বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সামাজিক অবস্থা

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সামাজিক অবস্থা প্রসঙ্গে, উপাদান, ব্রাহ্মণ ও ভূস্বামীদের প্রাধান্য, কৃষকদের স্থান, নারীদের উজ্বল অবস্থা ও দুরাবস্থা, ব্রাহ্মণদের প্রভাব, ধর্ম, খাদ্য, অলংকার ব্যবহার ও দরিদ্র শ্রেণীর দুরবস্থা সম্পর্কে জানবো।

Table of Contents

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সামাজিক অবস্থা

বিষয়বিজয়নগরের সামাজিক জীবন
প্রাধান্যব্রাহ্মণ শ্রেণি
ধর্মশৈব ও বৈষ্ণব ধর্ম
আমুক্ত মাল্যদাকৃষ্ণদেব রায়
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সামাজিক অবস্থা

ভূমিকা :- যে কোনো দেশের সমাজব্যবস্থার সঙ্গে সেই দেশের অর্থনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। বিজয়নগরের কৃষি অর্থনীতি এবং বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে বিজয়নগরের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সমাজ সম্পর্কে উপাদান

পায়েজ, নূনিজ, আবদুর রজ্জাক প্রমুখ বৈদেশিক পর্যটকদের বিবরণ থেকে বিজয়নগরের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সমাজে ব্রাহ্মণ ও ভূস্বামীদের প্রাধান্য

কৃষি অর্থনীতির দরুণ বিজয়নগরের সমাজে ব্রাহ্মণ ও ভূস্বামী শ্রেণীর বিশেষ প্রাধান্য দেখা দিয়েছিল।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সমাজে কৃষকদের স্থান

সমাজের সম্পদ যথা – বস্ত্র ও শিল্প-দ্রব্য যারা উৎপাদন করত ও যোগাত, অর্থাৎ কৃষক, কারিগর ও বণিকদের স্থান সমাজে উঁচুতে ছিল না।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সমাজে নারীদের উজ্বল অবস্থা

  • (১) বিজয়নগরে নারীদের অন্য স্থানের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশী স্বাধীনতা ছিল। নারীদের সম্মান দেওয়া হত। নারীরা কারুশিল্প, চারুশিল্প, সঙ্গীত, কলাবিদ্যার চর্চা ছাড়া সাহিত্য, শাস্ত্র চর্চা করতেন। এছাড়া নারীরা মল্লবিদ্যা, অসিক্রীড়াও আয়ত্ব করতেন।
  • (২) নূনিজের মতে, বিজয়নগর সাম্রাজ্য-এর প্রাসাদে যে সকল নারী কর্মচারী থাকতেন তারা অনেকে হিসেব বা তথ্য রক্ষিকা, মল্লক্রীড়া, প্রাসাদ রক্ষিনী, গায়িকা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতেন। বিজয়নগরের রাণীরা তাদের অবসর জীবন শিল্প, সঙ্গীত, সাহিত্য চর্চায় কাটাতেন।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সমাজে নারীদের দুরবস্থা

নারীদের জীবনের এই উজ্জ্বল, বর্ণময় চিত্রের পাশে বিজয়নগরে অন্ধকারময় চিত্রও ছিল। পুরুষেরা বহু বিবাহে আসক্ত ছিল। সতীদাহ প্রথা বেশ ব্যাপক ছিল। ব্রাহ্মণেরা সতীদাহে উৎসাহ দিত। বাল্যবিবাহ ব্যাপক ছিল। পণ প্রথার প্রাদুর্ভাবও ছিল। বিজয়নগরে দেবদাসী প্রথার ব্যাপকতা ছিল।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সমাজে ব্রাহ্মণদের প্রভাব

সমাজে ব্রাহ্মণদের বিশেষ প্রভাব ও ক্ষমতা ছিল। সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয় ছাড়া রাজনৈতিক ব্যাপারেও তাঁরা প্রভাব খাটাতেন। নুনিজ “ব্রাহ্মণদের মেধার তীক্ষ্ণতা, হিসেবপত্র রাখার ক্ষমতা, দৈহিক কৃশতা ও কঠিন কায়িক পরিশ্রমে অপারগতার” কথা বলেছেন।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ধর্ম

ভারতের বিজয়নগরের রাজারা শৈব বা বৈষ্ণব ধর্মের অনুরাগী হলেও অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু ছিলেন। যাগযজ্ঞে মেষ ও মহিষ বলির প্রথা ছিল।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অধিবাসীদের খাদ্য

ব্রাহ্মণেরা নিরামিষ খাদ্য খেতেন। সাধারণ লোকে গোমাংস ছাড়া আর সকল প্রকার মাংস, ফলমূল, চাউল ও গম খেত। ষাঁড় ও গাভীর প্রতি ধর্মীয় ভক্তিবশত গোমাংস অভক্ষণীয় ছিল। পর্তুগীজ পর্যটক পায়েজ ও নুনিজ বিজয়নগরে মাংসের বিভিন্ন প্রকারের রান্নার পদ খেয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অধিবাসীদের অলঙ্কার ব্যবহার

পর্তুগীজ লেখকদের মতে, বিজয়নগরের লোকেরা বেশ অলঙ্কার প্রিয় ছিল। পুরুষ ও নারী সকলেই কানে, গলায় ও হাতে অলঙ্কার পরত। উচ্চশ্রেণীর লোকেরা মাথায় রেশমী পাগড়ি, পায়ে ভাল চামড়ার জুতা ও অলঙ্কার পরত। কিন্তু তাদের উর্ধ্বাঙ্গ ছিল অনাবৃত। কখনও কখনও তারা উত্তরীয় ধারণ করত।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সমাজে দরিদ্র শ্রেণীর দুরবস্থা

গরীব লোকেরা খালি পায়ে ও খালি গায়ে শুধু কোমরের নীচে কাপড় পরে দিন কাটাত। তারা খড়ের ছাওয়া ঘরে থাকতে।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যে সাহিত্য চর্চা

  • (১) বিজয়নগরে সংস্কৃত সাহিত্যের চর্চা বিশেষভাবে হত। এছাড়া তামিল, তেলেগু, কন্নড় ভাষার চর্চা হত। সায়নাচার্য বেদের বিখ্যাত ভাষা রচনা করেন। সায়নের ভ্রাতা মাধব বিদ্যারণ্য ছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত।
  • (২) রাজা কৃষ্ণদেব রায় ছিলেন বিদ্যোৎসাহী। তাঁর দরবারে বহু পণ্ডিতের সমাগম ঘটেছিল এবং তিনি বহু পণ্ডিতকে ভূমি ও অর্থদান করেন। কৃষ্ণদেব রায় ‘অমুক্ত মাল্যদা’ নামে তেলেগু ভাষায় এক সাহিত্য গ্রন্থ রচনা করেন।
  • (৩) তিনি সংস্কৃত ভাষায় আরও ৫টি গ্রন্থ রচনা করেন বলে জানা যায়। আরবিডু বংশ-এর রাজারাও তেলেগু সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এছাড়া সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক প্রভৃতির ওপরেও বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যে অষ্টদিকগজ

কৃষ্ণদের রায়ের দরবারে ৮ জন বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন তাঁদের নাম ছিল “অষ্টদিক-গজ”। বিখ্যাত তেলেগু কবি পোদ্দন ছিলেন কৃষ্ণদেব রায়ের সভাকবি।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের স্থাপত্য শিল্প

বিজয়নগরের স্থাপত্য শিল্প উল্লেখের দাবী রাখে। এই স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র ছিল। কৃষ্ণদেব রায় বিখ্যাত হাজারার মন্দির তৈরি করেন। বিজয়নগরের বিঠলস্বামী মন্দির স্থাপত্য শিল্পের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিখ্যাত। কলা সমালোচক ফার্গুসনের মতে, এই মন্দিরটি ছিল দ্রাবিড় স্থাপত্য রীতির অপূর্ব নিদর্শন।

উপসংহার :- বিজয়নগরের দরবারে ও অভিজাতদের পৃষ্ঠপোষকতায় নৃত্যশিল্পের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছিল। চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রেও বিজয়নগর পিছিয়ে ছিল না।

(FAQ) বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বিজয়নগর রাজ্যের কোন শ্রেণির সমাজে প্রাধান্য ছিল?

ব্রাহ্মণ।

২. বিজয়নগর রাজ্যে নিরামিষ ভোজন করত কারা?

ব্রাহ্মণরা।

৩. বিজয়নগর রাজ্যে কোন কোন ধর্মের প্রভাব ছিল?

শৈব ও বৈষ্ণব।

৪. বিজয়নগর রাজ্যের কোন রাজার সভায় অষ্টাদিগগজ ছিলেন?

কৃষ্ণদেব রায়।

Leave a Comment