অগ্নিকন্যা ঊষা মুখার্জী ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী ও সংগ্রামী নারী, যিনি অত্যন্ত অল্প বয়সেই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হন। তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে এক সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী ও আদর্শবান নারীর প্রতিচ্ছবি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
বিপ্লবী ঊষা মুখার্জী
ঐতিহাসিক চরিত্র | ঊষা মুখার্জী |
জন্ম | ১৯১৮, কলকাতা |
পিতামাতা | গুরুপ্রসন্ন মুখার্জী, মনোরমা দেবী |
ভাই-বোন | পারুল মুখার্জী (বড় বোন), অমূল্য মুখার্জী (ভাই) |
রাজনৈতিক সংগঠন | অনুশীলন সমিতি |
প্রধান কর্মকাণ্ড | নারী সংগঠন, আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ, বিপ্লবী কাজকর্ম |
অন্যান্য ভূমিকা | সমাজসেবা ও নারী সংগঠনে সক্রিয় অংশগ্রহণ |
মৃত্যু | ১৩ জুন ১৯৮২ খ্রি |
ঊষা মুখার্জী
ভূমিকা :- ঊষা মুখার্জী ছিলেন ভারত-এর স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সংগ্রামী নারী, যিনি অল্প বয়সেই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে সাহসিকতার পরিচয় দেন। ঊষা মুখার্জীর জীবন ছিল নিরব, নিঃস্বার্থ ও সংগ্রামী—যেখানে দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ এবং নারীশক্তিকে জাগ্রত করার প্রত্যয় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। তিনি ছিলেন সেই নারী, যিনি শব্দ নয়, কাজের মাধ্যমে ইতিহাসে নিজের নাম খোদাই করে গেছেন।
ঊষা মুখার্জীর জন্ম
স্বাধীনতা সংগ্রামী ঊষা মুখার্জী জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৮ সালে। পিতৃভূমি তাঁর ঢাকার বিক্রমপুরের বাহেরক গ্রামে। কিন্তু মানুষ হন কুমিল্লায়।
বিপ্লবী ঊষা মুখার্জীর পিতৃপরিচয়
তাঁর পিতা গুরুপ্রসন্ন মুখার্জী, মাতা মনোরমা দেবী। অনুশীলন দলের বিখ্যাত বিপ্লবী নেতা অমূল্য মুখার্জী ছিলেন বড় ভাই এবং পারুল মুখার্জী বড় বোন।
দাদার অনুগামী ঊষা মুখার্জী
তার দাদা অমূল্য মুখার্জীর গভীর প্রভাব ছিল এই পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষের উপর। দুই ভগ্নী পারুল ও ঊষা ছোটবেলা থেকে দেখেছেন বাড়ীতে দাদার জন্য পুলিসের অত্যাচার ও হামলা এবং বিপ্লবী ভাইয়ের অনমনীয় দৃঢ় মনোভাব। এই পারিপার্শ্বিকে মানুষ হবার ফলে একটু বড় হয়েই তিনি দাদার অনুগামী হন।
পারুল ও ঊষা মুখার্জীর অনুশীলন সমিতিতে যোগদান
১৯২৯ সালে কুমিল্লায় একটি সাংস্কৃতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দিদি পারুল ১৪ বছর বয়সে এই সম্মেলনে মেয়েদের নিয়ে কলকাতা কংগ্রেসের অনুকরণে একটি স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী গঠন করেন। ঊষা ছিলেন এই বাহিনীর একটি উৎসাহী কর্মী। ক্রমে পারুল ও ঊষা দুই ভগ্নীই অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন।
ডানপিটে ও বেপরোয়া ঊষা মুখার্জী
ঊষা মুখার্জী ছিলেন যেমন ডানপিটে তেমনি বেপরোয়া। তাঁর সাহস ও সদাহাসি মুখ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। লাঠি-ছোরা খেলতে, কুচকাওয়াজ করতে তিনি ছোটবেলা থেকেই অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিলেন।
পুলিসের হাতে গ্রেপ্তার ঊষা মুখার্জী
১৯৩৪ সালে পুলিস তাঁকে গ্রেপ্তার করে হিজলী জেলে রাজবন্দীরূপে আটকে রাখে। ১৯৩৭ সালে তিনি মুক্তি পান।
অনুপ্রেরণাদায়ী বিপ্লবী নারী ঊষা মুখার্জী
ঊষা মুখার্জীর জীবন এক অনন্য দৃষ্টান্ত—যেখানে দেশপ্রেম, নারীর ক্ষমতায়ন, আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মেলবন্ধন ঘটেছে। ইতিহাসে তাঁর অবদান হয়তো অনেকটা আড়ালে রয়ে গেছে, কিন্তু তিনি চিরকাল মনে থেকে যাবেন এক বলিষ্ঠ, অনুপ্রেরণাদায়ী বিপ্লবী নারী হিসেবে।
বিপ্লবী ঊষা মুখার্জীর মৃত্যু
তিনি ১৩ জুন ১৯৮২ সালে প্রয়াত হন।
উপসংহার :- ঊষা মুখার্জী ছিলেন এক নির্ভীক ও আদর্শনিষ্ঠ বিপ্লবী, যিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজের জীবন ও ভবিষ্যৎ উৎসর্গ করেছিলেন নিঃস্বার্থভাবে। সমাজের এক তরুণী নারী হয়ে তিনি শুধু নিজেই রাজপথে নেমে আসেননি, বরং বহু নারীকেও সংগঠিত করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশীদার করেছিলেন।
(FAQ) বিপ্লবী ঊষা মুখার্জী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
ঊষা মুখার্জী ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সাহসী বাঙালি নারী বিপ্লবী। তিনি অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন এবং নারীদের সংগঠিত করে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশ নেন।
ঊষা মুখার্জীর পিতা ছিলেন গুরুপ্রসন্ন মুখার্জী এবং মাতা মনোরমা দেবী। বড় বোন পারুল মুখার্জী এবং ভাই অমূল্য মুখার্জীও স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ঊষা মুখার্জী অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং নারী সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ছড়াতে কাজ করেছেন।
ঊষা মুখার্জী ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে বিপ্লবী ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় এবং তাঁকে হিজলী জেলে পাঠানো হয়।
ঊষা মুখার্জী প্রায় তিন বছর হিজলী জেলে বন্দি ছিলেন এবং ১৯৩৭ সালে সাধারণ রাজনৈতিক ক্ষমার আওতায় মুক্তি পান।
ঊষা মুখার্জী নারী সংগঠনের মাধ্যমে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে মেয়েদের সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করেছিলেন এবং আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিলেন, যা সেই সময়কার সমাজে বিরল ছিল।
ঊষা মুখার্জী ১৩ জুন ১৯৮২ সালে প্রয়াত হন।
ঊষা মুখার্জীর জীবন থেকে শেখা যায় সাহস, আত্মত্যাগ, নেতৃত্ব ও নারী ক্ষমতায়নের গুরুত্ব। তিনি ছিলেন নিঃশব্দে লড়ে যাওয়া এক আদর্শ বিপ্লবী নারী।