বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: হরপ্পা সভ্যতা থেকে ৫ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – সিন্ধু-সভ্যতাকে বর্তমানে ‘হরপ্পা সভ্যতা’ বলার যৌক্তিকতা কী তা আলোচনা করা হল।
সিন্ধু-সভ্যতাকে বর্তমানে ‘হরপ্পা সভ্যতা’ বলার যৌক্তিকতা কী
প্রশ্ন:- সিন্ধু-সভ্যতাকে বর্তমানে ‘হরপ্পা সভ্যতা’ বলার যৌক্তিকতা কী?
বিংশ শতকের গোড়াতেও ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা হিসেবে আর্য সভ্যতার কথা বলা হত। কিন্তু ১৯২০-র দশকে সিন্ধুনদের তীরবর্তী অঞ্চলে অতি উন্নত এক সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হলে ভারতের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারণা পালটে যায়। ১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে দয়ারাম সাহানি ও রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় যথাক্রমে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়ো অঞ্চলে এই প্রাচীন সভ্যতার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। বিস্তারিত খননকার্য প্রথম চালানো হয় মহেঞ্জোদাড়োতে। বর্তমান পাকিস্তানের লারকানা জেলায় সিন্ধুনদের পশ্চিম তীরে এই নগরীর অবস্থান।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক মহেঞ্জোদাড়ো আবিষ্কারের পর ভারতীয় ইতিহাসচর্চায় নতুন গতিবেগ আসে। মহেঞ্জোদাড়োর উৎখনন ও উন্নত সভ্যতার অস্তিত্ব আবিষ্কারের পর পূর্ব পাঞ্জাবে মন্টগোমারী জেলায় ইরাবতী নদীর পূর্ব তীরে হরপ্পাতেও ব্যাপক উৎখনন চালানো হয় এবং অনুরূপ সভ্যতার অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। প্রাথমিকভাবে মহেঞ্জোদাড়োর ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োর ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতাকে ‘সিন্ধু-সভ্যতা’ নামে অভিহিত করা হতে থাকে।
পরবর্তী কয়েক দশকে পাকিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে খননকার্য চালিয়ে অনেকগুলি প্রত্নক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের অনেকগুলিই সিন্ধু উপত্যকার বাইরে অবস্থিত। রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানা, বালুচিস্তান-সহ প্রায় ৭০টি জায়গায় প্রাচীন সভ্যতার অস্তিত্ব আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা সভ্যতার সাথে মহেঞ্জোদাড়োতে আবিষ্কৃত সভ্যতার সাদৃশ্য লক্ষণীয়। স্বভাবতই সিন্ধু উপত্যকার বাইরে প্রসারিত অনুরূপ সভ্যতাকে ‘সিন্ধু-সভ্যতা’ নাম দিয়ে একটা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সীমাবন্ধ করে রাখা অযৌক্তিক বলে মনে হতে থাকে। তাই নতুন নামকরণের প্রয়োজন অনুভূত হয়।
প্রত্নতত্ত্বের একটি সাধারণ প্রথা হল একটি সভ্যতার নিদর্শন প্রথম যে জায়গায় আবিষ্কৃত হয়, অনুরূপ সভ্যতাকে সেই স্থানের নামানুসারে অভিহিত করা। সেই বিচারে ভারতের তথাকথিত সিন্ধু-সভ্যতার নতুন নামকরণ হয় ‘হরপ্পা সভ্যতা’। কারণ, মহেঞ্জোদাড়োতে খননকার্যের বহু আগে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আলেকজান্ডার কানিংহাম হরপ্পায় একটি সিলমোহর আবিষ্কার করেছিলেন। ১৮৫৩ থেকে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের অন্তবর্তীকালে কানিংহাম বহুবার হরপ্পা অঞ্চলটি পরিদর্শন করেছিলেন।
যাই হোক এইভাবে সু-প্রসারিত অঞ্চলে আবিষ্কৃত প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতাটিকে সিন্ধু-সভ্যতার পরিবর্তে ‘হরপ্পা সভ্যতা’ নামে অভিহিত করা শুরু হয়েছে।