সুশীলা দাশগুপ্ত

নারী বিপ্লবী সুশীলা দাশগুপ্ত ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসিনী, যিনি নারী হিসেবে জাতির স্বাধীনতার সংগ্রামে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর সংগ্রামী জীবন ও আত্মত্যাগ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আজও অনুপ্রেরণার উৎস। একজন নির্ভীক, আদর্শনিষ্ঠ ও সংগ্রামী নারীর প্রতিচ্ছবি হিসেবে ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয়।

বিপ্লবী সুশীলা দাশগুপ্ত

ঐতিহাসিক চরিত্রসুশীলা দাশগুপ্ত
জন্ম১৯১২, বিক্রমপুর, ঢাকা (বর্তমান বাংলাদেশ)
পিতামাতাহরকুমার দাশগুপ্ত, নির্মলা দেবী
কর্মক্ষেত্রব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী আন্দোলন, সমাজসেবা, সাংবাদিকতা
বিপ্লবী ভূমিকাবিপ্লবীদের বার্তা পরিবহণ, গোপন আশ্রয়দান, অর্থ সংগ্রহ, পত্র প্রকাশন
পত্রিকা সম্পাদনা“জয়শ্রী” পত্রিকার পরিচালনা ও সম্পাদনা
ঐতিহাসিক গুরুত্বনারী বিপ্লবীদের অগ্রদূত; সাহস, আদর্শ ও সংগ্রামের প্রতীক
মৃত্যুমার্চ, ১৯৮৩

সুশীলা দাশগুপ্ত

ভূমিকা :- বিপ্লবী সুশীলা দাশগুপ্ত ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের এক দুর্ধর্ষ ও আদর্শনিষ্ঠ যোদ্ধা, যিনি নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে বিপ্লবের মঞ্চে নিজের অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন। সুশীলা দাশগুপ্তের জীবন ছিল সংগ্রাম, ত্যাগ, দেশপ্রেম এবং আদর্শের এক জীবন্ত নিদর্শন। নারী হিসেবে তাঁর সাহসিকতা ও নেতৃত্ব তাঁকে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে। তিনি ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অপ্রতিহত এক নারী বিপ্লবী, যার জীবন আজও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগায়।

সুশীলা দাশগুপ্তের জন্ম

মহিয়ষী সুশীলা দাশগুপ্তের জন্ম হয় ১৯১২ সালে। তাঁদের দেশ বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ী গ্রামে।

বিপ্লবী সুশীলা দাশগুপ্তের পিতামাতা

তাঁর পিতার নাম হরকুমার দাশগুপ্ত এবং মাতার নাম নির্মলা দেবী।

সুশীলা দাশগুপ্তের শিক্ষা

তিনি ময়মনসিংহ বিদ্যাময়ী হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯২৯ সালে। তারপর ঢাকা ইডেন কলেজে ও কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়েন তিনি প্রমীলা গুপ্ত-এর সঙ্গে। গ্রেপ্তারও হন প্রমীলা গুপ্তের সঙ্গেই। তাঁরা দুজনে মাসতুতো বোন।

শ্রীসংঘে সুশীলা দেবী

ঢাকা ইডেন কলেজে পড়বার সময় ইংরেজের উৎপীড়ন ও অত্যাচার তাঁদের বিচলিত করে তোলে। আরেকদিকে ছিল ইংরেজের বিরুদ্ধে গান্ধীজীর সংগ্রামের আহ্বান ও তার প্রভাব। ক্রমে তাঁরা ‘শ্রীসংঘ’ নামক বিপ্লবীদলের সঙ্গে যুক্ত হন।

গ্রামে গ্রামে বক্তৃতা দানে রত সুশীলা দেবী

তাঁরা অন্য কর্মীদের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বক্তৃতা দিতেন, চাঁদা তুলে কংগ্রেসকে দিতেন। ইডেন হোস্টেলের মতো গভর্নমেন্ট হোস্টেলের মধ্যেও পিস্তল লুকিয়ে রাখতেন এবং সেগুলি নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়ে আসতেন।

পত্রিকা সম্পাদনায় সুশীলা দেবী

যাঁরা ‘জয়শ্রী’ পত্রিকা পরিচালনা করতেন তাঁদের মধ্যে সুশীলা দাশগুপ্ত ছিলেন অন্যতম।

গ্রেপ্তার সুশীলা দেবী

১৯৩২ সালে সুশীলা, দাশগুপ্ত ও প্রমীলা গুপ্ত স্কটিশ চার্চ কলেজে বি.এ. পড়বার সময় গ্রেপ্তার হন। তাঁরা ডেটিনিউ রূপে বন্দী থাকেন প্রেসিডেন্সি, হিজলী প্রভৃতি জেলে। জেলের মধ্যে পরীক্ষা দিয়ে তাঁরা বি.এ. পাস করেন।

সুশীলা দেবীর মুক্তিলাভ

১৯৩৭ সালে সুশীলা দাশগুপ্ত মুক্তি পান।

সুশীলা দাশগুপ্তর মৃত্যু

মার্চ ১৯৮৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর জীবনের সংগ্রাম আমাদের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি অধ্যায় হিসেবে অম্লান হয়ে থাকবে। 

উপসংহার :- সুশীলা দেবী ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য নাম, যিনি নারী হয়েও সাহস, ত্যাগ ও আদর্শে পুরুষ সহযোদ্ধাদের সমকক্ষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর আত্মত্যাগ, আদর্শে বিশ্বাস ও অনমনীয় মনোবল আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। ইতিহাসের পাতায় সুশীলা দেবী শুধু একজন বিপ্লবী নন, তিনি একজন পথপ্রদর্শক, যাঁর জীবন কাহিনি নারীদের আত্মনির্ভরতা ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার শক্ত বার্তা বহন করে।

(FAQ) বিপ্লবী সুশীলা দাশগুপ্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?

১. সুশীলা দাশগুপ্ত কে ছিলেন?

সুশীলা দেবী ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট নারী বিপ্লবী, যিনি “শ্রীসংঘ” নামক বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

২. সুশীলা দাশগুপ্ত কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

তিনি ১৯১২ সালে তৎকালীন ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমানে এটি বাংলাদেশের অন্তর্গত)।

৩. তিনি কোন বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

তিনি ‘শ্রীসংঘ’ নামে একটি গোপন বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য ছিলেন।

৪. ব্রিটিশ শাসনবিরোধী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা কী ছিল?

তিনি বিপ্লবীদের বার্তা পৌঁছে দেওয়া, অর্থ সংগ্রহ, আশ্রয়দান এবং নানা গোপন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। এছাড়া আন্দোলনের জন্য নারীদের সংগঠিত করতেন।

৫. সুশীলা দাশগুপ্ত কি কারাবরণ করেন?

হ্যাঁ, তিনি প্রেসিডেন্সি ও হিজলি জেলে বন্দিত্ব ভোগ করেন এবং একাধিকবার গ্রেফতার হন।

৬. স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তিনি কী করতেন?

স্বাধীনতার পর তিনি সমাজসেবা ও সাংবাদিকতায় যুক্ত হন এবং “জয়শ্রী” নামক একটি পত্রিকার সম্পাদনায় কাজ করেন।

৭. সুশীলা দাশগুপ্ত কবে মৃত্যুবরণ করেন?

তিনি মার্চ ১৯৮৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

৮. তাঁর ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

তিনি ছিলেন নারী বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম, যিনি শুধু স্বাধীনতা আন্দোলনেই নয়, বরং নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের দিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন।

Leave a Comment