৯৯ শতাংশ মানুষের থেকে এগিয়ে থাকবে
সফলতা ধারাবাহিক কাজের ফল। এটি চূড়ান্ত ফলও নয়। প্রতি মুহূর্তে লক্ষ্য পরিবর্তিত হয়। লক্ষ্য অর্জিত হলে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়। তারপর শুরু হয় সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মযজ্ঞ। তাই সাফল্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন ছোট ছোট কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সৃষ্টিকারী কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা। এই ছোট ছোট কাজগুলোকে অভ্যাসে রূপান্তরিত করে ফেললেই তা সম্পাদন করা সহজ হয়ে যায়। এমন কিছু ছোট ছোট কাজ আছে, সেগুলো অভ্যাস করলে খুব সহজেই পৃথিবীর ৯৯ শতাংশ মানুষকে পেছনে ফেলে হয়ে যেতে পারবে পৃথিবীর শীর্ষ ১ শতাংশ মানুষের একজন।
আট ঘণ্টা ঘুম
ঘুম আমাদের দেহের ক্লান্তি দূর করে। নতুন কোষ সৃষ্টি করে ক্ষয়পূরণ করে। আর এসবের জন্য প্রয়োজন হয় নিয়মিত প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুমের। সাত ঘণ্টার কম হলে মস্তিষ্কসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নতুন কোষ সৃষ্টি করতে পারে না। আর তা থেকেই স্মৃতিলোপ থেকে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। তাই আট ঘণ্টার ঘুম শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
ঘুম থেকে উঠতে হবে ভোরে
সেই গুহা জীবন থেকেই আমাদের দেহ ভোরে ঘুম থেকে উঠে অভ্যস্ত। তাই ভোরে ঘুম থেকে ওঠা সুস্থ দেহ ও সুস্থ মনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ভোরের বাতাস থাকে নির্মল, দূষণ থাকে না বললেই চলে। এই মুক্ত বাতাস মনকে প্রফুল্ল করে। দেহে সঞ্চালিত হয় প্রয়োজনীয় অক্সিজেন। চিত্তে সৃষ্টি হয় নবউদ্দীপনা। এজন্যই যুগ যুগ ধরে গ্রামবাংলায় প্রচলিত আছে, ‘ভোরের হাওয়া লাখ টাকার দাওয়া’ কথাটি। শুধু শরীরের সুস্থতার জন্যই নয়, ভোরে ঘুম থেকে উঠলে সারাদিনের কাজের জন্য তুমি পেয়ে যাবে বাড়তি দুই-তিন ঘণ্টা সময়। যে কাজ তাড়াহুড়া করে করতে হতো শুধু ভোরবেলায় ওঠার কারণে তুমি সেই কাজটি করতে পারবে পরিকল্পিতভাবে, সুন্দরভাবে।
প্রতিদিন ১০ হাজার পা
আমাদের দেহছন্দের সঙ্গে হাঁটা ব্যাপারটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হাঁটাকে ধরা হয় অন্যতম সুষম ব্যায়াম। এটি দেহকে সচল রাখে। অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে শরীরকে রাখে ঝরঝরে। প্রতিদিন ১০ হাজার পদক্ষেপ তোমাকে দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করবে। এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে ব্যায়াম। সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন শরীর চর্চা করতে হবে।
সপ্তাহে তিন দিন শরীরচর্চা
দেহকে সুস্থ রাখতে হলে শরীরচর্চার বিকল্প নেই। শরীরচর্চার ফলে মাংসপেশি সুগঠিত হয়, হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে, হজম শক্তি সুস্থ রাখে, বহুমূত্র রোগ প্রতিরোধ করে, স্থূলতা দূর করে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। এই শরীরচর্চা বাসায় নিজে নিজে বা জিমে প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে হতে পারে। কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। সপ্তাহে সাত দিন না হলেও সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন শরীরচর্চা করতেই হবে। তবেই দিনে ১০ হাজার কদম হাঁটা শরীরের জন্য যথেষ্ট হবে।
চার ঘণ্টার নিমগ্ন কাজ
প্রতিদিন কমপক্ষে চার ঘণ্টা মনোযোগী হয়ে নিমগ্ন কাজ করতে হবে। এই চার ঘণ্টা একটানা কাজ করতে হবে এমন না। চারটি আলাদা ভাগে বা প্রয়োজন মতো একে ভাগ করে নেওয়া যাবে। প্রতিটি ঘণ্টাকে একটি পাওয়ার আওয়ার ধরা হয়, তাহলে তা হবে ৪৫ মিনিট কাজ ও ১৫ মিনিট বিশ্রামের সমষ্টি। একটি ঘণ্টা পরিকল্পনা ও বাকি তিনটি নিমগ্ন ঘণ্টা কাজ সমাধাতে ব্যয় করতে পারো।
প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা পাঠ
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনীদের মধ্যে যে গুণগুলোর মিল পাওয়া গেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, তারা প্রত্যেকেই খুবই ভালো পাঠক। তারা প্রত্যেকেই প্রতিদিন বই পড়েন। তাদের পছন্দের বইগুলোর মধ্যে যেমন ফিকশন বইগুলো রয়েছে, তেমনি রয়েছে নন-ফিকশন বইয়ের নাম। শুধু ধনী ব্যক্তিরা কেন পুরস্কার জয়ী খেলোয়াড়, অভিনেতা, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ সবার মধ্যেই বই পড়ার অভ্যাস দেখা যায়। এর কারণ হলো, বইয়ের মধ্যে সঞ্চিত থাকে যুগযুগান্তরের জ্ঞান। সেই জ্ঞান তারা অর্জন করেন এবং নিজেদের সুবিধামতো যুগোপযোগী করে ব্যবহার করেন। আর তাতেই তারা সফল হন। পৃথিবীর সেরা ১ শতাংশ জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হতে হলে বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। এক দিনে পুরো বই শেষ না করে চেষ্টা করো, প্রতিদিন ১০ পাতা করে পড়তে। বেশি হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু কম যেন না হয়। তাহলে অভ্যাসটি মর্মমূলে গেঁথে যাবে।
২০ শতাংশ আয় সঞ্চয় করো
অনেকেই মনে করতে পারো, শিক্ষার্থী জীবনে আমাদের আয় কোথায়। কিন্তু এখানে পরিমাণটি ধর্তব্যের বিষয় না। বরং, সঞ্চয়ের অভ্যাসটিই বিষয়। অনেকেই টিউশনি করে, মা-বাবা হাতখরচ দেন, উৎসব-এ বড়রা টাকা দেন অর্থ হিসেবে। এগুলোকে আয় ধরা যেতে পারে। টাকা যেখান থেকেই আসুক, যদি তুমি তার ২০ শতাংশ সঞ্চয় করার অভ্যাস করো এটি থেকে যাবে তোমার মর্মে। ফলে স্বাবলম্বী হওয়ার পরও এই অভ্যাস জারি রাখতে পারবে। আর সহজেই হয়ে যাবে ১ শতাংশ সফল মানুষদের একজন।