রিডিং ব্লক কাটানোর বিশেষ উপায়
অনেক সময় এমন হয় যে অতি আগ্রহে কেনা নতুন বইয়ের পাতা ওল্টাতেও অসহ্য লাগে। কিংবা পছন্দের বইটিও পড়তে বিরক্ত লাগে। পড়ার সময় এই বিরক্তিকর অনুভূতি রিডিং ব্লক নামে পরিচিত। এ সমস্যার স্থায়িত্ব দীর্ঘ সময় পর্যন্ত হতে পারে। তবে কিছু কৌশল অনুসরণ করে রিডিং ব্লক কাটানো সম্ভব।
সহজভাবে শুরু করুন
যদি আপনার রিডিং ব্লক দীর্ঘ সময়ের জন্য হয়ে থাকে, তবে আপনার উচিত একটি সহজ বই পড়ার মাধ্যমে আবারও বই পড়ার অভ্যাস শুরু করা। ফিচার লেখক স্টুয়ার্ট জেফ্রিসের মতে, রিডিং ব্লকের কারণ মূলত দ্বিধায় পড়া। এর মধ্য দিয়ে আপনি জানবেন যে আপনার কাজটি করা উচিত, তবে আপনি সেটি করবেন না। তাই নিজেকে ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে দেওয়ার আগে আপনার উচিত সহজ ও ছোট কিছু কাজ দিয়ে শুরু করা। এরপর ট্র্যাকে ফিরে আসলে আপনি অন্য যেকোনো বই আরও সহজভাবে পড়তে পারবেন।
ভিন্ন ধরনের বই পড়ুন
আমরা অনেকেই একই ধরনের বই পড়তে পছন্দ করি। তবে আমাদের বিভিন্ন ধারার বই পড়া উচিত। একই ধরনের বই পড়তে পড়তে একসময় একঘেয়েমি কাজ করে, যা আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি না। বিখ্যাত লেখক শার্লট আহলিন লিখেছেন, আমি একবার লেখক কুর্ট ভনেগাটের পরপর চারটি লেখা পড়েছিলাম এবং তারপরে মানব অবস্থার ওপর হতাশায় এক সপ্তাহ কাটিয়েছিলাম। অর্থাৎ, আপনার মন তীক্ষ্ণ থাকার জন্য বইয়ের বিষয়ভিত্তিক বৈচিত্র্য প্রয়োজন। শার্লট আহলিনের লেখা থেকে সহজেই বোঝা যায় ভিন্ন ধরনের বই পড়ার পদ্ধতিটি রিডিং ব্লক কাটানোর ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হতে পারে।
অডিওবুক শুনুন
ব্যস্ত পাঠকদের বই পড়ার স্বাদ নেওয়ার এক চমৎকার উপায় অডিওবুক। অডিও বুক রিডিং ব্লকে ভোগা পাঠকদের জন্য আশীর্বাদের মতো। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের পরিচালক জোনাথন ডগলাসের মতে, অডিওবুক রিডিং ব্লক কাটাতে সাহায্য করে। কারণ, পাঠকের যখন পড়তে অসুবিধা হয়, তখন অডিওবুক গল্প শোনানোর মতো করে পাঠকের আবেগকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রে মাল্টি টাস্কিংয়ের সময় খুব সহজেই পাঠকেরা অডিও বুক শুনতে পারেন।
অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
প্রযুক্তি যেমন আমাদের জন্য আশীর্বাদ, তেমনি প্রযুক্তি এক ধরনের অভিশাপও বটে। অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে আমাদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে এবং ধীরে ধীরে তা আরও ভয়ানক হতে পারে। লেখক করণ মুজু বলেছেন যে, তিনি শৈশব থেকেই একজন আগ্রহী পাঠক ছিলেন। তবু তিনি এখনো মাঝে মাঝে রিডিং ব্লকের সঙ্গে লড়াই করেন যখন কোনো বই তাঁর আগ্রহ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন তিনি একের পর এক বই পরিবর্তন করেন। তাই রিডিং ব্লক কাটাতে অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
নিজেকে বাধ্য করবেন না
বই পড়া শখের কাজ। তাই অবশ্যই এটি আনন্দদায়ক হওয়া উচিত। দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন বলেন, কিছু বইয়ের স্বাদ নিতে হয়, অন্যগুলো গিলে ফেলা হয় এবং কিছু কিছু চিবিয়ে হজম করা হয়। অর্থাৎ, কিছু বই কেবল আংশিক পড়তে হয় এবং কিছু বই সম্পূর্ণরূপে, যা অধ্যবসায় ও মনোযোগের সঙ্গে পড়তে হবে মনে রাখবেন, কখনোই অপছন্দের বই পড়তে নিজেকে বাধ্য করবেন না। এতে আপনার উপকারের বদলে অপকার বেশি হবে। জোর করে পড়লে পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ার বদলে কমে যেতে পারে।