বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস প্রথম অধ্যায়: প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাসের উপাদান থেকে ৫ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – ‘রামচরিত মানস’ কে রচনা করেন? রামায়ণ, মহাভারত থেকে ভারতীয় সমাজ সম্পর্কে কি জানা যায় তা আলোচনা করা হল।
রামায়ণ, মহাভারত থেকে ভারতীয় সমাজ সম্পর্কে কি জানা যায়
প্রশ্ন:- ‘রামচরিত মানস’ কে রচনা করেন? রামায়ণ, মহাভারত থেকে ভারতীয় সমাজ সম্পর্কে কি জানা যায়?
উত্তর:- কবি তুলসীদাস ‘রামচরিত মানস’ গ্ৰন্থটি রচনা করেন।
সংস্কৃত ভাষায় লিখিত ‘রামায়ণ ও মহাভারত’ ভারতের দুটি শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য। মহাভারতের রচয়িতা ছিলেন বেদব্যাস এবং রামায়ণের রচয়িতা ছিলেন বাল্মিকী। তবে অনুমান করা হয়, এঁরা কেউই এককভাবে এই মহাকাব্য রচনা করেননি। তাছাড়া আদি মহাকাব্য দুটিতে কালে কালে, যুগে যুগে নতুন সংযোজনের ফলে বর্তমানে তা নতুন রূপলাভ করেছে।
মহাকাব্য দুটির রচনাকাল সম্বন্ধেও সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়নি। আধুনিক গবেষকদের বিচারে খ্রিস্টোত্তর প্রথম সহস্রাব্দের প্রথমদিকে মহাকাব্য দুটি রচিত হয়েছে। ‘রামায়ণ’ বা ‘মহাভারত’ কোনটি প্রথমে রচিত হয়েছে সে সম্পর্কেও মতভেদ আছে। এ. এল. ব্যাসাম, রোমিলা থাপার প্রমুখ আধুনিক ঐতিহাসিকের মতে, ‘মহাভারত’ আগে রচিত হয়েছে। কারণ, এতে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার যেসব বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ আছে তা রামায়ণে নেই। বিরুদ্ধবাদীদের মতে, মহাভারতে রামকাহিনী উল্লিখিত হয়েছে। অতএব ধরা যেতে পারে, রামায়ণ পূর্বেই রচিত হয়েছে। মহাভারতে আছে এক লক্ষেরও বেশি শ্লোক। রামায়ণে আছে ২৫ হাজার শ্লোক।
এই মহাকাব্য দুটিতে ইতিহাস ও কাব্যের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। প্রাচীন ভারতের সমাজ ও সভ্যতা জানার জন্য দুটি মহাকাব্যের গুরুত্ব অপরিসীম। মহাকাব্যের যুগে ‘রাজতন্ত্র’ ও ‘প্রজাতন্ত্র’ উভয় ধরনের শাসন প্রচলিত ছিল। শাসনের সর্বনিম্ন একক ছিল গ্রাম। বিভিন্ন গোষ্ঠী, সমবায় সংঘ ও গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে আংশিক স্বায়ত্তশাসন প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুশাসন, প্রথা ও বিশ্বাস আইন হিসেবে মান্য হত। রাজা ছিলেন কেন্দ্রীয় শাসনের প্রধান। তবে তিনি স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। মন্ত্রিপরিষদ ও সভা শাসন বিষয়ে রাজাকে সাহায্য করত। মহাভারতে প্রজাতন্ত্রকে ‘গণ’ বলা হয়েছে। একাধিক ‘গণ’ মিলিত হয়ে ‘সংঘ’ গঠন করত। মহাভারতে মন্ত্রিপরিষদ গঠন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ৪ জন ব্রাহ্মণ, ৮ জন ক্ষত্রিয়, ২১ জন বৈশ্য ও ৩ জন শূদ্র এর সদস্য হতেন। পদাতিক, অশ্বারোহী, রথ ও হস্তিবাহিনী নিয়ে সেনাদল গঠিত হত।
মহাকাব্যের যুগে ব্রাহ্মণদের স্থলে ক্ষত্রিয়দের প্রাধান্য স্থাপিত হয়েছিল। সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। এক নারীর একাধিক স্বামী গ্রহণের বিরল দৃষ্টান্তও মহাকাব্যের যুগে দেখা যায়। স্বয়ম্বর প্রথা নারী-স্বাতন্ত্রের কথা প্রমাণ করে। সমাজে পর্দাপ্রথা প্রচলিত ছিল, তবে তা পালনে কঠোরতা ছিল না। দুটি মহাকাব্য থেকেই জাতিভেদ প্রথার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। তবে অসবর্ণ বিবাহ বা বৃত্তি পরিবর্তনের একাধিক দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। যেমন, ব্রাহ্মণ সেনাপত্য গ্রহণ করেছেন বা ক্ষত্রিয় যুবরাজ ব্রাহ্মণত্ব লাভ করেছেন।