বেদ

আজ সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদ -এর ভাষা, মন্ত্র, মুখ্য অর্থ, অপর নাম, বিভাগকর্তা, ভাগ, প্রতিটি বেদের ভাগ সম্পর্কে জানবো।

প্রাচীনতম গ্ৰন্থ বেদ প্রসঙ্গে বেদের জ্ঞান প্রাপ্তি, বেদ সম্পর্কে দয়ানন্দ সরস্বতীর মন্তব্য, বেদের ভাষা, বেদের মন্ত্র, বেদের অপর নাম শ্রুতি, বেদ বা শ্রুতি অপৌরুষেয়, বেদ কথার অর্থ, বেদের মুখ্য অর্থ, বেদ নামের প্রচলন, বেদের অপরাপর নাম, অখণ্ড বেদের বিভাগকর্তা, বেদের চারটি ভাগ – ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ, প্রতিটি বেদের ভাগ – ব্রাহ্মণ, সংহিতা, আরণ্যক ও উপনিষদ।

Table of Contents

পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদ

ঐতিহাসিক গ্রন্থবেদ
পরিচিতিসনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ
রচনাকালআনুমানিক ১৫০০-৮০০ খ্রিস্টপূর্ব
বিষয়বিজ্ঞান, যজ্ঞকর্ম, ভক্তি ও জ্ঞান
বেদ

ভূমিকা :- আমাদের দেশ ভারতবর্ষ -এর সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হল বেদ। বেদে বিজ্ঞান, যজ্ঞকর্ম, ভক্তি ও জ্ঞান এই চারটি বিষয়ের বর্ণনা করা হয়েছে।

বেদের জ্ঞান প্রাপ্তি

সর্বপ্রথম অগ্নি, বায়ু, আদিত্য ও অঙ্গিরা এই চার ঋষি চার বেদের জ্ঞান প্রাপ্ত হন। পরবর্তিতে তাঁরা অন্যান্য ঋষিদের মাঝে সেই জ্ঞান প্রচার করেন।

ধর্মগ্রন্থ বেদ সম্পর্কে দয়ানন্দ সরস্বতীর মত

আর্যসমাজ -এর প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী অগ্নি, বায়ু, আদিত্য, অঙ্গিরা – এই চার ঋষিকে শরীরধারী মানুষ বলেছেন।

বেদের ভাষা

ছান্দস্ ভাষায় রচিত হয় বেদ।

প্রাচীন গ্রন্থ বেদের মন্ত্র

বেদে মোট মন্ত্র সংখ্যা ২০৩৭৯টি।

বেদ মন্ত্র

এই বেদ মন্ত্র হল বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত মন্ত্র, যা হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য। বেদের মন্ত্রগুলি বিভিন্ন পথে, “আবৃত্তি” বা বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রচলিত। 

বেদ মন্ত্র বাংলা

ধর্মগ্রন্থ বেদে থাকা মন্ত্রের বাংলা অনুবাদ পাওয়া যায়। বেদে স্তোত্র, কবিতা, প্রার্থনা, পৌরাণিক বিবরণ, সূত্র ইত্যাদি রয়েছে। বেদকে বৈদিক ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ বলে মনে করা হয়। 

প্রাচীন গ্রন্থ বেদের অপর নাম শ্রুতি

সুপ্রাচীন কালের বৈদিক ঋষিরা কঠোর তপস্যা করে নিজেদের শুদ্ধ করার সময়  তাঁরা তাঁদের হৃদয়ে স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী শুনতে পান। ঈশ্বরের মুখ থেকে শোনা এই সত্যগুলি তাঁরা যে পবিত্র গ্রন্থরাজিতে ধরে রাখেন, তারই নাম হল ‘শ্রুতি’।

বেদ অপৌরুষেয়

‘শ্রুতি’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল ‘যা শোনা হয়েছে’।  শ্রুতি মানুষের লেখা বই নয়। তাই শ্রুতিকে বলা হয় ‘অপৌরুষেয়’।

নামের দিক দিয়ে বেদ

শ্রুতিকেই আমরা সাধারণত চিনি ‘বেদ’ নামে। ‘বেদ’ শব্দের অর্থ ‘জ্ঞান’। সংস্কৃতে ‘বিদ্‌’ ধাতুর অর্থ ‘জানা’। এই ‘বিদ’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন বলে ‘বেদ’ শব্দের মূল অর্থ ‘জ্ঞান’।

বেদ শব্দের উৎপত্তি

এই বেদ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘বিদ্’ থেকে এসেছে। ‘বিদ্’ শব্দের অর্থ জ্ঞান বা জানা। বেদ হল হিন্দুধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ।

বেদের মুখ্য অর্থ

পবিত্র বেদ বলতে বিশেষতঃ ঈশ্বর, জীব ও জগৎ সম্বন্ধে পারমার্থিক জ্ঞানই বুঝায়। সৃষ্টিও যেমন অনাদি ও অনন্ত, ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞানও তেমনই অনাদি অনন্ত। ঈশ্বর সম্বন্ধে এই শাশ্বত ও অফুরন্ত জ্ঞানরাশিই বেদ শব্দের মুখ্য অর্থ।

ধর্মগ্রন্থ বেদের রচয়িতা

হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, বেদগুলো “অপৌরুষেয়” বা “মানব রচিত নয়,” অর্থাৎ এগুলো ঈশ্বরপ্রদত্ত জ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত।

বেদের বিষয়বস্তু

বেদের বিষয়বস্তু হল ধর্মীয় আচার, যজ্ঞ, দেবদেবী, আধ্যাত্মিক জ্ঞান, দর্শন, ভালোবাসা, প্রেম, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় ইত্যাদি। বেদ হল হিন্দুধর্মের প্রাচীনতম পবিত্র গ্রন্থ। 

ঐতিহাসিক গ্রন্থ বেদ নামের প্রচলন

এই অপরিসীম জ্ঞানরাশির কিছু অংশের সন্ধান হিন্দু তত্ত্বদ্রষ্টাগণ পেয়েছিলেন। সেগুলিই লিপিবদ্ধ হয়ে বেদ নামে প্রচলিত হইয়াছে।

বেদের অপর নাম

এই বেদের আরও দুটি নাম হল ‘আগম’ ও ‘নিগম’। ‘আগম’ শব্দের অর্থ ‘যা ঐতিহ্য রূপে আমাদের কাছে এসেছে’ এবং ‘নিগম’ শব্দের অর্থ হল ‘যা জীবনের মূল সমস্যাগুলির স্পষ্ট ও নিশ্চিত সমাধান নির্দেশ করে’।

বেদের মন্ত্র অনুবাদ সহ

এই বেদের মন্ত্রের অনুবাদ সহ পাওয়া যায়। বেদে স্তোত্র, পৌরাণিক বিবরণ, কবিতা, প্রার্থনা, এবং সূত্র রয়েছে।

অখণ্ড বেদের বিভাগকর্তা

বিষ্ণুপুরাণ অনুসারে বেদের বর্তমান বিভাগকর্তা হলেন ব্যাস।

বেদের বিভাগ

বেদ চারটি। যথা–

ঋগ্বেদ

চার বেদের মধ্যে ঋগ্বেদ সবচেয়ে পুরনো ও সবচেয়ে বড়ো। ঋগ্বেদ প্রধানত ‘ঋক’ বা প্রার্থনা মন্ত্রের সংকলন। হিন্দুধর্মের বিখ্যাত গায়ত্রী মন্ত্র ঋগ্বেদেরই অংশ।

সামবেদ

চার বেদের দ্বিতীয় সামবেদ-এ ঋগ্বেদের বাছাই করা কয়েকটি সূক্তে সুরারোপ করে কয়েকটি যজ্ঞের বিশেষ বিশেষ পর্যায়ে সেগুলি গান করার নির্দেশ দেওয়া আছে। ভারত -এর শাস্ত্রীয় সংগীতের আদি উৎস হল এই সামবেদ।

যজুর্বেদ

তৃতীয় যজুর্বেদ-এ আছে মূলত যাগযজ্ঞের নিয়মকানুন।

অথর্ববেদ

চতুর্থ অথর্ববেদ অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের রচনা। এই বেদে রয়েছে নীতিতত্ত্ব, আয়ুর্বেদ ইত্যাদি কয়েকটি বিজ্ঞানের বর্ণনা।

প্রতিটি বেদের ভাগ

এই চারটি বেদের প্রতিটি আবার চারটি করে অংশে বিভক্ত। এগুলি হল–

  • (১) সংহিতা বা মন্ত্রভাগ,
  • (২) ব্রাহ্মণ,
  • (৩) আরণ্যক ও
  • (৪) উপনিষদ্‌।

বেদের অংশ সংহিতা

প্রাচীন বেদের ‘সংহিতা’ অংশে লিপিবদ্ধ রয়েছে ইন্দ্র, অগ্নি, বরুণ, বিষ্ণু, রুদ্র প্রমুখ বৈদিক দেবতার বিভিন্ন মন্ত্র ও স্তবস্তুতি।

ধর্মগ্রন্থ বেদের অংশ ব্রাহ্মণ

বেদের ‘ব্রাহ্মণ’ অংশে আছে মন্ত্রের ব্যাখ্যা ও যাগযজ্ঞের নিয়মকানুন। কোন যজ্ঞে কোন মন্ত্র উচ্চারণ করা দরকার, তা জানা যায় ব্রাহ্মণ অংশ থেকে।

বেদের অংশ আরণ্যক

এই বেদের ‘আরণ্যক’ অংশে রয়েছে বনবাসী তপস্বীদের যজ্ঞভিত্তিক বিভিন্ন ধ্যানের বর্ণনা।

ধর্মগ্রন্থ বেদের অংশ উপনিষদ্

প্রাচীন বেদের ‘উপনিষদ’ অংশটিতে পরম সত্যের এক মরমিয়া ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। পরম সত্যকে উপলব্ধি করার শ্রেষ্ঠ পন্থাটিও উপনিষদ্‌ই আমাদের শিক্ষা দেয়।

বেদ বাংলা অনুবাদ বই

রমেশচন্দ্র দত্ত -এর বেদ (৫টি বই একত্রে) অরিজিনাল বইটি সংগ্রহ করুন রকমারি ডট কম থেকে।

উপসংহার :- বেদই আমাদের সর্বোচ্চ ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনোর পথ বলে দেয়। বেদই আমাদের পরম সত্য সম্পর্কে জানিয়ে দেয়। সত্য চিরন্তন, আর বেদ সেই সত্যকে প্রকাশ করে বলে বেদও চিরন্তন। তাই বেদই হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ ও সর্বপ্রধান প্রামাণ্য ধর্মগ্রন্থ।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বেদ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) বেদ হতে জিজ্ঞাস্য?

১. বেদের রচনাকাল কত?

আনুমানিক ১৫০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।

২. বেদ কয় প্রকার ও কি কি?

চার প্রকার। ঋগ্বেদে, সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ।

৩. বেদ কথাটি কোথা উৎপত্তি হয়েছে?

সংস্কৃত বিদ্ শব্দ থেকে বেদ শব্দটি এসেছে, যার অর্থ জ্ঞান।

৪. বেদের বিষয়বস্তু কি?

বেদের বিষয়বস্তু হল ধর্মীয় আচার, যজ্ঞ, দেবদেবী, আধ্যাত্মিক জ্ঞান, দর্শন, ভালোবাসা, প্রেম, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় ইত্যাদি। বেদ হল হিন্দুধর্মের প্রাচীনতম পবিত্র গ্রন্থ। 

৫. বেদ এর অপর নাম কী?

বেদ এর অপর নাম শ্রুতি।

৬. বেদ পুরাণ কার লেখা?

বেদ এক বা একাধিক ঋষি দ্বারা রচিত হয়েছিল বহু যুগ আগে। 

৭. বাংলা ভাষায় বেদ কত প্রকার?

বাংলা ভাষায় বেদের চারটি প্রকার রয়েছে: ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ।

৮. বেদের অপর নাম শ্রুতি কেন?

বেদকে শ্রুতি (যা শ্রুত হয়েছে) সাহিত্যও বলা হয়। কারণ বেদের লিখিত কোনো বই বা পুস্তক আকারে ছিল না। বৈদিক ঋষিরা বেদমন্ত্র মুখে মুখে উচ্চারণ করে তাদের শিষ্যদের শোনাতেন, আর শিষ্যরা শুনে শুনেই বেদ অধ্যায়ন করতেন। এইখানেই সনাতন ধর্মের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোর সঙ্গে বেদের পার্থক্য।

৯. বেদ গ্রন্থের রচয়িতা কে?

হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, বেদগুলো “অপৌরুষেয়” বা “মানব রচিত নয়,” অর্থাৎ এগুলো ঈশ্বরপ্রদত্ত জ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত।

১০. বেদ কি?

বেদ হল হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। এটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ ‘জ্ঞান’। বেদ ভারতীয় সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। 

১১. বেদ ও উপনিষদ কি?

বেদ এবং উপনিষদ হল হিন্দু সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। বেদ আচার-রীতিনীতি এবং প্রয়োগের সাথে সম্পর্কিত, অন্যদিকে উপনিষদ আধ্যাত্মিক জ্ঞানার্জনের সাথে সম্পর্কিত। 

Leave a Comment