চিকিৎসা ব্যয়ের বিরুদ্ধে আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করে। এটি চিকিৎসা ব্যয়ের বিস্তৃত পরিসরে সাহায্য করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, ডায়াগনস্টিক চার্জ, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ওষুধ, সার্জারি, ডাক্তারের পরামর্শ, রুম ভাড়া, এবং অ্যাম্বুলেন্স চার্জ ইত্যাদি।
স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজনীয়তা কী?
- (১) আপনার আমার পরিবারে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে এটি মূলত কাজে লাগে।
- (২) স্বাস্থ্য বিমা হল এমন একটি বিষয় যেটি রোজ রোজ আপনার প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু যেদিন প্রয়োজন পড়বে, সেদিন যেন স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে আপনাকে আবার কোনওরকম দুশ্চিন্তা করতে না হয়।
- (৩) এই স্বাস্থ্য বিমা আপনার যাবতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগকে সুরক্ষা করতে সাহায্য করে। আজকের দিনের একটি সামান্য খরচা আপনার দুর্দিনে আপনারই প্রয়োজনে আপনার সমস্ত সম্পদকে রক্ষার চাবিকাঠি বা রক্ষা করচ হয়ে দাঁড়ায়।
- (৪) পরিসংখ্যান বলছে আমরা ভারতীয়রা প্রয়োজনে মেডিকেল বিলের প্রায় ৫৫ শতাংশের মতো খরচ নিজের সঞ্চয় থেকে করি।
এবার জানতে হবে স্বাস্থ্য বিমা কয় প্রকার ও কী কী?
স্বাস্থ্য বিমা মূলত দুই প্রকার। এক মেডিক্রেম পলিসি। আর দুই ক্রিটিকাল ইন্সুরেন্স পলিসি।
- (১) মেডিক্রেম পলিসি মূলত ইনডিমনিটি বেস বা টাইপের পলিসি। মানে এটি একটি ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনা। এক ধরনের বিমা পলিসি যা নির্দিষ্ট পরিমান ক্ষতি বা ক্ষতির জন্যই কেবলমাত্র ক্ষতিপুরণ প্রদান করে মাত্র।
- (২) ক্রিটিকাল ইন্সুরেন্স পলিসি ফিক্সড বেনিফিট টাইপের অন্তর্গত। একটি নির্দিষ্ট বেনিফিট স্বাস্থ্য পরিকল্পনা হল এমন একটি পরিকল্পনা যেখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ তহবিল (বিমাকৃত অর্থ) একটি পূর্বনির্ধারিত অসুস্থতা বা বিমা করা হয়েছে এমন অবস্থার জন্য খরচ কভার করার জন্য প্রদান করা হয়। এখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষতির সঙ্গে বিমার মূল্যের কোনও সম্পর্ক থাকে না।
স্বাস্থ্য বিমা কেনার সময় কী কী বিষয়ে মূলত নজর রাখা দরকার?
এই স্বাস্থ্য বিমা কেনার সময় মূলত তিনটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার। যেমন –
- (১) এক, কোন কোন কোম্পানির থেকে কিনছেন। সেই কোম্পানির claim settlement ratio বা দাবি নিষ্পত্তির অনুপাত কেমন। সেই কোম্পানির solvency ratio মানে যার দ্বারা একটি বিমা কোম্পানির সচ্ছলতার অনুপাত বা তার আর্থিক স্বাস্থ্য এবং তার আর্থিক বাধ্যবাধকতা পরিচালনা করার ক্ষমতার পরিমাপ নির্ধারণ করা যায়।
- (২) দুই, পলিসিতে কভারেজ সংক্রান্ত টার্মস কন্ডিশন ও ফিচার্স মানে শর্তাবলী এবং বৈশিষ্ট্য গুলি খুব ভাল করে বুঝে নেওয়া দরকার। যেমন পলিসিতে কোনও রকম ক্যাপিং ও কো পে-র মতো কোনও রকম শর্তাবলী আছে কি না। ক্যাপিং থাকার অর্থ একটি নির্দিষ্ট শতাংশের হারে, নির্দিষ্ট কিছু খরচ বিমা কোম্পানি বহন করে। আর এর পর বিমাগ্রহীতাকে বাদবাকি খরচ বহন করতে হয়। আর কো পে-র অর্থ একটি নির্দিষ্ট শতাংশের হারে বিমা গ্রহীতাকে খরচ বহন করতেই হয়। বাকি খরচ বিমা কোম্পানি বহন করে। যে বিষয় গুলিতে বিশেষ করে নজর রাখা দরকার সেগুলি হল Room Rent Capping, Room Rent related Proportionate copay or non copay clause, Unlimited Reinstatement of St Clause, Modem Treatement Clause, Pre, Post and Day Care Hospitalisation clause. No claim bonus clause, opd related clause etc etc,
- (৩) তিন, যে বিমা পরামর্শদাতার থেকে পলিসি কিনছেন তিনি ঠিক কতটা আপনার পলিসি সংক্রান্ত টার্মস কন্ডিশন ও ফিচার্স মানে শর্তাবলী এবং বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে কতটা অবহিত আছেন ও claim settlement মানে দাবি নিষ্পত্তিতে কতটা অভিজ্ঞ ও পারদর্শী-অবশ্যই সেই দিকটি ভাল করে বুঝে নেবার প্রয়োজনীয়তা আছে। কারণ আপনার বিপদের দিনে তিনিই আপনার পরিবারের কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করবেন।
আপনার কত টাকার স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজন আছে কীভাবে নির্ধারণ করবেন?
আপনার কত টাকার স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজন আছে নির্ধারণ করার অনেক সূত্র আছে। এখানে আমরা কয়েকটি সূত্র ধরে আলোচনা করার চেষ্টা করছি মাত্র। ধরা যাক আপনি একটি TIER CITY অথবা TIER 2 CITY-তে থাকেন। ধরা যাক কোনও এক পরিবারে মোট চার জন সদস্য। কোনও একটি পরিস্থিতিতে সকল সদস্যকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হল। এখানে বলে রাখা ভাল, আমরা যখন একটি আর্থিক ও মানসিক নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করছি সেটা একটি ‘ফুলপ্রুফ’ মানে সম্পূর্ণ অভেদ্য পরিকল্পনা হওয়াই ভাল। আমরা যদি হাসপাতাল-এ ভর্তি থাকার মেয়াদ যথারীতি ৩০ দিন/৬০ দিন ও ৯০ দিনের খরচের একটি সুপরিকল্পিত বন্দোবস্ত রাখতে পারি, তাহলে প্রকৃত অর্থে আর্থিক ও মানসিক নিরাপত্তার একটি সার্থক পরিকল্পনার রূপায়ন করতে সমর্থ হব।