বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়: প্রস্তর ও তাম্র-প্রস্তর যুগ থেকে ৫ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – ক্ষুদ্রাস্মীয় আয়ুধ বা Microlith কী সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
ক্ষুদ্রাস্মীয় আয়ুধ বা Microlith সম্পর্কে আলোচনা
প্রশ্ন:- ক্ষুদ্রাস্মীয় আয়ুধ বা Microlith কী?
উত্তর:- প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক যুগের দ্বিতীয় পর্যায়টি মধ্যপ্রস্তর নামে পরিচিত। এই যুগকে পাথরের হাতিয়ারের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে Microlith যুগ নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণভাবে এই পর্যায়ে জীবজন্তুকে পোষ মানানো এবং কৃষিকাজের মাধ্যমে খাদ্য সংস্থানের প্রয়াস শুরু হয়েছিল। তবে মনে রাখা দরকার যে, সারা ভারতে মধ্যপ্রস্তর যুগেও মানুষ যথার্থ খাদ্য সংগ্রহকারী হয়ে উঠতে পারেনি।
হাতিয়ারগুলি ছিল তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র এবং সংখ্যার দিক থেকে অনেক বেশি। অনুমান করা হয় আদি প্রস্তর যুগের তুলনায় মধ্যপ্রস্তর যুগে হাতিয়ার-এর আকৃতি পরিবর্তিত হয়েছিল। এই যুগে পশু শিকারের পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনের কাজে মানুষের প্রাথমিক আগ্রহ থেকে কিছু কিছু হাতিয়ার তৈরী হয়েছিল। এই যুগের হাতিয়ারগুলি অধিকাংশই ছিল কোয়ার্টজ, চ্যালসোন জাতীয় পাথর থেকে তৈরী। বর্তুলাকার ছোটো ছোটো প্রস্তর খন্ড থেকে চিলকা বের করে হাতিয়ার গুলি নির্মাণ করা হয়েছিল। ইতিপূর্বে পাথরের হাতকুঠার ও কোপানি জাতীয় হাতিয়ার ছিল। এই যুগে বহু বিচিত্র হাতিয়ার, যেমন বাটালি, চাঁচনি, ডোমর ইত্যাদি নির্মিত হয়েছিল।
পাথরের যাঁতা বা হামানদিস্তা ছিল মধ্য প্রস্তর যুগের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। সরু হাড় বা চকমকি পাথর দিয়ে তৈরি তার পাওয়া গেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় তীর-ধনুকের সাহায্যে পশু শিকার এই পর্বে শুরু হয়েছিল। মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকা গুহায় বর্শা, তীর ও ধনুক জাতীয় হাতিয়ারের ছবি পাওয়া গেছে। কারিগরী ও উপকরণের ক্ষেত্রে এই আবিষ্কার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সূক্ষ্ম ও ছোটো ছোটো অস্ত্র দ্বারা অল্প পরিশ্রমে পশু স্বীকার করা যেত। ফলে এই সময় শিকার দ্বারা জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি বন্য জন্তুকে পোষ মানানোর চেষ্টা শুর হয়েছিল। এই সকল পশুর মধ্যে অন্যতম ছিল গরু, ভেড়া, ছাগল, শুয়োর ইত্যাদি।
উত্তর প্রদেশে কোনো কোনো এলাকায় মাংস কাটার গোলাকার বেদি, ধারালো ব্লেড ও মাংস পোড়ানোর জন্য আগুনের ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পুরুষেরা হরিণের হাড় ও শিং থেকে তৈরী অলংকার পরত। অনুমান করা হয় এই যুগে মানুষ কুটির নির্মাণ করে বসবাস করা এবং মৃত্যুর পর মৃতদেহ কে কবরস্থ করার প্রক্রিয়া রপ্ত করেছে। চিত্রশিল্পে প্রাথমিক আভাস এই সময় দেখা যায়।